অন্ধকার ঘরের এক কোণে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে ফিরোজা। জল তৃষ্ণাই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। প্রথম দুই-দিন এখান থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য বেশ ছটফট করেছে সে। রণকের হাতে-পায়ে পড়ে কাকুতিমিনতি করেছে। বারবার করে বলেছে সে না অপরার কে অপহরণ করেছে, আর না উষা'কে খুন করেছে। যা করেছে সব কিছুই দিপেশ করেছে। সে কিছুই করেনি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি, রণকের মন এক চুল পরিমাণ গলেনি। সে একই কথা বারবার জিজ্ঞেস করছে অপরা কে অপহরণ করে কোথায় রেখেছে। ফিরোজা মনে মনে ঠিক করে আজ যে করেই হোক এখান থেকে তাকে বেরুতে হবে। প্রয়োজনে দিপেশ এর সব কথা সে রণকের কাছে খুলে বলবে। রণকের আসার অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ফিরোজা।
—রণক হোটেল রুমে ঢুকে লাইট অন করে। সারাদিন থানা আর জেল দুই জায়গায় পাকাপাকি করতে করতে সে নিজেও ক্লান্ত। কোন ভাবেই সে অপরার খোঁজ পাচ্ছে না। দিপেশ এর সাথে বেশ কয়েকবার দেখা করার চেষ্টা করে সে ব্যর্থ হয়েছে। জেল সুপারকে টাকা দিয়ে দিপেশ এর সাথে দেখা করার সব রাস্তায় বন্ধ করে দিয়েছে ভূমেন্দ্র সেন। রণক এর কেন জানি এখন মনে হয়, চোখের সামনে ঠিক যা ঘটতে দেখছে তা পুরোপুরি সত্য না।
—আলো চোখে পড়াতে ফিরোজার ঘুম ভেঙে যায়। মুখে স্কচটেপ লাগানো থাকায় সে রণক'কে ইশারায় কাছে ডাকে।
—ফিরোজার ইশারার কর্ণপাত না করে ক্লান্ততার ভাড়ে সে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
******
বোরখা পরা এক মেয়ে বসে আছে ঘন্টাখানেক ধরে নামখানা জেলে। দিপেশ এর সাথে দেখা করতে এসেছে শুনে অনেকেই আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। কিছুক্ষণ আগেই এক কারারক্ষী এসে বলে গেল আরও কিছু সময় নাকি লাগবে। কয়েদির সাথে দেখা করার জন্য এতো সময় লাগে! কথাটা বলেই আবার বেঞ্চে বসল মেয়েটি। আশেপাশের হাবভাব ঠিক মনে হচ্ছে না। ধীরে ধীরে লোকাল ছেলেপেলে এসে ভিড় জমাচ্ছে ওয়েটিং রুমে। বোরখা পড়া মেয়েটি দুই হাত কচলাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটি ভয় পেয়ে আছে।
—রোগাপটকা এক লোক এসে বোরখা পড়া মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো। কোন ভনিতা ছাড়াই সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করল। দিপেশ এর সাথে কি দরকার আপনার?
—ঢুকি চিপে মেয়েটি আমতা আমতা করে বলল। দাদা আপনি কি জেলখানার ভেতরের লোক নাকি বাইরে।
—কথায় তো আছে রোগাপটকা মানুষের রাগ বেশি হয়। এই লোকটি মেয়েটির পাল্টা প্রশ্নে ভিষণ রেগে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলতেই নিয়েছে তখনি পেছন থেকে তপন বলল। অরুনিকা আপনি এখানে দাঁড়িয়ে কেন? চলুন জেল সুপারের সাথে আগে কথা বলি।
—তপনের কন্ঠ পেয়ে স্বস্তি ফিরিয়ে পায় অরুনিকা। তপনের কাছাকাছি অরুনিকা এসেই বলল, আপনি আমাকে কি করে চিনলেন? আর আপনি এখানে কি করেছেন?
—আমি যদি না আসতাম তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যেত ভূমেন্দ্র সেন এর লোকেরা। বিস্মিত হয়ে অরুনিকা প্রশ্ন করল।আপনি ভূমেন্দ্র সেন কে চিনেন?
—উনি এমন কোন মহৎপ্রাণ মানুষ না যে উনাকে চিনব। আপনার পাল্লায় পড়ে খোঁজ খবর নিয়ে চিনতে হচ্ছে এই আর কি।
—অভিমান স্বরে অরুনিকা বলল। আমার পাল্লায় কেন পড়েছেন?আমি তো আর আপনার হাতে পায়ে ধরে ফেলাইনি।
—জেল সুপারের ঘরে ঢুকেই তপন'কে দেখে জেল সুপার নেহাল দত্ত বললেন। আরেহ তপন বাবা তুমি এখানে হটাৎ?
