Header Ads Widget

Responsive Advertisement

তোর মায়ায় আসক্ত - পর্ব ১৯ (শেষ )

আয়ান এর কথায় কষ্ট পেলেও মনকে শক্ত করে জবাব দেয় সিরাত
- দেখুন আয়ান সাহেব আমার এখানে আসার কোন ইচ্ছে ছিলনা। শুধুমাত্র সায়ন ভাই রিকোয়েস্ট করেছে আজ রাত এখানে থাকতে তাই এসেছি। আমি আপনার কাছে আসার হলে তো আর এত বছর লুকিয়ে থাকতাম না। আমার ছোট মামী অত্যান্ত ভালো মানুষ। যখন ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম তার সাপোর্ট পেয়েছিলাম অনেক। তার মেন্টাল সাপোর্ট এর জোড়ে আমি নতুন করে বাচতে শিখেছি। এখন আর নতুন করে কারো প্রয়োজন নেই আমার জীবনে।
- কি বলছ এসব?
- কি বলছি শুনতে পাননি। আমি এখানে এসেছি শুধু সায়ন ভাই এর জন্য। তার ভালোবাসা তার কাছে ফিরিয়ে দিতে। আপনার তো বেশ উন্নতি হয়েছে মিঃ আয়ান। নিজের ভাইয়ের ভালোবাসার মানুষ এর দিকে হাত বাড়ান, পাগলামি করেন। দিন দিন বেহায়া পুরুষ মানুষ হয়ে গেছেন। আমি আপনার মুখ দর্শন করতে চাচ্ছি না। চলে যান এখান থেকে। দয়া করে যান।


সিরাত রেলিং ঘেষে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল। অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ায় পরেও আয়ানের থেকে কোনো রেসপন্স পায়না।সিরাত ভাবে আয়ান হয়ত সত্যিই চলে গেছে। এতক্ষণের চেপে রাখা কান্না এবার ভেতর থেকে মনে হচ্ছে ঠেলে বেরিয়ে আসবে। নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে ওপরের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কেদে ওঠে। আর বিড়বিড় করে বলে আমি জানতাম আপনি আমার এমন পরিস্থিতির কথা শুনলে আমাকে ছেড়ে যাবেন। যেই ভয়ে এতদিন আপনার সামনে আসিনি সেটাই আজ সত্যি হলো।
হঠাৎ কাদে কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব করে সিরাত। পেছন থেকে সিরাতের হাতের উপরে হাত রাখে। কাদে তরল কিছু পরছে মনে হচ্ছে। হঠাৎ এমন হওয়ায় ফ্রিজড হয়ে দাড়িয়ে থাকে সিরাত। সিরাত বুজতে পারে আয়ান কাদছে। একটু সময় কাদতে দেয়। এরপর শুরু করে মোচড়ানো।
- ওফফ এভাবে নড়তেছো কেন। চুপচাপ দাড়াও।
- আপনি আমার কাছে কেনো আসছেন। আপনি তো এখন অন্য কাউকে ভালোবাসেন। আমার কাছে কি তাহলে। যান না।
- দূর পা'গ'লি। অন্য কাউকে ভালো না বাসলে তোমাকে খুজে পেতাম বলো। কেউ হারিয়ে গেলে খুজে পাওয়া যায় কিন্তু তোমার মতো গা ঢাকা দিয়ে থাকলে কীভাবে খুজে পাব বলো। আর তোমার যে আরেকটা নানু বাড়ি আছে সেটা আমি কীভাবে জানব।
- আমাকে পেতে অন্য কাউকে বিয়ে করতে কেন গিয়েছিলেন মানে।
- আদিয়াকে বিয়ে করার বিষয়টা পুরোটাই ছিল একটা বানেয়াড নাটক। সেদিন ওর মায়ের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম পর দরজার আড়ালে সায়নকে দেখেছিলাম। ওকে দেখেই আমি বিয়ের কথাটা বলেছিলাম। কিন্তু তখনই ও রে'গে ফুলদানিটা আছাড় মে'রেছিল। সায়নের রাগান্বিত লাল চোখ আদিয়া বা ওর মা না দেখলেও আমি। দেখেছিলাম। তখনই প্লান করি যে আমার ভাইকে দিয়ে কাজ করানোর এই একটা বুদ্ধি পেয়েছি। তারপর একদিন আদিয়া আমাকে ফোন করে অনেক রা'গা'রা'গি করে। আমার অফিসে চাকরি করবে না জানায়। কিন্তু আমি ওকে বলি আমার প্লান সম্পর্কে। পরে আদিয়াও রাজি হয়ে যায়।বোকা ভাই আমার। সব কিছু খেয়াল রাখে। এদিকে বুজতেই পারল না যে ওকে দিয়েই কাজ করালাম।
