Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নিষিদ্ধ নারী - পার্ট ২

অপরার আগমন
------------------------
অনেক কষ্টে অপরা রিতিকার ঠিকানা খুঁজে বের করে। ঠিকানা খুঁজে পেলেও সোসাইটির ভেতর ঢুকতে বেশ ঝামেলাই পোহাতে হয় তার। দারোয়ান কোনভাবেই গেট খুলতে রাজি হচ্ছিল না।কারণ সে রিতিকার নামের পদবি বলতেই ভুল করেছে। অপরার জানা মতে রিতিকা তার নিজের আসল নাম পরিবর্তন করে রিতিকা স্যানাল রেখেছিল। এখানে দারোয়ান যেহেতু রিতিকা স্যানাল নামে কাউকে চিনতে পারেনি, তার মানে রিতিকা নিশ্চয়ই তার নামের পদবি আবার পরিবর্তন করেছে। তাই বুদ্ধি করে অপরা নিজের কাছে থাকা দুইবছর আগের ছবিটা দেখিয়ে ব'লে, সে রিতিকার বান্ধবী।
— কিন্তু কি লাভ হল? এতো বুদ্ধি করে ভেতরে ঢুকেও দেখা পেল না রিতিকার। অপরা ভেবে ছিল হয়তো আজ তার শেষ দিন।কিন্তু হটাৎ মনে পড়ে রিতিকার কথা। একমাত্র রিতিকাই পারে তাকে এই বিপদ থেকে বাঁচাতে। সেই জন্য সে বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা রিতিকার কাছে এসেছে। সেই সকাল থেকেই সে অপেক্ষ করছে রিতিকার জন্য। কি করবে সে?তার তো যাওয়ার কোন জায়গাও নেই। তাই অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার। রিতিকার ফ্লাটের দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকতে থাকতে সে ঘুমিয়ে পড়ে।
—সিঁড়ি বেয়ে সাত তলায় উঠতে রিতিকার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। লিফট নষ্ট হওয়ার আর দিন খুঁজে পেলো না! এমনিতেই আজকের এই কাস্টমার এর বিহেভিয়ারে তার মাথায় আগুন জ্বলছে।তার উপর লিফট নষ্ট হওয়াটা যেন আগুনে ঘী ঢালবার মতো। নিজের মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে উপরে উঠে সে হকচকিয়ে যায়। দরজার সাথে হেলান দিয়ে অপরা ঘুমাচ্ছে। এতোদিন পর অপরা এখানে কি করছে? দালাল যদি অপরার খোঁজ পায় তাহলে সারে সর্বনাশ।



—গায়ে হাত দিতেই জেগে উঠে অপরা। সামনে রিতিকাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বুকের ভেতর মাথা গুঁজে অঝোরে কাঁদতে থাকে অপরা।
—কি হয়েছে তোর? এতদিন পর কোথায় থেকে আসলি? তোর হাসবেন্ড কোথায়? আর এই ভাবেই বা কেন কান্না করছিস?
— অপরা কোনো কথায় বলতে পারেনা, শুধু অঝোরে কাঁদতে থাকে।
—এইদিকে রিতিকার কাছে সময় নেই, কাস্টমার নিচে অপেক্ষা করছে। সময় নষ্ট করা মানেই বিপদ। অপরাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, কি হয়েছে না হয়েছে সব পড়ে শুনবো। চোখের জল ধরে রাখ, যখন শুনবো তখন ফেলিস। নিচে কাস্টমার দাঁড়িয়ে আছে, দেরি হলে বুঝতেই তো পাচ্ছিস। তুই ভেতরে এসে বস, আমি শাওয়ার টা নেই তাড়াতাড়ি। দরজা খুলে রিতিকা ভেতরে ঢুকলো পেছন পেছন অপরা ঢুকলো। চোখের জল মুছে সোফায় বসতে বসতে বলল, বাড়িতে খাবার থাকলে দে তো। আমার খুব খিদে পেয়েছে, আজ তিনদিন হল কিছু খাইনি।
—ফ্লাটে ঢুকেই রিতিকা শাওয়ার এর জন্য যেতে নিয়েছে, পেছন থেকে অপরার এই কথা শুনে থমকে দাঁড়ায়।
পেছন ঘুরে অপরার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল। তুই একটু বস আমি এখুনি নিচ থেকে কিছু কিনে নিয়ে আসতেছি।
—ওহ তার মানে বাড়িতে উপস্থিত কিছুই নেই! আচ্ছা তোর এখন নিচে যেতে হবে না। তুই শাওয়ার নিয়ে আয়, পরে কিছু কিনে নিয়ে আসলেই হবে। কাস্টমার কে অপেক্ষা করাতে নেই। তুই কাস্টমার কে খুশি করে, ফিরে আসার সময় কিছু নিয়ে আসিস।
