আজমাইন - আন্টি আঙ্কেল দেখুন আপনারা হয়তো ভেবেছে ওই ছেলেটার সাথে আপনার মেয়ে সুখে থাকতে পারবে না, কিন্তু আরিজা ওই ছেলেটাকে ভালোবাসতো তাহলে আপনার ছেলেটার খোঁজখবর নিয়ে দেখতেন। কেনো আপনারা ওকে মেনে নিতে পারেননি আমি সেটা জানিনা। আপনাদের বিষয়টা লুকিয়ে আমার সাথে আরিজা বিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। আমি হয়তো ওকে দেখে প্রথমবারে পছন্দ করেছিলাম, তাই ওকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কারণ আমি চেয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কটা পবিত্র হোক, তাই কোনো প্ৰেম ভালোবাসার প্রস্তাব না দিয়ে আপনাদের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা যে এত বড় একটা বিষয় হাইড করে গেছেন আমার ধারনার বাইরে ছিলো।
আপনি হয়তো আপনার মেয়ের ভালোর জন্য আমার সাথে ওর বিয়েটা দিয়েছেন, কিন্তু একবারও কি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন ও আমার সাথে ভালো আছে কিনা। নেই, আজকে দুইটা মাস যাবত আমাদের বিয়ে হয়েছে, কিন্তু এখনো আমাদের মাঝে কোনো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নেই। শুধু নামে মাত্র আমাদের বিয়ে হয়েছে। আপনারা এটা না করলেও পারতেন। আপনারা হয়তো ভাবছেন ও ভালো আছে, কিন্তু নেই। সেটা আমি জানি, কারন আমিতো ওর স্বামী নামক একটা অদ্ভুত প্রানী। আমি প্রত্যেকটা দিন দেখি ও মন খারাপ করে থাকে, হয়তো আমার সামনে কান্না করতে পারে না, কিন্তু রাত হলে নীরবে চোখের জল ফেলে। যেটা আমি দেখেছি। এটা আপনারা ঠিক করেননি।আমি ওকে বিয়ের দিনই বলেছিলাম, ও চাইলে ফিরে যেতে পারে, কিন্তু ও কি বলেছিলো জানেন, আপনাদের কাছে ও ওয়াদাবদ্ধ, ও নিরুপায় তাই ওকে থাকতেই হবে। আঙ্কেল একটা সম্পর্ক এভাবে থাকতে পারে না, আর সেটা কখনে সম্ভব নয়। যেখানে কখনো আমি ওর নামি ওর স্বামী হতে পারবো হতে পারবো না, আর ও আমাকে কখনো ভালোবাসতে পারবে না। সেখানে এরকম কোনো সম্পর্কে থাকাটা পসিবল না। দিনের শেষে শুধু দুজনে কষ্টই পেয়ে যাবো। যেখানে না আরিজা ভালোবাসতে পারবে আমাকে, না আমি ওর ভালোবাসাটা পাবো। তাই জোর করে আমি কিছু আদায় করে নিতে চাইনা, সেটা করলে অনেক আগেই পারতাম।আপনাদের সামনে কথাটা বলতে খারাপ লাগলেও বলতে হচ্ছে। তাহলে শুধু আমি ওর শরীরটাকে পেতাম ভালোবাসাটা নয়। সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কি বলুনতো, ভালোবাসা আর যেটা আমাদের মাঝে নেই। এখন অব্দি ও আমার সাথে ভালোভাবে কথাই বলেনা। তাহলে আর কবে আমাদের মাঝে ভালোভাবে কথা আর করে আমাদের বলাই হবে আর কবেই বা ও আমাকে ভালবাসতে পারবে। সেটা ভাবাটা একরকম পাগলামি, তাই আমি আপনাদের কাছে হাতজোড় করে রিকুয়েস্ট করছি আপনারা ওর ওপর থেকে এই ওয়াদাটা উঠিয়ে নেন। আমি ওকে বলেছিলাম রাফিনের কাছে ফিরে যেতে, কিন্তু ও আপনাদের কারণে যেতে পারেনি।আপনার এই কসমটা উঠিয়ে নিলে আমি ওকে রাফিনের কাছে ফিরিয়ে দিবো। আপনার আর না করবেন না। দেখেন এই সম্পর্কটা কখনো থাকবে না আর থাকতে পারেনা, তাহলে তিনজন মানুষ শুধু কষ্ট পেয়ে যাবে। আর ওরা দুজনের এক হলে হয়তো একতরফাভাবে শুধু আমিই কষ্ট পাবো, কিন্তু ওতো সুখে থাকতে পারবে, সেটা দেখে আমি হতে পারবো। তাই আপনার না করবে না।
আজমাইন বলা শেষে আরিজা আব্বু আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওরা মাথা নিচু করে আছে। ওনার আজমাইন কথা শুনে ভাবতে লাগলো। ওনারা কাজটা করে ভুল করছে। এক পর্যায়ে আরিজা আব্বু বলতে লাগলো ।
আরিজা আব্বু - আসলে বাবা কি বলবো বুঝতে পারছি না, এখন আমার মনে হচ্ছে জোর করে মেয়েটার বিয়েটা দেয়া ঠিক হয়নি। এতে তিনটা মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে মেয়েটা সুখী হতে পারবে। কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া যে আমার মেয়েটা সুখী হতে পারবে না, আমি সেটা বুঝতে পারিনি। আর ওই ছেলেটাকে আরিজা এতটা ভালোবাসে সেটা জানতাম না। আমি ভেবেছিলাম ও ছোটো মানুষ, এরকম প্রেম ভালোবাসা জীবনে দু একটা থাকে তাই বিয়ে হলে সব ভুলে যাবে। কিন্তু ও হয়তো ছেলেটাকে সত্যি ভালোবাসো। আর ও এতোটাই বড় হয়ে গেছে যে ওর লাইফের সিদ্ধান্ত এখন একাই নিতে শুরু করেছে। বাবা তুমি আমাদের মাফ করে দিও।
