Header Ads Widget

Responsive Advertisement

অবহেলিত স্বামী - পর্ব ৩

 কথাগুলো ভেবে আরিজা একটা মুচকি হাসি দেয়, আবার পরক্ষণেই যখন ভাবে কালকে ওর ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলতে হয়েছে। তখনিই আরিজা মুখটা কালো মেঘে ছেয়ে যায়, ও বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে আজমাইনকে ডাকতে লাগলো ।



আরিজা - এই যে শুনছেন প্লিজ উঠুন না। আম্মু আপনাকে খেতে যেতে বলেছে।

- আজমাইন কোনো রেসপন্স নেই, আরিজা বারবার ওকে ডাকার পরও যখন উঠছিলো না তখন ও আরিজার একটা হাত ধরে ওকে একটু ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো ।

আরিজা - এই যে শুনছেন প্লিজ উঠুন। আম্মু আপনাকে খেতে যেতে বলেছে।
আজমাইন মিটমিট করে চোখ খুলে তাকালো আর দেখল আরিজা ওর পাশে বসে ওকে ডাকছে তখন আজমাইন উঠে বসে বলে।

আজমাইন - কি হয়েছে একটু ঘুমাতেও দিবে না নাকি। বললাম তো রাতে বিছানা ছেড়ে দিবো, তাহলে এখন আবার ডাকাডাকি করছেন কেনো ?
আজমাইন কথাই আরিজা বেশ খানিকটা খারাপ লাগলো তাই ও নিশ্চুপ হয়ে রইলো। আজমাইন দেখলো আরিজা মুখটা কালো হয়ে গেছে তখন আজমাইন বললো।
আজমাইন - ও বুঝতে পেরেছি তোমাকে হয়তো কষ্ট দিয়ে ফেলেছি, মাফ করবেন আমাকে
আজমাইন বিছানা ছেড়ে উঠে সোফার দিকে চলে গেলো, তারপর যখনই শুতে যাবে তখন আরিজা বলতে লাগলো।

আরিজা - আসলে আম্মু আপনাকে খেতে যেতে বলেছে তাই ডাকছিলাম।
আজমাইন - ওওও শাশুড়ি মা ডেকেছে।
আজমাইন কথায় আরিজা একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাতেই ও কথাটা ঘুরিয়ে বললো।
আজমাইন - ওওও আপনার আপনার আম্মু ডাকছে, আচ্ছা ঠিক আছে আপনি নিচে যান আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

আরিজা - না আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। একসাথে যাবো আম্মু আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে। আচ্ছা আপনি আমাকে আপনি করে ডাকছেন কেনো ?
আজমাইন - মায়া বাড়াতে চাই না, আচ্ছা কালকে না বললে স্বামী হিসেবে মানোনা তাহলে অধিকার খাটাচ্ছো কেনো ? যদি ভালোবাসতে শুরু করেন, তখন তো আমাকে মেনে নিতেই হবে।

- আজমাইন কথাটা বলে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে তারপর ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো। আর আরিজা আজমাইন বলা কথাটা আকাশ কুসুম ভাবতে লাগলো। আজমাইন ফ্রেশ হয়ে এসে বললো।
আজমাইন - আসুন।

আরিজা - প্লিজ এই আপনিটা বাদ দিন তাহলে আব্বু আম্মু সবটা বুঝতে পারবে।
আজমাইন - আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না।

ওরা নিচে চলে আসে দেখে, আরিজা আব্বু আম্মু আর বেশ কয়েকজন আত্মীয় বসে খাবার খাচ্ছে তখন আজমাইন একটা চেয়ার টেনে বসে তখন আরিজাও ওর পাশে বসে। আজমাইন খাওয়া শেষ করে ওদের সাথে কোনো কথা না বলে রুমে এসে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। একটু পরেই আরিজা এসে বিছানায় বসতেই দেখে আজমাইন ফোন চালাচ্ছে। আরিজাকে দেখে আজমাইন বলতে লাগলো।

