Header Ads Widget

Responsive Advertisement

তোর মায়ায় আসক্ত - পর্ব ৫

আনাফ সত্যি সত্যি বিয়ে করছে। ওর লাইফের এতগুলো বছর নষ্ট করে সে নতুন করে তার জীবন সাজাচ্ছে এটা মেনে নিতে পারছে না আদিয়া। রাগে হিস হিস করছে। দুটো দিয়েও যেন শান্তি হয়নি। আবারও হাত উঠায় আনাফের গালে মা'রা'র জন্য। কিন্তু আনাফ এবার আদিয়ার হাত ধরে ফেলে।


- কি সমস্যা এভাবে সিনক্রিয়েট করার মানে কি?
- কমই তো করলাম। টিট ফর ট্যাট কথাটা জানোনা তুমি। তুমি আমার লাইফ নষ্ট করে নতুন করে সব শুরু করছো সেটা কীভাবে হয় বলে।
এতক্ষনে বিয়ে বাড়ির প্রায় সব মানুষ এখানে জড়ো হয়ে গেছে৷ সবাই জানতে চাচ্ছে কি হয়েছে?
আনাফ তাদেরকে বলে কিছু হয়নি। চলে যান এখান থেকে সবাই। কিন্তু পাবলিকের আগ্রহ কি তাতে কমে। তখন আনাফের মা সামনে এগিয়ে আসে। তখন আদিয়াও তার সামনে যায়।
- আন্টি আপনিও কীভাবে ওর সাথে সায় দিলেন। আপনি তো জানতেন আমি ওকে কতটা পছন্দ করি। এত বছর আপনার বাসায় আসা যাওয়া কেন তাওতো জানতেন। তারপরও আপনি ওকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে রাজি হলেন কীভাবে?
- দেখো আদিয়া সংসার তো আমি করব না। সংসার করবে আনাফ। আর ওর লাইফে ও কাকে রাখবে না রাখবে সেটা শুধু ওর ডিসিশন। আমি কি বলতে পারি।
- আন্টি আপনিও ওর মতো।
- আদিয়া তুমি এখানে সিনক্রিয়েট করো না। চলে যাও। আদিয়া ব্যাপারটা তোমারও বোঝা উচিত একটা ছেলে বিয়ের জন্য কেমন মেয়ে খুজে। অবশ্যই কম বয়সী মেয়ের চাহিদা বেশি থাকে। আর তাছাড়া ও বাহির থেকে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে এসেছি। ওর পাশে এখন অবশ্যই একটা সুন্দরী মেয়েকে মানাবে।
আকাশ এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার থাকতে পারে না। এগিয়ে আসে সামনে। তারপর বলে
- বেয়াদবি মাফ করবেন আন্টি। আপনি আনাফের মা মানে আমারও মায়ের মত। আনাফও আমার ফ্রেন্ড ঠিক আছে। তবে এখানে আদিয়ার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে তাই ওর সাপোর্ট না করে আমি পারলাম না। আচ্ছা আন্টি আপনার ছেলে বাহির থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসছে বলে যে বড় কথাটা বললেন আপনি কি জানেন আপনার ছেলে এত দূর আসতেই পারত না যদি আদিয়া ওকে হেল্প না করত। আপনার ছেলের বাহিরে যাওয়ার সময়ের যে খরচটা সেটাও আদিয়া দিয়েছিল।
আনাফের মা আদিয়া যাতে চলে যায় তাই ছেলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিল। কিন্তু এমন একটা কথা শুনে তিনি বেশ অবাক হন। কেননা আনাফ কখনো তাকে এ ব্যাপারে বলেনি। তাই অবাক হয়েই জানতে চাইল
- কি বলছ এসব। ও তো বলেছিল ওর একটা ফ্রেন্ড এর থেকে ধার নিয়েছে। পরে বলেছিল সেটা নাকি দিয়ে দিয়েছে।