আজমাইন - আঙ্কেল যেটা হবার হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে এখন আর মন খারাপ করে লাভ নেই। তাই বলছিলাম এই সম্পর্কটা থাকা সম্ভব না, যেখানে এটা কখনো ঠিক হবে না, সেখানে এই মিথ্যা সম্পর্কটাকে আমি রাখতে চাইনা। আমি চাইছি আরিজাকে আপনাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে। আপনারা যদি আরিজা ওপর থেকে এই ওয়াদাটাও উঠিয়ে নেন তাহলে ও রাফিনের কাছে ফিরে যেতে পারে। প্লিজ আঙ্কেল আপনারা আর না করবেন না ৷
আরিজা আম্মু - কিন্তু বাবা তুমিতো ওর স্বামী।
আজমাইন - দেখুন আন্টি যেটা হবার নয় সেটা নিয়ে আমি আর কথা আমিও বলতে চাইনা। আমি ওর নামে মাত্র স্বামী, কক্ষনো ওর মুখ থেকে এ কথাটা আমি শুনতে পারিনি। তাই চাইনা আর এই সম্পর্কটাকে এগোতে। আপনার আর না বলবেন না
দীর্ঘ এক ঘন্টা যাবৎ আরিজা আব্বু আম্মুকে বোঝানোর পর, ওরা বুঝতে পারলো আজমাইন ঠিকই বলেছে। তাই ওরা আরিজা ওপর থেকে ওয়াদাটা উঠিয়ে নিলো, আজমাইন মাঝেও যেনো একটা স্বস্তি আসলো। ওদের থেকে বিদায় নিয়ে নিয়ে আজমাইন চলে গেলো আর বলে গেলো। ওদের সম্পর্কটা শেষ করে, তারপর রাফিনকে বুঝিয়ে আরিজাকে বাসায় ফিরিয়ে দিবে। আজমাইন অফিসের দিকে যাচ্ছিলো ওর মনটা ভালো নেই যখনই ভাবছে যে রাফিন যদি ওকে ফিরিয়ে নেয় তাহলে আরিজা চলে যাবে।
আরিজা এতগুলো দিন ধরে ওর কাছে আছে, ওকে ভালো না বাসলেও, ওকে স্বামী হিসেবে না ভাবলেও আজমাইন ওকে নিজের ওয়াইফ ভাবে। আজমাইন ওকে প্রথমবার দেখেই প্রেমে পড়ে গেছিলো, তাই এই করেকটা দিনে ওকে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু না আজমাইন সেটা প্রকাশ করেনি, আর না ওকে বুঝতে দিয়েছে। অফিসে যেতে ভালো লাগছিলো না তাই আজমাইন বাসায় চলে যায়, তারপর আরিজা দরজা খুলে দিলে আজমাইন রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। একটু পর আরিজা রুমে এসে দেখে আজমাইন কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে ভাবে হয়তো শরীরটা খারাপ করেছে তাই ওর পাশে বসে বলে।
আরিজা - আপনি এই অবেলা চলে আসলেন যে, আপনার শরীর খারাপ করেছে। কি হয়েছে আপনার ?
আজমাইন - আরে না তেমন কিছু না। আসলে আজকে তোমার উপর থেকে অনেক বড় একটা বোঝা নামাতে পেরেছি তাই আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।
আজমাইন কথায় আরিজা বেশ অবাক হলো তখন আজমাইন কপালের উপর হাত থেকে নামটা হাতটা নামিয়ে মুখে একটা মিথ্যে হাসির রেখা টেনে বলতে লাগলো৷
আজমাইন - তোমার আব্বু আম্মু তোমার উপর থেকে কসমটা উঠিয়ে নিয়েছে। তুমি এখন চাইলে রাফিনের কাছে ফিরে যেতে পারো। আজকে আমি ওদের সাথে কথা বলেছি, ওরা বুঝতে পেরেছে ওরা তোমাকে বিয়েটা দিয়ে ভুল করেছিলো।
আরিজা অবাক দৃষ্টিতে আজমাইন দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষ কতটা অসহায় হলে মানুষ এমন উপহাস করে। ও চুপ করে আছে দেখে আজমাইন বললো।
আজমাইন - আরিজা দেখো আর মন খারাপ করে থেকো না। তুমি চাইলে রাফিনের কাছে ফিরে যেতে পারো।
বলেই আজমাইন ওয়াশ রুমে চলে গেলো, তারপর বেসিনের সামনে দাঁড়াতেই দেখলো ওর চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে৷ আজমাইন চোখে মুখে অনেক্ষন পানি দিয়ে তারপর এসে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ে। অন্যদিকে আরিজা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে আজমাইন বলা কথা গুলো ভাবছিলো।
আরিজা - সত্যি কি উনি আব্বু আম্মু সাথে কথা বলেছে তাহলে কি উনি আমাকে সত্যিই রাফিনের কাছে যেতে দিবে ?
