Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পরাণ দিয়ে ছুঁই - শেষ পর্ব

 "সামওয়ান কলিং মি তিহা মি. ওয়াহিদ।"

হোয়াট মাম?
ফাতিহা এবার চোখ তুলে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। তারপর ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,, একটা আন্টি আজ আমাকে তিহা বলে ডেকেছে।সাথে আমার গাল ও টেনে দিয়েছে।এই দেখো এইভাবে বলেই ফাতিহা নিজের গাল ধরে টেনে সৌন্দর্য কে দেখাতে থাকে।
সৌন্দর্য এতো সময় ব্রু কোচকে ফাতিহার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ফাতিহার গাল টানা দেখে নিজের হাসি টা অনেক কষ্টে দ'মিয়ে রেখেছে। এখন একদম হাসা যাবে না। নয়তো ফাতিহা বুড়ি বো*ম হয়ে সব উড়িয়ে দিবে। তাই কিছুতেই হাসা যাবে না। সৌন্দর্য মনে মনে বুলি আওড়াচ্ছে কনট্রোল সৌন্দর্য কনট্রোল।
ফাতিহা বসে বসে নাক টানছে একটু পর পর। সৌন্দর্য উঠে গিয়ে টিস্যু বক্স নিয়ে আসে।
"মাম এখানে আসো আমার কাছে। তোমার ঠান্ডা লেগে গেছে। এতো কেউ কাঁদে? "
--- আমাকে তিহা বলেছে আর আমি কাঁদবোনা?


-- তোমার ঐ আন্টি টা হয়তো জানতো না তুমি তিহা বলা একদম পছন্দ করো না। বা ইমোশনাল হয়ে যাও। আচ্ছা তুমি বলোতো ঐ আন্টিটার কি কোনো দোষ আছে এখানে?
উহুু।
এটাই তো সে না বুঝে তোমায় বলে ফেলছে।এতে কারো কোনো দোষ নেই। আর তোমাকে নিজেকে অনেক শক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। নিজে এভাবে ভেঙে পরলে চলবে? তুমি না আমার ব্রে'ভ গার্ল?
ইয়েস।
এখন এইদিকে আসো আমি নাক পরিষ্কার করে দিচ্ছি। তুমি কথা বলতে পারছো না। সৌন্দর্যের কথায় ফাতিহা লাফ দিয়ে এসে সৌন্দর্যের কোলে বসে। সৌন্দর্য সুন্দর করে এক হাতে ফাতিহা কে আগলে ধরে আরেক হাত দিয়ে ফাতিহার নাক পরিষ্কার করে দেয়। স্কুল থেকে এসে ফ্রেশ ও মনে হয় হয়নি মেয়েটা।চুলগুলো সব অগোছালো হয়ে আছে। সব চুল নিজের হাতে সৌন্দর্য ঠিক করে দেয়। আসো আমি ফ্রেশ করিয়ে দিচ্ছি। ফাতিহা কে নিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে দাদি কে কল দিয়ে বলে যায় ফাতিহার জন্য খাবার পাঠানোর জন্য।
সৌন্দর্য ফাতিহা কে ফ্রেশ করিয়ে রুমে এসে দেখে টেবিলের উপর খাবার রাখা। মনে হয় সার্ভেন্ট এসে দিয়ে গেছে। খাবার নিয়ে ফাতিহার মুখের সামনে ধরতেই সৌন্দর্যের ফোনে কল আসে।এক হাতে কল রিসিভ করে আরেক হাতে ফাতিহা কে খাওয়াতে থাকে। তালহা কল দিয়েছে। রিসিভ করতেই তালহা বলে উঠে,,, " কি হয়েছে সৌন্দর্য কিছুই তো বললি না।তখন অমন কল পেয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলি। বাড়িতে সব ঠিক আছে?
হ্যা সব ঠিকই আছে। তবে ফাতিহা,,,,,
ফাতিহা? কি হয়েছে ফাতিহার? ঠিক আছে তো??
-- আগে আমায় বলতে দে ইয়ার।এতো প্রশ্ন করছিস কেন?
