বিকেলে তনা আর লিনা ছাঁদে বসে আছে। লিনা গ্রামের মেয়ে শহরে এই প্রথম বার আসছে। এর আগে কখনও শহরে আসেনি। লিনা তনাকে বলছে
-- আচ্ছা আপু এই এতো বড় বাড়ি কি তোমাদের?
-- হুম। কেন বল তো?
-- না এমনি।
-- শুধু এটা না। এই শহরে আমাদের এমন বড় বড় আরো তিনটি বাসা আছে।
লিনা তনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে
-- এতগুলো বাড়ি দিয়ে কি করো?
তনা লিনার কথা শুনে হেসে দিয়ে
-- এত গুলো কই।এই যে এ বাসায় আমরা থাকি। দুইটা ভাড়া দেওয়া আর একটা এমনি ই পড়ে আছে। মাঝে মাঝে আমি আর তোর ভাইয়া ঘুরতে যাই।
-- ভাইয়া যখন অফিসে থাকত। তখন তুমি এত বড় বাড়িতে একা কি করে থাকতে। তোমার ভয় লাগতো না?
-- শুন মেয়ের কথা ভয় লাগবে কেন?
ভয় লাগতো না কিন্তু একা একা বোর ফিল করতাম। তাই তো তোর ভাইয়া তোকে এনে দিল।
-- আমি এসে গেছি এখন আর তোমাকে বোর হতে দিব না।
লিনা প্রথম দিক দিয়ে তনাকে ম্যাডাম করে বলতো।তনার তা একদম ভালো লাগতো না। লিনা তনার বাসায় কাজ করে ঠিকই কিন্তু তনা লিনাকে একদম নিজের ছোট বোনের মত দেখে। লিনা ও তনাকে বড় বোনের মতই আপন করে নিয়েছে। তনার খুব খেয়াল রাখে। তনাকে কোন কাজই করতে দেয় না লিনা।
লিনা তনার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।
-- আচ্ছা আপু তোমার আর ভাইয়ার কি লাভ ম্যারেজ নাকি এরেঞ্জড ম্যারেজ।
লিনার এই কথা শুনে তনা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
-- সে অনেক কাহিনী। এখন এত কিছু বলতে গেলে রাত হয়ে যাবে।
-- এত কিছু বলতে কে বলেছে? তুমি আমাকে র্শট খাট করে বুঝিয়ে দেও। আমি বুঝে যাবো।
-- তুই দেখি আচ্চা নাছোড়বান্দা।
--
-- তবে শুন। তোর ভাইয়া অন্য একজন কে ভালোবাসতো।আমার আগে ওর লাইফে অন্য কেউ ছিল। আমার ভালোবাসা তো প্রথম দিক দিয়ে একতরফা ছিল। আমি মনে মনেই তোর ভাইয়া কে ভালোবাসছি কোন দিনও প্রকাশ করি নি।
চলুন তনা আর নীলের পাস্ট থেকে ঘুরে আসি,,,,,,
নীল তখন হনার্স ফাইনাল ইয়ারে আর তনা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। তনারা যে সোসাইটিতে থাকে সেখানে কিছু দিন হলো নীল আর তার মা নতুন উঠেছে।মুলত নীলের র্ভাসিটিতে যাতায়াতের সুবিধার জন্যই এখানে আসা। আগের বাসা থেকে নীলের র্ভাসিটি অনেক দূরে ছিল যার কারনে যাতায়াতে কষ্ট হতো। সোসাইটির সবাই তনার বাবা কে অনেক সম্মান করে। তনা ও সবার চোখের মনি।
তনা কলেজে যাবার সময় কিছু দিন ধরেই নীল কে খেয়াল করছে। তনা ওর ফ্রেন্ডের সাথে কলেজ যাচ্ছে
-- হ্যা রে মেঘা এই ছেলেটা কে বলতে পারবি?
-- লে খোকা। তোদের মহল্লায় থাকে। তুই জানিস না ছেলেটা কে। আমি কি করে জানবো?
-- জানলেও তো জানতে পারিস এটা ভেবেই জিঙ্গেস করলাম।
-- হ মামু তুমি তো কতো কিছুই ভাববা।
-- ছেলেটা কিন্তু সেই। তাই না?
