Header Ads Widget

Responsive Advertisement

তোর মায়ায় আসক্ত - পর্ব ১৫

আমার ছোট্ট পুতুল আমার থেকে হারিয়ে যায় নি বাবা ওকে নিয়ে গেছে আমার থেকে। যে নিয়ে গেছে তাকে আমি ক্ষমা করব না। একটা সন্তান তার মায়ের থেকে কেড়ে নেওয়া সেই মায়ের জন্য যে কতটা কষ্টের তা কেবল আমিই জানি বাবা। যে নিছে সে কীভাবে বুজবে তার তো সন্তান নেই তাই সে এই টান বুজবে না।

এসব বলতে বলতে চোখ ভিজে ওঠে জায়েদা বেগমের। আদিয়া গিয়ে তার পাশে বসে। আদিয়া বা আয়ান কারোই কনফিউশান দূর হচ্ছে না। আদিয়ার বোন আছে এটা আদিয়াই জানেনা। তা কীভাবে সম্ভব।
- আচ্ছা আম্মু আমার বোন আছে তা আমি কেন জানিনা। আর কেই বা নিয়ে গেছে।
- খুব ছোট ছিলি তখন তুই তাই তোর মনে নেই।
- কীভাবে হারালো আমার বোন। আর ছোট বেলায়ই যদি হারায় তাহলে ওর নাম সিরাতই কীভাবে হল বলতো একটু ক্লিয়ার করে।


