রিতিকার প্রতিবাদ
------------------------
রণক স্বাভাবিক হয়ে দিপেশ এর দিকে তাকিয়ে বলল, সব কিছু বুঝিয়ে বলেছিস?
— রিতিকা লাস্যময়ী মুচকি হেসে রণক এর কোলে গিয়ে বসে। আলিঙ্গন করে কোমল সুরে ব'লে, ওহ ডার্লিং বুঝিয়ে বলার কি আছে! আমি আমার কাজ খুব ভালো করেই জানি।
—কোলে বসতে দেখে দিপেশ কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। রণক কিছু বুঝে উঠার আগেই রিতিকা তার নিজের সামান্য ফাঁক দু’ঠোঁটের মাঝে, রণকের দু’টি ঠোঁটে ডুবে দিয়ে গভীর চুম্বন করে। রণক কিছু সময় এর জন্য মোহিত হয়ে ভালো লাগার মাঝে হারিয়ে যায়। দিপেশ কি করবে বুঝতে না পেরে, হালকা কেশে গলা পরিস্কার করে ধীর স্বরে ডাকে।রণক! এই রণক!
—রণক নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে, সোফা থেকে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে এক ঝটকায় রিতিকা কে নিচে ফলে দেয়। উচ্চ ও তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠে, সাহস কি করে হয় এমন অশোভন আচরণ করার?
—রিতিকা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রণক এর দিকে। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না, সে আসলে করেছে টা কি! যার জন্য উনি এমন আচরণ করছে! নিচে চেঁচামেচি আওয়াজ শুনে অপরা উপর থেকে নেমে আসে। রিতিকাকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে এসে রিতিকার হাত ধরে টেনে তুলে।
—রণক রাগে ফোঁস ফোঁস শব্দে সামনের রাখা টেবিল জোরে লাত্থি মারে। রিতিকা ভয়ে সরে দাঁড়ায়। অপরা কিছু বুঝতে না পেরে, রিতিকা কে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? উনি এমন কেন করছে। রিতিকা নিজেই জানে না, সে কি আর উত্তর দিবে। রিতিকা কে চুপ থাকতে দেখে, অপরা ভয়ে ভয়ে নিজেই জিজ্ঞেস করল। স্যার কি হয়েছে? এ্যানিথিং রং!
—দিপেশ রণক এর কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বলল, তুই ঠিক আছিস?
—দিপেশের এই কথা শুনে রিতিকার শরীর জ্বলে উঠে। মেঝেতে সে পড়েছে, কিন্তু জিজ্ঞেস অন্য একজন কে করা হচ্ছে। পতিতা বলে দাম নাই নাকি। রিতিকা আর চুপ থাকতে পারে না।সে গলা উঁচিয়ে বলে, আপনাদের সমস্যা কি? আমি কি অশোভন আচরণ করেছি? আমাকে যে কাজে নিয়ে আসা হয়েছে, আমি তো সেই কাজটাই করতে নিয়ে ছিলাম। এখানে অশোভন এর কি আছে?
—দিপশ রিতিকার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি যে কাজের জন্যেই আসেন না কেন। আপনাকে অর্ডার না দেওয়া অব্দি তো নিজ থেকে কিছু করার রাইট নেই। এখানে আপনাকে ওর জন্য নিয়ে আসা হয়নি, ওর বোনের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।
—ওয়েট ওয়েট, হোয়াট ডিড ইউ সে? ব্রোথ মি ফর হিজ সিস্টার। হোয়াট ডাস দিস ওয়ার্ড মিন?