-- আমার কাছে তো সব ছেলে কে ই সেই লাগে।
-- তুই যে একটা লুচ্চি মাইয়া। তাই তো কাছে সব ছেলে কে ভালো লাগে।
-- আমি লুচ্চি? আর তুই তো দুধে ধুঁয়া তুলসীপাতা তাই না??
-- হুম তা আর বলতে।
-- চুপ হারামি এতো ভালো দেখেই তো। সেই তিন ঘন্টা ধরে হা করে ওই ছেলেটা কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছ।
-- চোখ দিয়ে গিলে খাবো না রে। ভাবতেছি ছেলেটার সাথে কথা বলবো।
-- তুই কথা বলবি তাও একটা অচেনা ছেলের সাথে??
এটা বলে মেঘা জোরে জোরে হাসতে লাগলো। তনা মেঘার বেনুনি ধরে জোরে টান দিয়ে
-- খুব হাসি পাচ্ছে তাই না?
-- এই তনা ছাড় আমার বিনুনি ছিড়ে যাবে। হিংসুটি কোথা কার।তোর লম্বা চুল নেই বলে আমার বেনুনি ছিড়তে চাস।
-- তাহলে আগে বল হাসলি কেন? আমি কি কোন জোক্স বলেছি?
-- মনা তুমি জোক্স বললে ও এতটা হাসি পেত না। যতটা না তোমার এ কথা শুনে পেয়েছে।
-- বজ্জাত মাইয়া।
-- বড় লোক বাপের এক মাত্র মেয়ে।যে কোন ছেলেকে পাত্তা দেয় না। ছেলেরা যার উপর মিনিটে মিনিটে ক্রাশ খায়। কিন্তু সে কারো দিকে চেয়ে ও দেখে না।
আজ সেই মেয়ে নিজে থেকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে যাবে।
-- কথা বলতে গেলে প্রব্লেম কি?
-- কোন প্রব্লেম নাই। আমি কি বলছি কোন প্রব্লেম আছে?
-- দোস্ত তুই ও আমার সাথে চল না।
-- কোথায়??
-- কোথায় মানে ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে।
-- দোস্ত তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? চেনা নেই জানা নেই আমরা চলি ছেলেটার সাথে কথা বলতে। আর ছেলেটা আমাদের কে ভাব দেখিয়ে চলে যাক। আগে ওর বায়োডাটা জেনে নেই দেখি ও কোন নবাবজাদা। পরে তো কথা বলবো।
-- বিকেলে মধ্যে সব জানতে পারবি তো ওর সম্পর্কে?
-- তোর কি হলো বল তো?
অন্য কোন ছেলের সাথে তো কথা ও বলিস না। এর জন্য এতো পাগল হলি কেন?
-- জানি না দোস্ত। তুই বিকেলে আমার বাসায় আসবি। মনে থাকে যেন।
-- ওকে পেত্নী ঠিক আছে।
মেঘা বিকেলে তনাদের বাসায় আসছে। তনা আর মেঘা ওর রুমে বসে কথা বলছে। মেঘা বকবক করেই যাচ্ছে। তনা মেঘার কথায় বিরক্ত হচ্ছে
-- মেঘা তোর এসব ফালতু কথা অফ করে আমি যা জানতে চাইছি তা বল।
-- আরে বাবা একটু দাঁড়া না। এতো জলদি কিসের?
-- একটু ও দাঁড়াতে পারবো না। তুই বল কি কি জানতে পারলি ওর ব্যাপারে?
-- এই ও টা কে মামু??
এখনই ও হয়ে গেল। তুই তো দেখছি আমার থেকে ও ফাস্ট চলতে শুরু করছিস।
-- নাম জানি না কি বলে ডাকবো?
আচ্ছা যাই হোক বল না দোস্ত প্লিজ।
-- হুম। তোর ও তোদের সোসাইটিতে নতুন আসছে। বাবা নেই মা কে নিয়ে একা থাকে। এবার হনার্স ফাইনাল ইয়ারে। সব ছেলেদের থেকে একে বারে আলাদা। ওর কাছে ওর মা ই পৃথিবী। বাজে কোন নেশা নেই। না ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেয়। না বাসা থেকে কোথাও বের হয়।বাসা থেকে র্ভাসিটি এইটুকু ই ওর সীমানা।
-- ওয়াও
সব তো বললি কিন্তু এখনও ওর নাম টা ই বললি না।
-- ওয়াও এর বাচ্চা। সব তো বলিনি। সবকিছু শুনলে তোমার ওয়াও বের হয়ে যাবে।
আর হ্যা ছেলেটার নাম নীল।
-- নীল
আর কি শুনবো। কি করে, কোথায় থাকে ও কেমন ছেলে সব ই তো বললি।আর কি বাকি আছে??