--- আচ্ছা বল।
কার সাথে যেনো আজ দেখা হয়েছে। আর তিহা বলে ডেকেছে। তাই একটু ইমোশনাল হয়ে গেছে। তুইতো সব জানিস ই একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে সৌন্দর্য।
আহারে বাচ্চা মেয়েটা। এখন ঠিক আছে?
-- হুম।
এসবের চক্করে তোর সাধের সিঙ্গারা খাওয়া হলো না। আফসোস হচ্ছে কতো কিছু করলি সিঙ্গারা খাওয়ার জন্য। আমাকে জোর করে পাঠালি রান্না করতে। সব বাদ দিলাম নূর সিঙ্গারা বানালো তুই তো খেতেই পারলি না। কি টেস্ট ছিলো ভাই মুখে লেগে থাকার মতো।আমি এতো টেস্টি সিঙ্গারা আর খাইনি দোস্ত। উফফফ।
ভালো করেছিস। তুই কি ভেবেছিস এমন রস,কস লাগালে আমার লো'ল পরবে? হাউ ফানি!
তোর জন্য দুইটা তুলে রেখেছি, আজ কি আসবি? এসে খেয়ে যা। নাকি ফ্রিজে রেখে দিবো কোনটা?
শা,,,, সৌন্দর্য ব;কা দিতে গিয়ে ও থেমে যায়। কারণ ফাতিহা খেতে খেতে সৌন্দর্যের দিকেই তাকিয়ে আছে।
সৌন্দর্য নিজেকে সংযত করে মিনমিনিয়ে বলে,,, মজা করা বাদ দিয়ে ফোন রাখ।নয়তো তোর খবর আছে।
আমি মজা করিনি দোস্ত। আসলেই তোর জন্য আফসোস হচ্ছে এতো টেস্টি সিঙ্গারা খেতে পারলি না। আহারে,,,,
সৌন্দর্য তালহা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয়।
তুমি আমাকে না নিয়ে তালহা আঙ্কেলদের বাড়িতে গিয়েছিলে?
--- আমার একটু কাজ ছিলো মাম।
--- আমি খাবো না তুমি হাত সরাও। তুমি আমাকে না নিয়ে গেলে কেন?
-- মাম পুরো টা শেষ করো খাবার। আমি ঐদিক দিয়ে আসার সময়ে তোমার তালহা আঙ্কেল আমাকে টেনে নিয়ে গেছে। আর তোমার তো ক্লাস ছিলো।তুমি স্কুলে ছিলে কি করে নিয়ে যাবো বলো?
--আমি রে'গে আছি।
-- কি করলে রাগ ভাঙবে?
আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।
আচ্ছা।
পাক্কা?
হুম।তবে আজ না কাল নিয়ে যাবো।
ওকে। এন্ড লাভ ইউ মি.ওয়াহিদ।
লাভ ইউ টু মাম।
-----------------------------------------
সকাল সকাল তৈরি হয়ে সোফায় বসে পা নাচাচ্ছে ফাতিহা। সে ঘুরতে যাবে।কি আনন্দ লাগছে তার।অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয় না। আজ সে যাবে। কিন্তু অপেক্ষা তার সহ্য হচ্ছে না। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে সৌন্দর্যের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।
সৌন্দর্যের দাদি ফাতিহার পাশেই বসে বসে পানের বাটা নিয়ে পান বানাচ্ছে। ফাতিহা তার দিকে তাকিয়ে বলে,,,উফফ বুড়ি তোমার জামাই এখনো আসছে না কেন? এতো টাইম লাগে? দেখো সাজতেছে নতুন বউ পেয়ে যাবে আর তোমাকে ভুলে যাবে।
দিন দিন পেকে যাচ্ছিস ফাতু বুড়ি। তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই আমার থেকেও বয়সে বড়।
ফাতিহা মুখ ভেঙিয়ে অন্য দিকে তাকায়। এরমধ্যেই সৌন্দর্য গাড়ির চাবি হাতের আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে শিষ বাজিয়ে ফাতিহার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফাতিহা ঝটপট সোফায় উঠে দাঁড়ায়। সৌন্দর্য ঘুরে ফাতিহা কে কাঁধে তুলে নেয়। তারপর দুইজন চলে যায়।