- এক কাল নাগিনীকে বাসায় জায়গা দিয়েছিলাম। সন্তান হচ্ছিল না মেয়েটার। তাই স্বামীর বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। ডিভোর্সের পরে বাবার বাড়িতেও জায়গা হয়ে ওঠে নি। ভাইয়ের বউয়েরা এমন ডিভোর্সি ননদের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবে না বলে জানায়। ভাইয়েরাও তাদের বউয়ের কথায় স্বায় দেয়। মেয়েটা তখন অসহায় হয়ে পড়েছিল। এরপর মানুষের বাসায় কাজ করে খেত। আমি তখন দুইটা বাচ্চা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলাম। আদিয়ার বাবা থাকত অফিসে।তখন মেয়েটার খোজ পেয়ে মেয়েটাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসি। ও আমাদের সাথেই থাকত। কাজেও হেল্প করত আর দুটো বাচ্চা নিয়ে পারতাম না তাই বাচ্চাও রাখত। মাথা গোজার ঠাই পেয়ে মেয়েটা হাসিখুশিই ছিল। প্রায় অনেকদিন ছিল আমাদের সাথে। মেয়েটার উপর একটা মায়া জন্মে গিয়েছিল। ভালোই চলছিল আমাদের সংসার। মেয়ে দুটো তখন একটু বড় হল। আদো আদো বুলিতে বাবা আর মা বলতে শিখেছে। এমন এক দিনে আদিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রচন্ড জ্বর হয় মেয়েটার। চোখগুলো কেমন নীলাভ হয়ে গিয়েছিল। বেশ গাভড়ে যাই আমরা। আমি আর আজমাইন ওকে নিয়ে হসপিটালে যাই। সিরাতকে রেখে যাই সেই কাল নাগিনি মেয়েটার কাছে। সেদিন রাতে আদিয়াকে নিয়ে হসপিটালেই থাকতে হয়েছিল। আজমাইন ফোন করে খোজও নিয়েছিল সিরাত কান্নাকা'টি করছে কিনা। বলল সিরাত কান্নাকা'টি করছে না। তারা থাকতে পারবে।
রাতে কয়েকবার ফোন দিয়ে খোজ নিয়েছি বলেছে সিরাত ঠিক আছে। সকালে যখন বাসার ফোনে ফোন দেই কেউ ফোন রিসিভ করে না। প্রথম ভাবি হয়ত কিচেনে বা ওয়াশরুমে আছে তাই রিসিভ করেনি। কিছুক্ষণ পর আবার দেই তখনো ধরেনা। তখন একটু চিন্তা হয়। এদিকে আদিয়ার এই অবস্থা অন্য দিকে সিরাত এর খোজ নিতে পারিনি। শেষে আজমাইন বাধ্য হয়ে বাসায় আসে। বাসায় এসে দেখে দরজা বাইরে থে্ে লক করা। এক্সট্রা চাবি দিয়ে ভিতরে ঢোকে। বাসায় কেউ ছিলনা। সিরাতের জামা কাপড়গুলোও ছিলনা। আজমাইন বুঝে খুব খারাপ কিছু হয়েছে। তখনো জানায়নি আমাকে। আত্মীয় স্বজনদের ফোন দেয়। কোথাও যায় নাই ওরা। এরপর আমাকে জানায়। থানায় যাই আমরা।কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা না হলে মিসিং কেস ফাইল করবে না।এখন চব্বিশ ঘন্টাতো আর বসে থাকতে পারিনা তাই নিজেদের মতো খুজি। কোথাও পাইনা। তখন আমিও ভেঙে পড়েছিলাম, আদিয়াও অসুস্থ সব মিলিয়ে আজমাইন এর অবস্থা হযবরল হয়ে গিয়েছিল। পুলিশও কিছু করতে পারেনি। কোথায় নিয়ে গেল আমার মেয়েটাকে, কি উদ্দেশ্য নিল আমি কিছুই জানিনা। ও আদৌ বেচে আছে কিনা জানিনা। যেখানেই থাকুক আল্লাহ যেন ওকে সব সময় ওর মঙ্গল করেন। সিরাতকে হারানোর পরে প্রায় পাগল পাগল অবস্থা ছিল। আদিয়াকে আকড়ে বেচে ছিলাম। এজন্যই তো আদিয়ার কোন চাওয়া আমরা অপূর্ণ রাখিনা। সব সময় বন্ধুর মতো আচরণ করি। ও কোন ভুল করুক বা কোন কারনে ওর জীবন নষ্ট হোক তা চাইনা।
আচলে চোখ মুছে জায়েদা বেগম। আদিয়া মায়ের পাশে বসে মাকে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াও কান্না করে। জায়েদা বেগম বলে পাগলি মেয়ে কাদঋিস কেন তুই। এজন্যই বলতে চাইনি। আচ্ছা তোর হঠাৎ কেন ওর কথা হলো। এরপর জায়েদা বেগম আয়ানের দিকে তাকায়। তুমি কীভাবে চিন বাবা।
এরপর আয়ান বলে যে আন্টি সিরাত বেচে আছে। তাকে আমি খুজেও পেয়েছিলাম। যে তাকে নিয়ে পালিয়েছে হয়ত তার কাছেই সিরাত আছে। কেননা ও বলেছিল ওর ফ্যামিলিতে শুধু ওর মা আছে। তার মানে ওই মহিলাকেই ও মা বলে জানে।
জায়েদা বেগম এটা শুনে উত্তেজিত হয়ে যান।তার মনে ক্ষীণ আশা জেগে ওঠে যে তিনি আবার মেয়েকে দেখতে পাবেন। তারপর জিজ্ঞেস করে বসেন।
- তুমি সত্যি বলছ বাবা। ওটাই আমার সিরাত ছিল। কেমন আছে ও। ওতো অনেক বড় হয়ে গেছে এখন। এখন তো আমাদের চিনবেই না।
- ওয়েট আন্টি আমি পিক দেখাচ্ছি আপনাকে।
