আজমাইন এভাবে বসে থাকলে হবে কিছু তো বলো। একটা সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে।
মাহবুব সাহেবের কথায় নড়েচড়ে বসে আজমাইন সাহেব। আয়ান ও সোহরাব সাহেব আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এখানে এখন কি ড্রামা হবে সেটা দেখার জন্য।সায়ন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। তার চোখে মুখে চিন্তার রেশ নেই।
তখন আজমাইন সাহেব বলেন।
- আঙ্কেল আমি চাচ্ছি আদিয়ার মতামতটা জানতে।
- হ্যা অবশ্যই।
আজমাইন সাহেব জায়েদা বেগমকে ডেকে বলেন আদিয়াকে নিয়ে সামনে আসতে।
জায়েদা বেগম আজমাইন সাহেবের কথায় আদিয়াকে নিয়ে সামনে আসে।
আদিয়া ভেবেছিল অফিসে গিয়ে আয়ানকে না করে দিবে। কিন্তু তার আগেই এমন একটা সিচুয়েশনে পড়ে যাবে এটা ভাবনার বাহিরে ছিল।
আদিয়া এসে বসতেই মাহাবুব সাহেব বলেন।
- দিদিভাই এখানে কি হচ্ছে তুমি হয়ত এতক্ষণে অনুমান করতে পেরেছো। এখন সব কিছু তোমার মতামত এর উপর নির্ভর করতেছে।
আদিয়া মুখ তুলে তাকায় মাহাবুব সাহেব কি বলতে চায় সেটা শোনার জন্য।
- দিদিভাই তুমি কাকে পছন্দ করো বলো। তোমার যাকে ভালো লাগবে আমি তার সাথেই তোমার বিয়ে দিব।
আদিয়া কথা না বলে ওর বাবার দিকে তাকায়।ওর বাবা কাছে আসলে আস্তে জিজ্ঞেস করে বাবা এসব কি হচ্ছে। বিয়েটা কি কোনো ছেলেখেলা নাকি। এভাবে কেউ বিয়ে করে নাকি।
আজমাইন সাহেব মেয়েকে বলে যে তুমি একটা এন্সার দাও বাকিটা আমি দেখতেছি।
বাবার কথায় আস্সস্থ হয় আদিয়া। নরম কন্ঠে জানায় সে বিয়ে করলে সায়ানকে করবে।
আদিয়া সায়ানের কথা বলতে দেরী হয়েছে আায়ানের ক্ষেপে যেতে এক মুহুর্ত সময়ও লাগে নি। সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। সামনে থাকা টিটেবিলে সজোরে লাথি বসায়। টেবিলের ওপরে থাকা গ্লাস, পিরিজ যা ছিল সব ভেঙে গুড়িয়ে যায়। আয়ান শক্ত কন্ঠে শুধায় এ বিয়ে সে কোন মতেই হতে দিবে না।
আয়ানের বাবা মা বুজিয়ে সুজিয়ে সায়ানকে বসায়। সোহরাব সাহেব মুলত তার বাপের জন্যই মুখে কুলুপ এটে বসেছিলেন। কিন্তু ছেলের এমন উগ্র আচরণে লজ্জিত হন তারা। ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
কিন্তু আজমাইন সাহেব এবার গলায় একটু কঠোর ভাব এনে বলেন
- আঙ্কেল আমার ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি যা বলার সামনা সামনি বলছি এমন একটা ফ্যামিলির সাথে আমার মেয়ে আমি বিয়ে দিবনা। যেখানে ভাই ভাইয়ের প্রতিদন্দী হয় সে ফ্যামিলিতে আমার মেয়ে কখনোই সুখী হতে পারবে না। তাই এ বিয়ে সম্ভব না।
