Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পরাণ দিয়ে ছুঁই - পর্ব ৪

প্রচন্ড জ্বরে কয়েকদিন ভোগেছে নূর। দুই দিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। জ্বরে কাবু করে নিয়েছিল নূর কে। এখন সুস্থ আছে মোটামুটি। পরিবারের সকলেই নূর কে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলো।মেয়ে টা কয়েকদিনের জ্বরে শুকিয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করতে পারে নি।
সকাল থেকে ইসরাত ফোন দিয়ে চলেছে নূর কে। কলেজে গিয়ে এডমিট কার্ড আনতে হবে আজ। কিন্তু মেয়েটা ফোন রিসিভ করছে না। হয়তো সাইলেন্ট করে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে। কলেজে যে যেতে হবে ভুলে খেয়ে নিয়েছে হয়তো।
নূর জানালার ধারে বসে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। এরমধ্যে তূর রুমে আসে।
এই আপু তুই এখানে বসে কি ভাবছিস বল তো। ইসরাত আপু সেই কখন থেকে তোকে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে, সেই খেয়াল কি আছে তোর?
ইশু কল দিচ্ছে কেন?


আমি কি জানি তুই জিজ্ঞেস কর।নে লাইনে আছে ধর বলেই নূরের হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়।
নূর কানে ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে গা'লি'গা'লা'জ ভেসে আসে। নূর চোখ মুখ কোচকে চুপ করে থাকে। কিছু সময় যাওয়ার পর ইসরাত থামে। হাঁপিয়ে গেছে সে।
পানি খেয়ে আয়।
হ্যা দাড়া দোস্ত তোর জন্য আমার গলা শুকিয়ে গেছে।
নূর ইসরাতের কথায় মুচকি হাসে।
ইসরাত গিয়ে পানি খেয়ে আসে।
হ্যালো দোস্ত।
'এবার বল কি হয়েছে? '
-- আজ কতো তারিখ?
-- এটা জানার জন্য তুই আমাকে কল দিয়েছিস?
ক্যালেন্ডার নাই? ফোনেও তো আছে দেখে নিলেই হতো।
ওরে আল্লাহ। তোর এতো ভুলো মন কবে থেকে হলো? আজ আমাদের এডমিট আনতে হবে।
ইয়া আল্লাহ আমি একদম ভুলে গেছি ইশু।
-- আমি জানতাম।
-- আমি জানতাম তুই ভুলে খেয়ে বসে আছিস।
-- তুই রেডি হয়ে গেছিস?
নাহ এখনই হবো।রেডি হওয়ার আগে তোকে জানিয়ে নিলাম।
খুব ভালো কাজ করেছিস দোস্ত। আমি এখনই রেডি হচ্ছি। তুই রেডি হয়ে আমাদের বাড়িতে আয়।
আচ্ছা আমি এখনি আসছি।
আচ্ছা।
--------------------------------
ইসরাত আর নূর কলেজ থেকে এডমিট কার্ড কালেক্ট করে নেয়। নূর চেয়েছিলো বাড়ি চলে যাবে কিন্তু ইসরাতের জন্য পারে নি। সে নাকি একটু কেনাকাটা আর ফুচকা খাবে। নূরের কোনো কথা শুনেনি।জোর করে শপিং করতে নিয়ে যায়।
কেনাকাটা করে বেরিয়ে রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটতে থাকে। ফুচকার দোকানে যাবে ফুচকা খেতে।
এরমধ্যে নূরের ফোন বেজে উঠে। ব্যাগ থেকে নিয়ে দেখে তার মা ফোন দিয়েছে।
হ্যা মা বলো।
নূর কোথায় আছিস তুই? আর কতক্ষন লাগবে?