- সে নাহয় বুজলাম। কিন্তু তখন আপনি আমার সম্পর্কে জানতেন না তাই এসব করেছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
- তোমার জন্য ভাইয়ের সাথে গেম খেললাম, মা বাবার কাছে খারাপ ছেলে হয়ে গেছি আর সেই তোমাকেই আমি ছেড়ে দিব ভাবলে কি করে। যা তোমার সাথে হয়েছে ওটা একটা এক্সিডেন্ট। আচ্ছা ধরো একটা এক্সিডেন্টে আমার একটা পা অচল হয়ে গেল। তাহলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে।
- *********
- মৌনতা সম্মতির লক্ষন। তাহলে কি আমি ধরে নিব যে তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে।
সিরাত কিছু না বলে উল্টো ঘুরে আয়ানের বুকে মাথা রাখে। আয়ান ও পরম আবেশে সিরাতের মাথায় হাত রাখে। বহু প্রতীক্ষার পরে হলেও তার প্রেয়সী আজ তার সামনে। এর থেকে বড় কি হতে পারে।
কেউ একজন একটা সিগারেট হাতে ছাদে আসছিল। স্মোক তেমন একটা করা হয় না। তবে চিন্তিত থাকলে মাঝে মধ্যে দু একটা খাওয়া হয়। কিন্তু তা রুমের মধ্যে না। ছাদে এসে। আজও এসেছিল। তখন সায়নের কথা গুলো শুনে ছাদের দরজায়ই দাড়িয়ে পরেন তিনি। এখন বিড়বিড়িয়ে বলেন না রেম্যান্স এর সময় থাকা ঠিক হবে না যাই গা। এই আপনারাও যান 🙃
আজমাইন সাহেব দরজা খুলে থ হয়ে দাড়িয়ে আছে।দরজার সামনে মাহাবুব সাহেব আর তার পুরো পরিবার দাড়িয়ে আছে।
আজমাইন সাহেবের মনে পড়ে সকালে বলা তার মেয়ের কথা। তার মেয়ে তাকে বলেছিল বাবা আজ অফিস যেও না তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। এবার বুজতে পারছে তার মেয়ে নিশ্চয়ই জানত। কিন্তু সেসব লুকিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে সালাম দেয়।
মাহবুব সাহেব সালামের জবাব দিয়ে বলে
- তোমার জন্য হিরা নিয়ে এসেছি আজমাইন।
আজমাইন সাহেব বোকা বোকা চাওনিতে তাকায়। মাহবুব সাহেব আবার বলেন
- আজমাইন হিরে নিতে হলে তার জন্য মুল্য তো দিতেই হবে। তখন কিন্তু না বলো না আবার।
আজমাইন সাহেব বুজতে না পেরে বলেন
- আঙ্কেল বাহিরে দাড়িয়ে কি বলছেন ভেতরে আসেন।
মাহাবুব ভিতরে না এসে উল্টো দিকে ঘুরে সিড়ির কাছে এসে ডাক দেন
- কইগো সুইটহার্ট উপরে আসো।
মাহাবুব সাহেব এর ডাক শুনে আস্তে আস্তে উপরে ওঠে সিরাত।
আজমাইন সাহেব প্রথমে কিছু বুজতে না পেরে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিল। মাহাবুব সাহেব বলেন
- এটাই তেমার বাবা সিরাত।
- বা বাবা
এরকম একটা মুহুর্ত যে কতটা আনন্দের তা বলার বাহিরে। চোখ চিকচিক করে জ্বলে। এটা আনন্দের জ্বল। হাত বাড়িয়ে দেয় মেয়ের দিকে। সিরাত ও এসে বাবাকে জরিয়ে ধরে।
- তা আমাদের কি ভিতরে আসতে দিবে নাকি না।
মাহবুব সাহেব এর কথায় মেয়েকে ছেড়ে সরে দাড়ায় আজমাইন। তারপর তাদের ভিতরে আসতে বলে।
তাদের বসতে দিয়ে ভিতরে যায় আজমাইন। গিয়ে জায়েদা বেগমকে খোজে। তার দেখা মিলে মেয়ে আদিয়ার ঘরে। তাকে ডাকলে তিনি বাহিরে আসেন।
- জায়েদা বাসায় মেহমান আসছে
- জানি তো।
- জানি মানে৷ তুমি জানলে কি করে।
- কি করে আবার। মেয়েই তো বলল।
- কে আসবে সেটা বলেছিল?