আজমাইন সাহেব এর কথায় মুখ চুপসে যায় সবার। এরপর আর কোনো ভাবেই রাজি করানো গেলনা তাকে। তিনি একবার বেকে বসেছেন। আর তার কথায় অনড় তিনি। অবশেষে বাধ্য হয়ে চলে যায় তারা।
তবে সায়ন যাওয়ার আগে বলে যায় আঙ্কেল আজ আপনি যেমন করলেন তাতে হয়ত কখনো আপনার সামনে আমার আসা উচিত না তবে আমি কথা দিচ্ছি আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করবই এট এনি কস্ট।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
সারাদিন বেশ ভালোই ধকল গেল। আদিয়ার এখন বেশ টায়ার্ড লাগছে। তাই ডিনার সেরে এসেই ধপাশ করে শুয়ে পড়ে। চোখটা প্রায় লেগে আসছিল তখনই ফোন বেজে ওঠে। উঠে বসে আদিয়া। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে আায়নের ফোন। আদিয়া ফোন রিসিভ করে। আয়ান কিছু একটা বলে আদিয়াকে। আদিয়া ফোন রেখে আবার শুয়ে পড়ে।
★★★★★★
নিজের বাসায় কোন জায়গায় কি থাকে সেসব বিষয়ে আমাদের সবার বেশ ভালোই অভিজ্ঞতা থাকে। তেমনি সায়নেরও রয়েছে। বেলকনি টপকে জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলতে তেমন একটা সময় লাগল না সায়নের। পা টিপে টিপে রুমে ঢুকল। তার সামনেই ঘুমিয়ে আছে এক রমনী। যার মুখ মায়ায় ভরা। তাকালে তাকিয়ে থাকতেই মনে চায়। এর মায়ায় আাসক্ত না হয়ে থাকা যায় না। সায়ন আস্তে আস্তে বেড সাইডে বসে। হাতে ভর করে ঝুকে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। হঠাত নড়ে ওঠে আদিয়া। চোখ পিটপিট করে। এখনই চোখ মেলবেএমন একটা সিচুয়েশন। তবে আজ আর সায়ন পালিয়ে গেলনা। সে ভাবলেশহীন বসে আছে। আদিয়া চোখ মেলে তাকায়। সায়নকে সামনে দেখে অবাক না হয়ে ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে
- সায়ন ভাই আপনি আমার সপ্নে আসা শুরু করেছেন কেন। দ্যাটস নট ফেয়ার সায়ন ভাই। শুনেন নি বাবা কি বলেছে। বাবা আপনার সাথে আমার বিয়ে দিবে না। শুধু শুধু আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না বলে দিলাম। শোনেন আপনি যদি পারেন তাহলে আমার বোনকে খুজে বের করুন। তাহলে আমরা দুই বোন আপনাদের দুই ভাইকে বিয়ে করব। নয়ত সম্ভব নয়।
সায়ন এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল এবার বলে
- আচ্ছা ম্যাডাম আমি তাহলে আপনার সপ্নেও আসি।
- শুধু আসেন। ডিস্টার্ব ও করেন।
সায়ন এবার হাত দিয়ে আদিয়ার চুলে হাত দেয়। টান লাগে চুলে। আহ শব্দ করে ওঠে আদিয়া। পুরোপুরি চোখ খুলে তাকায়। উঠে বসে। এবার সায়নের দিকে তাকিয়ে বলে
- একি আপনি এখানে কেন?
- তো অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুজি?