—রিতিকা এক মূহুর্তের জন্য কিছুই বলতে পারে না। এবার নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারে না সে। বিপদের দিনে যে মেয়েটি ওকে সহায়তা করে ছিল, আজকে তাকে খাবার দিতে পাচ্ছে না।আবার বিপদে পড়া মেয়েটিকে এটাও বলতে হবে।যে আগামী সাত দিন সে বাড়িতেই থাকবে না।
—রিতিকা মাথা নিচু করে আমতাআমতা করে বলল। ইয়ে মানে, অপরা আমি তো সাত দিন বাড়িতেই থাকব না।
—সাত দিনের কথা শুনে অপরা সোফা থেকে উঠে এসে রিতিকার পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করে। তুই সাত দিন বাড়িতে থাকবি না কেন? আমাকেও নিয়ে যা তোর সাথে। যেখানে যাচ্ছিস আমাকে সাথে নে।আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই।
—কি করছিস কি অপরা? উঠে দাঁড়া বলছি। কোথাও যাচ্ছি না আগে তোর কথাই শুনবো। শান্ত হয়ে বসে আমাকে সব খুলে বল।
—অপরা চুপচাপ উঠে গিয়ে সোফায় বসতে বসতে বলা শুরু করে। রিতিকা আমার খুব বিপদ, কর্ণভ আমাকে খুঁজে পেলে খুন করে ফেলবে। নিজের কথা শেষ না করেই, অপরা আচমকা একটা কাজ করল। যা দেখে রিতিকা স্তব্ধ হয়ে যায়। অপরা নিজের শরীরের সমস্ত কাপড় খুলে রিতিকার সামনে দাঁড়ালো।
—অপরার শরীর এর দিকে তাকিয়ে ঈষৎ কেঁপে ওঠে রিতিকা। সাদা ধবধবে শরীরে অসংখ্য আঘাতে চিহ্ন। রিতিকা কিছু বলতেই যাচ্ছিল, এর মাঝেই ওর ফোন বেজে ওঠে।ফোন ধরতেই ওই পাশে সেই ড্রাইভার এর উচ্চ তীক্ষ্ণ কন্ঠ।
—এই আপনার কত সময় লাগবে? পাঁচ মিনিট এর ভেতর চলে আসুন, আমাদের হাতে বেশি-
—রিতিকা হটাৎ করে কি যেন ভেবে দিপেশ কে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বলল, আমার সাথে একটা মেয়ে যাবে। আপনাদের কি কোন সমস্যা আছে?
—দিপেশ এবার রেগে গিয়ে বলল, সমস্যা আছে মানে? বুকিং আপনাকে করা হয়েছে। আপনি সাথে আরও একটা মেয়ে নিয়ে আসতে চাচ্ছেন! এর মানেটা কী? চুপচাপ বেশি কথা না বলে এখুনি একাই চলে আসুন।
—দিপেশ এর ফোন কেটে দেওয়া দেখে বোঝাই যাচ্ছে অন্য একটা মেয়ের ব্যাপার এরা ভালো ভাবে নিবে না। তাই নিজের থেকেই রিতিকা সিদ্ধান্ত নিল। এই ডিল সে ক্যান্সেল করে দিবে,যদি অপরা কে সাথে না নিতে পারে। সে দিন অপরা যদি না থাকতো হয়তো এই জীবনও থাকতো না তার। আজ তাই একটা ডিল এর জন্য, সে বিপদের দিনে অপরা কে একা ফেলে রেখে চলে যেতে পারে না।
—অপরা নিজের কাপড় পড়ে নিয়ে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিতিকার দিকে। রিতিকা শাওয়ার না নিয়ে শুধু একটা ব্যাগে কিছু কাপড়, এবং প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিস নিয়ে বেরিয়ে আসে। সে অপরার দিকে তাকিয়ে বলল, আয় আমার সাথে।
—কিন্তু রিতিকা কাস্টমার মনে হয় না এটা মেনে নিবে। আমি না হয় তোর এই বাড়িতে থাকি তুই বাইরে থেকে বন্ধ করে যা। যাওয়ার আগে কিছু খাবার কিনে রেখে যাস। অপরার কথা শুনে রিতিকা বলল, আমি জানি না তুই কোন বিপদে পড়ে এসেছিস। কিন্তু এখানে তোকে যদি রেখে যাই, আর তা যদি রাজিব কোনো ভাবে জানতে পারে। তাহলে তোকে আমিও রক্ষা করতে পারবো না।
—রাজিব এর নাম শুনে অপরা আৎকে উঠে। রাজিব কি ভাবে জানবে আমি তোর এখানে।
—কারণ এই ফ্লাট টা রাজিব এর, আমি এখানে রাজিব এর ওয়াইফ মিসেস রয় এর পরিচয়ে থাকি।
—অপরা কথা না বাড়িয়ে রিতিকার পেছনে পেছনে যায়। যতটা ভয় সে তার স্বামী কে পায় ঠিক ততটাই ভয় সে রাজিব কেও পায়। একসময় সে নিজেও রাজিব এর আন্ডারে কাজ করতো।
