তাছাড়া আমার তো গার্ল ফ্রেন্ড আছে।ওকে ছেড়ে আমি কিভাবে অন্য আরেক টা মেয়ের চেহারা দেখার কথা ভাবতে পারি।মেয়েটা যত সুন্দরী হক না কেনো।দরজার সামনে থেকে সরে দাড়ালাম। সেখানে আরো কিছুখন দাড়িয়ে মেয়েটার কুরআন তেলওয়াত শুনে রুমে এসে আবার শুয়ে পরলাম।
ঘুম ভাঙ্গলো সকাল ৮ টার দিকে।বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলাম অফিসে যাওয়ার জন্য। নাস্তা না করেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।কারন জানি আজ ও নাস্তায় রুটি আর সুজির হালুয়া রয়েছে।মা এর শরীর খারাপ হওয়ার কারনে মা সকালে একদিন ও নাস্তা তৈরি করতে পারেন না।আর রিমির কথা বাদি দিলাম ও তো একটা অলস সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠবে ঠিকি। কিন্তু একদিন ও নাস্তা বানাবে না।কেউ কি বলবে ও একটা বাচ্চার মা।
রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুম ক্রশ করে বাড়ির বাহিরে বের হবো তখনি রিমি ডাক দিলো আমায়।
রিমিঃ ভাইয়া কোথায় যাচ্ছো?
রিয়াদঃ কেনো জানিস না অফিসে।
রিমিঃ নাস্তা না করেই চলে যাবে।?
রিয়াদঃ জানি তো আজকে ও নাস্তায় রুটি আর সুজির হালুয়া।আমি প্রতিদিন নাস্তায় এগুলো খেতে পারবো না।তাই আমি চললাম অফিসে।সেখানেই কেন্টিনে গিয়ে কিছু খেয়ে নিবো।( বলে সেখান থেকে চলে যেতে নিলাম রিমি আমায় আবার আটকালো।)
রিমিঃ আরে ভাইয়া দাড়াও আজ নাস্তায় সুজির হালুয়া আর রুটি নয়।তোমার পছন্দের খাবারি আছে।
রিমির কথা শুনে অনেক টা অবাক হলাম।
রিয়াদঃ কি আজ সুজির হালুয়া- রুটি নাস্তায় নেই।তাহলে কি রান্না করেছিস।
রিমিঃ আগে তো ডাইনিং টেবিলে চলো।তারপর নিজের চোখ দিয়েই দেখে নিয়ো কি রান্না করেছি।
রিমি আমাকে এক প্রকার জোর করেই ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গেলো।সেখানে গিয়ে তো আমি এক প্রকার অবাক।পুরো ডাইনিং টেবিল টাই বিভিন্ন খাবার দিয়ে সাঝানো।সেখানে আমার প্রিয় আলুর দম আর পরটা ও আছে।অবাক হয়ে খাবার টেবিলের ওপর খাবার গুলোর দিকে চেয়ে রইলাম।
রিমিঃ কি হলো ভাইয়া খাবার গুলো কি সুধু দেখবেই না খাবে ও সাথে।
রিয়াদঃ (রিমির গলার আওয়াজে আমার হুস ফিরলো।)হুম খাচ্ছি। এতো দিন পর নাস্তার টেবিলে এতো রকম খাবার পেলে কি আবার কেউ না খায়।খেতে শুরু করলাম খাবার গুলো এক এক করে।তবে আজ খাবারের টেস্ট টা কিরকম যেনো অন্য রকম লাগছে। এটা যে মায়ের হাতের রান্না করা খাবার নয় তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। রান্না গুলো মার হাতের রান্নার চেয়ে ও বেশি টেস্টি।
তাহলে কে রান্না করলো খাবার গুলো।মনের মধ্যে প্রশ্ন টা চেপে না রেখে রিমি কে বলেই ফেললাম।
রিয়াদঃ রিমি রান্না গুলো কে করেছেরে ।এগুলো তো মায়ের হাতের রান্না নয়।
রিমিঃ এগুলো নীলা আপু রান্না করেছে।
রিয়াদঃ নীলা আপু মানে নীলা কে?