—রিতিকার কথা শুনে দিপেশ চুপ হয়ে যায়,কারণ সে ইংরেজি বুঝে না। একটা পতিতা তার সামনে ইংরেজিতে কথা বলছে, রাগ উঠে যায় দিপেশের। কিন্তু রাগ উঠলেও এখানে কিছু করার নেই তার। কথা না বুঝে তো আর কথার পৃষ্ঠে কথা বলা যায় না।
—রণক ব্যঙ্গ কন্ঠে বলল, প্রস্টেটিউট হয়ে আবার ইংলিশে কথা বলছে। হোর, ইউ আর হ্যাভিং ট্রাবেল আন্ডারস্ট্যান্ডিং বেঙ্গলি? হি সেইড, ইউ ওয়েয়ার ব্রোথ হেয়ার টু স্লিপ মাই সিস্টার।
—রিতিকা কথাটা শুনে আকাশ থেকে পড়লো, নাকি আকাশই ভেঙে তার মাথায় পড়লো বোঝার উপায় নেই। কারণ পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। এই লোকটির মাথায় কোন সমস্যা আছে নইতো এমন অদ্ভুত কথা কীভাবে বলতে পারে। রিতিকা কোন কথা না বলে, অপরার হাত ধরে সেখান থেকে ঘরে চলে যায়। আর কিছু সময় পরেই হাতে করে নিজের ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসে।
— রণক এর দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,বুকিং করার সময় আপনাদের বলা উচিত ছিল। আপনাদের সমকামী মেয়ে প্রয়োজন। আপনারা ভুল মেয়েকে বুকিং করেছেন, আমি স্ট্রেট। আমি আপনাদের কোন কাজের না, চলি আমরা। রিতিকা কথা গুলো এক নিশ্বাসে ব'লে, অপরার হাত ধরে যেতে নিয়েছে তখন পেছন থেকে রণক বলল। নাটক বন্ধ করে, কতো টাকা নিবি তাই বল।
—রিতিকা নিজের রাগ সামলাতে না পেরে, রণক এর কাছে এগিয়ে এসেই ঠাঁটিয়ে এক চড় মেরে বলে উঠে আমরা পতিতা বলে যেমন ইচ্ছে তেমন ব্যবহার করবেন ভেবেছেন। পতিতা-দের মাঝে-ও অনেক ভাগ থাকে। বুকিং করার আগে আপনার বলা উচিত ছিল কোন টাইপ এর চাচ্ছেন।
—আর আমার তো মনে হচ্ছে, আপনাদের দুজনের কোন সমস্যা আছে। নইতো কেউ কখনো নিজের বোনের জন্য পতিতা বুকিং করে না। সে যাইহোক এই সব কথা বলে আমাদের এখানে সময় নষ্ট করার কোনো ইচ্ছেই নেই।আপনাদের সমস্যা আপনারা বুঝেনিন, আমরা চললাম।
—রণক পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁকে একটা পতিতা ঠাঁটিয়ে চড় মারবে, এটা সে কল্পনাও করেনি।
—দিপেশ অবস্থার গুরুতর বুঝতে পেরে এগিয়ে আসে। থামুন!থামুন! দেখুন আপনারা এই ভাবে যেতে পারবেন না। আপনাদের সময় এর থেকেও আমাদের সময় এবং টাকা দু'টোই অনেক বেশি মূল্যবান। আপনার সাহস কি করে হয় রণক এর গায়ে হাত তোলার? এখনি মিস্টার রাজিব এর কাছে ফোন দিয়ে সব বলছি। যে টাকা দেওয়ার কথা ছিল, আপনাদের এই আচরণ এর জন্য এখন তার তিন ডবল মিস্টার রাজিব এর কাছে আদায় করবো।
—রাজিব এর নাম শুনতেই ভয় পেয়ে যায় রিতিকা। রাজিব যদি কোন ভাবে এই সমস্যার কথা জানতে পারে, তাহলে এখানেই সোজা চলে আসবে। এসে যদি অপরা কে সাথে দেখে, তাহলে অপরা বিপদে পড়বে।
—দিপেশ ফোন বের করে ফোন দিতেই নিয়েছে আর রিতিকা এসে ফোন কেড়ে নিয়ে করুন স্বরে বলে, দেখুন আমরা পতিতা। আমাদের ক্ষতি করে আপনাদের কোন লাভ হবে না, কিন্তু আমাদের ঠিকই লস হবে। প্লিজ এই ভাবে ক্ষতি করবেন না।
—দিপেশ রিতিকার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বলল, ক্ষতি আমরা বিনা কারণে করতে চাচ্ছি না। দিপেশ আরও কিছু বলতে নিয়েছে, তখন রণক বলল, এতক্ষণ যা কিছু করেছেন সব ভুলে যাবো; আমার কাজ করে দিলে।
—রিতিকা রণক এর কাছে গিয়ে বলে, বিশ্বাস করুন আমি সমকামী না। আমি এটা করতে পারবো না।
—রণক দিপেশ এর দিকে তাকিয়ে বলল, দিপেশ মিস্টার রাজিব কে ফোন দে। অপরা পেছন থেকে ছুটে এসে ব'লে কাউকে ফোন দিতে হবে না।আমি করে দিব আপনাদের কাজ।আমি বাই সেক্সুয়াল।