দুজনের ভাবনার মধ্যে দিয়ে দিনটা কেটে গেলো। আরিজা একটু স্বস্তি পেয়েছে যে আব্বু আম্মু ওর ওপর থেকে ওয়াদাটা উঠিয়ে নিয়েছে। তাই আরিজা আব্বু আম্মুকে ফোন দিয়ে কথাগুলো ওদের থেকে জানার চেষ্টা করে। বারবার ও ফোন দিতে লাগলো, । কিন্তু আব্বু আম্মু ফোন টা কেটে দিচ্ছিলো। আসলে ওরা আরিজা ওপর রেগে আছে, ওরা আরিজা ভালোর জন্যই বিয়েটা দিলো আর ওনাদের মতটাকে আরিজা এইভাবে বিয়ের দিন রাতেই তুচ্ছ করে উড়িয়ে দিয়েছে। কথাগুলো ভেবে আরিজা আব্বু আম্মু ওর ওপর বেশ রেগে আছে। অন্যদিকে আজমাইন ঠিক করে নিয়েছে এখন রাফিনকে খুঁজে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের দুজনকে এক করে দিবে।
আরিজা - সত্যি কি উনি আব্বু আম্মু সাথে কথা বলেছে তাহলে কি উনি আমাকে সত্যিই রাফিনের কাছে যেতে দিবে ?
দুজনের ভাবনার মধ্যে দিয়ে দিনটা কেটে গেলো। আরিজা একটু স্বস্তি পেয়েছে যে আব্বু আম্মু ওর ওপর থেকে ওয়াদাটা উঠিয়ে নিয়েছে। তাই আরিজা আব্বু আম্মুকে ফোন দিয়ে কথাগুলো ওদের থেকে জানার চেষ্টা করে। বারবার ও ফোন দিতে লাগলো, । কিন্তু আব্বু আম্মু ফোন টা কেটে দিচ্ছিলো। আসলে ওরা আরিজা ওপর রেগে আছে, ওরা আরিজা ভালোর জন্যই বিয়েটা দিলো আর ওনাদের মতটাকে আরিজা এইভাবে বিয়ের দিন রাতেই তুচ্ছ করে উড়িয়ে দিয়েছে। কথাগুলো ভেবে আরিজা আব্বু আম্মু ওর ওপর বেশ রেগে আছে। অন্যদিকে আজমাইন ঠিক করে নিয়েছে এখন রাফিনকে খুঁজে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের দুজনকে এক করে দিবে।
তাই ও রাফিনকে খুঁজতে শুরু করে। বেশ কয়েকটা দিন মাঝে কেটে গেছে। এখনো আজমাইন খেয়াল করে আরিজা মন খারাপ করে থাকে, হয়তো রাফিনের জন্য। ওর কথাগুলো হয়তো আরিজা বিশ্বাস করতে পারেনি। আজমাইন ওকে মাঝেমধ্যে বলতে চাই রাফিনকে ওর লাইফে খুব শীঘ্রই ফিরিয়ে দিবে, কিন্তু ভাবে।
আজমাইন - এটা যদি আরিজাকে না জানিয়ে করি, রাফিনকে একদিন হঠাৎ করে ওর সামনে এনে সারপ্রাইজ দেয় তাহলে আরিজা অনেক খুশি হবে।
আজমাইন সেদিন হয়তো আরিজার হাসিমুখটা দেখতে পাবে। ওদের বিয়ের পর আর আজমাইন আরিজা হাসি মাখা মুখটা তেমনভাবে কখনো দেখেনি তাই আজমাইন ওর সেই হাসিটা দেখতে চায়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আজমাইন রাফিনকে খুঁজতে থাকে, কিন্তু একটা মানুষের পরিচয় ছাড়া এইভাবে তাকে খোঁজা সম্ভব না। ঠিক করে আরিজা কাছ থেকে ওর ফোন নম্বরটা নিবে, কিন্তু ওকে বলে নেওয়া যাবে না তাতে ও বুঝে যাবে। এর মাঝে আরিজা রাফিনের নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে, কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকদিন পরের ঘটনা আজমাইন বাসায় এসে দেখে আরিজা শুয়ে আছে, ও আসতেই আরিজা উঠে বসে। আজমাইন ওর মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে হয়তো আরিজা একটু আগেই কান্না করেছে।
আজমাইন ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে এসে শুয়ে পড়লো। তারপর আরিজাকে জিজ্ঞেস করলো ওর সাথে রাফিনের কথা হয়েছে কিনা, কিন্তু আরিজা ঘুমিয়ে গেছে। এবার আজমাইনও ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ওর ঘুম আসছিলো না আবার পরক্ষনেই মনে পড়লো। রাফিনের নম্বরটা আরিজা থেকে নিতে হবে, কিন্তু ওর কাছ থেকে চেয়ে ফিলের নামরটা আরিজা থেকে নিতে এবং সে খেয়াল করে নিলে সেটা আরিজা বুঝে যাবে।আরিজা ঘুমিয়ে গেছে তাই ওর বালিশে পাশ থেকে ওর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে লক করা। লকটা খোলার জন্য আজমাইন প্রথমে আরিজা নামটা লিখে কিন্তু না লকটা খুললো না। আজমাইন কি মনে করে যেনো রাফিনের নামটা দিতেই লকটা খুলে গেলো।