- না বলল সারপ্রাইজ আছে।
- ও তার মানে তুমি জানো না।
- না।
- তবে এখানে অপেক্ষা কর।
মা এত গুলো বছর পর এক সাথে তার দুই মেয়েকে বুকে জরিয়ে বসে আছে এর চেয়ে শান্তির আর কি হতে পারে।
কিন্তু এ শান্তি সহ্য হলো না ওদের বাবার। তিনি এসে বললেন
- জায়েদা মেয়েদের জরিয়ে বসে থাকলে হবে। তাদের যে পরের ঘরে দেওয়ার সময় হয়ে গেছে।
- কি বলছ কি।
- হ্যা আমি ঠিকই বলছি। মাহবুব আঙ্কেল এসেছেন। এবার তার দুই নাতিন এর জন্য বউ না নিয়ে যাবেন না নাকি।
- তুমি যে বলেছিলে ওমন ফ্যামিলতে ---
- বাদ দেও জায়েদা। তখন আয়ানের ব্যাবহারে রেগে বলেছিলাম। কিন্তু আয়ান মেটেও এমন ছেলে নয়। এগুলো ছিল সব তোমার মেয়ের আর আয়ান এর সজানো নাটক। কাল রাতে মাহবুব আঙ্কেল নিজ কানে শুনেছে। সে না শুনলে তো জানতাম ই না যে তোমার মেয়ে এই কীর্তি করতে পারে। সে যাই হোক নাটক হোক আর যাই হোক আমরা আমাদের মেয়েকে ফিরে পেয়েছি এই ঢের।
সবাই কথা রেখেছে। সায়ন ও রাখবে। ও আদিয়াকে বলেছিল সিরাত ফিরে এলে এক সপ্তাহের মাঝে আদিয়াকে ও বাড়ির বউ করবে সেটাও রেখেছে। সবাই প্রথমে না চাইলেও সায়নের জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে। বিয়ের ডেট এক সপ্তাহের মধ্যেই দেয়া হয়েছে। বন্ধু বান্ধব বিয়ে পাগল বলে ক্ষেপাতে পিছপা হয়নি। তাতে ওর কিছু যায় আসে না।
আজ দু বোনের এক সাথে হলুদের অনুষ্ঠান। সিরাত অলরেডি রেডি হয়ে নিচে গিয়েছে। আদিয়ার এখনো সাজ কম্পিলিট না হওয়ায় সে রুমেই আছে। আপাতত রুমে আর কেউ নেই। নিচে ঝুকে শাড়ীর কুচি ঠিক করছিল হঠাৎ মনে হলো শাড়ী ভেদ করে কেউ পেটে হাত রেখেছে। আদিয়া সোজা হয়ে হাতটা ধরে ফেলল। কিন্তু অপরপাশের ব্যাক্তি আরো শক্তিশালী তার সাথে পেরে ওঠা দায় আদিয়ার। তিনি আদিয়ার হাত সহ পেটে চেপে ধরেছে। পেটে ঠান্ডা কিছু একটা লাগিয়ে দিয়েছে।
আদিয়া হাত ঝারা মেরে সরে আসে। পেছন ঘুরে দেখে সায়ন দাড়িয়ে আছে। বত্রিশ পাটি দাত বের করে হাসতেছে। রেগে যায় আদিয়া।
- এসবের মানে কি সায়ন ভাই।
- এখনো ভাই। আজ আমাদের হলুদ। কাল বউ হবে তুমি আমার এখনো ভাই বলছো।
- কাল বউ হলে তখন দেখা যাবে।
- কিন্তু আমার যে আর তর সইছে না।
- ধ্যাত লুচু বেটা। লজ্জা শরম নাই।
- এই মেয়ে তুমি কি ভাবছ। এই ছি ছি আমি কিন্তু ওসব বলিনি। আমি বলেছি বউ সাজে দেখব সেই তর সইছে না। তুমি এটা ভাবলে কেন। তার মানে সামথিং সামথিং।