—একজন কয়েদির সাথে দেখা করতে এসেছিলাম কাকা বাবু। তা কাকা বাবু আপনার জেলে দেখছি ভেতরের লোক এর থেকে বাইরের লোকেদের আনাগোনা বেশি।
—কি আর বলব বাবা, নামখানাতে তো গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ভূমেন্দ্র সেন এর ক্ষমতা বেশি। মাসখানেক হলো দিপেশ নামে এক মার্ডার কেসের আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এই আসামির সাথে কে কখন দেখা করতে আসে এটাই পাহারা দেওয়ার জন্য এই লোকাল ছেলেপেলে বাইরে আড্ডা দেয়।
—কিন্তু কাকাবাবু আপনি কি জানেন না আজ তো ওরা বাইরে না ভেতরেই ঘোরাঘুরি করছে। সে যাইহোক আমরা দিপেশ নামের ওই কয়েদির সাথেই দেখা করতে এসেছি। আমাদের পরিচিত এক মেয়ে নিখোঁজ। আমাদের সন্দেহ এই দিপেশ জানে মেয়েটি এখন কোথায় আছে।
—নেহাল দত্ত খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকল তারপর বলল, দিপেশ এর সাথে দেখা করে মনে হয় না কোন লাভ হবে। সে এখন বদ্ধ উন্মাদ। তারপরও তোমাদের যখন প্রয়োজন আমি দেখা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
—কারারক্ষী জেল সুপারের আদেশে অরুনিকা আর তপন'কে দিপেশ এর সাথে দেখা করাতে ভেতরে নিয়ে গেল।
—দিপেশ'কে দেখে অরুনিকার ভয়ে পেছন দিকে সরে যায়। পেছন থেকে তপন অরুনিকা'কে ধরে বলে আমি আছি ভয় নেই।
—অরুনিকা দিপেশ এর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, অপরা কোথায় আছে দিপেশ? বেঁচে আছে নাকি ওকেও তোমরা মেরে ফেলেছ?
—দিপেশ উত্তর দেয় না। বিড়বিড় করে একই কথা বারবার বলেই চলছে। এটা হতে পারে না উষা আমার বোন হতেই পারে না।
—দিপেশ এর কোন উত্তর না পেয়ে অরুনিকা অধৈর্য হয়ে পড়ে। হিজাব সরিয়ে দিপেশ এর কাছে গিয়ে শক্ত করে ওর হাত ধরে বলে। বলো দিপেশ অপরা কোথায়? কি করেছ তোমরা ওর সাথে?
—অরুনিকা'কে দেখে দিপেশ ভয় পেয়ে যায়। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ওকে। তারপরই চিৎকার করে দিপেশ শুধু এক কথায় বলে, উষা আমার বোন হতেই পারে না। আমি উষা'কে মেরে ফেলেছি।
—তপন অরুনিকা কে পড়ে যাওয়া থেকে আটকায়। তারপর বলে এখানে থেকে লাভ নেই অরুনিকা। উনি মেন্টালি স্টেবেল না।
—নামখানা থেকে অরুনিকা'কে নিয়ে তপন ফিরে আসে কলকাতায়। গাড়ির ভেতর দুজনের মাঝে কোন কথা হয়নি। অরুনিকা অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছিল। বাড়িতে পৌঁছে অরুনিকা নিজের ঘরে চলে যায়।
—আভার সাথে কথা বলা জরুরি। ফোন হাতে নিয়ে আভার কাছে ফোন দিতেই নিয়েছে তখন ঘরে তপন ঢুকে।
—আপনি আমাকে না বলে কেন নামখানাতে গিয়েছিলেন?
—এখানে বলার কি আছে? অপরার খোঁজ করাটা জরুরি ছিল।
—আপনার কাছে সব কিছুই জরুরি শুধু আমি বাদে। আপনি যদি ওখানে কোন বিপদে পড়তেন তখন কি হতো?
—অরুনিকা কথা বলে না। তপন ভুল কিছুই বলছে না। নামখানা'তে ফিরোজা আছে। কিন্তু অপরার খোঁজ না করে কীভাবে সে হাতে হাত রেখে বসে থাকতে পারে!