গাড়ি নিয়ে সৌন্দর্য পার্কের ভিতর যাবে এরমধ্যে ফাতিহা হাওয়াই মিঠাই দেখে বায়না ধরে সে খাবে। যা বলবে বলবেই সৌন্দর্য বারণ করে ও মানাতে পারবে না। অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে যায় হাওয়াই মিঠাই আনার জন্য। যাওয়ার আগে ফাতিহা কে বারণ করে যায় গাড়ি থেকে নামতে। ফাতিহা সম্মতি দেয় সে গাড়ি থেকে নামবে না।
ফাতিহা একটা বাচ্চা কে দেখে সৌন্দর্যের বলা গাড়ি থেকে না নামার কথাটা ভুলে যায়।মিষ্টি বাচ্চা মায়ের কোলে থেকে খিলখিলিয়ে হাসছে। এটা দেখে নেমে আসে। মহিলাটার পিছন পিছন যেতে থাকে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরই বাচ্চাটা কে হারিয়ে ফেলে ফাতিহা।গাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ও এসে গেছে।
ফিরে আসার সময় দুই তিনটি কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে তাকিয়ে দেখে ওর দিকেই তে'ড়ে আসছে। ফাতিহা ভয় পেয়ে উল্টো দিকে দৌড়াতে থাকে। কিন্তু কুকুরের সাথে পেরে উঠছে না।
নূর আর ইসরাত কোচিং শেষ করে হেঁটেই বাড়ি ফিরছে।একটা বাচ্চাকে কুকুর দৌড়াচ্ছে এটা দেখে নূর দাঁড়িয়ে যায়। তারপর সে দৌড়ে যেতে থাকে। পিছন থেকে ইসরাত বারণ করছে যাওয়ার জন্য কিন্তু নূর শুনছে না। যেই মেয়ে টা দশ হাত দূরেও কুকুর দেখে ইসরাতের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে কিনা এখন দৌড়াচ্ছে।
নূর গিয়ে ফাতিহা কে কোমড় ধরে তুলে অন্য পাশে নিয়ে আসে।নিজেকে সামলাতে না পেরে ফাতিহা কে নিয়েই পরে যায়। ফাতিহা পাপ্পা বলে চিল্লিয়ে উঠে। নূর ফাতিহা কে ব্যাথা পেতে দেয়নি। দুইজন ই পরে গেছে। নূর একটু তাকিয়ে দেখে কুকুরগুলো ছুটে একটা ডাস্টবিনের কাছে চলে গেছে। এরমধ্যে সৌন্দর্য ও দৌড়ে এসে ওদের কাছে থামে। ফাতিহা কে প্রথমে নূরের উপর থেকে তুলে জিজ্ঞেস করে ঠিক আছে কিনা। ফাতিহা ভয়ে কিছু বলতে পারছে না শুধু কেঁপে চলেছে। সৌন্দর্য ফাতিহা কে বুকে জড়িয়ে নেয়। তারপর নূরের দিকে তাকায়। নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় উঠার জন্য। এরমধ্যে ইসরাত ও ওদের কাছে এসে পরে। সৌন্দর্য কিছু না বলে ইসরাতের কোলে ফাতিহা কে দিয়ে দেয়। নিচে বসে নূরের হাত ধরে তুলে।নূরের কুনোই ছিলে র/ক্ত ঝরছে। সৌন্দর্যের স্পর্শে নূর কেঁপে ওঠে। নিজেকে সরিয়ে নিতে চায় কিন্তু সৌন্দর্য ছাড়ে না। হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।
গাড়িতে বসিয়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নূরের পাশে বসে। ঔষধ দেখেই নূরের চোখের পানি ছলছল করতে থাকে। সৌন্দর্য তা ভালো করেই লক্ষ করে। চোখ দুটোকে মনে হচ্ছে কোনো গভীর সমুদ্র।