এডমিট নিয়ে ফেলেছি। বাড়ির কাছেই আছি একটু পর চলে আসবো।ইসরাত নাকি ফুচকা খাবে।
আচ্ছা খেয়ে আয় সমস্যা নেই। কিন্তু রোদে দাঁড়িয়ে থাকিস না।কিছুদিন হলো জ্বর থেকে উঠেছিস।আবার আসবে কিন্তু রোদে থাকলে।
আচ্ছা মা রোদে থাকবো না।
ইসরাত ফুচকার দোকানে গিয়ে ফুচকা অর্ডার দেয় দুই প্লেট। নূর কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতেছিলো। কথা শেষ করে ইসরাতের পাশে এসে দাঁড়ায়। ইসরাত ফুচকা গুলো একটু ঝাল দিয়ে বানানোর কথাই বলেছে। নূর যে কম ঝাল খায় সেটা ভুলেই গেছে। নূরের ও মনে ছিলো না ঝাল কম দেওয়ার কথা। নূর ভেবেছে ইসরাত ফুচকা ওয়ালা মামা কে আগেই বলে দিয়েছে ঝাল কম দেওয়ার কথা।
ফুচকা দিলে দুইজন ই বসে খাওয়া শুরু করে। নূর একটা মুখে দিয়েই থোম মে'রে থাকে। ইসরাতের দিকে একবার তাকিয়ে অনেক কষ্টে মুখের ফুচকা টা শেষ করে। চোখ মুখ ইতিমধ্যে লাল হয়ে গেছে। চট করে ফুচকার প্লেট রেখে উঠে পরে। এইদিক ঐদিক তাকিয়ে হাত দিয়ে বাতাস করতে থাকে।
নূর,,,,এই নূর কি হয়েছে তোর? খাওয়া রেখে উঠে পরলি কেন?
নূর কিছু বলছে না ছটফট করতে থাকে শুধু।
ইসরাত নূরের কান্ড দেখে নিজের প্লেট রেখে উঠে দাঁড়ায়। নূরের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে।
এই নূর তোর মুখে কি হয়েছে?
ইশু,,, পা-পানি দে।
ইসরাতের এতোক্ষনে খেয়াল হয় সে কি করেছে। নূরের যে ঝাল খেতে পারে না সেটা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।
তারাতাড়ি গিয়ে ব্যাগ থেকে পানি নিতে গিয়ে দেখে বোতল পুরো খালি।পানির ছিটে ফোটা ও নেই।
ফুচকা ওয়ালা মামা কে বলে পানি দিতে।
নূর হাত দিয়ে মুখে বাতাস করছে চোখ দিয়ে তার টপটপ করে পানি ঝড়ছে। এরমধ্যে কেউ পিছন দিক দিয়ে জামায় ধরে টান দেয়।
নূর পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বোঝার আগেই হাত ধরে টান দেয় বসার জন্য। নূর হাঁটু মুড়ে বসে। মেয়েটা নিজের গলা থেকে ওয়াটার বোতল টা নিয়ে নূরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,,, খেয়ে নাও এটা।
নূর ঝালের কথা ভুলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটা গম্ভীর গলায় বলে,,,
কি হলো খাচ্ছো না কেন? আমি মুখে লাগিয়ে খাইনি।খেতে পারো।
নূর কিছু না ভেবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে পানি খেয়ে নেয়। কিছু সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। তারপর মেয়েটার দিকে তাকায়। কি মিষ্টি দেখতে মেয়েটা। কিন্তু মুখটা কেমন গম্ভীর করে রেখেছে। মনে হচ্ছে মুরব্বি।নূর মেয়েটার হাত ধরে নিয়ে চেয়ারে বসায়।
তোমার নাম কি বাচ্চা?
আমি বাচ্চা না।
নূর ইসরাতের দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে ইসরাত ও মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আচ্ছা। এবার বলোতো তোমার নাম কি?
আমার নাম ফাতিহা ওয়াহিদ।
ওয়াও কি সুন্দর নাম ঠিক তোমার মতো।
-- হুম সবাই তাই বলে।
ইসরাত মনে মনে বলে,, বাপরে কি ভাব এই বাচ্চা মেয়ের।
তুমি এখানে কার সাথে এসেছো? আর তোমার সাথে লোক কোথায়?