ও গ্যালারিতে গিয়ে দেখলো একটা ছেলের অনেকগুলো ছবি, তারপর কিছুটা নিচে দিকে যেতেই দেখে ওই ছেলেটার সাথে আরিজার কয়েকটা ছবি, আজমাইন বুঝতে পারলো এটাই রাফিন। আজমাইন ছেলেটার একটা ছবি ফোন নিয়ে নিলো, আর তারপর কল লিস্টে গিয়ে দেখলো রাফিনবে অনেকগুলো কল করা হয়েছে। আজমাইন নম্বরটাও নিয়ে নিলো। ও বুঝতে পারলো আরিজা মনটা কেনো খারাপ থাকে। তো পরদিন আজমাইন রাফিনের নম্বরে ফোন দিলো, কিন্তু নম্বরটা অফ দেখাচ্ছে।
ও বেশ কয়েকদিন ধরে ট্রাই করলো, কিন্তু রাফিনের নম্বরটা বন্ধ। ও আর কোনো উপায় না পেয়ে একদম কন্ট্রোল সেন্টারে চলে গেলো তারপর নম্বরটা শেষ লোকেশনটা জেনে, সেই জায়গাটায় গিয়ে বেশ কয়েক জনকে রাফিনের বিষয়ে জিঙ্গেস করলে তারপর দেখা করে ওকে সবটা ই রাফি। রাফিন ওকে ভুল বুঝলেও ওর খোজ পায়।আজমাইন সেদিনই রাফিনের সাথে দেখা করে। আর বোঝাই। পরে ওর কথা শুনে বুঝতে পারে,আজমাইন হয়তো সত্যি বলছে। আর ওদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই, তখন রাফিন ভাবে আরিজাকে ফিরিয়ে নিবে কিনা। আজমাইন ওকে অনেক রিকুয়েস্ট করার পর ও বললো।
রাফিন - আচ্ছা ঠিক আছে আপনি ওকে একদিন আমার সাথে দেখা করবেন।
আজমাইন - খুব শীঘ্রই দেখা করাবো।
আজমাইন রাফিনের থেকে ওর ঠিকানাটা আর পার্সোনাল - নাম্বারটা নিয়ে বাসায় চলে আসে। বাসায় আসতেই আম্মু দরজা খুলে দিলে আজমাইন একটু অবাক হয়ে ভাবে।
আজমাইন - কি ব্যাপার আজকে আবার আরিজা কি হলো।
আজমাইন রুমের দিকে যেতে থাকে তারপর দরজার কাছে আসতেই বুঝতে পারে আরিজা কারো সাথে কথা বলছে। ওর কথাগুলো কারো সাথে কথা বল শুনেই আরিজা সেখানে দাড়িয়ে যায়, আর শুনতে লাগলো ও কি বলছে।
আরিজা - পরিবারের কারণে যে মানুষটাকে আমি ছেড়ে আসছিলাম,জানিনা সে মানুষটা কেমন আছে। যে মানুষটা কিনা আমাকে এতোটা ভালোবাসতো, আমি তাকে ছেড়ে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারিনা। আজকে তিনটা মাস যাবত তার মুখটা পর্যন্ত আমি দেখিনা। সে হয়তো এখন আমাকে মিথ্যাবাদী, প্রতারক বলে। আমার নামটাকে পর্যন্ত ঘৃণার করে। আমার নামটা মনে পড়লেই বারবার ধিক্কার দেয়। কি করবো বল আমি অসহায় ছিলাম, কোনো উপায় ছিলো না। আব্বু আম্মুর কথাতে কোনো উপায় না পেয়ে বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে।
আরিজা কথাটা বলে চুপ করে রইলো, ওপাশ থেকে কি বলছে বোঝা যাচ্ছে না। ও আবারো বলতে লাগলো।
আরিজা - আমরা এক বিছানায় থাকি, কিন্তু আমাদের মাঝে অনেক দূরত্ব। আমি ওই লোকটাকে কখনোই ভালোবাসতে পারবো না, উনি শুধু সারাজীবন কষ্টটাই পেয়ে যাবে। আমাদের মাঝে কখনো কোনো ভালোবাসা হবে না, শুধু শুধু এ সম্পর্কের কোনো মানেই হয় না। এ এতে সারাজীবন উনিও কষ্ট পেয়ে যাবে, আর আমি কষ্ট পেয়ে যাবো।
আজমাইন বুঝতে পারলো আরিজা অনেক কষ্ট থেকে কথাগুলো বলছে, ওর কথাগুলো শুনে আজমাইন খারাপ লাগছিলো ভাবছিলো। ওর জন্যই আজকে দুইটা মানুষ এইভাবে আলাদা হয়ে গেছে।আজমাইন বারবার নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছিলো আর ভাবছিলো। খুব শীঘ্রই ওদের এক করে দিবে কথাগুলো ভেবে ও নিজেকে স্বাভাবিক করে আর আরিজা কথাগুলো শুনতে লাগলো৷
আরিজা - যে মানুষটাকে এভাবে ছেড়ে আসছি জানিনা সে আজকে কেমন আছে। আমাকে ছাড়া কি এখনো বেঁচে আছে কিনা। আমি আজকে কয়েকটা দিন যাবত ওকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু ওর নম্বরটা বন্ধ দেখাচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছিনা।
আরিজা কলটা কেটে দিলে আজমাইন রুমে ঢুকে যায়, ওকে দেখেই আরিজা একটু থমকে যায় বলে।
অরিজা - আ...আ...আপনি।