সৌন্দর্য মনে মনে আওড়ায়,," চোখ তো না যেনো কাউকে ধ্বং'স করার ক্ষে'প'ণা'স্ত্র। "

সৌন্দর্য খুব যত্ন সহকারে নূরের কুনোইয়ে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে। নূর প্রথমে লাগাতে চায় নি জ্বলুনির ভয়ে। সৌন্দর্যের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়।কিন্তু সৌন্দর্যের শক্তির সাথে নূর পেরে উঠে না তার উপর আবার এক ধমক খেয়েছে সৌন্দর্যের কাজে ব্যা'ঘা'ত ঘটানো তে। সৌন্দর্যের চোখ রাঙানিতে আর কিছু বলার সাহস পায়নি নূর।একবার অবশ্য অসহায় দৃষ্টিতে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে ছিলো এই আশায় ইসরাত হয়তো নূর কে এই জ/ল্লাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে।কিন্তু বেচারি ইসরাত নিজেই সৌন্দর্যের ধমক শুনে গলা শুকিয়ে গেছে। ভয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সৌন্দর্য হাতে লেগে থাকা র/ক্ত পরিষ্কার করে দিয়ে বেন্ডেজ লাগিয়ে দেয়। নিজের কাজ শেষ করে ইসরাতের কোলে গুটি শুটি মেরে বসে থাকা ফাতিহার দিকে তাকায়। ফাতিহা কে ইসরাতের কোল থেকে ফাতিহা কে নিয়ে চোখের ইশারায় গাড়িতে উঠতে বলে। ততক্ষণে নূর নেমে যেতে নেয়।
কেউ যেনো আমার পার্মিশন ছাড়া এক পা ও না নড়ে।গম্ভীর কন্ঠে বলা কথাটা নূরের অন্তরাত্না কাঁপিয়ে দেয়।
কন্ঠে কি যেনো একটা ছিলো নূর আর গাড়ি থেকে নামার মতো সাহস দেখায় নি।চুপচাপ গাড়িতে বসে।
ইসরাত ও তারাতাড়ি গিয়ে নূরের সাথে পিছনে গিয়ে বসে। সৌন্দর্য ওদের দিকে তাকিয়ে সামনের সিটে ফাতিহা কে বসিয়ে দেয়। মাথার চুল গুলো ঠিক করে কপালে অধর ছুঁইয়ে জানতে চায় পানি খাবে মাম?
ফাতিহা এখনো মৃদু কাঁপছে। সৌন্দর্য আশ্বাস দিয়ে বলে,, ভয় পায় না। তুমি না আমার ব্রেভ গার্ল? কিছু হয়নি সব ঠিক আছে।নিজেকে শান্ত করো।তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ফাতিহা কে পানি দেয়।ফাতিহা এক ঢুক খেয়েই রেখে দেয়। ফাতিহার জন্য কিনে আনা হাওয়াই মিঠাই সৌন্দর্য ফাতিহার হাতে দেয়। ঐসময় এগুলো এনে দেখে ফাতিহা গাড়িতে নেই। হাওয়াই মিঠাই গাড়িতে রেখে এদিক ওদিকে খুঁজতে থাকে। তারপর ফাতিহা কে কুকুরের থেকে বাঁচানোর জন্য দৌড় দিয়ে যাওয়ার আগেই নূর তাকে বাঁচিয়ে নেয়।
সৌন্দর্য একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তারপর ফাতিহা কে কোলে তুলে নিয়ে বলে,,,"মাম বি ইজি।"
আমি তোমাকে গাড়ি থেকে নামার কারণ বা ঐ জায়গায় পৌঁছানোর জন্য কিছুই বলবো না। সো কাপা-কাপি অফ করো।
নূর আর ইসরাত সামনে থাকা দুইজনের কথোপকথন নীরব দর্শক হয়ে শুনে ও দেখে চলেছে। নূরের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই লোকটা এতো কোমল করে কথা ও বলতে পারে।
সৌন্দর্য গাড়ি চালু করার আগেই ফাতিহা মিনমিনিয়ে বলে,, আমি ঐ আন্টিদের কাছে যাবো।
কি বললে?
