আরজু তোমার ছোট ছেলেকে ফোন দেও। ফোন দিয়ে বলো বাসায় আসতে।
- আমি পারব না তুমি দেও।
- ওফফ আমি বললে কি তোমার গুনধর ছেলে বাসায় আসবে তুমিই দেও।
- হুম দিচ্ছি।
এরপর আরজু বেগম উঠে গিয়ে সায়নকে ফোন দেয়। মায়ের ফোন পেয়ে অবাক হয়না সায়ন। ও যেন জানত এমনটাই হবে।
- হ্যা আম্মু কি বলবে বলো।
- কি অঘটন ঘটিয়েছিস শুনি।
- আমি আবার কি অঘটন ঘটাবো। যা করার তা তোমার বড় পুত্র করেছে।
- ভালোভাবে কথা বল। তুই কি দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস। এজন্য তোকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করেছি।
- করছিসই তো। বড় ভাই একটা মেয়েকে পছন্দ করেছে সেই মেয়ের দিকে তুই তাকাস কীভাবে। দিনদিন বেয়াদব নয় নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস।
- আম্মু তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি কারো দিকে নজর দেইনি। আমার গুনধর বড় ভাই আমার ভালোবাসার মানুষের উপর দিয়েছে।
- তোর ভালোবাসার মানুষ মানে।
- জ্বি আম্মাজান। আপনি তো জানতেন একজনকে আমার ভালোলাগে। আপনাকে বলেছিলাম সময় হলে দেখাব। সেই মেয়ের উপর আমার ভাই নজর দিয়েছে।
- আয়ান এসব করেছে। আমি বিশ্বাস করিনা।
- হ্যা তোমার বড় ছেলে একদম সাধু পুরুষ। সব দোষ আমার। সে যাই হোক শোনো আদিয়া ইজ অনলি মাইন। তো তোমার বড় ছেলেকে পা'গ'লা'মি ছেড়ে দিতে বল। আর আমি বেশি কথা বলতে পছন্দ করিনা তাতো জানোই। ভালোভাবে বলে দিচ্ছি আদিয়াকে আমি বিয়ে করতে চাই এন্ড সেটা খুব শীঘ্রই।
- এটা সম্ভব নয় সায়ন। বড় ছেলের আগে ছোট ছেলে বিয়ে করবে তা আমি মেনে নিব না। তুই বাসায় আয়। আমরা আলোচনা করি। তোর দাদুকেও নাহয় আসতে বলি। একটা ডেট ফিক্সড করে আমরা নাহয় মেয়েটাকে দেখে আসি। মেয়েটাকেও তো দেখতে হবে
- এরকম কিছু করো না আম্মু।
- তুই বাসায় আসবি কি না?
- না আমি বাসায় আসব না।
- আচ্ছা লাগবে না। তুই থাক তোর মতো। আমাদের যা ভালো মনে হবে আমরা সেটাই করব। আর শোনো তুমি কোন উল্টা পাল্টা করবে না। বড় ছেলের আগে ছোট ছেলের বউকে আমি কিন্তু কখনোই মেনে নিবনা।
ওপাশ থেকে কোন জবাব আসে না। খট করে ফোনটা কে'টে যায়।
।
।
।
।
।
বেশ কিছুক্ষণ যাবত মাহবুব সাহেবকে ফোন করে যাচ্ছেন তার ছেলে সোহরাব সাহেব। কিন্তু কোন ভাবেই তাকে ফোনে পাচ্ছেন না। শুধু ওয়েটিং দেখাচ্ছে। রেগে ফোনটা শব্দ করে রেখে দিলেন সোহরাব সাহেব।
- কি হয়েছে ( আরজু)
- বাবার ফোন শুধু ওয়েটিং পাচ্ছি। কার সাথে এত কথা বলছে কে জানে।
- দেখো দাদুর আবার বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরল কিনা।
- চুপ করো বেয়াদব ছেলে। তুমিও দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছ। এতদিন বলে বলে একটা ছেলেকেও রাজি করাতে পারলাম না এখন একবারে দুইজন রাজি তাও একই মেয়েকে। আয়ান তুই এটা ঠিক করছিস না। মেয়েটাকে সায়ন পছন্দ করে তোর এটা করা ঠিক হচ্ছে না।
- আম্মু তুমি আমার কথা শুনবে নাকি আমিও চলে যাব বাড়ি ছেড়ে।
সোহরাব সাহেব তার স্ত্রীকে বলেন আপাতত এ বিষয় নিয়ে কথা না বলতে।
এদিকে মাহাবুব সাহেব ফোনে এতক্ষণ যাবত সায়নের সাথেই কথা বলতে ছিলেন। আরজু বেগম ফোন রাখার পরেই সায়ন ওর দাদুকে ফোন করে। ফোন করে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে মাহাবুব সাহেব বলেন।
- তা এখন তুমি কি করতে চাচ্ছ দাদুভাই ( মাহাবুব)
- আমি চাচ্ছি তুমি কালকের মধ্যে ঢাকায় ব্যাক করো।
- তারপর?
