Header Ads Widget

Responsive Advertisement

শুধু তুমি - পর্ব ৬

তনা মেঘা আর লিনার কাছে বললো না ওই মেয়েটা যে আনিকা।
-- নীল হয়ত এখানে কোন কাজে আসছে। তোরা তো নীল কে চিনিস ই। নীল কোন দরকার ছাড়া কোথাও যায় না। (তনা)
-- তা ঠিক কিন্তু নীল এখানে আর তুই ও এখানে তাহলে দু'জন এক বার দেখা করলি না। কথা বললি না। এমনকি তুই জানিস ও না নীল এখানে। ব্যাপার টা কেমন দেখাচ্ছে না? (মেঘা)
-- আপু ভাইয়ার সাথে ওই মেয়েটা কে?(লিনা)
-- হয়ত ওর অফিসের কোন স্টাফ। সব মেয়ে কে আমি চিনবো এমন তো কোন কথা না। তোরা না একটু বেশিই চিন্তা করিস।
কথা গুলো বলার সময় তনার চোখ দিয়ে পানি চলে আসছিল। তনা অনেক কষ্ট চোখের পানি গুলো কে বাঁধা দিল। নীল আনিকার সাথে এটা কোন ভাবেই তনা মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু লিনা আর মেঘার সামনে কিছু বলতে ও পারছে না। হাজার হলেও তো নিজের স্বামী কে কারো সামনে ছোট করতে পারবে তনা। নীল তনাকে মিথ্যা কেন বললো,যে আনিকার সাথে ওর দেখা হয় না।তনা মনে মনে এগুলো ভাবছে।
-- আচ্ছা এখন চল নীলের সাথে দেখা করে আসি। নীলকে একটা সারপ্রাইজ দিয়ে আসি চল।(মেঘা)
-- না এখন ওর সাথে দেখা করার দরকার নেই। ও হয়ত কোন কাজের জন্য এখানে আসছে। এখন আমরা গিয়ে ওকে ডিস্টার্ব করলে ওর রেগে যেতে পারে।তুই অন্য কোন দিন ওর সাথে দেখা করিস। (তনা)
-- আচ্ছা ঠিক আছে। আজ ওকে ডিস্টার্ব করার দরকার নেই। এখন কি তোরা এখানে বসবি নাকি যাবি?(মেঘা)
-- এখন আর এখানে বসে কি করবো। চল যাওয়া যাক।(তনা)