—তপন অরুনিকার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে ব'লে আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি চাইনা বর্তমানে আপনার অতীতের ছায়া এসে পড়ুক। আপনাকে হারাতে পারব না। আপনি এর পর থেকে আর কখনো অতীত এর কোন কিছু নিয়ে নাক গলাবেন না। সামনে আমাদের বিয়ে। আমি অতীত জেনেও আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আমার পরিবার অতীত জেনে কখনো মেনে নিবে না আপনাকে। তাই দয়া করে আপনি অতীত পেছনে রেখে আমার সাথে নতুন জীবন শুরু করুন প্লিজ।
—তপনের কথায় বাকরূদ্ধ হয়ে যায় অরুনিকা। একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে এই ভাবে একজন'কে নিয়ে চিন্তা করতে পারে। দশ-পাঁচ না ভেবে অরুনিকা জড়িয়ে ধরে তপনকে। চোখ দিয়ে ঝরঝরিয়ে জল পড়ে।
—একি অরু আপনি কাঁদছেন কেন?
—এই ভাবে কেউ কখনো আমাকে নিয়ে ভাবেনি। আমি সত্যি আপনার ভালোবাসার কাছে হার মানলাম। কিন্তু তপন অপরা আমার এই জীবনের একজন ভালো বন্ধু। ওকে এই বিপদের দিনে খুঁজে যদি না বেড় করতে পারি তাহলে বন্ধুত্বের মান থাকবে না।
—আপনার বন্ধুর খোঁজ আমি বেড় করবো। কিন্তু আপনি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না। অরুনিকা মাথা নিচু করে বলে, করবো না যোগাযোগ। আপনি শুধু ওকে খুঁজে বেড় করুন।
—শেফালি ঘরে ঢুকে তপন আর অরুনিকা জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থায় দেখে চেঁচিয়ে বলে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ দা-ভাই বিয়ের আগ তোমার একি করছো। দাঁড়াও এখনি মা'কে ডাকছি।
—বোনের কথায় এক লাফে অরুনিকার থেকে দূরে গিয়ে তপন বলল। তোর লজ্জা নেয়? দাদা-বৌদির ঘরে নক না করেই ঢুকে পড়িস।
—শেফালি গহনার বাক্স টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল, নিজে দোষ করে আমাকে নিয়ম শেখানো হচ্ছে। মা'কে বলে দিলেই সব নিয়ম ভালো করে শিখে দিবে বলেই হি হি হি করে হেসে উঠে শেফালি।
—শেফালির কথা শুনে অরুনিকাও হাসে।
বন্ধ স্যাঁতসেঁতে ঘরের মেঝেতে ময়লা তেলচিটে চাদরে উপর অর্ধনগ্ন অবস্থায় উপর হয়ে পড়ে আছে এক নারী। শরীর নড়াচড়া করার শক্তি নেয় তার প্রমাণ হলো মাথার উপরে অসংখ্য তেলাপোকা। শরীরের এর উপর ইঁদুর চিকার মনে হয় কোন সমাবেশ চলছে।
—দরজা খুলতেই রোদের আলো এসে নারীর চোখে পড়ে। চোখ মিটমিট করে তাকায় সামনের দিকে। বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছে তার নেই। কিন্তু দরজা খুলে প্রতিদিন যে শয়তান ঘরে ঢুকে সে তিলেতিলে কষ্ট দিবে কিন্তু মরতে দিবে না। সে পৈশাচিক আনন্দ উপলব্ধি করে কোন নারীর শরীরে আঘাত করতে।
—কর্ণভ ঘরে ঢুকে লাইট অন করে একটা টুল টেনে বসে। কেমন আছো অপরা? আমার কথা না শুনে দেখলে এখন কি অবস্থা হয়েছে তোমার! এখন না আছে তোমার আগের সেই রূপ আর না আছে তোমার বেঁচে থাকার ইচ্ছা। আমি বারবার বলেছি অপরা জেদ করো না। যে ব্যবসায় বাড়িতে হেঁটে টাকা আসে। কোন ইনভেস্ট করতে হয় না। শুইলে টাকা পাওয়া যায় সেখানে কিসের এতো জেদ!
—আমার কথা না শুনে চলে গেলে কার কাছে বান্ধবীর কাছে। এখন কোথায় তোমার বান্ধবী? তোমার খোঁজ তো সে করল না।
—অস্ফুটস্বরে বলে উঠল অরুনিকা বেঁচে নেই !