—রিতিকা অপরার কাছে এগিয়ে এসে বলে, তোর শরীর ভালো না। এই অবস্থায় কি ভাবে করবি। অপরা মুচকি হেসে বলে, রিতিকা ভুলে যাসনে;আমরা কে! আমাদের কাছে নিজের শরীর এর চাইতেও কাস্টমার দামী। কানের কাছে মুখ দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল।রাজিব এর হাতে মৃত্যুর থেকে, একটা মেয়ের সাথে যৌন আনন্দ উপভোগ করা অনেক সুখের।
—রণক এর দিকে এগিয়ে গিয়ে অপরা বলল, আমাকে আপনার বোনের রুম দেখিয়ে দিন।
— রণক সোফায় বসে বলল,উষা কে বলা হয়েছে আপনারা দুজন আমার বন্ধুর বোন।এখানে বেড়াতে এসেছেন, কিছুদিন এখানেই থাকবেন। আপনি শুধু ওর সাথে গল্প গুজব করে কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করবেন এই সাত দিন।আপনার কাজ হলো, উষা কে সঙ্গ দেওয়া। সে যদি কিছু করতে চায় করবেন। এটাই কাজ আপনার। দিপেশ আপনাকে উষার রুম দেখিয়ে দিবে, এই বলেই উঠে চলে যায় রণক।
—জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে রণক।একমাত্র বোন কে নিয়ে সে খুব চিন্তিত। দিন দিন উষার বিহেভিয়ার দ্রুত গতিতে পরিবর্তন হচ্ছে। মাত্র সাত দিন নিজের বোনের বিহেভিয়ার কে ধরে রাখার ক্ষমতাও নেই তার। তার নিজের আসলে কি করা উচিত! তা সে নিজেই জানে না । দিপেশ এর কথা মতোই সব করছে। তাও যদি বোনের জীবন বাড়ির মানসম্মান রক্ষা হয়। দিপেশ ঘরে ঢুকতেই রণক বলে উঠে, উষা কে আমরা বাঁচতে পারবো তো দিপেশ? আমাদের জন্যেই উষার আজ এই অবস্থা।
—দিপেশ আমার মনে হয় ওই মেয়েদেরকে সত্যি বলা উচিত ছিল ।উষা যদি মেয়েটার উপর এট্যাক করে।
—না রণক এমন কিছুই হবে না। উষার ডাক্তার কি বলেছে?এই রোগের নাম কি। এই সম্পর্কে কতদূর কি জানতে পারলি?
—এই রোগ এর নাম সিজোফ্রেনিয়া।
—আমি এমন কোন নাম আগে শুনেনি।
—এটা মানসিক রোগ। খুব কম মানুষের হয়। ডাক্তার বলেছে। উষা দীর্ঘ দিন বিষণ্নতা একাকীত্ব ও যৌন চাহিদার অনিশ্চয়তায় এই রোগের সৃষ্টি হয়েছে। উষার মস্তিষ্ক অতিরিক্ত যৌন চাহিদা স্থান করে নিয়েছে। এমন সময়ে আস্তাকে পেয়ে সে নিজের একজন পেয়েছে ভেবে আগলে ধরে রাখতে চায়। ডাক্তার বলেছে, যখন ওই সম্পর্কে আমরা বাধা দেই তখন সে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সমকামী হওয়ার কারণে,উষার যৌন চাহিদা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় দিনকে দিন। এই আশঙ্কা আরও বেশি হয় যখন, সে আস্থার লাশ দেখে।একমাত্র ভালোবাসার মানুষের লাশ সামনে দেখে সহ্য করতে না পেরে একটা শূন্যতা তৈরি হয়। আর সেই শূন্যতা পূরণ করেছে অতিরিক্ত যৌন চাহিদা নিমফোম্যানিয়া। মানে হলো উষা একি সাথে নিমফোম্যানিয়া,সিজোফ্রেনিয়া মানসিক রোগে আক্রান্ত।
—রণক কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল, দিপেশ ডাক্তার আরও একটা কথা বলেছে। এই রোগে ইমাজিনেশন হয়। কিন্তু ডাক্তার আমাকে এটা বলেছে উষা এখনো সেই স্টেজে যায়নি। উষার উদ্দাম যৌনজীবনের প্রতি অস্বাভাবিক আকর্ষণ তৈরি হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখন ইমাজিনেশন স্টেজে যায়নি।
—ইমাজিনেশন ছাড়া এই ধরনের রুগী কাউকে খুন করতে পারে না।যখন সিজোফ্রেনিয়া ইমাজিনেশন স্টেজে থাকে, তখুনি শুধু মাত্র তাদের মাঝে ভ্রম তৈরি হয়। যে সে অরক্ষিত আছে। আশেপাশের সবাই তার শত্রু। এটা বেশির ভাগ যৌন মিলন হওয়ার পর বিষন্নতা থেকে তৈরি হয়। তখন শুধু মাত্র সে খুন করে। কিন্তু আমাদের উষার ইমাজিনেশন হয়না। তাই খুনের বিষয়টি ডাক্তার এর মতে, উষা খুন গুলো করছে না। আর উষার শরীরে ড্রাগ ও পাওয়া গেছে,
ওকে কেউ ড্রাগ দিচ্ছে ইমাজিনেশন এর। কিন্তু কে এমন করবে দিপেশ?