আমি স্কুলে এসেছি। আর আমার সাথে ড্রাইভার আংকেল আছে। ঐযে ঐ পাশে।ফাতিহা হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
নূর চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
তাহলে তুমি ঐপাশে না দাঁড়িয়ে এখানে কি করছো?
---- আমি গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখি তুমি ঝালে কেমন করছো। তাই আমার কাছে পানি ছিলো তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।
তারপর চলে যেতে নিয়ে পিছনে ফিরে বলে উঠে যেটা খেতে পারো না সেটা কেনো খাও?
নূরের কেন যেনো বাচ্চাটা কে খুব ভালো লেগেছে। তাই বলে দাঁড়াও একটু।
ফাতিহা দাঁড়ায়। নূর গিয়ে ফাতিহার গালে একটা চুমু খায়। তুমি অনেক ভালো তিহা বেবি।
ফাতিহা কিছু না বলে নূরের দিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি চলে যায়। নূর কিছুই বুঝলো না হুট করে কি হলো। এটা নিয়ে আর মাথা ঘামায় নি। দুইজন ই বাড়ির উদ্দেশ্য হাঁটা দেয়।
এরমধ্যে তালহা স্যারের ফোন আসে।নূর রিসিভ করতেই বলে ওদের বাসায় গিয়ে যেনো দেখা করে জরুরি কিছু নোটস দিবে। তাই বাড়িতে না গিয়ে তালহাদের বাসার উদ্দেশ্যে যায় দুইজন।
তালহাদের বাড়ির সামনে এসেই দুইজন কলিং বেল এ চাপ দিয়ে থামে। তারপর দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে। ওদের জানা আছে এখন কে এসে দরজা খুলবে।
দরজা খোলার শব্দ পেয়েই নূর সামনে দাঁড়িয়ে ভাউউউ করে উঠে।বাচ্চাদের সাথে সে নিজেও বাচ্চা হয়ে যায়।
এরমধ্যে কারো কথা শুনে যেনো রোবট হয়ে যায় নূর।
"একদম খা'মচি দেওয়ার চেষ্টা করবে না। এইবার আর ছেড়ে দিবো না। নখ সহ আঙ্গুল কে'টে ফেলবো।"

"একদম খা'মচি দেওয়ার চেষ্টা করবে না। এইবার আর ছেড়ে দিবো না।নখ সহ আঙ্গুল কে'টে ফেলবো।"
নূর আর ইসরাত সামনে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তার মানে তারা যাকে ভেবেছে সে দরজা খুলেনি।খুলেছে সৌন্দর্য। নূর হাত সামনে নিয়ে যে ভাউউ বলে ছিলো সামনে তাকিয়ে সৌন্দর্য কে দেখে একই ভাবে আছে।
স'রি স্যার আমরা বুঝতে পারিনি আপনি দরজা খুলবেন।আসলে হয়েছে কি আমরা ভেবেছি তালা স্যার না মানে ইয়ে তালহা স্যারের ভাতিজি দরজা খুলে দিবে। আমরা আরো কয়েকবার এসেছি সে দরজা খুলে দিয়েছে তো,তাই ভাবলাম এবার ও বুঝি দরজা খুলবে।
ইসরাত কথা গুলো বলে সৌন্দর্যের থেকে দৃষ্টি সরায়। তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে নূরের হাতগুলো নিচে নামায়।
নূর খুব অস্বস্তি তে পরে যায়। মনে মনে তার একটাই প্রশ্ন কেন,কেন কেন? এই লোকটার সামনেই কেন এমন হতে হবে? পৃথিবীতে তো কতো লোক আছে ওদের সাথে তো এমন কিছু হয় না। তাহলে এই লোকটার সামনেই কেন।
এরমধ্যে পিছন থেকে তালহা বলে উঠে, কিরে সৌন্দর্য দরজা খুলতে এসে তুই দেখি এখানেই পরে আছিস। কে এসেছে? বলেই সৌন্দর্যর পিছন থেকে উঁকি দিয়ে দেখে দরজার বাইরে নূর আর ইসরাত দাঁড়িয়ে আছে।
ওহ তোমরা এসে গেছো? ভিতরে এসে বসো। এই সৌন্দর্য সাইড দে ওদের। দরজার সামনে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ওরা ভিতরে প্রবেশ করবে কিভাবে?