আজমাইন - এইমাত্র আসলাম। আচ্ছা শুনো কালকে তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো। তুমি কি একটু যেতে পারবে। নাকি আমার সাথে যেতে তোমার খারাপ লাগবে ।
- অরিজা একটা অসহায় দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো তখন ও আবার বললো।
আজমাইন - প্লিজ এই কথাটুকু অন্তত রাখো। তোমাকে অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ দিবো, যেটা তুমি কখনো কল্পনাও করতে পারবে
না।
আরিজা বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো ।
আরিজা - আচ্ছা ঠিক আছে।
আজমাইন ওয়াশ রুমে চলে যায় তারপর বেশ কিছুক্ষণ নিরবে চোখের জল ফেলে। অন্যদিকে রাফিন ভাবছিলো আরিজা সাথে দেখা হলে ওকে কি বলবে? এতদিন পর ওর ভালোবাসার মানুষটার সাথে দেখা হলে, সে কি রিয়েক্ট করবে কিংবা এতদিন পর আরিজা ওকে দেখে কি করবে? সেদিনই রাতেই আজমাইন রাফিনকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় কালকে ওর সাথে আরিজাকে নিয়ে দেখা করবে, রাফিন ও রাজি হয়ে যায়। আজমাইন রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছে কালকে আরিজা ওর ভালোবাসার মানুষটাকে দেখতে পাবে, আর আজমাইন নামের কালো অধ্যায়টা হয়তো ওর জীবন থেকে মুছে যাবে।
আরিজা - উনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। আর কি সারপ্রাইজ দিবে, জিঙ্গেস করলে তো কিছুই বললো না ।
- আর আজমাইন ভাবছে আরিজা রাফিনকে দেখার পর কি হবে। হয়তো আজকে প্রথমবারের মতো আরিজাকে হাসিমুখে দেখতে পাবে। আধ ঘণ্টার মধ্যে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে চলে আসে। রেস্টুরেন্টে সামনে আসতেই আজমাইন দেখে রাফিন একটু দূরে একটা জায়গার বসে আছে। ও রাফিনকে দেখেই আরিজার চোখ দুটো ধরে বলতে বললো।
আজমাইন - কোনো কথা জিজ্ঞেস করবে না আমি যেখানে নিয়ে যাবো সেখানে চলো।
আজমাইন আরিজাকে রাফিনের সামনে নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে তারপর ওর চোখের সামনে থেকে হাতটা সরাতেই আরিজা চোখ খুলে যাকে দেখে তাকে দেখার পর বিশ্বাসই করতে পারছিলো ওকে এখানে দেখবে। হ্যাঁ ও রাফিনকে দেখছে। রাফিনকে দেখার সাথে সাথেই আরিজা চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে। ও ফুঁপিয়ে যার রাফিনের একটা কান্না করে উঠলো আর রাফিনের একটা হাত ওর দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বারবার চুমু দিতে লাগলো। আজমাইন ওদের পাশে দাঁড়িয়ে মাথা । নিচু করে আছে, রাফিনকে দেখার পর থেকে আরিজা কান্না করছে তাই ও বললো।
রাফিন - প্লিজ একটু শান্ত হও আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো। আমি তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলছি।
আরিজা কোনো কথায় শুনছে না, শুধু কান্না করে যাচ্ছে,তাই আজমাইন বললো।
আজমাইন - আরিজা এখন কান্না থামাও রাফিনকে তো পেয়ে গেছো, ।আরিজা এখন কান্না করছো কেনো। আচ্ছা তোমরা থাকো আমি আসি। এটুকুই আমার কর্তব্য ছিলো,আরিজা আমি তোমাকে এই সারপ্রাইজটায় দিতে চেয়েছিলাম। এখন তোমাদের মাঝে আর কোনো বাধা নেই, তোমরা থাকো আমি যাই। আরিজা তুমি চাইলে আজকে থেকে নিজের বাসায় চলে যেতে পারো। বিয়ের ৬ মাস হয়ে গেলে আমি ডিভোর্স লেটারটা পাঠিয়ে দিবো।
আজমাইন চলে যেতে গেলে রাফিন ওর হাত ধরে ফেলে, তখন আজমাইন অবাক হয়ে পেছনের দিকে তাকায় দেখে রাফিন ওর হাত ধরে আছে, ও একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে বললো।
আজমাইন - কি হলো ভাইয়া।
রাফিন - আপনি শুধু একা একা বলেই চলে যাবেন আমাকেও তো কিছু বলতে দিন। আপনি এখানে বসুন আপনার আজকে অনেক কিছু জানার আছে।