- ওহ আপনাকে তাহলে এগুলা বলেছে। মূল ঘটনা আমি বলছি তাহলে -
ফ্লাসব্যাক-
কলেজে তখন আমরা ফাস্ট ইয়ার এর স্টুডেন্ট। আমাদের কলেজেটা মূলত ন্যাশনাল ভার্সিটি। তার পাশাপাশি ইন্টার এর স্টুডেন্টরাও পড়ে। তো আমরা সেখানেই ইন্টার করছিলাম। আমরা যখন এডমিশন নেই তখন আনাফ সেখানে এডমিশন নেয়নি। আদিয়া আর আমি প্রথম থেকেই ছিলাম কিন্তু তখন আদিয়ার সাথে আমার এত ফ্রেন্ডসিপ ছিল না।
সেই সময় আমাদের কলেজে লিডার টাইপ ছেলে পুলে ছিল কিছু৷ এরা মূলত পলিটিক্স এর সাথে যুক্ত ছিল। তাদের মধ্যে লিডার ছিল আরফিন আয়মান সায়ন। সে ছিল দেখতে অত্যান্ত সুদর্শন। আর গম্ভীর টাইপের মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা খুব একটা কথা বলত না। দেখতে সুদর্শন বলে তিনি যে মেয়েদের ক্রাশবয় ছিলেন এটা বলাই যায়। কিন্তু তার এই গুরুগম্ভীর মুডের জন্য কেউ তার সামনে গিয়ে কখনো কিছু বলতে পারে নি। ছেলে মেয়ে উভয়ই মোটামুটি তাকে ভয় পেয়ে চলত। বেশি কথা বলত না বা কাউকে শুধু শুধু মা'রধর ও করত না। কিন্তু কেউ যদি অন্যায় করত তাহলে তাকে তার উচিত শাস্তি দিয়ে দিত।
প্রথম যেদিন আদিয়া কলেজে আসে সেদিন ও যখন স্কুলের সামনে ছিল তখন সেখানে সায়ন ভাইয়াও ছিল। সেখানে একটা অন্ধ লোকও ছিল যে রাস্তা পার হতে পারছিল না৷ পরনে ছেড়া ময়লা পোশাক। কিন্তু তার দিকে পরোয়া না করে আদিয়া এগিয়ে গিয়ে লোকটার হাত ধরে রাস্তা পার করে দিয়েছিল। যে ব্যাপারটা নজর এড়ায়নি সায়নেরও। সায়নের ব্যাপারটা দেখে অনেক ভালো লাগে। যে অন্য মেয়েরা হলে লোকটার এমন ছেড়া ময়লা পোশাক দেখে মুখ ঘুড়িয়ে চলে যেত। সেখানে এই মেয়ে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিয়েছে৷ তাই মেয়েটাকে একটু ভালো লেগে যায়।
তবে এই ভালোলাগা টাকে সায়ন পরোয়া করে না। সায়ন ভাবে ভেবে ভালো কাজ করেছে তাই হয়ত মেয়েটাকে ভালো লাগছে। বাট এর মধ্যে অন্য কোন অনুভূতি নেই।
সেদিন কলেজে ঢুকতে আদিয়ার একটু লেট হয়ে গিয়েছিল। তাই ক্লাসরুমের সব সিট মোটামুটি ফিলআপ হয়ে গেছিল। তাই পেছনের দিকে চলে যায় আদিয়া। সেখানে একটা মেয়ের পাশে একটা সিট ফাকা দেখতে পায় সেখানে গিয়ে বসে।
- হাই আমি মাহি। তুমি?
- আদিয়া।
- ফ্রেন্ড?
আদিয়াও হাত বাড়িয়ে দেয়। সেখান থেকে মাহির সাথে আদিয়ার একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়। ওরা একসাথে ক্লাস করে। ব্রেক টাইমে ক্যান্টিনে গিয়ে বসে।
সবাই খাচ্ছিল তখন একটা ছেলে এসে জানায় পাচ মিনিটের মধ্যে ক্যান্টিন খালি করতে।
এ কথা শুনে সবাই তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করে। যারা বসে ছিল তারা উঠে চলে যায়।
আদিয়া তো বুজতে পারতে না যে কি এমন হয়েছে যে সবাই এমন অদ্ভুত আচরন করছে। আদিয়া তাই মাহির কাছে জিজ্ঞেস করে