- আমার একটা প্লান আছে।
- কি প্লান
- ★★★★★★
- সায়ন আমি তোমার সাথে থাকব তবে তার জন্য আমার একটা শর্ত আছে।
- কি শর্ত বলো। যে শর্ত বলবে আমি মানতে রাজি।
- প্রমিজ।
- ওকে প্রমিজ।
- আমি যদি তোমার কথা রাখি তাহলে তোমাকে বাড়িতে ফিরে আসতে হবে।
- এএ এটা কি বললে দাদুভাই। আমার ফ্লাটে কে থাকবে।
- সে আমি জানি না। তবে তুমি আমার শর্তে রাজি হলে আমিও তোমার কথা রাখব।
- আমার কথা রাখলে আমি বাসায় যাব। শিওর।
- ওকে।
সায়নের সাথে কথা শেষ করে নিজের ছেলেকে ফোন ব্যাক করেন মাহবুব আলম।
- হ্যা কি বলবে বলো। এতবার ফোন দেয়ার কি আছে।
- বাবা জরুরি কথা ছিল।
- কোন ব্যাপারে।
- বাবা একটু ঝামেলা হয়েছে। আপনাকে একটু বাসায় আসতে হতো।
- আমি ব্যাস্ত আছি।
- বাবা আর্জেন্ট। আয়ান এর জন্য একটা মেয়েকে দেখতে যাব ভাবছিলাম।
- দেখো আমার বয়স হয়েছে। এখন আমাকে এত ঝামেলা দিও নাতো। তোমরা গিয়ে দেখে আস।
আমি ব্যাস্ত আছি। পরে কথা হবে।
বাবার এমন গা ছাড়া ভাব দেখে একটু অবাক হলেন সোহরাব সাহেব। তারপর ভাবলেন যে এখন তো শুধু দেখবই বিয়ে তো করাচ্ছি না। বাবা বিয়ের সময়ে থাকলেই চলবে।
।
।
।
।
।
।
আদিয়ার মা কোথায় তুমি। শুনে যাও। গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
- এই কি হয়েছে এত চেচামেচি করছ কেন?
- আরে ঝামেলা তো একটা হয়ে গেছে।
- কি হয়েছে।
-সোহরাব চৌধুরী ফোন করেছিল।
- কোন সোহরাব চৌধুরী?