আমি ওদের কাছে গিয়ে বসবো।হাত দিয়ে নূরদের দিকে দেখিয়ে বলে ফাতিহা। সৌন্দর্য পিছনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। সৌন্দর্য সম্মতি জানাতে দেরি ফাতিহার সিটের উপর দিয়ে লাফালাফি করে ওদের কাছে দেরি হয়নি।
আরে মাম কি করছো এসব? ব্যাথা পাবে তো।
ফাতিহা ততক্ষণে দুইজনের মাঝখানে জায়গা করে নিয়ে নূরের কাছ ঘেঁষে বসে ও পরেছে।
সৌন্দর্য আর তেমন কিছু বলেনি। গাড়ি চালাতে চালাতে ওদের দুইজনের বাড়ির ঠিকানা জানতে চায়। ইসরাত ঠিকানা বলে দেয়।
ফাতিহা দুইজনের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। ওদের নাম ও জেনে নিয়েছে। ইসরাত গল্প করার মাঝে মাঝেই অন্য মনস্ক হয়ে পরে।তার বিশ্বাস হচ্ছে না এসব কিছু। সৌন্দর্যের মেয়ে এটা কিছুতেই মানতে পারছে না। দেখে তো মনে হয় অবিবাহিত তার কিনা এতো বড় একটা মেয়ে ও আছে। অবাক করা বিষয়।
সারা রাস্তা তিনজন মিলে কথা বলতে বলতে যায়।যদিও বা নূরের গলা তেমন কানে আসেনি সৌন্দর্যের।ফাতিহা আর ইসরাত ই জোরে জোরে কথা বলেছে।গাড়ির লুকিং গ্লাসে তিনজনের হাস্যজ্জল মুখ ভেসে উঠে।সৌন্দর্য তা গাড়ি চালাতে চালাতে অবলোকন করে।
ইসরাত কে নূরের আগে তাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। এইদিক দিয়ে নূরদের বাড়ি ইসরাতদের বাড়ির পরে তাই নূর গাড়িতেই রয়ে যায়। নূরুের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালে নূর নামতে নিবে কিন্তু তার ওড়নায় টান পরায় পিছনে ঘুরে তাকায়।ফাতিহা নূরের ওড়না টেনে ধরে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমাকে তোমাদের বাড়িতে নিবে না?
সৌন্দর্য ফাতিহা কে বলে,মাম কি বলছো?
নূর মুচকি হেসে বলে,, তুমি যাবে আমার বাড়ি?
ফাতিহা মুচকি হেসে সম্মতি দেয় সে যাবে নূরের বাড়ি।
আচ্ছা তাহলে আসো।
না আমিতো ফান করেছি যাবো না।
'কেন আসো।'
আরেকদিন আসবো গুড বায় বলেই আবার সামনের সিটে চলে আসে। নূর সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে বাড়ির ভিতর হাঁটা দেয়।
সৌন্দর্য মিনিট দুয়েক পর গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
----------------------------------------
এরমধ্যে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে।সময়ের ধারা তার নিজ গতিতে বয়ে চলে। নূরদের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে রেজাল্ট ও দিয়ে দেয়।গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে নূর।পুরো বোর্ডে নূর প্রথম। নূর তার আশানুরূপ রেজাল্ট পেয়েছে। ইসরাত ও ভালো করেছে। নূরের মতো না হলেও ইসরাত ও ভালো ছাত্রী।
ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে নূর আর ইসরাত একই ভার্সিটি তে চান্স পায়।এরমধ্যে ওদের সাথে আরো কয়েকজন চান্স পেয়েছে। নূর আর ইসরাত খুব খুশি জীবনেও ভাবেনি এক সাথে থাকতে পারবে একই ভার্সিটিতে চান্স পাবে।