-- আরও বাকি আছে দোস্ত। ওসব তুমি শুনতে পারবে না। আসলে তুই নিতে পারবি না। ওসব শুনে র্হাট এর্টাক ও হতে পারে ।
-- ধুর ভয় না দেখিয়ে কি বাকি আছে তা বল।
-- বলবো তো??
-- হুম।
-- সিউর তো?
-- আরে হারামি বল
মেঘা চোখ বন্ধ করে এক দমে
-- তোর ওই রোমিওর আগে থেকেই একটা জুলিয়েট আছে।
মেঘা কথাটা বলে এক চোখ খুলে তনার দিকে তাকালো। তনা মেঘার কথা শুনে দাঁড়ানো থেকে ধপ করে বসে পড়লো। তনা হা করে বসে আছে। কিছু বলছে না। তনাকে এভাবে দেখে মেঘা তনাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে
-- কিরে আছিস নাকি গেছিস?
তনা চুপ করে আছে
-- দোস্ত আমি জানি তুই খুব বড় একটা র্শক খাইছিস।
কিন্তু তুই চিন্তা করিস না। আমি তোর জন্য এর থেকেও ভালো ছেলে খুজে দিব।
-- কি????
-- কি কি?
-- আজ পর্যন্ত নিজের জন্য একটা ছেলে খুজে পেলি না। আর তুই কিনা আমার জন্য ভালো ছেলে খুজে দিবি।
-- থাক দোস্ত কান্দিস না। আমি আছি তো তোকে জ্বালানো জন্য।
আমার তো প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল। এতো সুন্দর একটা ছেলে সিঙ্গেল থাকবে কি?
-- হুম দোস্ত। আচ্ছা রোমিও টার জুলিয়েটের নাম কি?
-- ঠিক মনে নেই। তবে আনিকা বা এমন কিছু হবে হয়ত। তুই নাম দিয়ে কি করবি?
-- কি আর করবো? কি করে জুলিয়েট টা?
-- নীলের সাথেই এক ক্লাসে পড়ে। শুনেছি ওদের নাকি দুই বছরের রিলেশন। আনিকার ফেমিলি নীল কে মেনে নেয় না। নাহলে করেই ওরা বিয়ে করে নিত।
-- বিয়ে......????
-- হুম। নীলের তো বাবা নেই। আর আর্থিক দিক দিয়ে ও নীলেরা এতটা সচ্ছল না। তাই সমস্ত সমস্যা।
--
-- তোর জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে পেত্নী। তোর লাভ স্টোসি শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল। তুই প্রেম না করেও এতো বড় একটা ছ্যাকা খেয়ে গেলি।
সত্যি ই তোর জন্য মায়া হচ্ছে। আমার কি মনে হয় জানিস।তুই যে ছেলে গুলো কে পাত্তা দিতি না ওরা তোকে বদদোয়া দিছে। তাই তুই প্রেম না করেও ছ্যাকা খাইলি। ওই ছেলে গুলো সাথে এতো ভাব নেওয়া ঠিক হয়নি। দেখলি তো ছ্যাকা খাওয়ার কষ্ট কতটা।
-- তবে রে হারামি।দাড়া আজ তোর ওই লম্বা লম্বা সব গুলো চুল আমি ছিড়ে নিব।
তনা এই বলে মেঘার দিকে এগুতে লাগলো। মেঘা পিছনের দিকে যেতে যেতে
-- তনা না। একদম এগুবি না।ওখানেই দাঁড়া। ভালো হবে না কিন্তু।
তনা মেঘার দিকে যেতে নিলে মেঘা রুমের ভিতরে ই দৌড়াতে লাগলো। আর তনা ও মেঘা কে ধরার জন্য মেঘার পিছনে দৌড়াচ্ছে।
কি আর করার নীলের তো আগে থেকেই গার্লফ্রেন্ড আছে। তাই তনা ওর মনের অনুভূতি গুলো কে আর ডানা মেলতে দিল না। নীলের জন্য যা ফিল করতে শুরু করছিল তা এখানেই অফ করে দিল।নীলকে নিয়ে দেখা হাজারো রঙ্গীন স্বপ্ন কে মাটি চাপা দিয়ে দিল। প্রথমে তনার নীলের কথা ভাবলে একটু একটু কষ্ট হতো। কিন্তু কিছু দিনের ভিতর প্রায় সব ভুলে গেছে তনা। রোজ কলেজে যায়। আবার আগের মত পড়ায় মনযোগ দিয়েছে। তনা কলেজ যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে নীলকে দূরে থেকে দেখত। কিন্তু মাঝে কিছু দিন নীল কে দেখেনি। নীল তনার সামনে না পড়ায় নীলের কথা তনা প্রায় ভুলেই গেছে। তনার বাবার এতো এতো গাড়ি থাকতেও তনা ওর সব ফ্রেন্ডদের সাথে বাসে করে কলেজে যায়। তনা বাসে জানালার পাশের সিটে বসে আছে।আর তনার পাশের সিটে মেঘা বসে আছে। তনা জানালার বাইরে মুখ করে বসে আছে। বাতাসে সাথে পাল্লা দিয়ে তনার চুল গুলো দোল খাচ্ছে।
-- তনা......???