—বেঁচে নেই মানে। সে তো বেশ আরাম করেই শহরের নামকরা ডাক্তার তপন ব্যানার্জির সাথে সংসার পাততে চলছে।
—অরুনিকা বেঁচে আছে শুনে অপরা কোটরাগত চোখ জ্বলে ওঠে। পৃথিবীতে তাহলে আপন বলতে এখনো কেউ আছে আমার। আচ্ছা আমাকে এক গ্লাস জল দিবে কর্ণভ? গলাটা বড্ড শুকিয়ে আছে।
—কর্ণভ জল নিতে বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পড়েই এক গ্লাস জল হাতে ঢুকে বলল, বউ আমার জল খাবে নাও খাও সোনা। এই বলেই গ্লাস উপর করে জল অপরার মুখের উপর ফেলে দেয়।
—জল তৃষ্ণায় অপরা মাটিতে পড়া জল জিব দিয়ে চেটে খায়।
—কোথায় আছে না সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। কত সুখে রেখে ছিলাম। সমাজের মানসম্মান সব কিছুই ছিল। কি এমন হয়েছিল পালাতে হলো বাড়ি থেকে। সংসার করতে হলে ইনকাম সোর্স থাকা লাগে। প্রতি রাতে নিত্যনতুন পুরুষের সাথে শুইলেই পাওয়া যায় টাকা আর টাকা। কিন্তু না তোমার তো আবার শুধু এক ভাতারের ভাত খাওয়ার ভূত চেপেছিল। এখন জল অব্দি কপালে জুটলো না।
—কর্ণভ এর কথার মাঝেই রণক পুলিশ সাথে নিয়ে উপস্থিত হয়। আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যায় কর্ণভ। পুলিশ পুরো বাড়ি ঘেরাও করেছে। রণক অপরা'কে কোলে তুলে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে। মহিলা কনস্টেবল অপরা'কে দেখে আৎকে উঠে। হাড্ডিসার শরীরে চামড়া ঝুলে পড়েছে। মাথায় চুলের ছিঁটেফোঁটা নেই। মাথায় ছোট ছোট গর্তে পোকা কিলবিল করছে। পায়ের নখ নেই। পুরো শরীরে কালচে লোহা পোড়া দাগ।কি বীভৎস চেহারা।
— অ্যাম্বুলেন্সে করে অপরা'কে নিয়ে হসপিটালে চলে যায় রণক। আর কর্ণভকে পুলিশ কাস্টাডি তে নিয়ে নেয়।
****
বেশ কয়েকবার ফোন বাজা স্বত্তেও আভা রিসিভ করে না ।
—রণক কিছুক্ষণ পরপর চেষ্টা করেই চলেছে আভার সাথে যোগাযোগ করার জন্য ।
—অরুনিকার নিষেধ পালন করতে গিয়ে আভার খারাপ লাগে। যে সময় কেউ ছিল না সেই সময় রণক বড় দাদার ভূমিকায় পাশে ছিল। আভার মনে পড়ে অপরা-দির মুখে দি-ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে যখন সে ছুটে কলকাতায় যায় তখন রণক নিজের বোনের মতো করে আপন করে নেয় তাকে। আর যাইহোক রণক-দা খারাপ হতে পারে না। রণক-দা সাথে থাকার পর, মানুষটি যে কত নরম মনের। তা আভা ভালো করেই জানে।
—কিন্তু নিজের দি-ভাই কথা তো আর অমান্য করতে পারে না সে। দি-ভাই মানা করে দিয়েছে রণক-দা এর সাথে কোনরকম যোগাযোগ করা যাবে না।
—নিজের মনে যখন বিড়বিড় করে যাচ্ছিল আভা ঠিক তখনি ফোনে মেসেজ আসে। মেসেজ দেখে আভার চোখে মুখে খুশি আর আতঙ্ক দুটোই ভেসে ওঠে।
******
বাড়িতে হলুদের আয়োজন করেছে ব্যানার্জি পরিবার। পুরো বাড়ি সদ্য গাঁদা ফুলে সাজানো হয়েছে। বিকেল তিন ঘটিকায় গায়ে হলুদ। ঠাকুর মশাই বলেছে আজ রাত ১১টার লগ্ন ছাড়া আগামী সাত দিনের ভেতর আর কোন ভালো লগ্ন নেয়। তাই তজশ্রী ব্যানার্জি এই লগ্নে মেয়ে আর ছেলের বিয়ে দিয়ে দিতে চায়।
—ঘরে আয়নার সামনে বসে আছে অরুনিকা। শেফালি'কে সাজানো হলে অরুনিকা'কে সাজাতে আসবে পার্লারের মেয়েরা। শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে বসে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে অরুনিকা। চুল চিরুনি করতে নিয়ে হটাৎ করেই মনে পড়ে যায় রণকের বাড়িতে ঘটে যাওয়া সেই রাতের ঘটনা।
— নিজেকে তৈরি করে নিয়ে অরুনিকা যখন নিচে নামাচ্ছিল তখন রণক যে ভাবে তার দিকে চেয়েছিল সেই দৃষ্টি যেন এখনো পিছু করে অরুনিকাকে। নিচে নেমে অরুনিকা রণকের কোলে বসে কিছু বুঝে উঠার আগেই সে তার নিজের সামান্য ফাঁক দু’ঠোঁটের মাঝে, রণকের দু’টি ঠোঁটে ডুবে দিয়ে গভীর চুম্বন করে।
—রণকের সাথে ঘটে যাওয়া চুম্বনের কথা মনে পড়তেই অরুনিকা শরীর শিউরে ওঠে।
—দরজায় দাঁড়িয়ে তপন অরুনিকা বলে ডাকতেই, অরুনিকার চিন্তায় ছেদ পড়ে। কিছুটা ভয় পেয়ে পেছনে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলল। কিছু বলবেন? অসময়ে এখানে কেন?