ভার্সিটি লাইফ দুইজনের ই ভালো চলছে তবে কিছু সমস্যায় ও আছে। সেটা দুইজন ই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এরমধ্যে ইসরাত তালহা কে জ্বালাতে ভুলে না। নূরের অবশ্য দেখা হয় মাঝে মাঝে তালহার সাথে। সৌন্দর্যের সাথে আর কারোই দেখা হয়নি।সৌন্দর্য কে দুইজনই প্রায় ভুলে বসেছে ব্যস্ত ময় জীবন পার করছে।পড়াশোনা নিয়ে চলে যাচ্ছে দিন।
এরমধ্যে দুইদিন পর এক্সাম ও শুরু হয়ে যায়। সময় যে কোনদিক দিয়ে যায় বুঝতেও পারে না। অনার্সেের জীবন নিয়ে ইসরাতের কতো অভিযোগ। তার যে তালহা কে ছাড়া মন বসছে না সেটা বলে না। সব দোষ তার অনার্স পড়া নিয়ে। সব কাজ শেষ করে নূর বাড়িতে এসে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে থাকে।পড়াশোনাই একমাত্র তার ধ্যান জ্ঞান। বিকেল বেলা জানালার ধারে বসে পরছিলো নূর। এরমধ্যে নূরের মা হাতে করে একটা শাড়ি নিয়ে এসে তারাতাড়ি তৈরি হতে বলে। নূরের ফুপাতো বোনকে বলে শাডি পরিয়ে দিতে। যতো তারাতাড়ি এসেছেন ততো তারাতাড়ি আবার চলেও গেলেন।নূরকে কিছু বলার সুযোগ ও দেয় নি। নূর বোনকে জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পায় নি। সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আপু তাকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে হালকা সাজিয়ে চলে যায়। নূর বসে বসে ভাবছে হচ্ছে টা কি।দুই দিন পর তার এক্সাম আর এরা কি শুরু করেছে।
কিছু সময়ের মাঝে নূরের বাবা আসে রুমে।এসে মেয়ের পাশে বসে। মাথায় হাত রেখে বলে,,আম্মা বাবার প্রতি বিশ্বাস আছে না?
নূর মাথা নাড়ে।
বাবা যা করছি তোমার ভালোর জন্যই করছি। বাবা রা মেয়েদের কখনো জলে ভাসিয়ে দেয় না। আমি ভেবে চিন্তে সব করি তুমি তো জানো। শুধু একটু ভরসা রেখো।তারপর মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে চলে যান। নূরের মন কু ডাকছে।অজানা ভয়ে হৃদপিণ্ড ধপাস ধপাস করে শব্দ তুলছে। কিছু সময়ের মাঝে নূরের মা আর দুইজন মহিলা এসে নিয়ে যায় নূর কে। নূর রোবটের মতো চলতে থাকে।
আসল ঝটকা তো খায় তখন যখন কাজি কবুল বলতে বলে। বাবার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকায় একবার। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে নূর। হায় এই কি ছিল তার জীবনে। সব আশা স্বপ্ন ভরসা সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।
ঐদিক দিয়ে কাজি বার বার নূরকে কবুল বলতে বলছে সেই দিকে তার খেয়াল কই? সে তো বাবার দিকে তাকিয়ে জীবনের হিসাব মিলাচ্ছে।
নূরের বাবা করুন চোখে তাকায়। বাবার তাকানো দেখে নূর মুখ দিয়ে কবুল বলা ব্যাতিত একটা টু শব্দ ও বের করে নি। না জেনে না দেখে অজানা সম্পর্কে জড়িয়ে গেলো।সব স্বপ্ন সব আশা বিসর্জন দিলো।



চলবে,,,,,,,,,

গল্প: পরাণ দিয়ে ছুঁই
#পর্ব_৫ (শেষ পর্ব )
লেখনীতে: ঝর্ণা ইসলাম
প্রথম পরিচ্ছেদের সমাপ্তি।

আসসালামু আলাইকুম। সকলে রেসপন্স করবেন।

Post a Comment

0 Comments