-- হুম বল।
-- কিছু দিন ধরে তোর ওই রোমিও টা কে দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ করে রোমিও টা কই গেল রে।
-- আমি কি জানি কই গেছে?
আমি কি ওকে নিয়ে বসে আছি। আর ও তো আমার রোমিও না। ও অন্য একজনকে ভালোবাসে।
-- হুম। কই গেল ছেলেটা। আগে তো প্রায় ই বাস স্টপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি। এখন কি র্ভাসিটি যায় না?
-- কে জানে? ওকে নিয়ে তোর এতো টেনশন হচ্ছে কেন?
-- ধুর টেনশন হবে কেন। অনেক দিন ধরে দেখি না। তাই জানতে চাইলাম আর কি।
কয়েক সপ্তাহ পর,,,,,
তনা বিকেলে প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফিরছিল।এমন সময় দূর থেকে একটা ছেলেকে দেখতে পেল।প্রথমে তনার কাছে ছেলেটা নীল বলে মনে হলেও। নীল এখনে এতো দিন পর কোথায় থেকে আসবে এটা ভেবে তনা আবার নিজের মত হাঁটতে শুরু করলো। কিছু দূর হেঁটে আসার পর তনা সিউর হলো এটা নীল ই।কিন্ত নীল এখানে এতো দিন পর। মাঝের কিছুটা সময় নীল কোথায় ছিল। এটা কি সেই নীল যাকে দেখে প্রথম দিনই তনার ভালো লেগে গেছিল? এ কি চেহারার হাল হয়েছে। এমন কি করে হলো?
এরকম হাজার প্রশ্ন নিয়ে তনা নীলের দিকে এগিয়ে আসছে। নীলের অনেক টা আছে এসে তনা নীলকে দেখে অবাক হয়ে গেল। নীলের চুল গুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে। চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে। একদম রোগা পাতলা হয়ে গেছে। মুখ ফ্যাকাশে। চেনা ই যায় না এটা যে সেই নীল। তনা এটা দেখে আরো অবাক হচ্ছে যে নীল সিগারেট খাচ্ছে। নীলকে সিগারেট খেতে দেখে তনার অনেক রাগ হচ্ছিল। কিন্তু কেন এতো রাগ হচ্ছে তা তনা নিজেও বলতে পারছে না। তনার খুব ইচ্ছে করছিল নীলের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে মাটিতে ফেলে দিতে। কিন্তু সাহস হয়ে উঠলো না। যার কারনে এ কাজটা করতে ও পারলো না। তনা রোডের এপাশে আর নীল ওপাশে। তনা রোড ক্রস করে নীলের কাছে যাবার আগেই একটা বাস এসে ওদের সামনে দাঁড়াল। আর নীল বাস টা তে উঠে চলে গেল। তনা কিছুক্ষন ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে ব্যাগ টা কে ছুড়ে বেডের উপর ফেলে দিল। তনা রাগে কটমট করতে লাগলো। পুরো রুমে পায়চারি করতে করতে তনা ভাবছে এখন কি করবে। কিছু ভেবে না পেয়ে তনা মেঘা কে ফোন দিল।
-- হ্যা তনা?