রাফিন আজমাইন হাত ধরে টেনে ওর সামনে আরেকটা চেয়ারে বসে দিলো। আরিজা এখনো রাফিনের একটা হাত ধরে কান্না করে যাচ্ছে। এবার রাফিন ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তারপর আরিজা চোখের পানি মুছে দিলো আর আরিজা বলতে লাগলো।
আরিজা - (কান্না করে করে) রাফিন বিশ্বাস করো আমার নিরুপায় ছিলাম, আব্বু আম্মুর কথাতে আমি এটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমি উপায় না পেয়ে এরকমটা করেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। দেখো আজমাইন আব্বু আম্মুকে বুঝিয়েছে ওরা রাজি আছে। । আজমাইন সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেলে আমি তোমাকে বিয়ে করে নিবো।
রাফিন - রিল্যাক্স রিল্যাক্স আমার কথা শোনো আর আমাকে কিছু বলতে দাও, আমি ওনার থেকে সবটা শুনেছি। আসলে ওনার মতে খুব কম মানুষই আছে যে নিজের ভালোবাসাটাকে এভাবে অন্য কারো হাতে তুলে দিতে চাই। আরিজা তুমি আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর হয় আমি তোমাকে ঘৃণা করেছি তোমাকে মিথ্যাবাদী, প্রতারক ভেবেছি। তোমার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারিনি, তাই অনেকটা ডিপ্রেশনে চলে গেছিলাম, তখন ডিপ্রেশন থেকে বেরোতে গিয়ে আমাকে একজন হেল্প করেছে। আর একটা সময় ও আমার এতোটায় কাছে আসে যার জন্য ওর প্রতি আমি অনেকটায় দুর্বল হয়ে পড়ি, ওকে একটা সময় ভালোবেসে ফেলি।
আমি জানিনা এই কথাটা তুমি কি ভাবে নিবে, কিন্তু এটা সত্যি যে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। আর দ্বিতীয়বার যে কাউকে ভালোবাসা যায় সেটা আমি রিয়ার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি,
রিয়া আমার লাইফে না আসলে আমি বুঝতেই পারতাম না দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসা যায়। আরিজা আমরা সবসময় যেটা চাই সেটা পাইনা। আর যেটা চাইনা সেটাই পাই, আমার কপালে হয়তো তুমি ছিলে না তাই আমি অন্য কাউকে দ্বিতীয়বার ভালোবাসতে পেরেছি। যে মানুষটা আমাকে এতটা সাহায্য করেছে তোমার স্মৃতিটাকে ভুলতে, সেই মানুষটাকে আমি কি করে ঠকাই বলো। তাই আমি ওকে বিয়ে করেছি আর ঐ আমাকে অনেক ভালোবাসে। আজকে ১ মাস হলো আমরা বিয়ে করেছি। অনেক হ্যাপি আছি। কিন্তু কালকে যখন আমি তোমার হাজবেন্ডের মুখ থেকে শুনলাম তুমি আমাকে ছেড়ে ভালো নেই, তখন আমার খুব খারাপ লেগেছে। ভেবেছিলাম তোমাকে সত্যিটা বলবো না, কিন্তু সত্যিটা না বললে তোমার প্রতি অন্যায় করা হবে। আর আমি জানতাম না এখনো তুমি আমাকে মনে রেখেছো। ভেবেছিলাম স্বামীর সংসার নিয়ে অনেক হ্যাপি আছো, কিন্তু না তুমি এখনো আমার স্মৃতিগুলোকে ভুলতে পারোনি, তাই ভাবলাম তোমার জন্য যে মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে তাকে এভাবে কষ্ট দেয়াটা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই আমি তোমার সাথে কথা বলতে রাজি হয়, ভেবেছি তোমাকে সত্যিটা বলে দিবো। আর আমি জানি এই মানুষটা তোমাকে কতোটা ভালোবাসে কালকে সেটা ওনার সাথে কথা বলার পর বুঝতে পেরেছি। ওনার চোখে আমি তোমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছি। আরিজা আমাদের মাঝে যেটা ছিলো সেটা রাখাটা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর আমি রিয়াকে বিয়ে করে নিয়েছি, আর তুমিও বিয়ে করে নিয়েছো তাই তোমার স্বামীকে নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করো।
রাফিনের এরকম কথা শুনে যেমন আজমাইন অবাক হয়েছে তেমনি ভাবে আরিজা কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, ওর চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়ছে। ও এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয়, তারপর রাফিনের একটা হাত দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বলতে শুরু করে।
