বাহিরে কাউকে না দেখে সবাই একটু অবাক হয়। তবে ভয় ঢুকে যায় জায়েদা বেগমের মনে। আয়ান ব্যাপারটা স্বাভাবিক করতে বলে আন্টি কেউ হয়ত তাড়াতাড়ি রুমে যাচ্ছিল তাই পড়ে গেছে। হবে হয়ত উপরের ফ্লাটের কেউ। আমরা তো উপরের দিকে খুজি নি তাই দেখতে পাইনি।
- হ্যা বাবা হবে হয়ত।
এরপর তারা ভেতরের দিকে যায়। কিন্তু জায়েদা বেগমের মনের খচখচানি কমেনা। এরপর আয়ান বেশ কিছুক্ষন সেখানে বসে। টুকটাক কথা বলে। এরপর অফিসের ছুতো দিয়ে বেরিয়ে যায়। আদিয়া আজ আর যেতে চায়না। আয়ানও আর জোর প্রয়োগ করেনা।
।
।
।
।
আয়ান অফিসে বসে ভাবছিল ও যা করছে তা ঠিক করছে কিনা। এমন সময় হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা উঠিয়ে দেখে সায়ন ফোন করেছে।
- কিরে কিছু বলবি ( আয়ান)
- গোপনে গোপনে এত কিছু।
- মানে কি বলতে চাইছিস তুই।
- আরে না কি বলব। শুনলাম আমার ফ্লাটে আসলা। তো দেখা করে গেলেনা যে।
- তুই কীভাবে জানলি আমি তোর ফ্লাটে গেছিলাম।
- একটু আধটু খবর রাখতে হয়।
-মানে কি বলছিস তুই।
- দেখো ভাইয়া তুমি কেন এসেছিলে আমি জানি। কিন্তু আমি তোমাকে আগেই সাবধান করে দিচ্ছি ওই মেয়ের দিকে ভুলেও হাত বাড়িও না। তাহলে সেটা ভালো হবেনা।
- সায়ন তোর মাথা ঠিক আছে। একটা মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে কথা বলছিস।
- হ্যা বলছি আমার মাথা একদম ঠিক আছে।। ভাইয়া তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি ঢ়ে জিনিসটা চাই তা যেকোন মুল্যে আদায় করে নেই। তার জন্য যা করা দরকার আমি তাই করি।
- সায়ন এই সামান্য একটা মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছিস।
- ভাইয়াাাা ( রেগে)।
- এভাবে চেচাচ্ছিস কেন
- সি ইজ সো মাচ স্পেশাল ফর মি।
- তো তাতে আমার কি।
- তাকে সামান্য মেয়ে বলবে না তুমি। তাকে ভালোবাসি আমি। সো তার সম্পর্কে কোন ফালতু কথা বললে তোমাকে ছেড়ে কথা বলব না।
- সায়ন তোর তেরামি আর গেলনা। সেই ছোট থেকে সব সময় আমার জিনিসে ভাগ বসিয়ে এসেছিস। এখন একটা মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাচ্ছি সেখানেও তুই ভাগ বসাতে এসেছিস।
- কি বললে ভাই ভালোবাসা। তুমি কি আসলে ভালোবাসার মানে বোঝো। তুমি যদি ভালোবাসার মানে বুজতে তাহলে সিরাতকে ভুলে ওর বোনের দিকে তাকাতে পারতেনা।
- তুই কি বলতে চাইছিস আমি সিরাতকে ভালোবাসি না।
- না।
- আর কত অপেক্ষা করব বল।
- ভালোবাসলে তার জন্য সারাজীবন ও অপেক্ষা করা যায়। যাই হোক বাদ দাও তোমাকে ভালোভাবে বলে দিলাম আদিয়ার থেকে দূরে থেকো।
- আদিয়া কি তোকে ভালোবাসে?