- কিরে কি হয়েছেরে সবাই এমন করছে কেন?
- আরে সায়ন ভাইয়া আর তার গ্যাং আসবে ক্যান্টিনে তাই ক্যান্টিন খালি করতে বলেছে।
- এই সায়নটা আবার কে?
- এই কলেজের ক্রাশ বয়।
- ক্রাশ বয়কে দেখতে সবাই উপচে পড়বে তা না করে দৌড়াচ্ছে কেন?
- ভয়ে। ভাইয়া অনেক রাগী আর গম্ভীর টাইপের মানুষ। কোনো উল্টা পাল্টা কাজ সহ্য করতে পারে না।
- ওহ বুজছি।
- বাকিটা বাইরে গিয়ে বলব। এখন চল তাড়াতাড়ি।
- এহহ খাবার রেখে কোথায় যাব। আমি খাবার শেষ না করে কোথাও যাব না।
- আদিয়া ঝামেলা করিস না চল।
- শোন সে উল্টা পাল্টা কাজ পছন্দ করে না ঠিক আছে কিন্তু এভাবে খাবার নষ্ট করাও ভালো কাজ নয়।
মাহি অনেক বোঝানোর পরেও আদিয়া গেল না সেখান থেকে। তেড়ামি করে বসেই রইল।
কিছুক্ষনের মধ্যে আদিয়া আর মাহি ছাড়া পুরো ক্যান্টিন খালি হয়ে গেল। তারপর সায়ন ওর সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে ক্যান্টিনে এসে বসল। কিন্তু বসার সাথে সাথে ওদেরকে খেয়াল করল না। ক্যান্টিনের মামাকে ডেকে খাবার অর্ডার করে দিল।
এদিকে আদিয়ার তো ভয়ে কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। ওদের দেখে না আবার ধমক দেয়। এইসব ছেলে পুলের সামনে ধমক দিলে মান ইজ্জত থাকবে না সেটার ভয়ই পাচ্ছে। ভয়ে আর অতিরিক্ত সাবধানে কাজ করতে গিয়ে হাতে থাকা চামচটা ঝনঝন শব্দ করে নিচে ফ্লোরে পড়ে গেল।
হঠাৎ কানে শব্দ আসায় মাথা তুলে ওদের দিকে তাকাল সায়ন। আদিয়া অন্য দিকে মুখ করে বসায় আদিয়ার শুধু ব্যাকসাইড দেখা যাচ্ছে। আর মাহির মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
দুটো মেয়েকে এখনো এখানে বসা দেখে রে'গে গেল সায়ন। অন্য ছেলেদের দিকে তাকালে তারা মাথা নামিয়ে নিল। তাদের মধ্যে থাকা একটা ছেলে বলল ভাই আমরা খেয়াল করি নি। দাড়ান আমি পাঠিয়ে দিয়ে আসছি।
সায়ন বলে না থাক তোদের যেতে হবে না। আমিই যাচ্ছি। তারপর উঠে ওদের দিকে হাটা ধরে।
সায়নকে এগিয়ে আসতে দেখে মাহির কাপুনি দ্বিগুন বেড়ে যায়। ও তো ভয়ে টেবিলের নিচে ঢুকে পড়ে৷ মাহিকে টেবিলের নিচে এভাবে ঢুকতে দেখে আদিয়ার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। ও জিজ্ঞেস করে - কিরে নিচে কি করিস?
- তোর পিছনে দেখ।
মাহির কথা মতো আদিয়া ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকায়। পেছনে তাকিয়েই দেখে ওর একদম পিছনে সায়ন দাড়িয়ে আছে৷ আদিয়া যেহেতু সায়নকে চিনে না তাই ও ভয়ও পায়না৷ ও ভালো করে ছেলেটার দিকে তাকায়। মনে মনে বলে সুন্দর আছে ছেলেটা। ক্রাশ খাওয়ার মতোই চেহারা।
- এই কে আপনি। এরকম পিছনে এসে দাড়িয়েছেন কেন?
সায়ন গম্ভীর গলায় জবাব দেয় আরিফিন আয়মান সায়ন।
সায়ন নামটা শুনে ঢোক গিলে আদিয়া। মনে মনে বলে এটাই তাহলে মিঃ গোমড়ামুখো।