আদিয়া কি বলবে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলেছে। মনে মনে বলে দূর মনটাকে নিয়েও আর পারিনা। এত নাউজুবিল্লাহ মার্কা চিন্তাটা কেন করতে গেলাম।
- থাক বউ আর লজ্জা পেতে হবে না। কাল এমনি লজ্জা ভেঙে যাবেনে।
- আপনি এখানে কেন। আপনার না ও বাসায় থাকার কথা ছিল।
- আরে আমার আগে কেউ আমার বউকে হলুদ ছোয়াবে এটা কি করে হতে পারে। তাই রুমের দরজা তালা লাগিয়ে ভেতরে হলুদ নিয়ে বসে ছিলাম। এখন বেলকনি টপকে এসে পরেছি। এখন তুমি একটু হলুদ ছুয়িয়ে দিলেই আমি ও বাসায় যেতে পারি। সবাই ফোন দিচ্ছে।
-হলুদ পাব কই।
- তেমার হাতেই তো আছে।
আদিয়া হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতে হলুদ লেগে আছে। একটু আগে সায়ন হাত ধরায় হাতে যপ হলুদ লেগেছে তাই লাগিয়ে দেয় সায়নের গালে।
- কাল দেখা হচ্ছে জানেমান আজ আসি।
বাসর ঘরের দরজায় কাজিন দের টাকা পয়সা দিয়ে ঝামেলা মিটমাট করে রুমে এসেছে সায়ন। সামনে তার বউ এক হাত ঘোমটা টেনে বসে আছে। মুচকি হাসে সায়ন। অবেশেষে ----। ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয় কথাটা আসলেই সত্যি। কিন্তু কি মনে করে যেন সায়ন একটু রেগেই সামনে আগায়। তারপর বলে
- তেমার সাহস দেখে আমি অবাক আদিয়া। তুমি আমার সাথে গেম খেল। আমার ইমোশন নিয়ে খেললে তুমি। তুমি জানো যখন আয়ান ভাইয়া পা'গ'লা'মি করছিল আমি কত ভয় পেয়েছি। তোমার এজন্য শাস্তি পেতে হবে। কঠিন শাস্তি।
হুট করে ঘোমটা সরায় মাথা থেকে। ঘোমটা ফেলে উঠে দাড়ায়। তারপর বলে
- দুলাভাই এটা কেমন কথা। আপনি বাসর ঘরে আসছেন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবেন তা না। দিলেন তো মজাটা নষ্ট করে।
ছেলে কন্ঠ শুনে চমকে গিয়ে তাকায় সায়ন। সামনে আকাশকে দেখে আরো অবাক। তাহলে আকাশ এতক্ষণ এখানে বউ সেজে বসেছিল। ভাগ্যিস জরিয়ে টরিয়ে ধরেনি। তাইলে আজ মান ইজ্জত ফালুদা হয়ে যাইত।
অবাক হওয়া সায়নকে আরো অবাক করে দিয়ে খাটের নিচ থেকে বের হয় মাহিরা।
- দূর দুলাভাই আপনি এত আনরোমান্টিক কেন। এতক্ষণ কষ্ট করে খাটের নিচে বসে থাকলাম মজাটাই নষ্ট করে দিলেন। একটু রোমান্টিক কথা বার্তা না বলে ডিরেক্ট শাস্তির হু'ম'কি। শোনেন বহু কষ্টের বউ। শাস্তি টাস্তি দিয়েন না।
- ভাগ্যিস রেমান্টিক কথা বলিনি ( বিড়বিড় করে)।
এই আমার বউ কই। করছ কী?