- সেটা তোমার না জানলেও চলবে।
- আমার মনে হচ্ছে আদিয়া তোকে ভালোবাসে না। তাই ব্যাপারটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করিস না। আদিয়া যদি সবার সামনে স্বীকার করে ও তোকে পছন্দ করে তাহলে আমি আর কিছু বলব না।
- ভাই তুমি শুধু শুধু চ্যালেঞ্জ দিও নাতো। আজ অবধি কোনো চ্যালেঞ্জ তুমি জিততে পারছ আমার সাথে বলো। আজ সেখানে তুমি আমার ভালোবাসার দিকে হাত বাড়িয়েছ। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে ভেঙে হাত গুড়িয়ে দিতাম। যাক চ্যালেঞ্জ যখন করেছ তো জিতার চেষ্টা করতে থাক।
এরপর সায়ন খট করে ফোন কে'টে দেয়।
।
।
।
।
।
।
আয়ান অফিসে যায়না সোজা বাসায় চলে যায়। বাসার কলিংবেল চাপতেই এসে দরজা খুলে দেন আয়ানের মা আরজু চৌধুরি। দরজা খুলে অসময়ে ছেলেকে দেখে অবাক হন তিনি। ব্যাস্ত কন্ঠে সুধান
- কিরে বাবা অসময়ে বাসায় আসলি যে। শরীর খারাপ লাগছে?
- *****
জবাব না পেয়ে অস্থির হয়ে যান আরজু বেগম। তিনি ছেলের কপালে হাত রাখতে যান। ছিটে মে'রে হাত সরিয়ে দেয় আয়ান। তার ছেলে তার মুখের উপর কখনো কথা বলত না। ছোট ছেলে একটু বাকা পথে চললেও বড় ছেলে কখনো চোখ তুলে কথা বলত না। সেই ছেলে মায়ের হাত ছিটে মে'রে সরিয়ে দিয়েছে এটা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার। তিনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন ছেলের দিকে। তাকে আরো অবাক করে দিয়ে ছেলে তার সামনে থেকে হনহন করে গেল। নিজের রুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আরজু বেগম অবাক নয়নে তাকিয়ে আছেন সেদিকে।
পরপরই সেখান থেকে ভাঙার আওয়াজ পাওয়া যায়। আরজু বেগম দৌড়ে উপরে আসেন। দরজা ধাক্কাতে শুরু করেন। কিন্তু তার আওয়াজ ভেতর অবধি পৌছাচ্ছে কিনা কে জানে। একটার পর একটা জিনিস ছুড়ে মা'রছে যা ফ্লোরে পড়ে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হচ্ছে তার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
আরজু বেগমের ডাকে সারা না দেয়ায় তিনি ছুটে চলে যান নিচে। ব্যাস্ত হাতে ফোন করেন আয়ানের বাবাকে। সোহরাব সাহেব অসময়ে স্ত্রীর ফোন পেয়ে অবাক হন।সচরাচর অফিস টাইমে তার ওয়াইফ তাকে ফোন করেনা। তাই কাল বিলম্ব না করে ফোন তুললেন।
- হ্যা আরজু কিছু বলবে।
- আয়ান কোথায় সে খেয়াল আছে তোমার।
- কেন কি হয়েছে। ওর পিএ নাজিয়া তো বলল নতুন এমপ্লইর সাথে বেরিয়েছে নাকি তেমার ছেলে।
- নতুন এমপ্লয়ির সাথে বেরিয়েছে আর তুমি সেটা খেয়াল রাখবে না। কোথায় গেল কি হল সেটা দেখবে না৷ কেমন বাবা তুমি।
- আরে হয়েছেটা কি তাতো বলবে।
- কি হয়েছে তা জানিনা। তবে আয়ান বাসায় আসছে। প্রচুর রেগে আছে। আসছে পর থেকে একটি কথাও বলেনি। রুম আটকে বসে আছে। রুমের একটি জিনিস ও বোধ হয় আস্ত নেই।
- কি বলো কি হয়েছে।
- জানিনা আমি। তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আস।
- তোমার এই দুই ছেলেকে নিয়ে আমার আর শান্তি নেই। একজনের পিছনে লাগাই যেন এক জনের কাজ ছিল। ছোট থেকে তা সামলাতে সামলাতে এতদূর আনছি। এখন আবার কোন ভুত চেপেছে মাথায় কে জানে।
- ও এখন আমার ছেলে হয়ে গেছে। তোমার কিছুনা না।
- এই থামো। আসছি আমি। এই হচ্ছে আরেক আজব জাতি। সিরিয়াস মোমেন্টেও স্বামীর ভুল ধরে কথা শোনাবে।