—দিপেশ রণক এর কাঁধে হাত রেখে বলল, টেনশন করিস না। অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গিয়ে বড় ডাক্তার দেখালে সব বোঝা যাবে। হয়তো এই ডাক্তার রোগটি সম্পর্কে ঠিকঠাক ধরতে পাচ্ছে না। কারণ আমাদের বাসায় তো উষার সাথে এমন কিছু করার কোন মানুষ নেই। যে ওকে ড্রাগ দিবে বা খুন গুলো করছে। খুন গুলো যে উষাই করছে আমার তাই মনে হয়। বাড়ির বাকি সদস্য জানাজানি হওয়ার আগেই তুই উষা কে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যা। পুলিশ এর তদন্তে উষার নাম উঠে আসলে বাড়ির মানসম্মান কিছুই থাকবে না। একে তো সমকামী তার উপর আবার খুন করার তকমা।
অতীতে বিচরণ ২
-----------------------
ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখল রিতিকা। রাত বাজে তিনটা অথচ এখনো তার চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটা নেই। হটাৎ ফোন বেজে ওঠে।এতো রাতে কে ফোন দিল ভেবে, হাতে ফোন নিতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে রিতিকার।
—হ্যালো আভা, কি হয়েছে? তুই তো ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠিস না,আজ তাহলে কি হয়েছে!
—রিতিকার এক নিশ্বাসে বলা কথা গুলো শুনে আভা হেসে ওঠে বলল, আরেহ থাম দি-ভাই। আমার কিছুই হয়নি।হটাৎ ঘুম ভেঙে গেল তাই ফোন দিলাম। কিন্তু তোমার কন্ঠ শুনে তো মনে হচ্ছে, তুমি ঘুমাওনি। কলকাতায় এখন মাঝরাত,আর তুমি এখনো ঘুমাওনি। আমি তো ফোন দেওয়ার আগে ভাবছিলাম, দি-ভাইয়ের ঘুমের ডিস্টার্ব হবে হয়তো।
—আরেহ না ডিস্টার্ব না, আমার এমনিতেই ঘুম পাচ্ছিল না। তুই কেমন আছিস? পড়াশোনা ঠিকঠাক করতেছিস তো?
—বললাম তো আমি ঠিক আছি। স্টাডি চাপ একটু বেশি, সামনেই পরীক্ষা। দি-ভাই আমার এখানে একা ভালো লাগে না। তুমি আসি আসি বলে আসো না,আমাকেও যেতে দাও না।
—আভার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় রিতিকার। কথার উত্তর না দিয়ে বলল, আমার ঘুম পেয়েছে; পরে কথা বলব। ফোন রেখে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় রিতিকা। জানালা খুলতেই বৃষ্টির ঝাপটা মুখে এসে লাগলো,সাথে হুহু করে ঠান্ডা বাতাস এসে সুঁচের মত বিঁধতে লাগলো রিতিকার শরীরে। চোখে পানি টলমল করছে, এই জীবন তার আর ভালো লাগছে না।
—আজ কয়েক বছর হলো, সে আভা কে দেখেনি। আভা ইন্ডিয়া আসার জন্য জেদ করে, কিন্তু রিতিকা বোনের বাকি সব ইচ্ছে পূরণ করলেও এই একটা বিষয়ে সে কঠোর হয়ে যায়। রিতিকা চায় না, আভা তার এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়ুক। তাই সে আভা কে ইন্ডিয়া আসার পারমিশন দেয় না। রিতিকার আরও একটা ভয় হয়। আভা যদি কখনো জানতে পারে ওর দি-ভাই একজন ব্রোথ, সে কি মেনে নিবে তাকে! না-কি ঘৃণা করবে। রিতিকার চোখের পানি গাল বেয়ে পড়ে। রিতিকার মনে পড়ে অমল এর কথা। তার জীবন ধ্বংস হয়েছে ওই একটি মাত্র ছেলের জন্য। জীবনে যদি একটিবার দেখা পেত তাহলে নিজ হাতে সে খুন করত অমলের।
—অমল চ্যার্টাজি প্রত্যেক দিন বিকালবেলা পড়াতে আসতে শুরু করে। অমলের আসায় প্রথম প্রথম রিতিকা লজ্জা পেত তাই বুদ্ধি করে আভা কে সাথে নিয়ে পড়তে বসত। রিতিকা কে পড়ানো শেষ হলেও অমল বাড়ি ফিরে যেত না, কারণ বাবা জোর করেই অমল কে নিয়েই রাতের খাবার একসাথে খেত। পরিবারের একজন হয়ে উঠে অমল। যে কোন প্রয়োজনে অমল কে ডাকলেই চলে আসত সে।
—রিতিকা আর আভা এক সাথেই পড়তে বসতো। আভার জ্বর আসায় সেদিন রিতিকা একাই পড়তে বসে। আভা পাশে না থাকায়, লজ্জায় মাথা নিচু করে রিতিকা পড়তে ছিল।
পড়ার মাঝে অমল বলে উঠে, কি হয়েছে তোমার? তুমি একা পড়তে বসতে পারো না! সবসময় আভা কে সাথে নিয়ে পড়তে বসতে হয় কেন? আমি বাঘ না ভাল্লুক?