মাঃ কাল যেই মেয়ে টাকে বাসায় নিয়ে এলি তার নামই নীলা।কেনো তুই ওর নাম জানিস না।
রিয়াদঃ না এই মাএ জানলাম।
রিমিঃ ভাইয়া তুমি তো একটা আজব লোক। যাকে কাল বাড়িতে নিয়ে এলে তার নাম টাই জানো না।ঐ দেখো নীলা আপু দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। উনিই আজ এসব রান্না করেছে।
রিয়াদঃ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সকালের ঐ মেয়ে টা রিমির ড্রেস পরে মাথায় অনেক বড় ঘোমটা দিয়ে দাড়িয়ে আছে।ও তাহলে মেয়েটার নাম নীলা।বলতে হবে মেয়েটা যেমন ধার্মীক তেমনি রান্নার দিক দিয়ে ও জবাব নেই।সত্যিই রান্না টা আজ খুব ভালো হয়েছে।
মেয়েটার দিকে কিছু খন তাকিয়ে থেকে আবার খাওয়া শুরু করলাম।
রিয়াদঃ আচ্ছা মা আমি এখন আসি।( নাস্তা করা শেষ তাই অফিসে যাবো বলে মার থেকে অনুমতি চাইলাম)
মাঃ এখন না তুই অফিসে একটু পরে যাবি,অফিসে যাওয়ার আগে নীলাকে নিয়ে একটা শপিং মলে গিয়ে ওকে কিছু ড্রেস কিনে দে।
রিয়াদঃ মা এখন তো অফিসে যাওয়া টা আমার খুব দরকার।
মাঃ আমি কোনো কথা শুনতে চাই না রিয়াদ তোমাকে যখন একবার একটা কথা বলেছি।সো তুমি সেটাই করবে।তাছাড়া মেয়েটার এক্সট্রা কোনো ড্রেস নেই যে একটা পাল্টে আরেক টা পরবে।কাল রিমির দেওয়া ড্রেস টা এখনো নীলা পরে আছে।আজ দুপুরে গোসলের পর কোন ড্রেস টা পরবে ভেবে দেখেছো একবার।তুমি যখন দায়িত্ব নিয়ে নীলাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছো তো তোমাকেই ওর যতো প্রকার সুবিধা অসুবিধা দেখতে হবে।
মা যে নীলাকে অনেক পছন্দ করেছে।তা মার বিহেভিয়ার দেখেই বুঝতে পারছি।কারন মা কখনো অপরিচিত কোনো মানুষের নাম ধরে ডাকেন না,তা সে মানুষ ছোটই হক বা বড়।
রিয়াদঃ ঠিক আছে মা এখনি উনাকে নিয়ে শপিংয়ে যাচ্ছি।
নীলা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
মাঃ হুম, নীলা মা তুমি রেডি হয়ে আসো।তোমাকে নিয়ে রিয়াদ শপিংয়ে যাবে।
নীলাঃ মাথা নাড়িয়ে হে বলে সেখান থেকে রুমে চলে এলাম।
রিয়াদঃ সুধু একজন কেই আমি খুব ভয় পাই।আর সেটা হলেন আমার মা।যার জন্য রিয়া কে যে আমি ভালোবাসি সেটা ও মা কে বলতে পারি না।কারন মা রিয়া কে একদমি পছন্দ করে না ওর মডেলিংয়ের জন্য।
কিছখন পর নীলা বরকা পরে নিচে আসলেন।তারপর উনাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম শপিংয়ে যাওয়ার জন্য।
আমি গাড়ি চালাচ্ছি আর উনি আমার পাশে চুপ করে বসে আছেন।
রিয়াদঃ ধন্যবাদ। আজ নাস্তায় এতো ভালো ভালো খাবার রান্না করার জন্য।
নীলাঃ আপনি আমায় সুধু সুধু ধন্যবাদ দিচ্ছেন কেনো।এটা তো আমার কর্ত্বব্য ছিলো,যতই হক আমি আপনার বাসায় বিনা পয়সায় থাকছি।উল্টো আপনাকে আমার ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।কাল যদি আপনি আমায় আপনার বাড়িতে আশ্রয় না দিতেন তাহলে কি যে হতো তা আল্লাহ ভালো জানেন।( মাথা নিচু করে কথা গুলো বললাম)