- ছি ছি কিসব বলেন। একটা মেয়ের ঘরে এত রাতে একটা ছেলে এটা কি ভালো দেখায় বলেন।
- না জানেমন ভালো দেখায় না। লোক দেখলে বদনাম হবে। তারপর আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে ভালো হবে না বলো।
- ফালতু লোক। আপনি আগের মতোই আছেন। এখনো ভালো হন নি।
- ভালো কীভাবে হবো বলো। তুমি আজ আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছ আমি যে কি খুশি তেমাকে বলে বোঝাতে পারব না। তোমাকে একবার দেখার লোভ সামলাতে পারিনি তাই চলে আসলাম। কিন্তু তুমি অজান্তেই আমার যে উপকার করলে তা আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। একবার টাইট হাগ দেয়ার ইচ্ছে ছিল তোমাকে। তবে বিয়ে না করে এসব করা যাবে না। সিরাতকে খুজে আনব আমি। ওকে যেদিন নিয়ে আসব ঠিক তার সাত দিন পর তোমাকে আমার বাসায় বউ করে নিয়ে যাব। আজ আসি বউ।
আদিয়া কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে রইল।
সায়ন বেড়িয়ে যেতে কাউকে মেসেজ করে আদিয়া। বেশি কিছু লিখে না। ছোট একটি বার্তা। যেখানে লেখা ছিল ডান।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
সায়ন তার সব গার্ডসদের লাগিয়ে দিয়েছে খোজ নেয়ার জন্য। এবার সায়ন নিজেও গিয়েছে। একসময় এই সিরাত মেয়েটাকে ওর যথেষ্ট বিরক্ত লাগত। ওর মনে হতো ওর ভাইয়ের লাইফ এই মেয়ে হেল করে দিয়েছে। এই মেয়েকে খোজার নাম শুনতেও পারত না। কিন্তু এখন যখন প্রশ্ন দাড়িয়েছে সায়নের নিজের ভালোবাসাকে নিয়ে তখন সে নিজে বেড়িয়েছে সিরাতকে খুজে বের করতে।
তিন দিন পার হয়ে যায়। কিছুতেই কিছু করতে পারে না। কোনো লোককে খুজে বের করা সায়নের জন্য মামুলি একটা ব্যাপার কিন্তু এবার একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সিরাত রা যে গ্রামে থাকত সেখানে তন্ন তন্ন করে খোজ নিয়েছে কিন্তু কেউ কোন খোজ দিতে পারেনি।
অবশেষে সিরাত যে বাড়িতে থাকত তার পাশের বাড়িতে পৌছায়। অনেক বার জিজ্ঞেস করেও কোন খোজ পায়না। অবশেষে সায়ন অনেক গুলো টাকা হাতে তুলে দেয় সেই মহিলার।
অভাবের সংসার তাদের। এতগুলো টাকার অফার পেয়ে লোভ সংবরণ করতে পারেনা।বলে দেন সিরাতের ঠিকানা।
অবশেষে সিরাতকে পাওয়া যায় তার নানা বাড়িতে। নানা বাড়ি বলতে যেই নারী ওকে নিয়ে লালন পালন করেছিল তার বাবার বাড়িতে। মেয়েকে একদিন এই সন্তানের জন্য তারা বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই মেয়ে মা'রা যাওয়ার পরে মেয়ের পালিত মেয়েকে তারা যথেষ্ট আদরেই রেখেছে।
সায়ন সব কিছু খুলে বলে সিরাত এর মামাদের কাছে। তারা প্রথমে যেতে দিতে রাজি না হলেও অনেক জোড়াজুড়ির পরে রাজি হয় তারা। যেহেতু ওর উপর এখন অনেক কিছু নির্ভর করতেছে। ওর জন্য ওর বাবা মা আজও কাদে এটা শুনে ওকে যেতে দিতে রাজি হয়। তবে আসার সময় সবার চোখে জল দেখা যায়। সিরাত আস্সস্ত করে যে ও আবার আসবে এখানে।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
সায়ন সিরাতকে ওর নিজের বাসায় নেয়না। সিরাতের বাসায় ও পৌঁছে দেয়না। ও ওকে নিয়ে একবারে ওর বাবা মায়ের কাছে চলে যায়।