—রিতিকা চিন্তিত মনে নিচে নামছে, এই ডিল টা তার জন্য খুব ইম্পরট্যান্ট ছিল। মাসের শেষ আভাকে সময় মতো টাকা পাঠাতেই হবে। কিন্তু সে অপরা কেও একা ছাড়তে পারবে না। বিপদের দিনে যে পাশে ছিল আজ তার বিপদে তাকে একা ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
—গলি দিয়ে রিতিকা কে আসতে দেখে দিপেশ বলল, ওই তো আসতেছে।
—গাড়িতে উঠতে নিয়ে দিপেশ লক্ষ করলো,রিতিকার পেছনে একটা মেয়েও আসতেছে? এবার দিপেশ কিছু বলার আগেই রণক কর্কশ স্বরে বলল, এই মেয়ে দেখছি সুবিধার না। তুই না বললি এই মেয়ে আমাদের জন্য সিকিউর, এই তোর সিকিউর। সাথে তে দেখতেছি আরও একটা মেয়ে নিয়ে আসছে। আদৌও কি আমরা আমাদের কাজ গোপন রেখে করতে পারবো? দিপেশ টেনশন মাথায় হাত দিয়ে বলতেছে, আমি কি জানতাম নাকি এমন হবে।
—রিতিকা এতক্ষণে ওদের কাছে চলে এসেছে, কাস্টমার এর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে রিতিকার কপালে দুঃখ আছে। কাস্টমার যদি রাজিব এর কাছে ফোন দেয় তাহলে রিতিকার সাথে সাথে অপরার নিশ্চিত রূপে বিপদে পড়বে। তাই ভেতরে ভয় পেলেও উপরে উচ্চ ও তীক্ষ্ণ কন্ঠে সে বলল, আমাদের কিছু ইমারজেন্সি থাকতেই পারে। আপনারা যদি আমার সাথে মেয়েটিকে না নিয়ে যেতে পারেন তাহলে ডিল ক্যান্সেল।
—বাজারি মেয়ের সাথে রণক এর তর্ক করার কোন রুচি নেই তাই দিপেশ এর দিকে তাকিয়ে বলল, এর ম্যানেজার এর কাছে ফোন দে তো দিপেশ।
—ফোন দেওয়ার কথা শুনে ঘাবড়ে যায় রিতিকা, কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই সে বলে। রাজিব এর কাছে ফোন দিয়ে কিছুই হবে না। আমি আমার কাস্টমার কে না বলতেই পারি। বাকী সব মেয়ে আর আমার মাঝে এটাই পার্থক্য। ডিমান্ড তো আর এমনি এমনি বাড়েনি। আপনারা নিজেরাই ঠিক করুন কি করবেন। আমার সাথে মেয়েটি যাবে, তবে এটা কথা দিতে পারি এই মেয়োর জন্য আপনাদের সার্ভিসে কোন ত্রুটি থাকবে না।
—দিপেশ রণক এর হাত ধরে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বলল। আমার মনে হয় না লাস্ট মোমেন্টে, আমাদের এই মেয়েকে হাত ছাড়া করা উচিত হবে। এত অল্প সময়ের মাঝে আরও একটা মেয়ে খোঁজা আমাদের জন্য টাফ ব্যাপার হবে।

—অন্য কোনো উপায় না দেখে, ইচ্ছে না থাকা স্বত্বেও শেষ মূহুর্তে রাজি হতে হয় তাকে। দিপেশ ফিরে এসে কর্কশ স্বরে বলল, এই মেয়েকে নিয়ে কোন ঝামেলা হলে টাকা পাবেন না। মেয়েটা কে সাথে নিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে গিয়ে বসুন। দিপেশ গাড়ি স্টার্ট দিল, পাশের সিটে এসে বসল রণক। 


অতীতে বিচরণ
--------------------
গত ১ ঘন্টা যাবত গাড়ি ছুটছে ফুল স্পিডে কিন্তু গন্তব্যের দেখা এখন পযন্ত মেলেনি। কে জানে কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছে। একবার তো এক কাস্টমার জঙ্গলে নিয়ে গেছিল। উনার নাকি ফ্যান্টাসি ছিল, জঙ্গলে নারী ভোগ করার। ঘরের বউ কে রাজি করতে না পেরে রিতিকা কে বুকিং করে ছিল।
—দিপেশ এর দিকে তাকিয়ে, রিতিকা একবার ভাবলো জিজ্ঞেস করবে!কোথায় তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু পরক্ষনেই তার মনে হলো, কাস্টমার কে প্রশ্ন করা ঠিক হবে না। কাস্টমার প্রশ্ন পছন্দ করে না, শুধু প্রশ্নই না; তাদের সাথে কথা বলাই পছন্দ করে না। যে কাজের জন্য তাদেরকে টাকা দেওয়া হয়।সেই কাজ ছাড়া অন্য কোন কথা বলাই কাস্টমার পছন্দ করে না।