আজমাইন - আচ্ছা এখানে কয়দিন থাকতে হবে বলোতো ?
আরিজা - কেনো আমাদের বাসায় থাকতে কি আপনার খারাপ লাগছে।
আজমাইন - নানা খারাপ লাগবে কেনো শ্বশুরবাড়ি থাকতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু যেটা ভাবি সেটা যদি হয় মন থেকে।

আজমাইন কথায় আরিজা ওর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে - রইলো, আজমাইন কথায় আরিজা বারবার বুঝতে পারছে ওর ভেতরে কতেটা কষ্ট হচ্ছে। তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। যে মেয়েটাকে নাকি প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছিলো তার যে মুখ থেকে বাসর রাতে এরকম কথা শোনার পর কষ্টটা লাগাটাই স্বাভাবিক।

২টা দিন ওরা আরিজাদের বাসায় থেকে তারপর ওদের বাসায় চলে যায়। বাসায় ফিরলে আজমাইন আব্বু আম্মু ওদেরকে হানিমুনে যাওয়ার কথা বললে আজমাইন স্রেফ না করে দেয়, বলে অফিসে থেকে জরুরিভাবে ডেকেছে আর ছুটিটা ক্যান্সেল করে দিয়েছে, বিয়ে • ছিলো বিধায় এই কয়েকদিন ছুটি পেয়েছে।

আজমাইন আবার অফিসে ছুটি যাওয়া কন্টিনিউ করতে শুরু করে। কারন আরিজার সাথে শুধু শুধু সময় দিয়ে ওর প্রতি দুর্বল হতে চায় না, তাতে ওর প্রতি আজমাইন ভালোবাসাটা আরো বেড়ে যাবে, যেটুকু আছে ওতেই থাকতে চাই।

আরিজা বুঝতে পারছে আজমাইন ওকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, আর আজমাইন জানে আরিজা ওকে ভালোবাসতে পারবেনা। যখন থেকে শুনেছে আরিজা ওকে কখনো স্বামী হিসেবে মানবে না, তখন থেকেই ভেবেছে তাহলে ওর প্রতি ভালোবাসাটা বাড়িয়ে লাভ কি ? হয়তো বিয়ে নামক একটা অদ্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে নাহলে কবেই সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতো। আজমাইন অফিসে গিয়ে কাজ করতে শুরু করে, এর মাঝে ওর একজন কলিগ এসে শয়তানি এক হাসি দিয়ে বলে।

রাকিব সাহেব - কি হলো আজমাইন সাহেব বিয়ে করলেন মাত্র তিন হলো। ছুটিতো নিয়েছিলেন দশদিনের তাহলে এতো তাড়াতাড়ি অফিসে চলে আসলেন। নতুন বিয়ে করেছেন বউয়ের সাথে সময় কাটাবেন তানা করে এতো কাজ কাজ করে হেদিয়া মারছেন কোন
বলুন তো।

রাকিব সাহেবের কথা আজমাইন বেশ রাগ হচ্ছিলো, ইচ্ছা করছিলো এখুনি লোকটার নাক বরাবর ঘুসি মেরে দিতে। যেখানে বিয়েটাই একটা তুচ্ছো বিষয় হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে আরিজা। সেখানে নাকি ওর সাথে সময় কাটাবে। আজমাইন নিজের রাগটাকে দাঁতে দাঁত চেপে কন্ট্রোল করে বলতে লাগলো।

আজমাইন - আসলে কি বলুন তো বস এতো তাড়াতাড়ি আসতে বললো আর উপায় না পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকেই অফিসে জয়েন করতে হলো। কেনো বলুনতো আপনি কি ভাবির সাথে ১০ দিনের জায়গায় ২০ দিন ধরে করেছিলেন নাকি।

আজমাইন এমন কথাই রাকিব সাহেব নিজেকে স্বাভাবিক - করে একটা কাশি দিয়ে বললো।
রাকিব সাহেব - না মানে আপনি কী বলছেন এতো দিন ধরে কি ফুল সজ্জা করা যায় নাকি ।

আজমাইন - আসলে আপনার কথাটাই তেমনটাই বুঝা গেলো তাই বললাম আর কি। আপনি হয়তো ভাবির অনেক রোমান্স করেছেন তাইনা। কিন্তু আমার বউটা না একদম রোমান্টিক না সেজন্য রোমান্স করতেই পারলাম না।