—ধীর স্বরে সে ব'লে, আভা নিজেই আমার সাথে পড়তে বসে।
—মিথ্যা বলবে না রিতিকা। রাতে খাবার এর সময় আভা প্রায় বলে, তুমি ওকে জোর করে নিয়ে পড়তে বস।
—রিতিকা আবার ধীর স্বরে ব'লে ওঠে, পড়তে বসলে কি কোন সমস্যা আছে!
—হ্যা আছে, আমি তেমাকে একা পড়াতে চাই।
—অমলের কথাটা শুনেই রিতিকার বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে। সেদিন তাদের মাঝে আর কথা হয় না।
—পরের দিন থেকে দেখা গেল, অমলের সাথে ওর ছোট বোন আসতে শুরু করেছে তাদের বাড়িতে। আভা আর বই নিয়ে পাশে এসে পড়তে বসে না।অমলের বোন আসায় ওর সাথে খেলায় ব্যস্ত থাকে। তাই অমল এর কাছে এখন বাধ্য হয়েই রিতিকার একাই পড়তে বসতে হয়।
—আজ পড়াতে এসে অমল বলেছে তার নাকি কি যেন কথা আছে, পড়া শেষে বলবে।তখন থেকেই রিতিকার বইয়ের দিকে আর কোন মনোযোগ নেই। অমল পড়া শেষে কি বলতে চেয়েছে এটা ভেবেই তার বুকের ভেতর ধকধক করছে। কিছু বলতে চেয়েও বলতে পাচ্ছে না রিতিকা।
—অমল ব্যাপার টা বুঝতে পেরে মুচকি হাসে। রিতিকা যদি সেই হাসির মানে তখন বুঝতে পারতো তাহলে সে ওই ভুল কোন দিন করতো না। রিতিকা পড়া শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে না পেরে, প্রথম বারের মত চোখ তুলে অমল এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে। কি বলবেন এখুনি বলেন।
—অমল চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে,রিতিকার ঠোঁটে আলতো করে চুম্বন করে। রিতিকার শরীরে কাঁপুনি সৃষ্টি হয়। শরীরে সে এমন শিহরণ আগে কখনো অনুভব করেনি। লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকে রিতিকা। অমল বলে, এখন লজ্জায় মাথা নিচু করে আছ কেন! তুমিও তো এটাই চাও। তোমাকে ভালোবাসি রিতিকা।
—রিতিকা সেই দিন কিছুই বলতে পারে না। দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে যায়। অমল তাকে ভালোবাসে এর থেকে সুখের আর কি হতে পারে! এতদিন যে কথাটা সে নিজে মুখ ফুটে বলে উঠতে পারেনি। অমল সে কথা তার ঠোঁটে ভালোবাসা স্পর্শ দিয়ে বলেছে।
—বাইরের পায়ের আওয়াজে অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে রিতিকা। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে রাত বাজে সাড়ে তিনটা। এতো রাতে দরজার বাইরে কে হাঁটছে!ঘরের লাইট অন করে গেট খুলতে গিয়ে দেখে বাইরে থেকে বন্ধ।জানালার ক্যাচ ক্যাচ শব্দ শুনে পেছন ফিরে রিতিকা দেখল, জানালার কপাটও বাইরে থেকে কেউ বন্ধ করে দিয়েছে। আর সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত একটা গন্ধ পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। রিতিকা ভয় পেয়ে নাকে-মুখে কাপড় চেপে ধরে, গেটে জোরে জোরে ধাক্কা দেয় আর প্রাণপন চিৎকার করে ডাকে অপরা।
—রিতিকার এমন ডাকাডাকি তে রণক নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। দৌড়ে উপরে এসে গেট খুলে দেয়।
— গেট খুলতেই বাইরে ছুটে এসে বড় বড় নিশ্বাস নেয় রিতিকা।ভয়ে গলা শুকিয়ে এসেছে তার। চোখ-মুখ জ্বালা করছে।
—কি হয়েছে আপনার? এমন চিৎকার করে ডাকাডাকি কেন করছেন!