পতিতাবৃত্তি তে রিতিকা যখন নতুন,তখন পতিতালয়ে ছিল সে। নিজেকে নরকের আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য, কাস্টমার এর সাথে অতিরিক্ত কথা বলত।সে ভাবতো কেউ তো অবশ্যই ভালো হবে, যে তাকে বের করে নিয়ে যাবে এই নরক থেকে। একদিন মুম্বাই থেকে আসা এক পুলিশ কর্মকর্তা ঢুকে তার ঘরে। পুলিশকে দেখে রিতিকা ভাবে, পুলিশ হয়তো অভিযানে নেমেছে কাউকে জোরজবরদস্তি করে এখানে আটকে রাখা হয়েছে কি না। তাই সে নিজের কাজ বাদ দিয়ে, তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বলতে ধরে।
—আমাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে চলেন বাবু। আমাকে এখানে জোর করে আটকে রাখা হয়েছে। আমি এই কাজ করতে চাইনা।আমাকে আমার বাড়ি পৌঁছে দেন বাবু। রিতিকা কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলে পুলিশ বাবুর পা জড়িয়ে ধরে।
—পুলিশ বাবু শরীর হেলে দুলে তোতলাতে তোতলাতে বলল, শালী নাজিয়া নে আজ পায়সা ক্যা বাদলেমে ক্যাছি ল্যাডকি দি হ্যা? মুজে লাগি হ্যা শারীরক্যা ভুখ। ওর এ্যা শালী মেরি শারীরক্যা ভুখ না মিটাকে ইতিহাস লেকার বেঠি হ্যা। শালী তেরি ইতিহাস ক্যা বাদলেমে পায়সা নেহি দি হ্যা। এই ব'লেই রিতিকার চুলের মুঠি ধরে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে।
—পুলিশ তার বিশাল দেহ নিয়ে রিতিকার উপরে ঝাপিয়ে পড়ে। নিজের সর্বশক্তি দিয়েও পেরে উঠে না রিতিকা। সারারাত ভোগ করে, ভোর রাতে বেড়িয়ে যায় পুলিশ বাবু। নিষিদ্ধ পল্লী থেকে ভদ্র মুখোশধারী পুরুষেরা অন্ধকারে পালিয়ে যায়। দিনের আলোই যাদের দেখে এদের ধর্ম নষ্ট হয়।রাতের অন্ধকারে তাদেরকে দেখেই এদের চোখ জ্বল জ্বল করে, শরীরের জাগে খিদে। নিজেদের যৌন খিদে মিটিয়ে বেড়িয়ে যায় রাতের অন্ধকারে।
পুলিশ বাবু শুধু চলে গেলো না, যাওয়ার আগে
নাজিয়া খালার কাছে অভিযোগ করে গেলো। নাজিয়া খালা সেই, যার কাছে তার প্রেমিক তাকে বিক্রি করে চলে গেছে। পুলিশ বাবুর অভিযোগ ছিল,কাজ এর থেকে বেশি কথা বলে ল্যাডকি।
কি অদ্ভুত তাইনা? মানুষ সর্বপ্রথম নিরাপত্তার জন্য পুলিশের কাছে যায়। অভিযোগ করে যেন অপরাধী শাস্তি পায়। আর এই আইনশৃঙ্খলারই এক কর্মকর্তা অভিযোগ করছে নিষিদ্ধ পল্লীর খালার কাছে।
—অতীতের কথা টা মনে পড়তেই তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে ফুটে ওঠে রিতিকার।—তখন রণক ইন্টেরিয়র মিররে, পেছনে বসে থাকা রিতিকার হাসি দেখে অবাক হয়ে যায়। তাচ্ছিল্যে কর হাসিতেও যে কারো সৌন্দর্য ফুটে ওঠে তা জানা ছিল না রণক এর। গাড়ি ইন্টেরিয়র মিররের দিকে তাকিয়ে থেকে রিতিকা কে দেখতে দেখতে, নিজের মনেই প্রশ্ন করে। এমন সুন্দর মেয়েরা এই সব কাজ কেন করে! টাকায় কি সব কিছু এদের কাছে? ভালো থাকার জন্য, ভালো পোষাক এর জন্য এরা কী ভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। এদের জন্য সমাজের আজ ভালো ঘরের মেয়েদের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে।
—রিতিকা নামের এই নিষিদ্ধ নারীর হাসি দেখে, কিছুক্ষণ আগেই মুগ্ধ হওয়া রণকের মনে এখন আবার ঘৃণা জায়গা করে নিয়েছে। রণক কাছে এই ধরনের বাজে মেয়ে অসহ্য লাগে। আজ যদি বাড়ির মানসম্মান রক্ষার দায়িত্ব তার কাঁধে এসে না পড়তো তাহলে জীবনেও এমন বাজে দুশ্চরিত্রা মেয়ের দরকার তার পড়তো না।
—রিতিকা অতীত বিচরণে ব্যস্ত। তাই সে ইন্টেরিয়র মিররে লক্ষই করলো না, একজোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই চোখের চাহুনি তে রয়েছে ঘৃণা। রিতিকা যদি দেখত তাতে আহামরি কিছু যাই আসতো না তার। কারণ সে এমন দৃষ্টিতে অভ্যস্ত।