- মাহবুব আঙ্কেল এর ছেলে।
- ওহ। তা কি বলল সে।
- সেটা বলার জন্যই তো তোমাকে ডেকেছি।
- ভনিতা না করে তাড়াতাড়ি বলো কাজ আছে আমার।
- তিনি তার বড় ছেলের জন্য আমার মেয়েকে পছন্দ করেছে। তিনি কাল একটু আসতে চাচ্ছিল।
- তুমি কি বললে।
- আমি তো হ্যা বলে দিয়েছি।
- একবার আদিয়াকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল।
- আরে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না তাই আসতে বললাম। তুমি একটু আদিয়ার সাথে কথা বলো।
- আচ্ছা।
রাতে জায়েদা বেগম আদিয়াকে আয়ানের কথা বলে। কিন্তু আদিয়া ওর মাকে না করে দেয়।
- আম্মু এমন একটা ছেলের সাথে তুমি কীভাবে বিয়ে নিয়ে ভাবতে পার। ও এত বছর আমার জমজ বোনকে পছন্দ করল। সেখানে ও কীভাবে এখন আমাকে বিয়ে করতে চায়। ও কী আধৌ ভালোবাসত। এই আয়ানও তো স্বার্থপর মা। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই না।
- আদিয়া তোর বাবা তাদের আসতে বলেছে। এখন না করলে ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না। তার থেকে বরং আসুক। এরপর না হয় দেখা যাবেনে।
- যা ভালো মনে কর।
।
।
।
।
।
সোহরাব সাহেব সায়নকে ফোন দেন।
- হ্যা বাবা আবার কি বলবে বলো।
- আমি তোমার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি। তুমি কোথায়।
- আমার সামনে কেন এই অসময়ে।
- আমার ছেলের হবু পুত্রবধু যে তোমার বাসায়ই আছে তাতো জানতাম না। যাই হোক ফ্রি থাকলে দেখা করো।
- না ব্যাস্ত আছি। রাখছি আমি।
এই ছেলের তেড়ামি আর গেলনা।
- বাবা দাদার রক্ত তো শরীরে বইছে ( আরজু)
- আবার শুরু হয়েছে। দেখো একটা ভালো কাজে এসেছি। এখানে এসে মোটেও ঝগড়া করবে না।
- ভালো কাজ না ছাই। এটা পুরোপুরি রং। এই মেয়ের সাথে সায়নেরই বিয়ে হবে দেখো।
- তোমার রেডিওটা একটু অফ রাখো দয়া করে। আমরা ভিতরে যাই এবার।
- হুম।
সোহরাব সাহেব, আরজু বেগম ও আায়ন তিনজন ভিতরে যায়। আজমাইন সাহেব তাদের সাথে কথা বলছিল। আকাশ ও আছে। ও চুপচাপ পাশের একটা সোফায় বসে আছে। জায়েদা বেগম কিচেনে। মাহি আদিয়াকে তৈরি করছিল।
সোহরাব সাহেব কেবল বলতে নিচ্ছিল যে ভাই আমরা একটু আপনার মেয়েকে দেখতে চাই। ঠিক সেসময়ই কলিং বেল বেজে ওঠে।
- আকাশ বাবা দেখ তো কে আসল।
আকাশ উঠে দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনে সায়নকে দাঠিয়ে থাকতে দেখে চমকে যায়। আবার খুশিও হয়। আয়ান আসায় এতক্ষণ বিরক্ত লাগছিল আকাশের। কিন্তু সায়নকে দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
- ভাই আপনি আসছেন।
সায়ন জবাব দেয়না। শুধু একটা মুচকি হাসি দেয়।
আকাশ তাদের নিয়ে ভেতরে আসে।
এসময় আকাশ আর মাহাবুব সাহেবকে একসাথে দেখে দাড়িয়ে যায় আায়ান আর সোহরাব সাহেব।
কিছুক্ষন সবাই নিরব থাকে। এরপর সোহরাব সাহেব বলেন।
- বাবা তুমি এখানে। তুমি না বললে তুৃমি ব্যাস্ত।
- এই কে তোমার বাবা। আমি তোমাকে চিনিনা।
আজমাইন বাবা আমি একটু তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। এখন কি বসব নাকি না।
- আরে আঙ্কেল আপনি এখনো দাড়িয়ে কেন। বসেন। সায়ন বাবা বসো( আজমাইন)
বাবার এমন আচরনে আহম্মক হয়ে বসে আছে সোহরাব। মুখে কুলুপ এটে বসেছে বাবা কি করে তা দেখার জন্য। মাহাবুব সাহেব বললেন।
- আজমাইন আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চাইতে এসেছি তোমার কাছে।
- আঙ্কেল আমার কাছে আপনাকে দেয়ার মতো কি আছে।
- তোমার মেয়ে আদিয়াকে আমার নাতির জন্য পছন্দ করেছি।
মেয়ের জন্য একই পরিবার থেকে, একই সময় দুই ছেলের জন্য সম্বন্ধ। এমন সিচুয়েশনেও কখনো পড়তে এটা যেন ভাবেনওনি আজমাইন সাহেব। তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন। কি জবাব দেয়া উচিত তার এখন।
গল্প: তোর মায়ায় আসক্ত
#পর্ব_১৭
লেখনীতে: নীহারিকা_নুর

0 Comments