—আপনাকে দেখতেও আসলাম আর সাথে কিছু ভাগাভাগি করে নিতেও আসলাম।
—তা কি ভাগাভাগি করতে এসেছেন শুনি।
—তার আগে বলুন আয়নায় তাকিয়ে কি এমন ভাবছিলেন যে ঠোঁটের কোণে সুন্দর হাসিটা ফুটে উঠেছে।
—অরুনিকা কি বলবে ভেবে পায় না। সে কেন রণক এর কথা ভাবছিল তা সে নিজেও জানে না। হতে পারে আভার মুখে রণকের বেশি প্রশংসা শোনার কারনেই এমনটা ঘটছে।
—কি হলো অরুনিকা চুপ কেন? কথাই কথাই হারিয়ে যান কেন আপনি?
—না তেমন কিছুই না। সে যাইহোক আপনাকে কলাপাতা রঙের ধুতি পাঞ্জাবী তে বেশ মানিয়েছে।
—তপন খানিকটা মুচকি হেসে বলল, লতিকাও একই কথা বলতো।
—লতিকার কথা শুনে অরুনিকা বলল, আমি আপনার আর লতিকার সম্পর্কে কিছুটা মায়ের মুখ থেকে শুনেছি। মা বলেছিল আপনি কতোটা আমাকে মানে লতিকা'কে ভালোবাসেন।
—সবসময় সব ভালোবাসা নিজের করে পাওয়া যায় না। লতিকাও আমার না পাওয়া অফুরন্ত এক ভালোবাসা।
—লতিকা আপনাকে ছেড়ে কেন গেছে? মা বলেছিল আপনি নাকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
—হ্যা, ঠিকই শুনেছ। আমার আর লতিকার পরিচয় হয় আমেরিকায়। লতিকা আসলে খ্রিস্ট ছিল। ওখানে আমরা লিভং রিলেশনশিপে ছিলাম। সব কিছুই ভালোই চলছিল যখন বিয়ের কথা উঠলো তখন থেকেই সব সমস্যা শুরু। সে যাইহোক এখন তো আর সে নেয় আছেন আপনি। আর আমি বর্তমানে অনেক সুখী অতীত টেনে লাভ নেই। আপনি হলুদের সাজে তৈরি হয়েনিন। আমি নিচে যাই বলে তপন যেতে নিয়েছে তখন অরুনিকা বলে উঠল।
—বর্তমানে সুখে আছেন অতীত এর নাম নিয়ে।
—হটাৎ এমন কোন প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে তপন তা ভাবেনি। কিছুটা সময় নিয়ে তপন বলল, এখানে আমার করার কিছুই নেই। বাড়িতে আপনার দুই নামের মধ্যে একটা নামও বলা যাবে না। আপনার নাম যদি বলি তাহলে সাথে আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আর সেই সব প্রশ্নের উত্তর না আমি দিতে পারব আর না আপনি। যখন আপনাকে লতিকা নামে বাড়িতে নিয়ে আসি তখন আপনার নাম জানা ছিল না আমার। তাই সেই মূহুর্তে এই লতিকা নাম আপনাকে এই বাড়িতে জায়গা করে দিতে পেরেছে। এখন ইচ্ছে না থাকলেও এই নাম নিয়ে আপনাকে পথ চলতে হবে।
—অরুনিকা কিছুই বলে না। কারণ সে জানে অরুনিকা গঙ্গোপাধ্যায় বা রিতিকা সান্যাল যাই বলা হোক না কেন দুটো নামের অতীত দেহ পসারিণী সঙ্গে জড়িত। আর নাম পরিবর্তন তো এখন অরুনিকার কাছে ডাল-ভাত সমতুল্য। অল্প কিছু টাকা ব্যয় করলেই নতুন নতুন পরিচিত পত্র তৈরী করা যায় আজকাল।
—অরুনিকাকে চুপচাপ থাকতে দেখে তপন কাছে এসে বলে। সমাজের বাইরে চলা সম্ভব না আমার পক্ষে তাই লতিকা এই নামই আপনাকে নিতেই হবে।কিন্তু নাম যাইহোক না কেন ভালোবাসি তো আমি আপনাকেই।