_রিতিকা সেই ভোরবেলার কথা ভাবছে। নাজিয়া খালা নামাজ শেষ করে বসে আছে বারান্দার মেঝেতে পাতানো তাঁর জন্য খাস বিছানায়। বুদ্ধির ঢেঁকি নামে অন্য এক পতিতা কে ডাক দেয়। তাকে হুকুম করে সে যেন রিতিকা কে তাঁর সামনে নিয়ে আসে। বুদ্ধির ঢেঁকি ঘরের ভেতর ঢুকে দেখে রিতিকা শুয়ে আছে। বেচারি কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত খুব কষ্ট করতে হয়েছে। এই লাইনে প্রথম প্রথম এমন কষ্ট সবারই হয়, বুদ্ধির ঢেঁকিরও হয়েছিল। বুদ্ধির ঢেঁকির চোখের এক কোণে জল চলে আসে। মেয়েটা যে খুব আবেগী তা দেখলেই বোঝা যায়।
বুদ্ধির ঢেঁকি বিছানার এক কোণে বসে বলল, তোমাকে নাজিয়া খালা ডাকছে। রিতিকা চোখ খুলে তাকালো বুদ্ধির ঢেঁকির দিকে। ওঁকে কিছু বলতে চেয়েও বলল না রিতিকা। মনে তার এক রাশ অভিমান।
বুদ্ধির ঢেঁকি মনে মনে বিড়বিড় করে বলল, এখানে কি অভিমান এর কোন জায়গা আছে? এখানে কোন কিছুর জায়গা নেই। আছে শুধু শরীর এর জায়গা। বুদ্ধির ঢেঁকি চোখের ভাষায় শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে । রিতিকা বিছানা থেকে নেমে বুদ্ধির ঢেঁকির পেছন পেছন নাজিয়া খালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
—কিরে খানকি পুলিশ বাবু তোর সোয়ামী লাগে নাকি যে অভিযোগ করেছিস? কাস্টমার এর সাথে বেশি কথা বলে কি আমার পেটে লাত্থি মারতে চাস নাকি?
—রিতিকা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ এই মহিলা যে ভয়ানক তা সে প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছে। হাতে চব্বিশ ঘণ্টা তাসবিহ থাকে কিন্তু মহিলার মুখ দিয়ে যে অকথ্য ভাষা গুলো বেড় হয়, তা রিতিকা কোন দিন শুনেও নি। এদের কি আদৌও ধর্ম আছে? রিতিকা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবে, পৃথিবীতে কত রকমের মানুষ আছে। এরা ভুলে যায় উপরে একজন আছে। আর সেই একজন বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ধর্মে ছড়িয়ে আছে। এরা কি তাকে আদৌও ভয় করে? রিতিকা হিন্দু, তাই মুসলিমদের সম্পর্কে সে যা জানে তা খুবই সামান্য। কিন্তু রিতিকা এটা ভালো করেই জানে। যে ধর্মেই হোক না কেন! সতীত্ব নষ্ট করে দেহ ব্যবসায় নামানো হলো পাপ কাজ। কোনো ধর্মই এমন গৃহীত কাজ কে প্রশ্রয় দিবে না। কিন্তু এই মহিলা তো অদ্ভুত, এতো এতো মেয়ের সতিত্ব নষ্ট করে দেহ ব্যবসায় নামিয়ে, তাসবিহ হাতে বসে থাকে।
—নাজিয়া খালার কোথায় তার দুই বিশাল-দেহী পালোয়ান রিতিকা কে সারাদিন মারধোর করে। টানা তিনদিন অনাহারে রাখা হয় তাকে। মেঝের ভেতর নেতিয়ে পড়ে থাকে রিতিকা। সেখানে তিন দিন এর মাথায় নাজিয়ার পেছন পেছন আসে বুদ্ধির ঢেঁকি হাতে ভাতের প্লেট নিয়ে।
—নাজিয়া খালা ধমক দিয়ে বলল। খানকিটা কে বলে দে বুদ্ধির ঢেঁকি। এখানে থাকতে হলে সব মেনে নিয়ে থাকতে হবে। না মানলে ভাত খেতে না পেয়ে মরবে।এই বলেই নাজিয়া খালা চলে যায়। বুদ্ধির ঢেঁকি এসে মেঝেতে বসে ব'লে,খেয়ে নাও। রিতিকা সামনে ভাত দেখ উঠে বসেই গোগ্রাসে ভাত খাওয়া শুরু করে। গলায় যখন আটকে যায় তখন বুদ্ধির ঢেঁকি জল এগিয়ে দিয়ে বলে, ধীরে খাও বোন। ভাত খাওয়া শেষ করে বসে থাকে রিতিকা। বুদ্ধির ঢেঁকি এঁটো প্লেট বাইরে রেখে এসে ওর পাশে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, আজ রাত আরাম করো বোন কাল থেকে আর সময় পাবে না।
—রিতিকা শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, কাল থেকে কাস্টমার আসবে এইতো!আজকেই পাঠিয়ে দেন । কাস্টমার আসার আগে আমাকে আরও এক প্লেট খাবার দিয়েন। ছলছল চোখে বুদ্ধির ঢেঁকি রিতিকার দিকে তাকিয়ে বলে, পেট ভরেনি বোন?