রিয়াদঃ আচ্ছা কাল রাতে তো আপনার বেপারে কিছু বললেন না।মানে আপনার বাবা- মা,ভাই বোন বা ঢাকার আসার আগে কোথায় ছিলেন।আর ঢাকায় কি কারনে এলেন যেখানে আপনার আপন জন নেই বললেই চলে।
কথা গুলো জিগ্যেস করার পর দেখলাম মেয়েটি চুপ করে বসে রইলো।মনে হয় কিছু বলতে চাইছে না তাই।
রিয়াদঃ কোনো সমস্যা থাকলে না বললে ও চলবে।
নীলাঃ না না কোনো সমস্যা থাকবে কেনো, কোনো সমস্যা নেই।তাছাড়া আপনি আমার এতো বড় উপকার করেছেন আপনাকে এতো টুকু তো বলতেই পারি।
আপনাকে তো কাল রাতেই বললাম আমার বাবা -মা আর বেচে নেই।আমার যখন ৬ বছর,আর বড় বোনের ১৫ বছর বয়স তখনি আমার মা মারা যান।এর কিছুদিন পর বাবা অন্য আরেক টা মহিলাকে বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে চলে যান।ঐ দিনের পর থেকে বাবাকে আর দেখিনি আমরা দুজন,তাই আমরা মনে মনে ভেবে নিয়েছি বাবা হয়তো মারা গেছেন।বাবা চলে যাওয়ার পর আমরা দুজন চাচার বাড়িতে গিয়েছিলাম এই আশায় যে উনি হয়তো আমাদের থাকার, খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।কিন্তু চাচির কারনে চাচা আমাদের তার বাড়িতে থাকতে দিতে পারে নি।এদিকে আমাদের ঘরে খাওয়ার মতো তেমন কিছুই ছিলো না বলতে গেলে।
আমাদের দু বোনের মধ্যে আমার বড় বোনই ছিলো বয়সে একটু বড়।তাই বাধ্য হয়ে বড় আপুকে টিউশনিতে নামতে হয়।আপু সকাল বেলা রান্না করে দিয়ে প্রতিদিন টিউশনিতে চলে যেতেন,আর সন্বাহের দিকে বাড়ি ফিরতেন।
আমার বয়স যখন ৮ হলো তখন আপু আমায় একটি মহিলা মার্দাসায় ভর্তি করিয়ে দেন।সেখান থেকেই আমি ইন্টার পাস করেছি।এই পর্যন্ত সব কিছু ভালোই ছিলো।সমস্যা টা তখনি সৃষ্টি হলো যখন আপু বিয়ে করলেন।আপু যে লোক টা কে বিয়ে করলেন তার স্বভাব টা আমার একটু ও ভালো লাগতো না।সব সময় আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে থাকতো।একদিন রাতে উনি আমার সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করে যা আমি আপুকে যেয়ে সব বলে দেই।এরপর আপু দুলাভাইয়ের সাথে অনেক জগরা করে।সেদিন রাতে আপুকে ঐ লোক টা অনেক মেরে ছিলো।আপুর মার খাওয়া টা আমি সহ্য করতে পারি নি। আমি এটা অন্তত বুঝে গিয়েছিলাম যে,আমি যদি আপু আর দুলাভাইয়ের মাঝে থাকি।তাহলে উনারা দুজন কখনো সুখি হতে পারবেন না।তাই কাল ভোর সকালে আমি একা ঢাকায় চলে আসি।( কথা গুলো সব একদমে বলে ফেললাম)
রিয়াদঃ নীলার কথা গুলো শুনার সময় কখন যে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বসে আছি তা বলতেই পারবো না।পিছনের গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে আমার হুস আসলো, গাড়িটা রাস্তার কিনারায় নিয়ে গেলাম।বুঝতে পারলাম নীলা কাদতেছে কথা গুলো বলার পর।নীলার কথা কি বলবো আমার নিজের চোখেই পানি চলে এসেছে ওর কথা গুলো শুনে।