সৌন্দর্য তালহার কথায় সাইড হয়ে দাঁড়ায়।
ইসরাত ভিতরে আগে আগে ঢুকে পরে।পিছন পিছন নূর গুটি গুটি পায়ে যায়।
ইসরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে নূর বলে,, ইশু এমন ভাবে কেউ ভিতরে ঢুকে নাকি? কি ভাব্বে উনারা লজ্জা শরম নেই তোর।
চুপ যা বোন। নিজের শ্বশুর বাডিতে আবার কিসের লজ্জা শুনি?
---" শ্বশুর বাড়ি মানে?"
--- শ্বশুর বাড়ির মানে জানিস না? এটা তো তালহা স্যারের বাড়ি। আর উনি তোর দুলাভাই। বলেই ওড়নার কোনা টা দুই হাতে কচলাতে কচলাতে লাজুক হাসে যেনো সে লজ্জা পেয়েছে খুব।
ওদের কথার মাঝখানেই তালহা বলে,,তোমরা একটু বসো। আম্মু বাড়িতে নেই।ভাবিকে নিয়ে একটু বেরিয়েছে। দাদি আছে তবে উনি ঘুমোচ্ছে। আমি একটু রান্না ঘরে ছিলাম।
ইসরাত ভালো করে তালহার দিকে তাকিয়ে দেখে কপালে আর গালে আটা লেগে আছে। দেখেই ফিক করে হেসে দেয়।
ইসরাতের হাসি দেখে সকলেই ইসরাতের দিকে তাকায়। নূর হাত দিয়ে খোঁচা দেয় যেনো না হাসে। এরমধ্যে পোড়া গন্ধ এসে নাকে লাগে। তালহা স্যার মনে হচ্ছে কিছু পুড়ে যাচ্ছে। কেমন পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।
তালহার এতক্ষনে মাথায় আসে সে চুলায় সিঙ্গারা ভাজতে ছিলো।কড়াইয়ে দিয়ে ও এসেছে।
ওহ নো আমিতো সিঙ্গারা দিয়ে এসেছি বলেই তালহা দৌড় দেয় রান্না ঘরে।
সৌন্দর্য চুপ করে পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ইসরাত আর নূর সোফায় বসতে যাবে এমন সময় রান্না ঘর থেকে তালহা স্যারের চিৎকার শুনে আর ওদের বসা হয় না। সকলেই রান্না ঘরের দিকে ছুটে।
সিঙ্গারা পুড়ে যাওয়ায় তালহা ভুলবশত তারাতাড়ি করে হাত দিতে গিয়ে হাতে ছেঁকা খায়।
নূর,ইসরাত আর সৌন্দর্য রান্না ঘরে গিয়ে দেখে হাত ধরে তালহা লাফালাফি করছে।
ইসরাত তালহা কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। কি হয়েছে আপনার স্যার? লাফালাফি করছেন কেন? আপনি ঠিক আছেন?