—রিতিকা মাথা নাড়িয়ে ব'লে, না। পেছন থেকে তখন নাজিয়া বলে ওরে আরও খাবার দে। বুদ্ধির ঢেঁকি নাজিয়ার গলার আওয়াজ পেয়ে ভয়ে পেছনে তাকায়। কখন এসেছে তারা কেউই বুঝতে পারেনি।বুদ্ধির ঢেঁকি বাইরে চলে যায়। নাজিয়া খালা রিতিকার পাশে বসে বলল, নিজেরে কষ্ট দেওয়া বোকামি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস, পেটের জন্যই দুনিয়ার। যত ভালো পারফরম্যান্স দিবি, তত ভালো খাবার পাবি।খেয়ে নে রাত আটটার দিকে এই এলাকার থানার বড় বাবু আসবে। বুদ্ধির ঢেঁকি ঘরে পাঠাতে চেয়ে ছিলাম, কিন্তু বড় বাবু নতুন কচি মাল বেশি পছন্দ করে। বুদ্ধির ঢেঁকি পুরাতন হয়ে গেছে। বড় বাবু কে খুশি করতে পারলে ভালো মাল কড়ি দিবে। বুদ্ধির ঢেঁকি আরও এক প্লেট ভাত এনে দাঁড়িয়ে আছে। একদিন তার সাথেও এমন হয়েছিল, আর এই নাজিয়া খালা তাকেও এই ভাবেই লাইনে নিয়ে আসে। এখানকার সব পতিতা এক সময় পুরাতন হয়ে যায়। বুদ্ধির ঢেঁকি এখন নাজিয়ার ডান হাত। কিন্তু তাও পুরাতন তকমা টা লেগে গেছে।অথচ এখানে আসার এক বছর পূরণ হয়নি।
—নাজিয়া চলে যায় হাসি মুখে। প্রতি বারের মতো আজকেও তাঁর জয় হলো। প্রতিবার কোনো না কোনো মেয়েকে এই ভাবেই লাইনে আনে উনি।
বুদ্ধির ঢেঁকি সামনে প্লেট ভরা ভাত আর জল রেখে বসে থাকে। এইবার আগের মতো গোগ্রাসে খাইনা রিতিকা। খেতে খেতে রিতিকা নিজের মনে মনে পণ করে। এই জায়গা থেকে সে বেড় হবেই। এখানে তার একটা সাথী দরকার, বুদ্ধির ঢেঁকি যে ভালো তা সে এই কয়েকদিনেই বুঝতে পেরেছে। সখ্যতা বাড়াতে সামনে বসে থাকা বুদ্ধির ঢেঁকির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, তোমার নাম এমন অদ্ভুত কেন বোনু?
—বুদ্ধির ঢেঁকি হেসে উঠে ব'লে, আরে বোন আমার নাম বুদ্ধির ঢেঁকি না। আমার নাম অপরা, আর অপরা নামের অর্থ বুদ্ধি। কিন্তু রাজিয়া খালা মজা কইরা বুদ্ধির ঢেঁকি ডাকে। এই ভাবে জীবনের শুরুতেই অপরার সাথে পরিচয়।

অদ্ভুত মেয়ে
-----------------
গাড়ি থামার ঝাঁকুনি তে রিতিকার চিন্তায় ছেদ পড়ে। বাইরের ঘুটঘুটে অন্ধকার, ভালোভাবে সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আজ আকাশ মেঘলার জন্য চাঁদেরও দেখা নেই। রিতিকা বুঝে উঠতে পারে না, এরা কোন জায়গা এসেছে। বৃষ্টি এখন নেই বললেই চলে, টিপটিপ করে পড়ছে। কিন্তু যে বাতাস টা তাদের শরীরে এসে লাগছে, তা শরীরে রীতিমত কাঁপুনি সৃষ্টি করেছে। রিতিকা পাতলা একটা টপ পড়েছিল। নিজের দুই হাতে, নিজের দুই বাহু চেপে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল। এটা কেমন জায়গা এতো অন্ধকার কেন? লাইট নেই মনে হয়।
—রণক বাড়ির গেইট খুলতে খুলতে বলল। মস্তিষ্কে কিছু আছে? নাকি শরীর ছাড়া অন্য কোন অংশ কাজ করে না।
—কথাটা গিয়ে বিঁধল রিতিকার মনে। এই লোকটা পেয়েছে কি! যখন তখন হেয় করে কথা বলছে। মাথাটা এমনিতেই ঝিমঝিম করছে, সারাদিন সে কিছুই খায়নি। তাই এবার বেশ ভালো মতে কথা গায়ে মাখিয়ে নিয়ে বলল। শরীর এর জন্যেই তো ঘটা আয়োজন করে নিয়ে এসেছেন।বুদ্ধির খেলায় অংশগ্রহণ এর জন্য তো আর নিয়ে আসেননি। টানা সাত দিন তো এই শরীর নিয়ে খেলবেন নাকি।