তনা এপাশ থেকে রাগে জোরে চিল্লিয়ে
-- তুই আজ প্রাইভেট এ আসলি না কেন?
-- আরে ঘুমিয়ে গেছিলাম। আম্মু ডাক দেয়নি। উঠে দেখি অনেক লেট হয়ে গেছে পরে আর যাই নি। কিন্তু তোর কি হলো এভাবে চিল্লাছিস কেন?
-- আমার কি হলো?
কিছুই হয়নি আমার। তুই এখুনি আমার বাসায় আস।
-- এখন! কিন্তু.....
-- হ্যা এখন। কোন কিন্তু না। তুই তারাতারি আয় অনেক কথা আছে তোর সাথে।
মেঘা তনার বাসায় এসে এক দৌড়ে তনার রুমে চলে গেল। তনা বেডে বসে ছিল।মেঘা তনার পাশে বসে হাঁপাতে লাগলো।
-- এভাবে আসতে বললি কেন। কি হয়েছে?
-- আজ ওই নীল কে দেখছি।
-- নীল কে দেখছিস ভালো কথা। আমাকে এভাবে প্যারা দিলি কেন হারামি।দেখ হাঁপাতে হাঁপাতে আমার জীবন শেষ হয়ে গেল।
-- নীল কে দেখছি ভালো কথা??
জানিস ও কি করছিল। ও সিগারেট খাচ্ছিল।একদম বাজে ছেলের মত হয়ে গেছে।
-- কিইইইই?
মেঘা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।
-- হতেই পারে না। আমি নিজে নীলের সম্পর্কে সব খবর নিছি।ও এমন ছেলেই না। তোর কোথাও ভুল হয়ছে।
-- আমার কোন ভুল হয়নি। এটা নীল ই ছিল। আমি সিউর।
-- আচ্ছা তুই কি ওর সাথে কথা বলেছিস? ও এতো দিন কোথায় ছিল। র্ভাসিটি যায় না কেন? এসব কিছু জানতে পেরেছিস?
-- আমি ওর সাথে কথা বলিনি। ভাবছিলাম বলবো কিন্তু তার আগেই ও চলে গেছে।
-- দোস্ত তুই একদম চিন্তা করিস না। ওর খবর বের করতে আমার দুমিনিট ও লাগবে না। কাল কলেজ তুই সব খবর পেয়ে যাবি।
পরের দিন কলেজে,,,,,,,,
-- দোস্ত দু'টা নিউজ আছে। একটা গুড নিউজ আর একটা ব্যাড নিউজ। কোন টা আগে শুনবি বল?
তনা বেঞ্চের উপর পা ঝুলিয়ে বসে ছিল।মেঘার কথা শুনে পা দোলাতে দোলাতে বললো।
-- আগে গুড নিউজ টাই বল।
-- তাহলে শুন। নীল আর আনিকার ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
-- কি????
-- হুম। শুধু কি ব্রেকআপ? আনিকা তো নীলকে ছ্যাকা দিয়ে। অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিয়েছে।
তনা বেঞ্চের উপর থেকে লাফ দিয়ে নেমে লাফাতে লাগলো।
-- কি বলছিস তুই? সত্যি। সত্যি ই কি আনিকার বিয়ে হয়ে গেছে?
-- হুম তাই তো। নীল রোমিও থেকে দেবদাস হয়ে গেছে।
-- আর কি যেন বলছিলি। ওহ হ্যা ব্যাড নিউজ নাকি। ওটা কি বল?
মেঘা মুখ কালো করে
-- নীলের মা মারা গেছে।
-- কি?
--হুম।
-- কি ভাবে কি হলো। নীলের মা'র কি হয়েছিল? আর কবে মারা গেছে?
-- শুনেছি আগে থেকেই নাকি অসুস্থ ছিল। কি হয়েছিল তা বলতে পারবো না। কিছু দিন হলো উনি মারা গেছেন। আর এর পরই আনিকা ও নীল কে ছেড়ে চলে গেছে।
-- তাই তো নীল কে দেখছি না কিছু দিন।ওর সাথে এতকিছু হয়ে গেল। আমরা কিছুই জানতে পারলাম না। কাল ওকে দেখে আমার বুঝা উচিত ছিল ওর কিছু একটা হয়েছে। মনে হয় এ কয়দিন ঠিক মত খাওয়া তো দূর।ঠিক মত গোসল ও করেনি। মুখ কেমন ফ্যাকাশে চুল উসকোখুসকো হয়ে ছিল। কেমন দেখাচ্ছিল ওকে। এ কিছু দিনে কত কিছু হয়ে গেল ওর সাথে। এখন কি করবো আমরা?