রাকিব সাহেব বুঝতে পারলো আজমাইন ওনার সম্মান নিয়ে - টানাটানি করতে শুরু করে দিবে তাই আর উপায় না পেয়ে বলতে লাগলো।

রাকিব সাহেব - আচ্ছা আপনি থাকুন আমার একটু কাজ আছে।
রাকিব সাহেব কথাটা বলেই কেটে পড়লো আর আজমাইন ভাবতে লাগলো।

আজমাইন - তাহলে যান না গাধার বাচ্চা এইসব লোক যে কোথা থেকে কেনো, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে। কোথাকার, এখানে এসেছিস আসে। ইচ্ছা করে দাঁতগুলো ভেঙ্গে দেয় ইডিয়েট কোথাকার। আমি মরছি আমার জ্বালায় উনি আসছে আগুনে ঘি ঢালতে। শালা নেহাত বিয়েটা করে ফেলেছি নাহলে এসব সংসারের গুষ্টি কিলাতাম।

আজমাইন রাগি মুড নিয়ে কাজগুলো করতে লাগলো, সেদিনের - মতো কাজ শেষ করে আজমাইন বাসায় গিয়ে কলিং বেল দিতেই দরজাটা খুলে যায়। দরজা খোলার পর যাকে দেখে তাকে দেখার পর আজমাইন বেশ অবাক হয়। ওর সামনে আরিজা দাড়িয়ে আছে তাই ও বললো।
আজমাইন - আরে তুমি কষ্ট করতে গেলে কেনো আম্মুতো ছিলো।

- আজমাইন কথাটায় আরিজা কেমন যেনো একটু অপমান বোধ করল তাই ও বললো।
আরিজা - সবসময় এতো তেরা ভাবে কথা বলেন কেনো। আম্মু দরজা খুলতে যাবে কেনো। আম্মুতো সারা জীবন ধরেই আপনাকে দরজাটা খুলে দিয়েছে আজকে থেকে আমি খুলে দিবো।

আজমাইন - ওমা সেকি তুমি শুধু শুধু কষ্ট করতে যাবে কেনো? তুমিতো দুদিনের অতিথি হয়ে আমার বাসায় আসছো, তাহলে কষ্ট করবে কেনো ? সেটা কি মেনে নেওয়া যায় নাকি।

আজমাইন কথাটা বলেই রুমের দিকে চলে গেলো আর আরিজা বেশ খারাপ লাগলো। আজমাইন আব্বু আম্মুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো আর আজমাইন খেয়াল করছিলো আজমাইন ওর সাথে একটুও কথা বলছে না। ওর সাথে আর কি বা বলবে, যে কথা বলে দিয়েছে ওর সাথে এরপর আর কিছু বলার মত থাকতেই পারে না। আরিজা খেয়াল করেছে আজমাইন কথা বলার সময় মিথা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেটা ও ভালোভাবেই বুঝতে পারছে, কিন্তু ও কি করবে জানে না, আর করার মতো কোনো অপশন নেই। আরিজা পারবে না দ্বিতীয়বার ওকে ভালোবাসতে, সেটা সম্ভব নয়। রাফিন যে জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে, সেই জায়গায় অন্য কাউকে বসানো সম্ভব না ।

তো এভাবে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে, আজমাইন এখনো সেই আগের মতই ফ্লোরে ঘুমায়। তাই ওর বেশ ঠান্ডা লেগেছে। আম্মু বিষয়টা জিজ্ঞেস করলে বলে, অনেকক্ষণ যাবৎ শাওয়ার নিয়েছিলো তাই ঠান্ডা লেগেছে। এর মাঝে একদিন অফিস থেকে ফিরছিলো আর ঠিক তখনিই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে ও আর উপায় না পেয়ে দৌড়ে একটা ছাউনির নিচে যেতে যেতে কিছুটা ভিজে যায়। বৃষ্টিটা থামছিলো না, আর রাস্তাতেও কোনো রিক্সা নেই তাই পেয়ে তখন ভিজতে ভিজতে বাসায় ফেরে। কলিং বেল দিতেই আরিজা দরজা খুলে দেয় আর ওকে এই ভেজা অবস্থায় দেখে বলে।