- বউ চাইলে টাকা লাগবে।
- আরো টাকা।
- অবশ্যই। টাকা নাই বউ নাই। বাসর ঘরে বসে মসা মা'রে'ন।
অগত্যা আবার টাকা গুলো নিয়ে গেল সায়নের। সে যাই হোক টাকা নিলেও তার এত সাধের বউটা এবার অন্তত দিয়ে যাবে।
দুই মাস হয়ে গেছে বিয়ে হয়েছে। বেশ ভালোই চলছিল দিনকাল। আজ একটু আদিয়া বাহিরে গিয়েছিল। বাসায় এসে দেখে সায়ন চুপ মে'রে বসে আছে। আদিয়া কথা বলতে গেলে সেখান থেকে উঠে চলে যায়। জিজ্ঞেস করলেও কোনো কথা বলে না। আদিয়ার কষ্ট লাগে। বুজতে পারে না হঠাৎ এই লোকের কি হলো। পুরো দিন টা ইগনোর করে চলছে। রাতেও কথা না বলে এক পাশে শুয়ে পড়ে। অন্যদিক ঘুরো শুয়ে আছে। আদিয়া জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে কোনো জবাব দেয় না। আদিয়া সায়নের পেছনে সায়নের দিকে মুখ করেই শুয়ে পড়ে। সায়নের টিশার্ট গলিয়ে হাত ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু জড়িয়ে ধরে না সায়নের বুকে জোড়ে চিমটি কা'টে। সায়ন রাগ না করে ওর হাত সরিয়ে দেয়। আদিয়া আবারও সেম কাজ করে। সায়ন এবার আদিয়ার হাত জোড় করে চেপে ধরে আর বলে
- এই হাত অন্য কেউ ধরেছে। হাত ভালোভাবে ওয়াশ না করে ধরবে না আমায়।
আদিয়া মনে মনে বলে ও আচ্ছা এই ব্যাপার। এজন্য মশাই রাগ করে আছেন। তারপর শুনিয়ে শুনিয়ে বলে
- অন্য কেউ হাত ধরেছে সেটা যখন দেখেছেন তাহলে তাকে চড় মা'রার দৃশ্যও নিশ্চয়ই দেখেছেন।
আসলে আমি আজ মাকে বলেই বাহিরে বের হয়েছিলাম। হুট করে কোথেকে আনাফ চলে এসেছি বুজিনি। ও ভুল করেছে এটা বুজতে পারছে তাই ক্ষমা চাইতে এসেছে। আর আমাকে বলছিল ব্যাক করার সুযোগ আছে কিনা। আমাকে কখনো কষ্ট পেতে দিবে না। ব্লা ব্লা। তারপর তার গাল বরাবর চড়টাও দেখেছেন আপনি।
- এক্সপ্লেইন করতে বলিনি। আপনি বের হওয়ার সাথে সাথে আম্নু ফোন দিয়ে বলেছে। আমি সবই দেখেছি।
- ওফফ আপনার জন্য না পাঠকের জন্য এক্সপ্লেইন করেছি।
- হুহ বুজছি। ঘুমিয়ে পড়। ওই আনাফের এই চড়ে কিছু হবে না। ওরে বলছিলাম হাত সংযত রাখতে নয়ত হাত ভেঙে দিব। ওর ভাঙা হাত নিয়ে ঘোরার শখ তাই আবার হাত বাড়িয়েছে।
আদিয়ার এখানে কিছু বলার নেই এমনি রেগে আছে। আর আনাফের শাস্তি প্রাপ্য। ও এখানে ওর সাথে রিলেশন রেখে, ভার্সিটি ফ্রেন্ড মার্টিনার সাথে পার্সোনাল টাইম স্পেন্ড করে দেশে এসে সুন্দরী কাজিনকে বিয়ে করতে চাচ্ছিল। ওর এমন হাল করা উচিত যেন জীবনে বিয়ে না করতে পারে।