আরিজা- (কান্না করে করে) এসব তুমি কি বলছো। প্লিজ রাফিন এরকম ভাবে মজা করো না, দেখো আজমাইন আমার আব্বু আম্মুকে বুঝিয়েছে আর ও তোমার সাথে আমাকে যেতে দিতেও রাজি আছে। প্লিজ এরকম করোনা, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমাকে একটাবার ফিরিয়ে নাও, আমিতো বলছি আমাদের মাঝে কোনো কিছুই হয়নি, আজমাইন আমার নামে মাত্র স্বামী।
- আরিজা মুখ থেকে এমন কথা শুনে আজমাইন বুকের ভেতরটা কেমনো যেনো কেঁপে উঠলো, তারপর ও নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলতে লাগলো।
আজমাইন - ভাইয়া আপনি একট বোঝার চেষ্টা করেন, প্লিজ রাগ করে আরিজাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিবেন না। ও আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবে না, আপনি হয়তো ওকে দূরে সরানোর জন্য এসব কথা বলছেন, আমিতো বললাম আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি। তারপরও আপনি বিশ্বাস করছেন না।
- রাফিন আরিজা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলতে লাগলো।
রাফিন - ভাইয়া আমি আপনাদের মিথ্যা কথা বলতে যাবো কেনো ? আপনি হয়তো ভাবছেন আমি আরিজা উপর রাগ করে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এমনটা করছি। আমিও জানতাম আপনারা এমনটা ভাবব্বেন, আচ্ছা ঠিক আছে আমি আমার স্ত্রীকে ডাকছি।
- এবার রাফিন ওর ওয়াইফের নাম ধরে ডাকলো তখন একটা মেয়ে এসে ওদের পাশের চেয়ারটায় বসলো। তারপর রাফিন সম্পর্কের বিষয়ে আর বিয়ের বিষয়ে বলতে লাগলো। রাফিনের স্ত্রী রিয়া ওদেরকে সবটা বললো, সব শোনার পর আরিজা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলো তখন রাফিন ওকে বলতে লাগলো।
রাফিন - দেখা আরিজা যেটা হবার নয় সেটা নিয়ে না ভাবাটাই ভালো। যেটা সত্যি আমি তোমাকে সেটা বললাম। আমাদের লাইফের সবকিছু পাবার নয়, তাই তোমাকে হয়তো আমি পাইনি, আর তুমি আমাকে পাওনি। আমি অন্য কাউকে নিয়ে ভালো আছি, তাই তোমাকে জানিয়ে দিলাম। আর তুমিও তোমার হাজবেন্ডকে নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করো, দেখো ঠিক পারবে। আর ভালোবাসটা ঠিক একটা সময় হয়ে যাবে।
- আরিজা আর সেখানে দাঁড়ালো না কান্না করতে করতে দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো তখন আজমাইন উঠে যেতে গেলে রাফিন বলতে লাগলো।
রাফিন - ভাইয়া একটু চেষ্টা করেন ঠিক ও আপনাকে ভালোবাসবে। আরিজা অনেক ভালো একটা মেয়ে, কারন ওর সাথে আমার এতদিন সম্পর্ক ছিলো তাই ওর সম্পর্কে আমি অনেক বেশি জানি।
আজমাইন একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে তারপর রেস্তুরেন্ট থেকে কটা বেরিয়ে আসলো,ততোক্ষনে আরিজা রিক্সায় উঠে চলে গেছে। তারপর আজমাইনও একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে রুমে গিয়ে দেখে আরিজা বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করছে তখন ওকে বোঝাতে গিয়েও বোঝালো না, ভাবলো।
আজমাইন- না আজকে আর আরিজাকে বোঝাবো না, ওর ভালোবাসার মানুষটাই ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে, তাহলে ওকে আর কি বোঝাবো।
- আজমাইন আরিজাকে কান্না করতে দিলো, সারাটা দিন ও কান্না করলো। রাতে আজমাইন ওকে খাওয়া জন্য ডাকলে আরিজা খাবেনা বললো, তখন আজমাইন ওকে অনেক রিকুয়েস্ট করে, তারপর জোর করে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো। আজমাইন ওকে অনেক বোঝালো,আজমাইন জানে এখন আরিজার কতটা কষ্ট হচ্ছে তাই ওকে আর কিভাবে বোঝবে।