আরিজা - একি আপনি এভাবে ভিজলেন কি করে।
আজমাইন - আসলে রাস্তায় কোনো রিক্সা পাচ্ছিলাম না, তাই আর উপায় না পেয়ে ভিজে ভিজে বাসায় আসছি।
আরিজা - আপনি দাঁড়ান আমি আপনাকে টাওয়াল দিচ্ছি।

আজমাইন - তোমাকে কষ্ট করতে হবে না, আমি নিজেই নিয়ে নিতে পারবো।
আজমাইন কথাটা বলে রুমে চলে গেলো আর আরিজা ওইখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো। এই মানুষটা হয়তো সারা জীবন ওর সাথে এভাবেই কথা বলে যাবে, যতদিন বেঁচে আছে। আরিজা পারছে ও না আজমাইন মেনে নিতে। আরিজা ওদের বিয়ের পর আজমাইন কখনো নিজে থেকে বলেনি বিছানায় ঘুমাতে। ভেবেছে হয়তো ওর উপর অধিকার খাটাবে কিংবা ওদের মাঝে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়ে যেতে পারে, তাই হয়তো কখনো বলেনি। আজমাইন ফ্রেশ হয়েছে খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়ে। বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছিলো তাই আলমারি থেকে কম্বল বের করে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।

একটু পর আরিজা রুমে এসে দেখে ও ঘুমিয়ে পড়েছে। আরিজাও শুয়ে পড়ে, একটু পর কারো গোংরানির আওয়াজ পেয়ে ও উঠে বসে আর বোঝার চেষ্টা করে, কি হচ্ছে। আরিজা দেখে আজমাইন কি আবোল তাবোল বকছে তখন উঠে গিয়ে আরিজা আজমাইন পাশে দাঁড়াতে শুনতে পায় আরিজা কি যেনো উল্টোপাল্টা বলছে, ওর পাশে বসে আর বোঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে। তারপর বুঝতে পারে আজমাইন কিছু একটা হয়েছে তাই ওকে ডাকতে লাগলো।

আরিজা - এই যে শুনছেন কি হলো শুনছেন।
আরিজা বুঝতে পারে আজমাইনর হয়তো শরীর খারাপ করেছে তাই এভাবে উল্টোপাল্টা বলছে। আজমাইন বলছিলো।
আজমাইন - কেউ আমাকে ভালোবাসে না, শুধু শুধু বিয়েটা করলাম । সারা জীবন শুধু কষ্টই পেয়ে যাবো, আর ওই মেয়েটা আমাকে জীবনেও কখনো স্বামী হিসেবে মানবে না। কিসের জন্য যে বিয়েটা করতে গেলাম, আমার কপালটাই খারাপ।

আজমাইন কথাগুলো শুনে আরিজা ভেতরে বেশ খারাপ লাগলো। ও বোঝার চেষ্টা করলো আজমাইন জেগে আছে নাকি ঘুমের ঘরে এরকম বলছে। কথাগুলো বেশ অস্পষ্ট তাই ও ভাবলো
আরিজা - জ্বরের ঘোরে নাকি মানুষ উল্টাপাল্টা বকে তাহলে কি ওনারা জ্বর এসেছে।

- আরিজা আজমাইনর কপালে হাত দিতেই বুঝতে পারে ওর গাটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে তখন ও বেশ ভয় পেয়ে যায় আর বুঝতে পারে যে বৃষ্টিতে ভেজার কারণ জ্বর হয়েছে। তার ওপর আবার ফ্লোরে শুয়ে আছে। আরিজা আর উপায় না পেয়ে আজমাইন ডাকতে লাগলো, কিন্তু আজমাইন রেসপন্স ছিলোনা তাই ও বুঝতে পারে আজমাইন সজ্ঞানে নেই। আরিজা কি করবে বুঝতে পারে না, তার ওপর রাত অনেক হয়েছে তাই ভাবে, আব্বু আম্মুকে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।