—রণক এর দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠে, ঘরের ভেতর কিসের গ্যাস দিয়ে ছিলেন? আমি আর একটু হলেই দম আটকে মারা যেতাম।
—রণক কথাটা শুনে ঘাবড়ে যায়, কি বলছেন আপনি?
—আমি ঠিকি বলছি, বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে গেট খুলতে আসতে নিয়েছি তখন জানালার কপাট বন্ধ হয়ে যায় আর পুরো ঘর কেমন একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
—রিতিকার কথা শুনে হটাৎ কি মনে পড়তেই, রণক দৌড়ে নিচে নেমে আসে উষার ঘরে। কাছে আসতে থমকে দাঁড়ায় রণক। ঘুমন্ত অপরার দিকে ছুড়ি হাতে এগিয়ে যাচ্ছে উষা।
—রণক কে দৌড়াতে দেখে পিছে পিছে রিতিকাও দৌড়ে নেমে আসে। রণক কে পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, সে ঘরের ভেতর ঢুকে উষা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। রিতিকা অপরা কে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করে কিন্তু ঘুম ভাঙে না অপরার।
রিতিকার মনে সন্দেহ
----------------------------
বেলা দশটা বাজে, ঘুম থেকে এখনো কেউ উঠেনি। গতরাতের ঘটনার পর রিতিকাই শুধু ঘুমাতে পারেনি। অপরার ভোর দিকে ঘুম ভেঙে ছিল, কিন্তু বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারেনি সে। রিতিকার মনে সন্দেহের দানা বেঁধেছে। কি হচ্ছে তাদের সাথে? ঘরের বাইরে এসে কিছুক্ষণ পায়চারি করল রিতিকা। ঘরের দরজা কে লাগাতে পারে! তারপর বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে যায় সে।
—দিনের আলোয় বাইরে বের হয়ে রিতিকা বুঝতে পারে, তারা কোন এক গ্রামে এসেছে। এর পর সে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পেছন দিকটায় চলে যায়। ছোট দোতলা বাড়ি কিন্তু আশেপাশের এরিয়া বিশাল। বাড়ির ডিজাইন দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই বাড়ির মালিক সৌখিন। রিতিকা যখন বাড়ির পেছন এরিয়াতে পায়চারি করে রাতের ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে ভাবছিল, তখন জানালায় এসে অপরা দাঁড়ায়। রিতিকা কে পায়চারি করতে দেখে বলল।
—কিরে তুই ওখানে কি করিস?
—রিতিকা মুচকি হেসে বলল, ঘুম ভাঙলো নাকি জ্ঞান ফিরলো?
—উপর থেকে চেঁচিয়ে উত্তর দিল জ্ঞান তো ভোরে ফিরে ছিল।এখন ঘুম থেকে উঠলাম। অপরা জানালা থেকে সরে গেল। রিতিকা আবার পায়চারি শুরু করল।
—নিচে নামার সময় অপরার দেখা হল রণক এর সাথে। অপরা কে দেখে রণক জিজ্ঞেস করল।
—আপনার বান্ধবী কি উপরে আছে?
—না। রিতিকা বাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওখানেই যাচ্ছিলাম।আমি কি ডেকে দিব?
—না ডাকতে হবে না, আমি যাচ্ছি।রণক আগে গেল, অপরা পিছে পিছে গেল।
—রিতিকা পায়চারি থামিয়ে দোতলায় তাদের ঘরের জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। রিতিকার পাশে দাঁড়িয়ে রণক বলল।কি দেখছেন?
—রণক কে দেখে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়িয়ে সে বলল। তেমন কিছু না, এমনি পায়চারি করছিলাম। আপনাকে আমার কিছু বলার ছিল।
—হ্যা, বলুন।
—আমাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়। অপরা রিতিকার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। অপরার হাত ধরে রিতিকা আবার বলল, আপনাদের এখানে সমস্যা আছে। আমরা দেহ ব্যবসা করে নিজেদের পেট চালাই। কোন ঝামেলার ভেতর নিজেদের জড়িয়ে জীবন হারাতে চাইনা।
—রণক কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। দিপেশ আসলে আমি গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিতে বলব ওঁকে। আর কিছু না বলেই চলে গেল রণক।
—রণক এর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল রিতিকা।
—অপরা রিতিকার গায়ে হাত দিয়ে বলল।কিরে তুই বললি না তো, এখানে কি করছিস?
— রাতের ঘটনা টা কে একটু তলিয়ে দেখছিলাম।
—তলিয়ে কিছু বুঝে উঠতে পেরেছিস?