—রণক এমন কথা মোটেও আশা করেনি। সে কোন উত্তর দিয়ে উঠতে পারে না। গেইট খুলে ভেতরে ঢুকেই, দিপেশ কে জেনারেটর অন করতে বলে। অপরা আর রিতিকা বাড়ির ভেতর ঢুকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। কোথাও যে বসবে তারও উপায় নেই।এতো অন্ধকার যে কিছু দেখাই যাচ্ছিল না। উনারা দুজনেই জেনারেটর অন এর কথা বলে গেলো তো গেলো।অনেকক্ষন সময় পার হওয়ার পরও এখনো আসার কারো কোন নাম নেই।
—হাতে একটা মোমবাতি নিয়ে কেউ একজন এগিয়ে এলো তাদের দুজনের দিকে। জেনারেটর এর কথা বলে মোমবাতি এনেছে, কথাটা ভেবেই ফিক করে হেসে উঠে রিতিকা। অপরা রিতিকার হাতে আস্তে করে একটা থাপ্পড় মেরে বলে, তুই কি পাগল হয়েছিস। মুখ বন্ধ রেখে নিজের কাজে মনোযোগ দে। বেশি কথা বললে আবার পুলিশ বাবুর মতো হবে। অতীতের কথাটা মনে পড়তেই তারা দুজনেই এক যোগে হেসে উঠে।
মোমবাতি হাতে লোকটি কাছাকাছি যখন এলো, তখন তারা বুঝতে পারে ওটা কোন লোক না; আসলে একটা মেয়ে। মেয়েটা যে রূপবতী তা বোঝা যাচ্ছে।কারণ আগুনের লাল আভা যেন রূপ টাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
—মেয়েটি কাছে এসেই বলল, আপনারা দাঁড়িয়ে কেন? দাদা যে কি করে না।বসতে না দিয়েই আগে জেনারেটর অন করতে গেছে। একটু আগেই কারেন্ট গেলো। আমি আবার জেনারেটর অন করতে পারিনা তাই অন্ধকারে বসে অপেক্ষা করছিলাম দাদার জন্য। আরে, আমিও কি পাগল বলুন তো। দাঁড় করে রেখেই বকবক করছি। সোফা দেখিয়ে দিয়ে বলল, আসুন আসুন বসুন আপনারা।
—তারা দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। মেয়েটা কি সত্যি পাগল! অপরিচিত মানুষের পরিচয় না নিয়ে কেউ এইভাবে বকবক করে।
যখন তারা দুইজন এটা ভাবতে ছিল তখন কারেন্ট চলে আসে। আর কারেন্ট আসতেই তারা আরও বেশি অবাক হয় যায়, মেয়েটির পোষাক দেখে। খোলামেলা আবেদনময়ী পোষাক পড়ে আছে মেয়েটি।এতক্ষণ এটা চোখে না পড়ার কারণ হলো মোমবাতি আলোতে তারা শুধু মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। অবশ্য মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার আরও একটি কারণ হলো, মেয়েটি অতিরিক্ত বকবক করছিল।
কারেন্ট আসতেই আরও একটি ঘটনা ঘটে। যার জন্য রিতিকা বা অপরা কেউ-ই প্রস্তুত ছিল না। কোথায় থেকে যেন রণক এসেই মেয়েটির গালে চড় বসিয়ে দেয়। উচ্চ তীক্ষ্ণ কন্ঠে দিপেশ কে বলে।
— দিপেশ উনাদের থাকার ঘর দেখিয়ে দে। আর সব কিছু বুঝিয়ে দিস। এই বলেই বকবক করা মেয়েটির হাত ধরে হেঁচকা টানে নিয়ে চলে যায়।
—রিতিকা আর অপরা'কে ঘর দেখিয়ে দিয়ে দিপেশ বলে,রেডি হয়ে ডাক দিবেন আমি বাইরেই আছি।এই বলে গেট লাগিয়ে চলে যায় দিপেশ।
—রিতিকা নিজের ব্যাগ রেখে বিছানায় শুয়ে ব'লে, দেখলি অপরা এই হলো পুরুষ। গাড়ির ভেতর এমন ভাবভঙ্গি দেখাল, যেন ওরা কখনো মেয়ে ছুঁয়েই দেখেনি।আর এখন রেস্ট নেওয়ার সময় না দিয়ে বলছে রেডি হতে। ব্লাডি পারর্ভাট!
—অপরা হতাশ হয়ে পাশে বসে বলল, কোন পুরুষই আসলে ভালো না। আমার ধারণা ভুল ছিল, আমি কর্ণভকে বিশ্বাস করে এই নিয়ে জীবনের দ্বিতীয় বারের মতো পুরুষের কাছে ঠকেছি। রিতিকা উঠে বসে অপরার হাত নিজের হাতের ভেতর নিয়ে বলে, কি হয়েছে বলত খুলে এখন।
—এখন খুলে বলার সময় নেই, যা স্নান করে রেডি হ। নইতো ওই মেয়েটার মতো তোকেও চড় খেতে হবে।
—রিতিকার যেন কথা বলার আরও একটা টপিক পেল। আচ্ছা অপরা তোর কি মনে হয়? ওই মেয়েটা কে হতে পারে? মুখে দাদা বললেও পোশাকে অন্য কিছু মনে হচ্ছে।
—আমার আবার কি মনে হতে যাবে। মেয়েটাকে একটু অদ্ভুত মনে হয়েছে এই যা, আর কিছুই না।
—শুধু অদ্ভুত!