আদিয়া সায়নকে দেখে ভয়ে ঢোক গিলল।
- আ আপনি।
- হ্যা আমি। সবাইকে চলে যেতে বলা হয়েছিল না।
- হ্যা।
- তাহলে তোমরা যাওনি কেন?
- আপনি কি জানেন না খাবার নষ্ট করা পাপ। আমি খাবার নষ্ট করে আপনার কথা মতো চলে গেলে সেটা অন্যায় হতো।
- ভেরি ইম্প্রেসিভ!
- কি বললেন।
- না কিছুনা। তুমি ভারী ইন্টারেস্টিং গার্ল। আচ্ছা খাবার শেষ করে তাড়তাড়ি চলে যাও।
- ওকে।
এরপর সায়ন গিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসে পড়ে। আদিয়া মাহিকে টেনে টেবিলের নিচ থেকে বের করে।
- কিরে ওই বেটা নাকি গোমড়ামুখো। কই ভালোভাবেই তো কথা বলল।
- আরে সে কথা ছাড়৷ সে তোকে ভারী ইন্টারেস্টিং গার্ল বলে গেল কেন? আবার ভেরী ইম্প্রেসিভও বলে গেল কেন?
- আমি কি জানি।
- আমার মনে হয় তোর তেড়ামি বেটার ভালো লাগছে।
- এএ আসছে। এখন খেয়ে চল তাড়াতাড়ি।
এরপর ওরা খেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে সায়ন ওর পাশে দাড়িয়ে থাকা নীলয় নামের ছেলেটাকে ডাক দেয়।
- হ্যা ভাই বলেন।
- মেয়েটা দারূন না।
- কি যে বলেন না ভাই। মেয়ে মানুষ মানেই আগুন।
- স্টুপিড৷ শোন কান খুলে শুনে রাখ মেয়েটাকে আমার ভালো লাগছে। তো ওর দিকে কেউ নজর দিবি না।
- জ্বি ভাই।
- আর শোন খেয়াল রাখবি কেউ যেন এই মেয়ের দিকে না তাকায়।
- ওকে ভাই।
এর পর থেকে আদিয়া যখনই কলেজে আসত দেখত কোন ছেলে ওর আশপাশ ঘেসে না। ওকে দেখলেই চোখ নামিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। কেউ ফ্রেন্ডশিপও করে না ওর আর মাহির সাথে।
তারপর একদিন আমি ওদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আদিয়া আমাকে ডাক দেয়
- এই আকাশ শোনো?
- জ্বি আপু বলো।
- এই আমি তো তোমার ক্লাসমেট তাহলে আপু ডাকতেছ কেন?
- আপু আপনার সাথে কথা বলা নিষেধ। আর আপনাকে আপু ডাকতে বলেছে।
- কে নিষেধ করেছে?
- সায়ন ভাইয়া।
- সায়ান ভাইয়া আমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে কেন?
- তাতো আমি জানিনা আপু। আচ্ছা আমি যাই এখন।
- ওকে যাও।
আদিয়াতো বেশ অবাক। ওর সাথে কথা বলতে কেন নিষেধ করছে এটা বুজতে পারে না। ও ভাবে যে ওইদিন ক্যান্টিনে তেড়ামি করার কারনে হয়ত ওর সাথে কাউকে ফ্রেন্ডশিপ করতে দিচ্ছে না। আদিয়া এ ব্যাপারটায় তখন আর মাথা ঘাটাল না। ভাবল কাল সায়নের সাথে দেখা করে কথা বলবে। তাই বাসায় চলে গেল। সেদিনের মতো সব ঠিকঠাক ছিল।
পরদিন যথারীতি প্রতিদিনের মতোই কলেজে আসে আদিয়া। কলেজ গেটএ মাহির থাকার কথা ছিল। কিন্তু মাহি সেখানে নেই দেখে ও রে'গে যায়। মনে মনে ভাবে আজ মাহিকে ইচ্ছে মতো বকা দিবে। গেট এ না দাড়িয়ে ক্লাসে গিয়ে অন্য মেয়েদের সাথে ভাব জমানো ছাড়িয়ে দিবে।
এসব ভাবতে ভাবতে গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকল। ভিতরে ঢুকতেই নজর গেল এক কর্নারের দিকে।
সেখানে বেশ জটলা বেঁধেছে। বেশ কয়েকজন স্টুডেন্ট ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আদিয়া ভালোভাবে তাকালোদিয়ে সেদিকে। ওদিকে তাকিয়ে দেখতে পেল মাহি আছে। মাহিকে নিয়ে যেন চিল্লাচিল্লি করছে। কি হয়েছে দেখতে আদিয়াএগিয়ে গেল সেদিকে।
গিয়ে দেখো আকাশ এখানে দাঁড়ানো আর তার পাশে সায়ন গ্যাং দাঁড়িয়ে আছে। দুটো ছেলে আকাশের কলার ধরে রেখেছে। আর মাহি পাশে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছে ভাইয়া ওর কোন দোষ নেই। মাহির কথা কেউ কানেই নিচ্ছে না। ভিড় ঢেলে ঠুলে আদিয়া এগিয়ে গেল সেদিকে। এগিয়ে গিয়ে কাউকে কিছু না বলে আকাশের কলার ছাড়িয়ে নিল। আদিয়া ছাড়তে বলা ছেলের দুটো সাথে সাথে ছেড়ে দিল।