—তা পেরেছি বইকি।
—কি বুঝতে পারলি, আমাকেও বল। আমিও একটু শুনি।
—তার আগে তুই বল, রাতে মেয়েটির ঘরে কি কি হয়েছিল।
—তেমন কিছুই না। আমার শুধু মনে আছে, দুই-একটা গল্প করতে করতে উষা বাইরে পানি নিতে যায়। আর আমার চোখ ভারি হয়ে আসে। আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
—হুম চল, ভেতরে যাই।
—বললি না তো, কি বুঝতে পেরেছিস?
—এটাই বুঝতে পেরেছি যে আমাদের এখান থেকে যেতে হবে। এই ব'লেই সে হাসতে শুরু করে।
—উষা ডাইনিং টেবিলে জলখাবার রেডি করছে। রণক চুপচাপ বসে আছে। দিপেশও বসে আছে রণক এর পাশে
—রিতিকা আর অপরা বাড়ির ভেতর ঢুকেতেই উষা ডাক দেয়। তোমারা কোথায় ছিলে! এসো বসে জলখাবার করো। উষার এমন নরমাল বিহেভিয়ার দেখে রিতিকা কিছুটা অবাক হলো। রিতিকা আর অপরা ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসলো।
—রণক বলল, দিপেশ উনাদের পৌঁছে দিয়ে আয়।
—কিন্তু রণক!
—রণক কিছু বলার আগেই, রান্না ঘর থেকে থেকে কাঁচ ভাঙার শব্দ আসায় দিপেশ ভেতরে চলে যায়। খানিকক্ষণ পরে হাতে জুস এর ট্রে নিয়ে ফিরে আসে। সবার দিকে একে একে জুস এগিয়ে দিয়ে বলল।ওঁর হাত থেকে গ্লাস পড়ে ভেঙে গেছে।কাঁচ তুলতে নিয়ে হাত কেঁটে ফেলছে। আমি ডাক্তার দেখিয়ে আসার পর উনাদের পৌঁছে দিব। এই বলে দিপেশ চলে যায়।
—জলখাবার শেষ করে ঘরে চলে আসে রিতিকা। অপরা রিতিকার সাথে উপরে আসতে নিয়ে ছিল তখন উষা ডেকে নিয়ে গেছে। ব্যাগ গুছিয়ে নিচে নেমে আসে সে। বেশিক্ষণ মেয়েটার সাথে একা অপরা কে রাখা যাবে না। রাতের ঘটনা মনে পড়তেই রিতিকা শিউরে ওঠে। নিচে নেমে আগে রাজিব এর কাছে ফোন দেয় রিতিকা।
—হ্যালো, কি খবর রিতিকা? বড় মক্কেল পেয়ে আমাকে দেখি ভুলে গেছ।
—রাজিব আমি বিপদে আছি। বড় মক্কেল এর কথা ভুলে যাও। এখানে কোন সমস্যা আছে। জীবন হারাতে হতে পারে। আমি তাই ফিরে আসতেছি।
—ওয়েট ওয়েট কি সমস্যা আগে খুলে বলো রিতিকা। হাত ছাড়া করলে চলবে না। এটা অনেক বড় ডিল,সাত দিনে পাঁচ লাখ টাকা পাবো।
—রিতিকা পাঁচ লাখ টাকার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। গলা উঁচিয়ে বলে শালা হারামজাদা, আমাকে চল্লিশ হাজার এর কথা বলে আজ বলেছিস পাঁচ লাখ এর ডিল।
—দেখ রিতিকা মাথা ঠান্ডা করো। আমার সাথে ঝামেলা পড়েও মিটাতে পারবে।এখন আগে বলো ওখানে কি সমস্যা। ডিল কিন্তু অনেক বড় একটু রিস্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
— ডিল যতই বড় হোক। জীবনের থেকে বড় কিছুই না। এখানে জীবনের ঝুঁকি আছে। অপরার কথা না বলে, নিজের কথা বলে সে। গতরাতে আমার উপর ছুরি হাতে আ্যটাক করা হয়ে ছিল।
—তুমি ঘন্টা খানিক অপেক্ষা কর ওখানে। আমি ওদের থেকে ক্ষতিপূরণ এর টাকা আদায় করি।তোমাকে যখন ফোন দিব, রওনা দিও। এই বলে রাজিব ফোন কেটে দেয়। রিতিকা বিড়বিড় করে গালি দেয় শালা "সান অফ বিচ।
—অপরা কে ডাকার উদ্দেশ্য উষার রুমের দিকে যেতেই সেখানে রণক আসে। আপনি রেডি হয়েছেন!