-- কি করবো মানে? ও একটা মেয়ের জন্য। ওর লাইফ এভাবে নষ্ট করে দিবে তা কি আমরা চেয়ে দেখবো? ওকে বুঝাতে হবে। কারো চলে যাওয়ায় কখনও সময় থেমে থাকে না। ও যদি ওর মায়ের চলে যাওয়া মেনে নিতে না পারে তাহলে তো হবে না। মানুষ মরণশীল। একদিন না একদিন সবাই কে ই এ পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে।
তনা মেঘা কে জড়িয়ে ধরে
-- এ কয়দিন খুব কষ্ট সহ্য করেছে নীল।ও হয়ত এসব মেনে নিতে পারছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে ওর। তাই না মেঘা?
-- হুম। মাকে হারানোর কষ্ট কেউ ই সহ্য করতে পারে না। কিন্ত ও যদি আনিকার জন্য কষ্ট পায় তাহলে এটা ওর বোকামী ছাড়া আর কিছুই না।
-- আজ কলেজ শেষে যে করেই হোক নীল কে খুজে বের করে ওর সাথে কথা বলতে হবে।
-- দোস্ত একটা কথা ভেবে দেখছিস?
-- কি কথা?
-- আনিকা নীল কে ছেড়ে চলে যাওয়ায় আমাদের লাইন একেবারে ক্লিয়ার।
তনা মেঘার কথা শুনে রাগী ভাবে মেঘার দিকে তাকালো
-- এভাবে রেগে যাচ্ছিস কেন?
-- আমাদের লাইন ক্লিয়ার মানে?
-- ইয়ে মানে। আমাদের আর কি?
-- হারামি মাইয়া আমার নীলের দিকে একদম নজর দিবি না। নীল শুধু আমার। ভালোই হয়েছে আনিকা ওকে ছ্যাকা দিছে। এখন ওর আর আমার মাঝে কেউ নেই। তোর যদি নীলের দিকে উল্টা পাল্টা নজর দিস তাহলে তোর চোখ তুলে নিব।
-- লে খোকা সব করলাম আমি। নীলের ব্যাপারে সব খবর আমি এনে দিলাম। আর এখন বলছে আমার চোখ ই নাকি তুলে নিবে। ফইন্নি মর তুই তোর মত বান্ধবীর দরকার নাই আমার।
তনা মেঘা কে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
-- তুই তো আমার জান?
-- হুম, হয়ছে আর ন্যাকামি করার দরকার নাই।
মেঘা তনাকে ছাড়িয়ে ভাব দেখিয়ে আগে আগে যাচ্ছে আর তনা পিছন থেকে মেঘাকে ডাকছে।
-- এই মেঘা দাঁড়া না।আরে শুন।
কলেজ ছুটি হওয়ার পর বাস স্টপে এসে, মেঘা বাসে উঠতে নিলে তনা পেছন থেকে মেঘার হাত ধরে টান দিয়ে একটু দূরে নিয়ে যায়।
-- কি হলো এভাবে হাতে ধরে টান দিলি কেন? ব্যাথা পাইছি তো।
মেঘা এক হাত অন্য হাতে বোলাতে বোলাতে
-- তোকে কি বলছিলাম মনে নেই?
-- কি বলছিলি?
-- আজ নীলের সাথে দেখা করে কথা বলবো।
-- হুম বলবো তো। কিন্তু বাসে উঠতে দিলি না কেন?বাসে উঠলে প্রব্লেম কি?
-- আরে গাধী বাসে গেলে ওকে পাবো কোথায়? আর কথা ই বা বলবো কি করে?
-- হুম ঠিক বলছিস। তাহলে এখন কি হেঁটে যাবো?