সদ্য তোলা গাঁদা ফুলের অলংকারে অরুনিকার সৌন্দর্য দিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তনশ্রী ব্যানার্জি হাতে পূজার থালা নিয়ে ঘরে ঢুকেন।
—লতিকা বৌমা দেখি হাতটা বাড়িয়ে দাও তো।
—অরুনিকা হাত বাড়িয়ে দেয়। তনশ্রী ব্যানার্জী থালায় থাকা শাঁখা-পলা অরুনিকার হাতে পড়িয়ে দিতে দিতে বলল। কখনো খুলিও না যেন বৌমা। এটা তোমার স্বামীর মঙ্গলের জন্য।
—হাতে শাঁখা-পলা দেখে অরুনিকার চোখে জল চলে আসে। জীবনে এমন কোন দিন আসবে অরুনিকা ভাবেতেও পারেনি। তনশ্রী ব্যানার্জি পায়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয়।
চারিদিকে উলুধ্বনি আর শঙ্খের ধ্বনিত মুখরিত ব্যানার্জি বাড়ি। বাড়ির মেয়ে শেফালি আর বাড়ির বউ অরুনিকা শাড়ির উপরে নতুন গামছা জড়িয়ে হাতে সিঁদুর কৌটা নিয়ে উঠোনে হলুদের পিঁড়িতে বসে আছে। একে একে সবাই আসছে কপালে ফোঁটা দিয়ে মাথায় দুবলা দিয়ে আশীর্বাদ করে গায়ে হলুদ মাখিয়ে যাচ্ছে। দেখতেই দেখতে কলসির জলে হলুদের গোসলে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
—আয়নার সামনে এসে অরুনিকা নিজের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। হলুদের গোসল এর পর নাকি মেয়েদের রূপ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। অরুনিকা মনে মনে ভাবে তার রূপ তো আগের মতোই আছে। ফোনের রিংটোনে অরুনিকার ভাবনায় ছেদ পড়ে। আভা কল করেছে।
—হ্যালো, হ্যা আভা বল।
—দি-ভাই তুমি এখনি সঞ্জীবনী ক্লিনিকে যাও। অপরা দিদির অবস্থা ভালো না।
—অপরার কথা শুনেই রিতিকা আৎকে উঠে। কি হয়েছে অপরার?
—অপরা দিদির হাসবেন্ড কর্ণভ উনাকে অপহরণ করেছিল। ছয় মাসে অপরা দিদির উপর শারীরিক নির্যাতন করে পাষন্ডটা দিদিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। রণক-দা মেসেজ এসেছিল, অবস্থা ভালো না।
—অরুনিকা কেঁদে ওঠে হু হু করে। ফোন কেটে দিয়ে দৌড়ে যায় তপন এর কাছে।
—অরুনিকা'কে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে দেখে তপন জিজ্ঞেস করে। কি হয়েছে অরুনিকা?
—অরুনিকা কথা বলতে পারে না। হাউমাউ করে শুধু কাঁদতে থাকে।
—অরুনিকা শান্ত হও, লম্বা নিশ্বাস নাও। এখন ধীরে ধীরে বলো, কি হয়েছে?
—অরুনিকা ঢুকি চিপে বলে, অপরা'কে পাওয়া গেছে। সঞ্জীবনী ক্লিনিকে ভর্তি। আমাকে নিয়ে চলুন ওখানে প্লিজ।
—হ্যা, আমি জানি অপরা'কে খুঁজে পাওয়া গেছে।
—কি বললেন আপনি? আপনি জানতেন কিন্তু আমাকে বলেননি? আপনি কীভাবে জানালেন অপরা'কে পাওয়া গেছে?