যার ভালোবাসার মানুষটা তাকে ফিরিয়ে নেয়নি, তাকে - আর কিই বা বোঝাবে। তাই ও আর আরিজাকে আটকালো না, কান্না করতে দিলো। এভাবে চার পাঁচটা দিন আরিজা কান্না করলাম আর আজমাইন সাথে কোনো কথায় বললো না। আজমাইন সেই আগের মতো বিবাহিত ব্যাচেলার লাইফ চালতে শুরু করলো। এর মাঝে আরিজা অনেকটায় ভেঙ্গে পড়েছে তাই আজমাইন ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা কিছুড়েছেন তাই আজমাইন ওকে অনে করে, কিন্তু আরিজা কিছুতে নিজেকে স্বাভাবিক করতে পরছে না। আজমাইন ভাবছে আরিজাকে বোঝানোর চেষ্টা করলে ও হয়তো সবটা বুঝতে পারবে, আর ওকে মেনে নিবে তাই ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আরিজা কেমনো যেনো ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। একদিন রাতে ওরা দুজনে দুই দিকে ফিরে শুয়ে আছে, এখনো কেউ ঘুমায়নি তাই আজমাইন আরিজাকে বলতে লাগলো।
আজমাইন - আরিজা এখন কি আমাকে মেনে নেয়া যায় না। রাফিন তো আর তোমাকে ভালোবাসে না, অন্য কাউকে ভালোবাসে। দ্বিতীয়বারও তো কাউকে ভালোবাসা যায়, তাহলে তুমি আমাকে কেনো ভালোবাসতে পারছো না। এতে আমার কি দোষ ? দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমার ভালোবাসার মানুষটাই তোমাকে তোমাদোষ? আমিতো তোমাকে ফিরিয়ে ফিরিয়ে নেয়নি, তার শাস্তি তুমি আমাকে কেনো দিচ্ছো। আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না। আমি কি এতটাই বাজে যে তোমার ভালোবাসা পাওয়া যোগ্য নই।
আজমাইন খুব কষ্ট থেকে কথাগুলো বলছিলো। এতগুলো দিন ধরে ওদের বিয়ে হয়েছে কিন্তু দূরত্বটা এখনো সেই পাহাড় কথাগুলো সমান রয়ে গেছে। আজমাইন কথাগুলো বলছিলো আর আরিজা চুপচাপ শুধু শুনছিলো, ও কথা বলছে না তাই আজমাইন আবার বলতে লাগলো।
আজমাইন - (কান্না করে করে) বুঝতে পারছি, দ্বিতীয়বার অন্য কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারলেও, তুমি কাউকে ভালোবাসতে পারবে না। কারণ তুমি একটা মেয়ে। আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে জোর করবো না। যেহেতু তুমি আমকে কখনো ভালোবাসতে পারবে না, তাহলে শুধু শুধু এই মিথ্যা সম্পর্কের কোনো মানেই হয় না, তুমি চাইলে বাসায় চলে যেতে পারো, আর সেপারেও হয়ে যেতে পারো। একটা সম্পর্ক এইভাবে টিক না আর একটা সম্পর্ক এইভাবে টিকতে পারে না, সেটা কখনো সম্ভব না। যেহেতু তুমি আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবে না, তাই তুমি চলে যেতে পারো। আসলে কি জানোতো আমার সবচেয়ে বড় দোষ কি ছিলো? আমি না জেনে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, কাউকে ভালোবাসাটা যে অন্যায় সেটা আমি জানতাম না। তাহলে আমি কখনো তোমাকে ভালোবাসতাম না।
আরিজা এখনো চুপচাপ আছে, আজমাইন কথাগুলো বলে আর সেখানে থাকতে পারলোনা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। তারপর একটা সময় চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে শুয়ে পড়ে। এভাবে আরো দুই তিনটা দিন কেটে যায়। এর মাঝে আজমাইন মনটা আরো বেশী খারাপ হয়ে গেছে। ও আরিজা দিকে তাকাতে পারে না, কেমন সবসময় মন খারাপ করে থাকে। আজমাইন এখন প্ৰায় ভাবে, সব কিছু ফেলে রেখে দূরে চলে যাবে। যে মেয়েটাকে এতোটা ভালোবাসে, ওকে না দেখে থাকতে পারবে না, আর সেই মেয়েটা ওকে মেনে নিতে পারবে না। এটা জানার পর ওর নিজেকে বড় । অসহায় মনে হয়। আজমাইন আড্ডায় বসেছে মন খারাপ করে কথাগুলো ভাবছিলো তখন আলামিন ওকে জিজ্ঞেস করে।
চলবে.......
অবহেলিত স্বামী
পর্ব_৫
লেখকঃআজমাইন হোসেন_ মিস্টার_লেখক_পিচ্চি

0 Comments