আদিয়া ভাবছিল সব ঠিক হয়ে যাবে তাই ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছিল কিন্তু সাহেব এখনো রেগে আছে। ফ্রাইডে তাই অফিসে যায় নি। বাসায় বসে আছে কিন্তু আদিয়াকে পাত্তাই দিচ্ছে না। কোনো কথা বলছে না। আদিয়া ভাবে কি করা যায়। হঠাৎ একটা আইডিয়া মাথায় আসায় মুচকি হাসে আদিয়া। এরপর রুমে চলে যায়। সায়ন বেলকনিতে ছিল।
আদিয়া সব জামা কাপড় লাগেজে ঢুকাতে শুরু করছে। সায়ন এসে দেখে জিজ্ঞেস করে কি করছ?
- আমি বাবার কাছে চলে যাচ্ছি।
- সত্যিই যাবে?
- হুম।
- কেন?
- যেখানে কেউ আমাকে ভালোবাসে না সেখানে থাকব না আমি।
- কে বলল ভালোবাসে না।
- এই যে দু মাস হয়ে গেছে একবার ও আপনি বলছেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন। ইনফ্যাক্ট সেই শুরু থেকে একবার ও বলেন নি। এখন আবার কথাও বলছেন না। থাকবই না এখানে।
- দূর পাগলি মেয়ে। ভালোবাসি না বলেও ভালোবাসা যায়। আমি মনে করি ভালোবাসা ক্ষনিকের ব্যাপার। কিন্তু কারো মায়ায় আটকে যাওয়াটা মেইন। ভালোবাসা হয়ত ভুলে থাকা যায় কিন্তু নির্দিষ্ট কারো মায়ায় আটকে গেলে তাকে ভোলা সম্ভব না। আমি তো #তোর_মায়ায়_আসক্ত হয়ে গেছি পা'গ'লি আর সারা জীবন তোর মায়ায় আসক্ত থাকতে চাই৷ সাথে চাই তুইও সারাজীবন আমার পাশে থাক। কি থাকবিতো?
আদিয়া কিছু না বলে সায়নের বুকে মাথা রাখে। সায়নও পরম আবেশে জড়িয়ে নেয় তার শ্রেয়সীকে। তারপর বিড়বিড় করে বলে
- ভাগ্য করে একটা বউ পেয়েছি যে রাগ করলে রাগ তো ভাঙায়ই না উল্টো রাগ দেখায়।
- কি বললে?
- না বলছি আমাদের তো হানিমুনে যাওয়া হয়নি। একটা পুচকু না হলে ভালো লাগে বলো। চলো যাই।
- ধ্যাত খালি চিন্তা ভাবনাই এসব। আপনি কি করবেন সব এক্সপ্লেইন করতে হবে না। সবাই কেমন পড়ার জন্য আরো নিচে যাচ্ছে দেখেন না৷ চলেন যাইগা। টাটা পাঠকমহল।
🌼🌼সমাপ্ত🌼🌼
( গল্প ভালো হোক বা মন্দ সবটা জানানোর অধিকার আপনাদের আছে তাই আপনারা আপনাদের মুল্যবান মতামত জানাবেন। আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে নতুন কোন গল্পে তবে তা একটু দেরীতেই। এডমিশন যুদ্ধ শেষ না করে আর না। দোয়া করবেন আমার জন্য। আর সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ)


গল্প: তোর মায়ায় আসক্ত

#পর্ব_১৯ (শেষ)

লেখনীতে: নীহারিকা_নুর

Post a Comment

0 Comments