—আজ সকাল থেকেই অপরা'কে উদ্ধার করার নিউজ সব চ্যালেনে দেখাচ্ছিল। আপনাকে বলার জন্য গিয়ে ছিলাম। পড়ে লতিকার কথা উঠল। লতিকার কথা বলতে বলতে হটাৎ মনে হলো। আপনাকে বললে আপনি ক্লিনিকে যেতে চাইবেন। আজ আমাদের বিয়ে। এমন শুভক্ষণের আগে প্রস্টেটিউট কে দেখতে যাওয়ার মানে হয় না। ইনফ্যাক্ট আমি এটাও জানি ওকে খুঁজে বের করেছে মিস্টার রণক সেন। ওখানে তো রণক আছেই আপনার যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বিয়েটা হয়ে যাক আগামীকাল যাবো আমরা।
—তপন!আপনি কি বুঝতে পাচ্ছেন! কি বলছেন আপনি? শুভক্ষণে প্রস্টেটিউট কে দেখতে যাওয়ার মানে হয়না? আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আমিও প্রস্টেটিউট। শুভক্ষণে আপনি একজন প্রস্টেটিউট এর সাথেই সম্পর্কে বাঁধা পড়তে যাচ্ছেন মিস্টার তপন ব্যানার্জি।
— কামডাউন অরুনিকা আসতে কথা বলুন। নিজেকে বারবার প্রস্টেটিউট বলা বন্ধ করুন। আপনি আমার ওয়াইফ হতে চলেছেন। অতীত কি ছিল তা এখন ভাববার বা বলার কোন মানেই হয় না।
—অরুনিকা আর কথা বলে না। হনহনিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে। সে অপরা'র কাছে যাবে৷ কোন শুভক্ষণ অরুনিকা'কে অপরার কাছে যেতে আটকাতে পারবে না। ভরা বিয়ের বাড়ি থেকে কাঁদতে কাঁদতে অরুনিকার হনহনিয়ে বেড়িয়ে যাওয়া দেখে তনশ্রী ছুটে যায় তপনের কাছে।
—তপন বাবা লতিকা বৌমার কি হয়েছে? কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে গেল।
—তপন কি বলবে ভেবে পায় না। তারপর আরও একটি মিথ্যা কথা সাজিয়ে বলে। মা লতিকা চার্চে গেল। ওদের নিয়ম বিয়ের আগে চোখে জল নিয়ে চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করার।
—তপনের কথা শুনে তনশ্রী ব্যানার্জি অবাক হয়ে যায়। এমন অদ্ভুত নিয়ম কোন ধর্মে থাকতে পারে তার জানা ছিল না। কিন্তু তপন!
—মায়ের কথার মাঝেই আটকে দিয়ে তপন বলল, তুমি চিন্তা করো না মা। লগ্নের আগেই আমি ওকে নিয়ে ফিরে আসবো। এই বলেই তপন নিজেও বেড়িয়ে যায়। তনশ্রী ব্যানার্জি ছেলেকে বিশ্বাস করে তাই আর কোন দুশ্চিন্তা না করে বিয়ের আয়োজনে মন দেয়।
—অরুনিকা পেছনে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে। অনিচ্ছা স্বত্তেও তপন গাড়ী ড্রাইভ করছে। দুপুর দুটো নাগাদ ক্লিনিকে পৌঁছায় অরুনিকা। রিসেপশনিস্ট এর কাছ থেকে অপরার কেবিন নাম্বার শুনে নিয়ে দৌড়ে যায় অরুনিকা। তপন মুখ মাস্ক লাগিয়ে পেছন পেছন যায়।
—অপরার হাত ধরে বসে আছে রণক। চোখ জলে ভরে উঠেছে। টুপ করে এই বুঝি চোখ গড়িয়ে গাল বেয়ে নামবে জল। ছয় মাস আগে যাদের রণক চিনতেও না। পতিতা নামেই ঘৃণা করতো। আজ একজন পতিতার জন্যই কষ্ট পাচ্ছে। রণক বলে অপরা এট লিস্ট আপনি আমাকে ছেড়ে যান না। রিতিকা চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারি ওর মূল্য কতটা। ওর কর্ম যাইহোক না কেন ও ছিল প্রকৃত পক্ষে মানুষ। মানুষ যে মানুষের জন্য ওর থেকে আমি শিখেছি। অপরা আপনি জানেন না উষা বেঁচে নেই। ওরা ওকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলেছে। আমার বোন'কে আমি রক্ষা করতে পারিনি।
—অপরার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। উষার সাথে মিলনের পর অপরা ওকে ভালোবেসে ফেলে। মৃত্যুর দোরগোড়ায় এসে ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুর খবর জানতে পেরে কোটরাগত চোখ জলে ভরে ওঠে।
রণকের দিকে চেয়ে অপরা অস্ফুটস্বরে বলল। অরুনিকা বেঁচে আছে।
—রণকের কানে অপরার কথা পৌঁছায় না কিন্তু পেছনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে অরুনিকা দাঁড়িয়ে। রণক নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। অরুনিকা কে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা সে।ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে অরুনিকা'কে।
—তুমি বেঁচে আছ অরু? আমরা ভেবেছিলাম তুমি বেঁচে নেই। আভা কি জানে তুমি বেঁচে আছ? কোথায় ছিলে এতো দিন বলো অরু।
—তপন এসেই এক ধাক্কায় রণক'কে দূরে ঠেলে দিয়ে বলল। আমার উড বি ওয়াইফ এর সাথে অসভ্যতামি করার সাহস কি করে হয় আপনার?