—হ্যা, আর অন্য একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি, শুরু থেকেই সবকিছু কেমন জানি অদ্ভুত। আমার মনে হয় কিছু একটা কিন্তু- পারান্তু তো আছেই। কি তা বুঝে উঠতে পাচ্ছি না।
—রিতিকা কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর বলল, না আমার তেমন কিছুই মনে হচ্ছে না। এই রকম অদ্ভুত অনেক কাস্টমার দেখেছি।
—না রিতিকা একটু ভেবে দেখ, যখন তুই আমাকে সাথে নিতে চাইলি তখন কার উনাদের রিয়াকশন। আর উনারা দূরে গিয়ে কি যেন আলোচনা করে আসার পর সম্পূর্ণই চেঞ্জ।
—তুই বেশি ভাবতেছিস অপরা, ওই সব বাদ দিয়ে ওই মেয়েটাকে নিয়ে ভাব। আমার মনে হয় কি, ওই মেয়োটাও আমাদের মতো। শরীরের পোষাক দেখলি না।
দুইজনের কথা বলার মাঝেই দিপেশ গেইটে নক করে বাইর থেকে বলে, আর কতক্ষণ? রিতিকা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, পনের মিনিট পর আসতেছি। রিতিকা চলে গেলো শাওয়ার নিতে। অনেকটা সময় ধরে সে হট শাওয়ার নিলো। সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেলো। শরীর তোয়ালে পেঁচিয়ে বাইরে এসে ব্যাগ থেকে তার পোষাক বের করলো।
—অপরা শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষন রিতিকার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, তোর রূপ মনে হচ্ছে দিনদিন বেড়েই চলছে!
—রিতিকা হেসে বলে, আমি এখনো তোর টাইপ হইনি, তাই নজর দিস না।
—অপরা উচ্চ স্বরে হেসে বলে, তোরে ওই নজরে দেখিনা বোন। তুই আমার ছোট বোন এর মত বুঝলি?
—হুম, বুঝলাম। তা আমি জানি তোর নজর আমি বাদে সব মেয়ের উপরেই থাকে। বাইরে যে মেয়েটা কে দেখলি! কেমন লাগলো?
—অপরা দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছেড়ে বলল।না রে, আমার এখন আর কোন ফিলিংস নেই। কর্ণভ সব ফিলিংস শেষ করে দিয়েছে।
—রিতিকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পুরো শরীরে বডিলোশন মেখে নেটের অন্তর্বাস পড়ে। তার উপর একটি উত্তেজিত লাল সাটিন গাউন। সাটিন গাউন এর পাতলা স্ট্র্যাপ সহ একটি স্লিভলেস তার নেকলাইন প্রদর্শন করছে আর পেছনে তার পুরো পিঠ উন্মুক্ত। সাটিন গাউনে লাগানো বডিস রিতিকার সুডৌল স্তন কে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এক পায়ের উচ্চ চেরা তার ধবধবে সাদা থাই কে উন্মুক্ত করে রেখেছে।
পোষাক শরীরে জড়ানোর পর, মেকআপ করাতে মন দিল রিতিকা। গাড় লাল লিপস্টিক ঠোঁটে দিয়ে কামুকতাই পরিপূর্ণ তৈরি করে নিজেকে। চুল আঁচড়ে ঠিক করে নিয়ে পেছনে উন্মুক্ত পিঠে ছেড়ে দেয়। তারপর আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে ভাল করে একবার দেখে নিয়ে বলে, আমি রেডি।
—অপরা বলে, তোকে দেখে হার্ট অ্যাটাক না করে বসে বেচারা কাস্টমার। তোর ভেতরে কামুকতা পরিপূর্ণ।
—রিতিকা মুচকি হেসে, এক জোড়া হাই পেন্সিল হিল পড়ে বেড়িয়ে আসে। দিপেশ বাইরে দাড়িয়ে ছিল, রিতিকা কে দেখে সে চমকে উঠে। রিতিকার সৌন্দর্যে যেন কোন কমতি নেই। যে কোন পুরুষ তার এই রূপের প্রশংসা করতে বাধ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই সৌন্দর্যের প্রশংসা শুধু রাতেই পুরুষরা করবে। দিনের আলোই সব প্রশংসা ভ্যানিশ হয়ে যাবে।
দিপেশ এর পেছন পেছন রিতিকা নিচে নেমে আসে। রণক নিচে সোফায় বসে ছিল, রিতিকার দিকে তাকিয়ে সে আর চোখ ফেরাতে পারে না। দেখে মনে হচ্ছে সর্গ থেকে কোনো অপ্সরা নিচে নেমে আসছে। রণক কে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে,রিতিকা বিড়বিড় করে বলে।আ্যব আয়ানা উট পাহাড় কে নিচে।
দিপেশ এসে রণক এর গায়ে হাত রাখলে রণক রিতিকার রূপের মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠে।

To be continued.....


গল্প: নিষিদ্ধ নারী (প্রেম কাহিনী)

পার্ট:-০২
লেখনীতে: সামিনা সামি

Post a Comment

0 Comments