তালহা কিছুই বলছে না।
এবার সৌন্দর্য ব্রু কোচকে বলে, তোর ব্যাঙের মতো লাফালাফি শেষ হলে বলবি কি হয়েছে? আমাদের বললে খুবই উপকার হতো।
হাতে গরম ছেঁকা লেগেছে ভাই।
ইসরাত তালহার কথা শুনে কাউকে পরোয়া না করে তালহার হাত ধরে টেনে বসার ঘরে নিয়ে যায়। তারপর টেবিল থেকে গ্লাস এনে হাত টা ডুবিয়ে দেয়। তালহা কে জিজ্ঞেস করে ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে এসে বার্ণ ক্রিম লাগিয়ে দিতে থাকে হাতে। সৌন্দর্য বসার রুমে এসে দেখে ইসরাত সুন্দর করে চিকিৎসা করছে তার বন্ধুর। তালহা চুপচাপ শুধু দেখে চলেছে কিছু বলছে না।
সৌন্দর্য ওদের সামনের সোফায় বসে পরে।
নূর রান্না ঘরেই আছে। রান্না ঘর কে যাচ্ছেতাই অবস্থা করে ফেলেছে। এসব নূরের একদম ভালো লাগছে না। হাতের ব্যাগটা সোফাতেই আছে। নূর আর কিছু না ভেবে আগে চুলার আগুন টা নিভিয়ে ফেলে। তারপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব কিছু এক-এক করে গোছাতে থাকে। সব কিছু গোছানো শেষ করে। পোড়া সিঙ্গারা গুলো তুলে ফেলে দেয়। তারপর নিজে বানাতে থাকে। সাথে কফিও বসিয়ে দেয়।
তালহা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলে,,নূর কোথায় চলে গেলো?
ইসরাত ও তাকিয়ে দেখে নূর নাই।তাই ডাক দেয় নূর কোথায় তুই?
নূরের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে তালহা আর ইসরাত দেখতে যায় কোথায় আছে। গিয়ে দেখে রান্না ঘরে। তালহা অনেক করে বারণ করেছে এসব করতে হবে না। কোনো দরকার নেই এসবের কিন্তু তালহার কথা নূর শুনেনি।বেশি সময় লাগবে না হয়ে গেছে প্রায়। আর ওর রান্না করতে ভালোই লাগে। অগত্যা কি আর করার তালহা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসে। ইসরাত নূরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
তালহা বের হয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। সৌন্দর্য যেখানে বসে আছে সেখান থেকে রান্না ঘর পুরোটা দেখা যায়। তালহা গিয়ে সৌন্দর্যের পাশে বসে। তারপর কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,,, আমি তোর মতিগতি কিছু বুঝতে পারছি না ভাই।
কিসের মতিগতি?
এইযে আমরা নূর কে খুঁজতে ছিলাম।তোর এখান থেকে সব দেখা যাচ্ছে নূর কি করছে।এখন এটা বলিস না তুই দেখিস নি। তাও তুই আমাদের বলিস নি।আর না তাকে আটকেছিস।
আমি আটকাবো কেন?
কি ধরনের কথা বলিস তুই সৌন্দর্য?
কিছুই না শা/লির হাতের রান্না খাওয়ার সুযোগ পেলি তাই আর কিছু বলিনি।
তুই মুখে এটা বললেও তোর মুখের এক্সপ্রেশন অন্য কিছু বলছে।সে যাই হোক।
নূর হাতে কফি আর ইসরাত সিঙ্গারা নিয়ে আসে।এনে টেবিলের উপর রাখে।হাত দিয়ে ইসরাত বাতাস করতে করতে তালহার দিকে তাকিয়ে বলে,, মানবতা আজ কোথায় ছাত্রীদের ডেকে এনে কাজ করায়।
তুমি কি কাজ করেছো শুনি? সব তো নূরই করলো।
আমার টা এমনিতেও চোখে পরবে না। এই যে সিঙ্গারা গুলো এনে দিলাম রান্না ঘর থেকে এটা কি কাজ না?