বাসার কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দেয় আরজু বেগম। ছেলের সাথে এই মেয়েকে দেখে অবাক হয় আরজু। চেচিয়ে বলে
- এই মেয়ে তুমি এখানে কেন এসেছ? তেমার বাবা আমাদের অপমান করার পরও তোমার শান্তি হয়নি। বেরিয়ে যাও এখান থেকে। সায়নের আশে পাশেও যেন না দেখি তোমাকে।
সায়ন ওর মাকে থামিয়ে বলে মা না জেনে এত কথা বলা কি ঠিক।
ছেলের কথায় ভ্রু কুচকে তাকায় আরজু।
সায়ন জবাব দেয় মা ও আদিয়া নয় ও সিরাত।
সিরাত নাম শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায় আরজু বেগম। সামনে এগিয়ে এসে কাপা কাপা হাত রাখে সিরাতের গালে। গালে হাত বুলিয়ে দেয়। আর বলে
- মা তুমি এসেছ। তোমার জন্য কত মানুষের অপেক্ষা জানো তুমি। আসো ভিতরে আসো।
সায়ন ভেতরে গিয়ে বলে মা আমি এখানে থাকতে আসিনি। সিরাত এখানে আজ রাত টুকু থাকবে। ওর জামা কাপড় যা লাগে সব প্রয়োজনীয় জিনিস আমি গার্ডস দিয়ে পাঠিয়ে দিব। কাল ওকে নিয়ে রেডি থেকো। কাল ওকে ওর মা বাবার কাছে পৌছে দিতে যাব। তাদের এক মেয়েকে তাদের বুকে ফিরিয়ে দিয়ে দুই মেয়েকেই আবার তোমার কাছে আনার প্রস্তাব রাখতে যাবে। বেশি কথা বলতে ভালো লাগেনা। যা বলছি তা বুজতে পেরেছ আশা করি। এখন যা যা করার তার ব্যাবস্থা তোমরা করো আমি গেলাম। সায়ন বেড়িয়ে যায়। আরজু বেগম ব্যাস্ত হয়ে পড়েন সিরাতের সাথে কথা বলতে। কি করবেন না করবেন বুজতে পারছেন না। তিনি সোহরাব সাহেব, আয়ান, মাহবুব সাহেব সবাইকে ফোন দিয়ে সিরাতের ফেরার খবর দিয়েছেন সাথে তার ছোট ছেলের বলে যাওয়া বানীও।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
রাতের আধারে ছাদের এক কোনে রেলিং ঘেসে দাড়িয়ে আছে সিরাত। দৃষ্টিতে তার আকাশে নিবদ্ধ। এক ধ্যানে তারাদের পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। এমন সময় পেছনে কারো উপস্থিতি টের পায়। ঘাড় ঘুড়ায় না সিরাত। উপরে তাকিয়েই বলে
- তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে আয়ান। সব উত্তর আমি দিব।
আয়ান হকচকায়। ও তো কিছু জানতে চায়নি। তার আগেই এই মেয়ে বুজে গেছে।
- আয়ান আমি তোমাকে ভালোবাসিনা, তোমাকে আমার লাইফে চাইনা বলে তোমার লাইফ থেকে পালিয়ে বেরাচ্ছি এমনটা নয়। আমি তোমাকে ভালোবাসি আর সারাজীবন ভালোবাসব। তবে আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। আয়ান সেদিন রাতে চেয়ারম্যান এর ছেলে ও তার গ্যাং আমাদের বাড়িতে এসেছিল। খুব বাজেভাবে আক্রমণ করেছিল। সেদিন শত কান্নাকা'টি করেও ওসব নরপশুর হাত থেকে রক্ষা পাইনি। ওরা আমাদের মে'রে ফেলতেও চেয়েছিল। কোন মতে মাকে নিয়ে প্রানে বেচে যাই। কিন্তু আমার মা সে ধাক্কা সামলাতে পারেনি। সে হার্ট অ্যাটাক করে সেদিনই। মাকে হারিয়ে এমন একটা সিচুয়েশনে জ্যান্ত লা'শ হয়ে বেচেছিলাম আমি। সে মুখ নিয়ে তোমার সামনে আসার সাহস ছিলনা।
- তবে আজ কেন?
আয়ানের থেকে এমন কথা শুনে বুকটা মুচড়ে ওঠে সিরাত এর। তবুও মনকে শক্ত করে জবাব দেয়ার জন্য।
গল্প: তোর মায়ায় আসক্ত
#পর্ব_১৮
লেখনীতে: নীহারিকা_নুর

0 Comments