-- হুম। চল দেখি রাস্তায় নীল কে পাই কি না।
মেঘা আর তনা হাঁটছে। তনা একটু আগে আগে আর মেঘা পিছনে। পিছন থেকে মেঘা তনাকে ডেকে
-- এই তনা একটু দাঁড়া। এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন? হেঁটে হেঁটে যা।
-- কুত্তি দৌড়াচ্ছি কোথায়? আমি তো হেঁটে হেঁটে ই যাচ্ছি। তুই ই হাঁটতে পারিস না।
-- আমি আর পারবো না রে দোস্ত। আমার পা ব্যাথা করছে।এমনিতেই আমি হাঁটতে পারি না।
-- পারবো না বললে তো হবে না জানু।তোমাকে তো পারতে ই হবে। এখন ড্রামা না করে তারাতারি হাঁট তো।
কিছু দূর হেঁটে আসার পর মেঘা পিছন থেকে জোরে তনাকে ডেকে উঠলো। তনা বিরক্তি নিয়ে পিছনে ফিরে
-- কি হয়েছে পিছন থেকে এভাবে ষাঁড়নীর মতো চেচাচ্ছিস কেন?
মেঘা হাতে ইশারা করে নীলকে দেখিয়ে
-- ওই দেখ তোর রোমিও দাঁড়িয়ে আছে।
তনা নীলের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি ই ওখানে নীল কিছু ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
-- মেঘা চল।
-- চলছি না তো কি দাঁড়িয়ে আছি?
তনা মেঘার কথার উত্তর না দিয়ে নীলের কাছে গেল। তনা আর মেঘা নীলের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘা তনাকে বলছে
-- এখানে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আসছিস নাকি। ওকে ডাক দে।কথা বল ওর সাথে।
-- তুই একটু ডেকে দে না প্লিজ।
-- ইস ন্যাকামি।আমি ডেকে দিব কেন। তুই কথা বলবি তুই নিজে ডেকে নে।
তনা মেঘার হাতে জোরে একটা চিমটি কেটে
-- তোর ডাকতে হবে না। আমি নিজেই ডেকে নিব।হারামি একটা। এই তুই আমার ফ্রেন্ড?
তনা নীলকে ডাকছে।
-- নীল শুনছেন?
নীল তনার দিকে তাকিয়ে ভাবছে। নীল তো এ মেয়েকে চিনে না। -তাহলে শুধু শুধু কেন একটা মেয়ে নীলকে ডাকতে যাবে এই ভেবে নীল তনার ডাকে সারা দিল না। নীল তনার ডাকে সারা না দেওয়ায় তনার অনেক রাগ হচ্ছে।
-- দেখলি মেঘা আমি ডাকলাম। আমার দিকে তাকালো পরেও কোন কথা বললো না। কত দেমাগ দেখলি।
-- ধুর নীল হয়ত বুঝতে পারেনি তুই যে ওকে ডাকছিস।
-- সত্যি?
-- হুম বাবা সত্যি। তুই আবার ডেকে দেখ।
--আচ্ছা।
তনা আবার নীলকে ডাকতে লাগলো।
-- এই যে মি.নীল।আপনাকে ডাকছি। কানে কি কম শুনেন? কখন থেকে ডাকছি কথাই বলছেন না। আজিব লোক তো আপনি। কেউ ডাকলে তার সাথে কথা বলতে হয় এটা ও জানেন না?
নীল এবার সিউর হলো তনা ওকেই ডাকছে। কিন্তু অচেনা একটা মেয়ে নীলকে কেন ডাকবে। এটা ভাবতে ভাবতে নীল তনার কাছে আসলো। নীল তনার থেকে দু'পা দূরে দাঁড়িয়ে
-- জি আমাকে ডাকছিলেন?
-- হুম মি. আপনাকে ই ডাকছিলাম।
-- ওহ আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। কেন ডাকছিলেন বলুন?
তনার একবার মেঘার দিকে তাকিয়ে একবার ঢোক গিলে বলতে শুরু করলো
-- কি হয়েছে আপনার?
এতদিন কোথায় ছিলেন?
নিজের এমন অবস্থা করছেন কেন?
র্ভাসিটি যান না কেন। পড়াশুনা কি আর করবেন না। এভাবেই কি নিজের জীবন টা নষ্ট করে দিবেন?
তনা এক দমে কথা গুলো বলে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল কি রিয়েক্ট করে তা দেখার জন্য। নীল ভেবে পাচ্ছে না একটা অচেনা মেয়ে ওকে একথা গুলো কেন বলবে। মেয়েটা তো নীল কে চিনেও না নীলের জানা মতে।
-- আপনি কে?