আরিজা - এইভাবে উনি ফ্লোরা ঘুমালে উনার তো আরো শরীর খারাপ করবে। ওনাকে এখানে ঘুমাতে দেওয়া যাবেনা। মানুষটার আজকে আমার জন্য এই অবস্থা।

আরিজা এবার আজমাইনকে বিছানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ওকে ওঠানোর চেষ্টা করলো কিন্তু আজমাইন অনেক ভারি হওয়ায় আরিজা ওকে তুলতে পারছিলো না। আর স্বাভাবিকভাবেই একটা হালকা পাতলা মেয়ের পক্ষে কোনো স্বাভাবিক সুঠাম দেহের পুরুষকে এভাবে তোলাটা সহজ নয়। তারপরও অনেক কষ্টে আরিজা আজমাইন উঠিয়ে বসিয়ে তারপর ওর কাধের উপর হাত দিয়ে কোনোরকমে ওকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।

তারপর ওর শরীরের আরেকটা কম্বল চাপিয়ে দিলো। আরিজা বেশ খারাপ লাগছে আজমাইন এই অবস্থা দেখে। আরিজা কোনো উপায় না পেয়ে ওয়াশরুম থেকে পানি এনে আরিজা জলপট্টি দিতে থাকে। দীর্ঘ আধঘন্টা জলপট্টি দিলো কিন্তু একটুও জ্বর কমেনি। আরিজার বেশ কান্না পাচ্ছে ওর জন্য একটা মানুষের এই অবস্থা। আরো আধঘণ্টা পর যখন আজমাইন জ্বর কমলো না তখন ও ভাবছিলো। এখন কি করবে এত রাতে।

আরিজা - এখন কি আমিও তাহলে ওইটাই করবো। ওনাকে জড়িয়ে ধরে শুবো নানা। ওনাকে তো আমি স্বামী হিসেবে মানি না, যদি রাত্রে আমাদের মাঝে কিছু হয়ে যায়। এটা কিভাবে সম্ভব, কিন্তু ওনার তো জ্বরটা কিছুতেই কমছে না। যদি উনার জ্বরের ঘোরে আমার সাথে কিছু হয়ে যায়।

আরিজা কথাগুলো ভেবে আরিজা পাশে বসে রইলো, এর মাঝে ওর কাঁপুনিটা আরো বেড়ে যাচ্ছিলো। আরিজা আরো খারাপ লাগতে শুরু করে। এর মাঝেই ওর কারো হাসির শব্দ শুনতে পেলো তখন ও সামনের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো, কিছুটা দূরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর দেখতে হুবহুব ওর মত । আরিজা বেশ ভয় পেয়ে যায়,আর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে।

আরিজা - কে...কে... কে তুমি আর হাসছো কেনো ?
বিবেক - আরিজা আমি তোর বিবেক, আজকে তোকে দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে জানিস তো। আচ্ছা তুই এতটা স্বার্থপর কীভাবে হতে পারলি বলতো। একটা মানুষ যে কিনা তোর স্বামী তাকে তুই এভাবে কষ্ট নারছিস কষ্ট দিচ্ছিস। মানুষটাকে তুই ভালোবাসিস না তার ওপর তাকে দিনের পর দিন কষ্ট দিচ্ছিস, তুই এটা কি করছিস বলতো।

আরিজা - কিন্তু আমিতো ওনাকে ভালোবাসি না আর বাসতেও পারবো না, তাহলে ওনাকে স্বামী হিসেবে কিভাবে মেনে নিবো।

বিবেক - আসলেই তুই স্বার্থপর। নাহলে এইভাবে কোনো মানুষ মানুষকে কষ্ট দেয়। একটা মানুষ অসুস্থ তার পাশে বসে বসে তুই তার এ রকম অসুস্থতা দেখে যাচ্ছিস, আসলেই তুই একটা স্বার্থপর।

আরিজা - আমি কি করবো, আমি ওনাকে ভালোবাসতে পারবো না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি, তাহলে ওনার সাথে আমি এক বিছানায় কি করে থাকবো। যদি আমাদের মাঝে কিছু হয়ে যায়।