একটা মেয়ে কি ভাবে এতো কষ্ট সহ্য করতে পারে।ছোট বেলা বাবা-মা কে হারলো আর এখন বোন কে।
মন টা চাইছে ওর চোখের জল গুলো মুছে দিতে।কিন্তু তেমন টা করলাম না কারন কাদলে মানুষের মন হাল্কা হয়।যা নীলার সবচেয়ে প্রয়োজন এখন।
গাড়ি নিয়ে সোজা শপিং মলে চলে আসলাম।এর মধ্যে নীলা কান্না করা ও বন্ধ করে দিয়পছেন।
রিয়াদঃ নীলা আমরা এসে গেছি।( গাড়ি থেকে নামতে নামতে)
নীলাঃ হুম( গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালাম)
নীলা কে নিয়ে মেয়েদের একটি কাপড়ের দোকানে ঢুকলাম।
রিয়াদঃ নিন পছন্দ করুন আপনি কোন কাপড় গুলো নিবেন।( নীলাকে বললাম)
নীলাঃ হুম।
দেখলাম উনি তিন টা কম দামী থ্রি -পিস পছন্দ করে সেগুলো পেক করতে বললেন।হয়তো বাড়িতে পরার জন্য নিয়েছে।
নীলাঃ হুম আমার হয়ে গেছে চলুন।
রিয়াদঃ (কিছু টা হবাক হলাম)হয়ে গেছে মানে তিন টা থ্রি - পিসে আপনার কি হবে?
নীলাঃ আমার এতেই হবে।আর লাগবে না।
রিয়াদঃ আপনার তিন টা থ্রি-পিসে কিছু হবে না।আরো কয়েক টা নিয়ে নিন।
নীলাকে সামনে থেকে একটু দূরে সরিয়ে আরো কয়েক টা থ্রি- পিস পেক করিয়ে নিলাম।
নীলাঃ ভাবছি আপনার এতো ঋন কি ভাবে শোধ করবো।
রিয়াদঃ চিন্তা করবেন না আপনার পিছনে যত টাকা খরচ করবো সব আপনার স্বামীর কাছ থেকে সুধে আসলে ফেরত নিয়ে নেবো।
নীলাঃউনার কথা শুনে মুখ চেপে একটু হাসলাম
এই প্রথম উনার হাসির শব্দ টা শুনলাম।অবশ্য ভালো ভাবে শুনতে পারিনি যা চাপা স্বভাবের মেয়ে উনি।
রিয়াদঃ বাড়িতে পড়ার জন্য তো নরমাল কাপড় কেনা হয়ে গেলো।এবার বাহিরে কোথায় ঘুরতে বেরুনের জন্য কয়েক টা কাপড় চয়েজ করুন।
নীলাঃ না না আমার আর কিছু লাগবে না।
রিয়াদঃ লাগবে না কেনো অবশ্যই লাগবে।আপনি কি কোথাও ঘুরতে যান না নাকি।
নীলাঃ যাই তবে আপনাদের,,,,,
রিয়াদঃ কোনো তবে না, আর একটা কথা আমি কিন্তু সব সময় আপনাকে নিয়ে শপিংয়ে আসতে পারবো না। সো যা যা লাগবে এখনি নিয়ে নেন।
নীলাঃ ঠিক আছে তাহলে আমার জন্য দুটো ভিন্ন রংয়ের বোরকা নিন।
রিয়াদঃ বোরকা তো নিবোই তার আগে বাহিরে কোথায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য কিছু কাপড় নিন।
নীলাঃ আমি বাহিরে কোথাও বের হলে বোরকাই পরে বের হই,কোনো দামি কাপড় পরে না।তাই আর কিছু যদি নিতেই হয় তাহলে দুটো বোরকাই নিন।
এই মেয়ে টা কে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।এখন কার যুগে উনার মতো এমন আরেক টা মেয়ে আছে বলে আমার মনে হয় না।উনার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে ১০০% আমার পকেট ফাকা করে দিতেন।এমনকি উনার জায়গায় রিয়া থাকলেও এতো খনে আমার পকেট ফাকা হয়ে যেতো।
উনাকে (নীলাকে) তো একজন ভাগ্যমান মানুষই তার বউ হিসেবে পাবে।( মনে মনে বললাম)
চলবে।।।।।
গল্প: অবহেলা
পর্ব_২
লেখনিতে: জেসমিন আক্তার নেহা

0 Comments