- কি হয়েছে এখানে?
আদিয়া এই কথা জিজ্ঞেস করায় ফাহিম নামের একটা ছেলে পাশ থেকে বলল এই ছেলে নাকি কাল তোমাকে ডিস্টার্ব করেছিল ?
- কে বলেছে এই ছেলে আমাকে ডিস্টার্ব করেছিল? আমি ওকে ডেকেছিলাম। কিন্তু আপনার কলার ধরে রেখেছেন কেন।কে আমার সাথে কথা বলবে না বলবে সেটা আমার ব্যাপার আপনাদের কি?
- কেউ তোমার সাথে কথা বললে সমস্যা আছে ( ফাহিম )
- কিসের সমস্যা। আমি কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছিনা এখানে। আর আকাশ আমার ফ্রেন্ড। আমি ওকে ফ্রেন্ড হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। ওর কোনো দোষ নেই। ছেড়ে দিন ওকে।
আদিয়ার কথায় সেদিনের মতো তো আমি বেচে গিয়েছিলাম৷ এরপর থেকে আদিয়ার সাথে আর মাহির সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপটাও ভালো হয়। এভাবে আমাদের দিন ভালোই কা'ট'ছিল। সায়ন ভাইয়াও কখনো আদিয়াকে কিছু বলত না। এমনি সায়নের সাঙ্গ পাঙ্গ মাঝে মাঝে খেয়াল রাখত কেউ ডিস্টার্ব করে কিনা। মাঝে আমার ডাক পরত সায়ান ভাইয়ের মহলে। আমাকে দায়িত্ব দিত আমি যেন আদু ভাইয়ের খেয়াল রাখি। তারপর সে আদিয়ার জন্য চকলেট, চিপস, আইসক্রিম এগুলা কিনে দিত। কিন্তু আদিয়া তার দেয়া জিনিস বলে ছুয়েও দেখত না। আমি আর মাহি জমিয়ে পেট পুজো করতাম তা দিয়ে। আমাদের দিনকাল ভালোই চলছিল। একসাথে কলেজে যাওয়া আসা করতাম। তো এমনি একদিন আমরা তিনজন একসাথে কলেজে ঢুকি। কলেজে ঢুকে এক জায়গায় জটলা দেখতে পাই। তিনজনের বুকই ধ্বক করে ওঠে৷ তিনজনই ভেবেছিলাম যে আবার কোন ছেলে কোন ভুল করছে তার শাস্তি দিচ্ছে। তাই তাড়াহুরো করে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। গিয়ে দেখি একটা ছেলে কান ধরে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ সহজ সরল। আর এ গ্রাম থেকে এসেছে তা হাব ভাব দেখেই বুজতে পারল। ছেলেটা চোখে একটা মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া ছিল। ব্রিলিয়ান্ট ব্রিলিয়ান্ট লাগছিল দেখতে। ছেলেটা ভয়ে আর লজ্জায় কান্না করতেছে। চোখের পানিতে চশমাটা ভিজে গেছে। যা বাহির থেকেই দেখা যাচ্ছে। এটা দেখে তো আদিয়ার মাথা গরম হয়ে যায়। তাই আশপাশে সায়নকে খুজতে থাকে। কিন্তু পাশে কয়েকজন সাঙ্গ পাঙ্গ ছিল। সাায়ন ছিল না। তাই আদিয়া গিয়া ওই ফাহিম আর অন্য ছেলেদের সাথে চিল্লাচিল্লি শুরু করে আর বলতে থাকে এই তোমাদের সমস্যা কি৷ আর কত ছেলের সাথে তোমরা এমন করবে।
তখন একটা ছেলে একটু তেজী স্বরেই বলে এই মেয়ে তুমি যাওতো এখান থেকে। তোমার জন্য এখন আমরা শান্তিতে কাউকে কিছু বলতেও পারি না। তখনই তোমার এসে ঝামেলা করা লাগবে। এই ছেলেকে তোমার জন্য মা'র'ছি না। এ নতুন তাই একটু মজা নিচ্ছি। তুমি যাও এখান থেকে।
কথাটা একটু জোরেই বলেছিল।
সাথে সাথে গালে ঠা'স করে একটা চ'র পড়ে। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে আদিয়ার দিকে তাকায়। ভেবেছে এটা আদিয়া মে'রে'ছে। তাই আবার কিছু বলতেই নিচ্ছিল তখনি ওর কান টেনে ওর মাথাটাকে ডানদিকে ঘোরায়। ও রেগে কিছু বলতে যাবে তখন তাকিয়ে দেখে সায়ন দাড়িয়ে আছে৷ চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। ভীষন রেগে গেছে বোঝাই যাচ্ছে।
ছেলেটা কিছু বলার জন্য মুখ হা করে। কিন্তু কিছু আর বলতে পারেনা। তার আগেই মুখে হাত দিয়ে চুপ করতে বলে সায়ন।


চলবে...


গল্প: তোর মায়ায় আসক্ত

পর্ব_৫


লেখনীতে: নীহারিকা নুর

Post a Comment

0 Comments