বিবেক - আসোলেই তোকে বাহবা দিতে হয় তোর মধ্যে মানুষত্যা বলতে কি কিছু আছে। একটা মানুষ এভাবে কষ্ট পাচ্ছে আর তুই কিনা তোর ভালোবাসাটা নিয়ে পড়ে আছিস। আচ্ছা তুই যাকে ভালোবাসিস একবারও কি তার খবর নিয়ে দেখেছে সে তোকে ছেড়ে ভালো আছে কিনা। তুই কি শুধু তার কথা ভাবিস নাকি সে তোর কথান্ডা বা ছে কিনা। কি শুধু ভা কথা ভাবে। একবার খবর নিয়ে দেখিসনি তারপর তার জন্য কেঁদে মরিস। আর তোর জন্য আরেকটা মানুষ এইভাবে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে তুই আমাকে ভালোবাসতে পারবি না। মানুষটাকে তোর বিয়ের আগে এসব বলে দেওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু তুই ওর জীবনে এসে জীবনটাকে পুরো নষ্ট করে দিয়েছিস। ছেলেটা কখনো কষ্ট পায়নি আর তুই তাকে বারবার কষ্ট দিচ্ছিস। এর জন্য তুই সারাজীবন একজনের কাছে অপরাধী হয়ে থাকবি। আর আজকে যদি ছেলেটার কিছু হয়ে যায় না তার জন্য কে একমাত্র দায়ী থাকবি তুই।

আরিজা - কিন্তু আমি
বিবেক - ওর তোর স্বামী ওর সাথে তোর কিছু হলেই বা কি। ওর অধিকার আছে তোকে নিজের করে নেওয়ার। তুই ওকে ভালোবাসতে পারিস না তাই বলে কি ও তোকে ভালোবাসবে না। ওর কি অধিকার নেই তোকে নিজের করে পাওয়ার। তোর মধ্যে মানুষত্ব বলে কিছু থেকে থাকে তাহলে তুই ওর কষ্টটা বুঝবি
আরিজা - আমি৷

- আরিজা কিছু বলতে যাবে, তার আগে মেয়েটা কোথায় যেনো মিলিয়ে গেলো আর আরিজা ওর বলা কথাগুলো বারবার ভাবতে লাগলো। ওর বেশ খারাপ লাগছিলো তাই ও ভাবলো।
আরিজা- ও ঠিকই বলেছে আমি ওকে ভালোবাসতে পারিনা তাই বলে এভাবে কষ্টের কারন হবো আমার মধ্যে মনুষত্ব বলতে কিছু নেই। আমি অনেক নিষ্ঠুর হয়ে গেছি। আর আমিতো একবারও রাফিনের খোঁজ খবর নিয়ে দেখিনি ও ভালো আছে কিনা। আমাকে জানতে হবে ও ভালো আছে কিনা। কিন্তু সেটা না জেনেই আমি আর একজনকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছি। আমি হয়তো ওকে ভালোবাসতে পারবো না তাই বলে ওকে কষ্ট দিবো। এটা আমার কোনো ভাবেই ঠিক হচ্ছে না। আজকে ওর কিছু হয়ে গেলে তার জন্য একমাত্র দায়ী থাকবো আমি।
আরিজা কথাগুলো ভেবেই আজমাইন দিকে তাকাতে দেখলো ও অনেকটা কাপছে। ও মনটাকে শক্ত করে নেয় আর কিছু না ভেবেই আজমাইন পাশে শুয়ে পড়ে তারপর ওর অনেক টাকা আছে চলে যায়। আরিজা ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরতেই আজমাইন ওর স্পর্শ পেয়ে ওকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে। আরিজাও আর কোনো উপায় না পেয়ে ওকে দুই হাতে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। ও কেমন যেনো একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যাচ্ছিলো। আজমাইন নিঃশ্বাসটা যতবার আরিজা শরীরে পড়ছে, ও ততবারই একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছিলো।

চলবে,,


অবহেলিত স্বামী
পর্ব-৩
লেখকঃ আজমাইন হোসেন_ মিস্টার_লেখক_পিচ্চি

Post a Comment

0 Comments