- কি বলছ।
- না কিছুনা। বলছি আমি আসতেছি এখনি।
।
।
।
।
হাফ এন আওয়ার হয়ে গেছে সোহরাব সাহেব রওনা দিয়েছেন। এখনো পৌছাননি। আয়ানের ঘর থেকে ভাাঙার আওয়াজ আসছে না এখন আর। পরিবেশ আপাতত শান্ত আছে। এর মধ্যে সোহরাব সাহেব বাসায় এসে পৌছান। ব্যাগটা সোফায় ফেলে দৌড়ে ছেলের রুমের সামনে আসেন। আরজু বেগম সেখানেই দাড়িয়ে আছেন এখনো। সোহরাব সাহেব কয়েকবার দরজায় কড়াঘাত করেন। ছেলের নাম ধরে ডাকেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া পাননা। একটু ভয় পেয়ে যান দুজনেই। অজানা ভয় আকড়ে ধরে দুজনকে। এরপর বাচ্চাদের যেমন খেলনা বা চকলেট দেয়ার কথা বলে সেরকম সুরে সোহরাব সাহেব ছেলেকে শুধালেন কি হয়েছে বাবা বল আমাকে। তোর কি চাই সেটা বল শুধু। তুই যা চাবি সেটা এনে দিব।
- প্রমিজ কর সেটা দিবে।
- হ্যা দিব।
- তোমার ছোট ছেলে চাইলেও দিবে না।
এ কথা শুনে সোহরাব সাহেব আর আরজু বেগম দুজন দুজনের মুখ চাওয়াাচাওয়ি করেন। দুজনের চেহারায়ই এবার ফুটে ওঠে বিরক্তের ছাপ। সেই এক ঝামেলা। আবার দু ভাইয়ের দন্দ্ব। তারা ভেবেছে কি না কি হয়েছে। সেই ছোট থেকে এদের দুজনের দন্দ্ব মেটাচ্ছেন। বিয়ে দিলে এতদিনে দুই ছেলের বাপ হয়ে যেত তারা এখনো নিজেদের মধ্যে লড়াই করে।তারপর সোহরাব সাহেব নিজেকে শান্ত করে শুধালেন কি চাই।
- দিবে তো?
- হ্যা দিব। বেড়িয়ে আস।
আয়ান দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। বেড়িয়ে আসার সাথে সাথে আয়ানের কান টেনে ধরে আরজু বেগম।
- আহ মা লাগছেতো ছাড়।
- হতচ্ছাড়া ছেলে। আমার সায়নটা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এখনো তুই ওর সাথে লড়াই করিস। এগুলো ভাংছিস কেন?
- ওফফ মা লড়াই করিনিতো। আমিই কিনব আবার।
গম্ভীর কন্ঠে সোহরাব সাহেব বলেন মা ছেলের কীর্তি শেষ হলে বলো কথা শেষ করে যাব আমি। অফিস টাইমে কি একটা অবস্থা। এত ঢং এর কোনো মানে আছে।
- বাবা আমি মোটেও ঢং করছি না। আম সিরিয়াস। আমি বিয়ে করতে চাই।
ছেলের কথায় অবাকের চরম পর্যায়ে সোহরাব-আরজু জুটি। ভুতের মুখে রাম নাম শুনছেন যেন এমন রিয়াকশন তাদের।
- এভাবে হা করে আছ কেন ( আয়ান)
- তুই বিয়ে করবি মানে। তাহলে কি সিরাতকে পেয়েছিস।
- না।
- তাহলে বিয়ে কীভাবে করবি।
- অন্য মেয়েকে করব।
- এটা কেমন কথা। এতদিন সিরাত এর জন্য বিয়ে করলি না। যত মেয়ের ছবি দেখালাম সব রিজেক্ট করলি তাহলে এখন কীভাবে এই মেয়েকে বিয়ে করবি।
- এত কিছু জানিনা।৷ তবে এই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই এটাই ফাইনাল।
- সে বুজলাম। মেয়ের বাবা মায়ের সাথে আমরা কথা বলব। তার জন্য এমন ভাঙচোড় এর কি দরকার ছিল।
- এগুলো কি ওই মেয়ের জন্য ভেঙেছি নাকি।
- তাহলে?
- তোমার ছোট ছেলের জন্য।
- কি বলছিস এসব।
- ঠিকই বলছি। তোমার ছোট ছেলেও সেই একই মেয়েকে বিয়ে করতে চায়।
এ কথা শুনে চুপ হয়ে যান সোহরাব সাহেব। এটাও শোনার বাকি ছিল। দু ভাই এখন এক মেয়ে নিয়ে লড়াই করবে। সোহরাব সাহেব আরজু বেগমের দিকে তাকায়। চোখাচোখি হয় তার সাথে। আরজু বেগম ও ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
- আরজু আমি যা ভাবছি তুমিও কি তাই ভাবছ?
- হুম।
গল্প: তোর মায়ায় আসক্ত
#পর্ব_১৬
লেখনীতে: নীহারিকা নুর
.jpg)
0 Comments