—অরুনিকার এইসবে কোন খেয়াল নেই সে ধীর পায়ে অপরার কাছে যায়। বেডে অপরার কঙ্কালসার দেহ দেখে অরুনিকার চোখ আবারো জলে ভরে ওঠে।অপরার কপালে, গালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে অরুনিকা। আমাকে ক্ষমা করে দে বোনু তোর পাশে থাকতে পারিনি। কর্ণভ'কে ছাড়বো না আমি। ওর শাস্তি নিজ হাতে দিব আমি। তুই দেখবি বোনু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ। আমরা এক সাথে থাকব আর কখনো আলাদা হব না বোনু।
—তপনের কথা রণক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল। আপনি কি বললেন? অরুনিকা আপনার উড বি ওয়াইফ? এই বলে রণক অরুনিকার দিকে তাকায়। অরুনিকার শরীরের পোষাক ভদ্র সমাজের মেয়েদের। শাড়িতে কি অপরূপ সুন্দর লাগছে ওকে। রণকের মনে প্রশ্ন উঠে। সে যখন জীবিতই ছিল তাহলে কেন যোগাযোগ করেনি। তবে কি ভদ্র সমাজে মুখোশের আড়ালে থাকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
—রণক অধিকার ফলিয়ে উচ্চ স্বরে অরুনিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। এতোদিন কোথায় ছিলে অরু? এই ভদ্রলোক যা বলছে তা কি সত্য? যদি সত্যই হয়ে থাকে তাহলে এতোদিন পর ফিরে এসে মৃত প্রায় মানুষের সঙ্গে অভিনয় করে কথা বলতে হবে না তোমার।
অরুনিকা কোন প্রশ্নের উত্তর দেয় না। সে অপরার হাত ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকে।
—অরুনিকা কে দেখে অপরার শুকনো ফাঁটা ঠোঁটজোড়ায় হাসি ফুটে ওঠে। বিড়বিড় করে বলে, তুই বেঁচে আছিস কর্ণভ এর মুখে এই খবর জানবার পড়ে আমার নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে করছিল। আমি এক গ্লাস জল চাই ও আমার মুখের উপর ঢেলে ফেলে দেয় জল। ওকে মাফ করবি না। তুই ওকে নিজ হাতে মারবি। ওকে তুই মারলেই আমার আত্মা শান্তি পাবে।
—তুই বেঁচে থাকবি বোনু। তোর সামনেই ওকে মারব। ।
—ডক্টর অদিতি কেবিনে ঢুকে।
—ডক্টর অদিতি'কে ঢুকতে দেখে তপন ধীর পায়ে বেড়িয়ে যায় চোরের মত। রণক বাইরে এসে দাঁড়ায়। দুজন নার্স ভেতরে ঢুকে।
—অরুনিকা'কে দেখে ডক্টর অদিতি বলে, কেমন আছেন মিস রিতিকা? অনেক দিন হল আপনার দেখা নেই। দেহ পসারিণী পেশা ছেড়ে দিয়েছেন নাকি? কথা বলতে বলতে নার্স' এর দিকে তাকিয়ে বলল। দাঁড়িয়ে আছো কেন? রুগীর আরও একবার যোনি ওয়াশ করে দিও।
—নার্স দুটি বলল, ম্যাম উনার শরীর এর কাছে যাওয়া যায় না দুর্গন্ধ ।
—ডক্টর অদিতি চেঁচিয়ে বলল, রুগীর সেবা করতে পারবে না, নার্স এর চাকরি কেন নিয়েছ? তোমার মুখ দেখে কি এখানে মাইনে দেওয়া হয়?
To be continued.....
গল্প: নিষিদ্ধ নারী (প্রেম কাহিনী)
পার্ট:-০৮
লেখনীতে: সামিনা সামি
0 Comments