এরপর আয়ান পকেট থেকে ফোন বের করে পিক দেখায় জায়েদা বেগমকে। জায়েদা বেগম ফোনটা খপ করে টেনে নেন হাত থেকে। তারপর নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে। এরপর আচমকাই ফোনটায় চু'মু খেতে শুরু করেন জায়েদা বেগম। আসলে ফোনে না ফোনের স্কিনে থাকা মেয়ের পিকে চু'মু খাচ্ছেন তিনি। তার এমন আচরন দেখে আায়ান, আদিয়ার চোখও ভিজে উঠল।
হঠাৎ আয়ান এক অদ্ভুত কান্ড করে বসে। সে গিয়ে হাটু মুড়ে বসে পড়ে জায়েদা বেগমের সামনে। জায়েদা বেগম অবাক হয়ে তাকান তার দিকে।
- কিছু বলবে বাবা।
- আচ্ছা আন্টি আমি যদি আপনার ছেলে হতাম তাহলে কি আপনি আমার কথা ফেলতে পারতেন বলেন। মনে করেন আমি আপনার ছেলে। ছেলে আবদার করলে যেমন ফেলতেন না তেমন আমারটাও ফেলবেন না।
- তুমি বলতে কি চাইছ বাবা।
- আন্টি আমি সিরাতকে অনেক ভালোবাসতাম। অনেক খুজেছি ওকে। কিন্তু যে গ্রামে ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল ও এখন আর সেখানে নেই। ও ছোট বেলায় যেমন আপনার থেকে হারিয়ে গেল আর পেলেন না। বড় হয়ে আমার থেকে হারাল। পেয়েও রাখতে পারিনি আন্টি। ওকে কত খুজলাম পেলাম না। কি বলব সিরাতের জন্য আমি মেন্টালি অনেক ডিপ্রেশড হয়ে গিয়েছিলাম। পরিবারের সবার সাথেও রুড বিহেব করি। সব সময় কেমন যেন একটা আচরন করতাম। সেদিন হঠাৎ গাড়ির সামনে আদিয়াকে দেখি আমার মনে হয়েছিল আমি সিরাতকে পেয়ে গেছি। কিন্তু ও সেদিন বলে ও সিরাত না। তবে ওর কথা আমি বিশ্বাস করিনি। আমি ধরে নিয়েছিলাম এটাই সিরাত। তাই আমি আবার নতুন করে ওকে পাওয়ার জন্য সপ্ন দেখি। আমি আমার আম্মুকে বলেছি ওর কথা। আম্মুও অনেক খুশি হয়েছে।
আমি জানতাম না যে সিরাতের জীবনে এত বড় একটা সত্যি লুকিয়ে আছে। আমি নতুন করে যাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি সে আদিয়া। আন্টি আশা করি আপনি বুজতে পারছেন কি বলতে চাচ্ছি। আন্টি আপনি একটু ভেবে দেখবেন প্লিজ। এরপর উঠে দাড়ায় আয়ান।
জায়েদা বেগম হতভম্ব। কি বলবেন তিনি বুজতে পারছেন না। এদিকে আদিয়া মনে মনে গালি দিয়েই চলেছে আয়ানকে। বেটা খবিশ একটা। এভাবে নিজের বিয়ের কথা কেউ নিজে বলে। তাও এমন একটা সিচুয়েশনে। তুই তো বেটা একটা আস্ত খবিস। তুই আসলে আমার বোনকে ভালোই বাসিস নি। তাহলে তুই সিরাতের জায়গায় আমার কথা ভাবতেও পারতিনা। আমি তো তোকে বিয়ে করব না। একজন মানুষ আমার জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করছে তাকে ছেড়ে কি আমি আমার বোনের ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে করবনাকি হুহ।
আদিয়া মনে মনে বিড়বিড় করেই যাচ্ছিল জায়েদা বেগম আস্তে ধাক্কা দেয় ওকে।
- কিরে কি বিড়বিড় করছিস।
- ক ক কই কিছুনাতো।
- হুম তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
এরপর জায়েদা বেগম আয়ানকে বলেন বাবা এসব পারিবারিক ব্যাপার। আদিয়ার বাবা আসুক তারপর তোমার ফ্যামিলির সাথে আলোচনা করা হবে। তুমি বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসি। এরপর জায়েদা বেগম সেখান থেকে চলে যায়। আয়ান সেখানে বসে। তার মুখের কোনে দেখা যায় মুচকি হাসি। আদিয়া যে রাগান্বিত তা তার ফেস দেখে বোঝা যাচ্ছে। এটা দেখে তো আয়ান আবারও বাকা হাসি দেয়।
এতক্ষণ দরজার আড়ালে দাড়িয়ে আরও একজন এদের কথোপকথন শুনছিল। আদিয়ার বিয়ের কথা শুনে তো রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে ব্যাক্তিটি। হাতের কাছে থাকা ফুলের টবটা ধরে জোরে আছাড় মা'রে। ভেঙে গুড়িয়ে যায় টবটি। শব্দ পেয়ে ততক্ষণে সবাই দৌড়ে সামনে বের হয়। কিন্তু ভাঙা ফুলের৷ টব ছাড়া কিছুই দেখতে পায়না। সিড়ির দিকে ছুটে যায় আয়ান কিন্তু কাউকে দেখেনা।
জায়েদা বেগমের মনে ভয় ঢুকে। সে বলে
- আদিয়া আমার মনে হয় আনাফ এসেছিল। সে তোর বিয়ে ভালোভাবে করতে দিবেনা আমি শিওর। মায়ের কথায় আদিয়াও চমকায়। আসলেই কি তাই।


#চলবে

গল্প: তোর মায়ায় আসক্ত

লেখনীতে: নীহারিকা_নুর

#পর্ব_১৫

Post a Comment

0 Comments