ইসরাতের কথা শুনে সৌন্দর্য শব্দ করে হেসে উঠে। তালহা আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। নূর মিটমিটিয়ে হাসছে। সৌন্দর্যের হাসির শব্দে আড় চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। কিছু সময় তাকিয়ে থেকে সন্তর্পনে নিজের চক্ষুদ্বয় সরিয়ে নেয়।
নূর এবার মিনমিনিয়ে বলে,,, সবাই কফি নিন নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে। তারপর নিজেই একে একে সবার হাতে তুলে দেয়।সৌন্দর্য কে নিজে দিবে নাকি টেবিলে রেখে দিবে বুঝতে পারে না নূর। নিজে না দিলে কেমন দেখায় সকলেইতো হাতে হাতে এগিয়ে দিয়েছে। তাই একটু ইতস্তত বোধ হলেও সৌন্দর্য কে কফির কাপ টা বাড়িয়ে দেয়।
সৌন্দর্য বাধ্য ছেলের মতো কফি নিয়ে চুমুক বসায়।এর মধ্যে ফোন টা বেজে উঠে। পকেট থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখে বাড়ি থেকে ফোন এসেছে। কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে সৌন্দর্যের দাদি বলে উঠে,,
দাদু ভাই কোথায় তুই?
"কেন দাদি কি হয়েছে? আমি তো তালহার বাড়িতে। "
-- এখনই বাড়িতে আয় দাদু ভাই। ফাতিহা সেই স্কুল থেকে এসে দরজা লাগিয়ে বসে আছে। কিছুতেই খুলছে না।ডাকলাম সারা ও দিচ্ছে না। আমার খুব ভয় হচ্ছে দাদু ভাই। বাড়িতে কেউ নেই ও।
হোয়াটটট? এসব তুমি কি বলছো? আমি এখনই আসছি।কল টা কেটেই সৌন্দর্য কফির কাপটা টেবিলে রেখে উঠে পরে। যেতে যেতে তালহা কে বলে,,,আমার জরুরি কাজ আছে। আমি তোর সাথে পরে কথা বলে নিবো। বলেই সৌন্দর্য বেরিয়ে যায়।
সকলেই হুট করে কি হলো বুঝলো না। চিন্তিত ভঙ্গিতে সৌন্দর্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়।
আধা ঘণ্টার রাস্তা সৌন্দর্য মনে হয় দশ মিনিটে পারি দিয়েছে। কিভাবে যে সে গাড়ি চালিয়েছে শুধু সেই জানে।
গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে। সৌন্দর্যের দাদি তার অপেক্ষাতেই ছিলো। সৌন্দর্য কে ফাতিহার রুমের দিকে দৌড়ে যেতে দেখে নিজেও পিছনে পিছনে যায়।
দরজার সামনে গিয়ে টোকা দিয়ে ডেকে উঠে,,
"মাম? এই মাম দরজা খুলো ভিতরে কি করছো? দেখো আমি ডাকছি তো।তোমার ছেলে তোমাকে ডাকছে।"
ফাতিহা কোনো সারা শব্দ করে না।
সৌন্দর্য দাদির দিকে তাকিয়ে আবার ডাক দেয়। মাম আমি বাইরে থেকে এসেছি।খুব পানি পিপাসা পেয়েছে আমার পানি দিবে না?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
মাম আমি কিন্তু কষ্ট পাচ্ছি। সৌন্দর্য আবার দরজা টোকা দিতে যাবে এরমধ্যে দরজা খোলার আওয়াজ পায়। সৌন্দর্য স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। দাদিকে চোখের ইশারায় আস্বস্থ করে রুমের ভিতর ঢুকে।
ফাতিহা দরজা খুলে আবার বিছানায় চলে গেছে। সৌন্দর্য ফাতিহার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
মাম কি হয়েছে তোমার?
"সামওয়ান কলিং মি তিহা মি.ওয়াহিদ। "


চলবে,,,,,,,,,

গল্প: পরাণ দিয়ে ছুঁই
#পর্ব_
লেখনীতে: ঝর্ণা ইসলাম

আসসালামু আলাইকুম। সকলে রেসপন্স করবেন।

Post a Comment

0 Comments