আপনি কি আমাকে চিনেন?
আমি জানি না। আপনি আমাকে চিনেন কি না তবে আপনাকে এটা বলে দেই।
আমার জীবন টা আর স্বাভাবিক নেই। হয়ত আর কখনও হবে না। যার জীবনে আপন বলতে কেউ নেই। যার বেঁচে থাকার কোন আশা নেই। তার নিজেকে গুছিয়ে রেখে আর পড়াশুনা করে কি হবে। যে দু'জন মানুষের জন্য আমি জীবনে কিছু করতে চেয়েছিলাম। তারাই যখন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তাহলে এ জীবনে কিছু করলেই কি আর না করলেই কি?
কথা গুলো বলে নীল যেতে নিচ্ছিল। তনা নীলকে পেছন থেকে ডেকে
-- শুনুন?
নীল তনার কথায় পিছন ফিরে তাকায়।
-- কিছু বলবেন?
-- হুম।
তনা কিছুক্ষন চুপ করে কি যেন ভেবে। নীলের দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে।
-- আমি সেই তিন /চার মাস আগে আপনাকে এই রাস্তায় ই দেখছি।প্রথম দেখাতে ই আপনাকে আমার ভালো লেগে যায়। তার পর থেকে কিছু দিন আপনাকে ফলো করছি। আপনার ব্যাপারে সমস্ত ইনফরমেশন বের করছি। কল্পনায় আপনার হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন জানতে পারলাম আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন। তখন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। আপনাকে ভুলতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। দু'তিন দিনের দেখায় যে কেউ কাউকে ভালোবেসে ফেলতে পারে তা আমার জানা ছিল না। আমি ভেবে নিয়েছিলাম আপনি হয়ত আমার ভাগ্যে নেই। এটা ভেবেই নিজেকে শক্ত করে প্রায় তিন মাস আপনাকে ভুলে ছিলাম। মাঝে আপনাকে দেখতে পাইনি। চেয়েছিলাম আপনার খুজ নিতে কিন্তু ইচ্ছে করেই নেইনি। আপনার খুজ নিয়ে আপনার কথা মনে করে নিজের কষ্ট গুলো কে বাড়াতে চাইনি। কিন্তু সেদিন হঠাৎ করে বাস স্টপে আপনাকে দেখতে পেলাম তাও এমন ভাবে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। আপনার কাছে গিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্ত তার আগেই আপনি ওখান থেকে চলে গেছিলেন। তার পর আপনার খুজ নিতে আপনার বাড়ি ওয়ালার সাথে ও দেখা করছি। উনার থেকেই জানতে পারলাম আপনার মা মারা গেছেন। আর আন্টি মারা যাওয়ার পর আপনি বাসাটা ও ছেড়ে দিছেন। আপনার র্ভাসিটি গিয়ে আপনার কিছু ফ্রেন্ডদের থেকে জানলাম আপনি ঠিক মত র্ভাসিটি ও যান না। আর আপনার গার্লফ্রেন্ড ও নাকি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। দেখেন কারো বাবা মা ই চিরদিন বেঁচে থাকে না। বাবা মাকে হারানোর কষ্ট অনেক। কিন্তু তাই বলে কি আপনি এভাবে আপনার লাইফ টা নষ্ট করে দিবেন। যদি আন্টি বেঁচে থাকতো আর আপনার এমন অবস্থা দেখত তখন উনার কেমন লাগতো। উনি কি চাইতেন উনার ছেলে নিজেকে এভাবে শেষ করে দেক। উনি কি এসব মেনে নিতে পারতেন। আপনাকে এমন ভাবে দেখে উনার আত্মা কি কষ্ট পাচ্ছেন না?
আর গার্লফ্রেন্ড? যদি তার চলে যাওয়ায় আপনি কষ্ট পান। তাহলে এটা আপনার বোকামি। কারণ যে আপনাকে না বুঝে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে তার জন্য কেন শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছেন। সে কেন আপনাকে ছেড়ে গেছে তা আমি জানি না। শুধু এইটুকু বলছি কারো জন্য আপনি আপনার লাইফ টা নষ্ট করবেন না।
চলবে.....
গল্প: শুধু তুমি
পর্ব - ৪
লেখনীতে: Samira Afrin Samia & জেরিন_আক্তার_নিপা
.jpg)
0 Comments