—হ্যা।
—আমার কিছু কথা ছিল।
—বলেন।
—রণক সোফায় গিয়ে বসলো। রিতিকা পেছন পেছন গিয়ে বসলো।
—কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে রণক উষার ব্যাপারে সব কিছু খুলে বলে। রিতিকা কথা গুলো শোনার পর কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
—দেখুন মিস রিতিকা, আমার পেপার ওয়ার্ক গুলো করতে ম্যাক্সিমাম সাত দিন এর সময় লাগবে। আমার পরিবার উষার ব্যাপারে কিছু জানে না। যদি এই সব জানতে পারে, তাহলে ওরা নিজ হাতে উষা কে মেরে ফেলবে। বংশের মানসম্মান রক্ষা করতে দ্বিতীয় বার চিন্তা করবে না। আমি তাই উষা কে আমাদের এই বাড়ি নিয়ে এসেছি।ওকে আটকে রাখার ক্ষমতা আমার নেই। যখন তখন বাইরে বেরিয়ে যায়। মেয়ে দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। বিশ্বাস করুন খুন আমার বোন করতেই পারে না। যদিও, আমি নিজেও গতরাতের ঘটনার পর কনফিউজড। তারপরও আমার বিশ্বাস উষা এই সব করতেই পারে না।
ডাক্তার নিজেই ইনশিউর করেছে, ইমাজিনেশন ছাড়া এই রোগে আক্রন্ত রুগী খুন করতে পারে না। এই সব রুগী যৌন মিলন এর পর ইমাজিনেশনে তার সঙ্গী কেই নিজের শত্রু মনে করে খুন করার চেষ্টা করে। উষা এখনো ওই স্টেজে যায়নি। আপনি আমাকে প্লিজ হেল্প করুন। যত টাকা লাগে আমি দিব। তাও যাবেন না প্লিজ।
—রিতিকা কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে বলল, আপনাদের এই বাড়িতে কে কে থাকে?
—কেন বলুন তো! আমি আর উষা একাই থাকি।
—মিস্টার দিপেশ কোথায় থাকে?
—দিপেশ আর ওর ওয়াইফ গ্রামে আসলে, ওরা নিজেদের বাড়িতেই থাকে। শহরে যখন থাকে তখন আমাদের বাড়িতেই থাকে। আচ্ছা এই সব কেন জিজ্ঞেস করছেন?
—কারণ আপনার ধারণা সত্য, একজন রুগী কখনো পরিকল্পনা করে খুন করতে পারে না। এই সব অন্য কেউ করছে। মিস্টার দিপেশ কেমন পরিচিত আপনার?
—রণক তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল, দেখুন মিস রিতিকা আমি আমার বোন কে যেমন বিশ্বাস করি তেমন ওকেও বিশ্বাস করি। আপনি যদি হেল্প করতে চান তাহলে সাত দিন এখানে থাকুন। এর বেশি কিছু করতে হবে না। ইচ্ছে না থাকলে যেতে পারেন। আমি রাজিব এর একাউন্টে টাকা দিয়ে দিব। এই বলে উঠে যেতে নিয়েছে তখন রিতিকা বলল। গতকাল ঘরের দরজা বাইরে আমি কারো হাঁটার আওয়াজ পেয়েছি। দোতলা ঘরের জানালা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেওয়া আর ঘরের ভেতর দমবন্ধ করা তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়া!ব্যাপার টা কি আপনার কাছে অদ্ভুত বলে মনে হয়নি?এখানে আমি থাকলে জীবনের ঝুঁকি আছে।একটু তলিয়ে যদি না দেখতে দেন তাহলে এখানে থাকার রিস্ক নিতে পাব না।
—কথা বলা শেষ করে,রিতিকা উঠে উষার ঘরের দিকে যায় অপরা কে ডাকার উদ্দেশ্যো। ঘরের কাছে যেতেই ভেতর থেকে গোঙানির শব্দ শুনে রিতিকা থমকে দাঁড়ায়। ভেতরে উষা আর অপরা যে যৌন মিলনে মেতে উঠেছে তা বুঝতে বাকি থাকে না রিতিকার।
— ঠিক তখনই বাইরে থেকে গ্রামের মানুষের গলার আওয়াজ ভেসে আসে। রিতিকা আর রণক বাইরে দরজার কাছে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। গ্রামের সমস্ত মানুষ ঝাঁক বেঁধে ছুটে আসছে। সবার মুখে এক কথা গ্রামের মানসম্মান নিয়ে খেলার সাহস হয় কি করে। বড়-বাড়ির মেয়ে দেখে, যা খুশি তাই করবে নাকি!নষ্টা মেয়ে-ছেলেদের টেনে হিঁচড়ে বের করে আনো। এর একটা হেস্তনেস্ত হবে আজ।
To be continued.....
গল্প: নিষিদ্ধ নারী (প্রেম কাহিনী)
পার্ট:-০৩
লেখনীতে: সামিনা সামি

0 Comments