-- তাহলে চল দোস্ত। অনেকক্ষণ হয়েছে বাবু কে রেখে আসছি। আজ যাই দোস্ত। অন্য কোন দিন আবার দেখা হবে। আসি রে।(মেঘা)
-- হুম। সময় করে উঠতে পারলে আমার বাসায় বাবু আর তোর হাজবেন্ড কে নিয়ে আসিস মেঘা।
-- হুম তা তো আসবো ই।
মেঘা চলে গেল। তনা আর লিনা ও রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে ওদের গাড়ি তে এসে বসলো। তনা চুপ করে আছে। লিনা তনাকে এমন চুপ থাকতে দেখে
-- আপু কি হয়েছে?
-- কই কি হয়েছে? কিছুই হয়নি তো।
-- তুমি ভাইয়ার সাথে দেখা করলে না কেন? আর আপু ভাইয়া কি সত্যি ই ওখানে কোন কাজে গেছিল?
-- কাজে যাবে না তো এমনি যাবে নাকি? তুই কি তোর ভাইয়া কে চিনিস না। আমি জানি ও কোন কাজেই গেছে। তাই ওর সাথে কথা বলিনি।
তনা লিনা কে এসব বলে বুঝাতে পারলে ও নিজের মন কে তো কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারছে না। নীল এই প্রথম তনার থেকে কিছু লুকালো। নীল কেন এমন করলো। তনার চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছে না। নীল কি তাহলে আনিকা কে এখনও ভালোবাসে।ওদের মধ্যে কি সব আবার আগের মতো হয়ে গেছে। নীল কি আমাকে ভুলে যাবে। এমন অনেক কথা তনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তনা নিজের মনকে কোন ভাবেই শান্ত করতে পারছে না। পুরো রাস্তা তনা নানান কথা ভাবছিল।
-- আপু বাড়ি এসে গেছি তো। গাড়ি থেকে নামবে না?
তনার খেয়াল ই ছিল না কখন ওরা বাড়ি পৌঁছে গেছে। লিনার কথা খেয়াল হলো
-- হ্যা নামবো তো।
তনা গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে গেল।তনা উপরে ওর রুমে যাচ্ছিল। তখন পিছনে ফিরে লিনা কে ডাকে
-- লিনা?
-- হুম আপু বলো।
-- আজ যে আমরা বের হয়েছিলাম তা তোর ভাইয়া কে বলিস না।
-- কেন আপু।
-- দেখিস না। তোর ভাইয়া আমাকে নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করে। আমরা একা বের হয়েছিলাম এটা জানতে পারলে অনেক রাগ করবে।
-- আচ্ছা আপু আমি ভাইয়া কে বলবো না। তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।
তনা লিনা কে আর কিছু বললো না। তনা ওর রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফ্লোরে বসে তনা কান্না করতে লাগলো।
--নীল আমার সাথে এমন কেন করলো। আমি নীল কে নিজের থেকে ও বেশি বিশ্বাস করি।নীল আমার কাছে মিথ্যে কেন বললো।
তনা প্রায় দুই ঘন্টার মত রুমে বসে কান্না করলো। কান্না করতে করতে তনার হিচকি উঠে গেল। চোখ ফোলে গেছে মাথা টা ভারী ভারী লাগছে। অনেকক্ষণ কান্না করায় মাথা টা প্রচন্ড ব্যথা করছে। তনা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেল।র্ঝনা ছেড়ে তনা র্ঝনার নিচে দাড়িয়ে আছে। এখনও চোখ থেকে অঝোর দ্বারায় পানি পড়ছে।
অনেকক্ষণ র্ঝনার নিচে দাঁড়িয়ে থেকে গোসল শেষ করে নিচে গেল তনা। তনা নিচে গিয়ে লিনা কে দেখতে না পেয়ে লিনার রুমে গেল। তনা লিনার রুমে গিয়ে দেখে লিনা শুয়ে আছে।
-- লিনা। শরীর খারাপ লাগছে? জ্বর কি আরো বাড়ছে?
-- না আপু। জ্বর কমে গেছে। মাথা টা একটু ব্যথা করছে তাই শুয়ে ছিলাম।
-- মেডিসিন নিছিস?
-- না।
-- তাহলে জ্বর কমলো কিভাবে?
এই বলে তনা লিনার পাশে বসে। লিনার কপালে হাত রাখলো।
-- তুই কি পাগল? জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। আর তুই বলছিস জ্বর কমে গেছে। মেডিসিন ও নেস নাই।এমন করলে কিভাবে হবে। তুই শুয়ে থাক আমি তোর জন্য কিছু রান্না করে নিয়ে আসি।খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে।
-- আপু আমি রান্না করে রাখছি।
-- কি? কখন করলি এসব। তুই এমন কেন রে।তোকে নিয়ে কি করবো আমি।
তনা কথা গুলো বলে কান্না করে দিল।লিনা তনাকে কাঁদতে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসলো।
-- আপু তুমি কাঁদছো কেন? আমি বললাম তো আমি ভালো আছি। তুমি উপরে ছিলে নিচে আসছিলে না। ভাবলাম তোমার হয়ত শরীর খারাপ লাগছে। তাই তোমাকে ডাকতে যাইনি। রাতের সবাই খাবো তো নাকি না খেয়ে ই থাকবো? তাই তো আমি রান্না করে রাখছি।
-- তুই আমাকে একবার ডাকবি তো।এত জ্বর নিয়ে তোকে রান্না করতে কে বলেছে?
তনা লিনা কে জড়িয়ে ধরে আছে। লিনা এতক্ষণে তনার দিকে খেয়াল করলো।
-- আপু তোর চোখ ফোলে গেছে কেন। তুমি কি কান্না করছো?কি হয়েছে আপু?
তনা লিনার কথা এড়ানোর জন্য
-- কই চোখ ফোলে গেছে। তুই চোখে একটু বেশি দেখিস আজকাল। তুই থাক আমি তোর জন্য খাবার আনতে যাচ্ছি ।
তনা তারাতারি করে লিনার রুম থেকে বের হয়ে গেল। আর কিছুক্ষন এখানে থাকলে লিনা ঠিক বুঝে যেত তনা যে কান্না করেছে। তনা খাবার এনে নিজের হাতে লিনা কে খাইয়ে দিল। খাবার শেষে ডক্টর লিনা কে যে মেডিসিন গুলো দিছিল ওগুলো ও খাইয়ে দিল।
-- এখন চুপচাপ শুয়ে থাক। আর উঠতে হবে না ঘুমিয়ে যা। আমি নিচেই আছি কিছু লাগলে আমাকে ডাক দিবি।
-- ঠিক আছে আপু।
তনা লিনার রুম থেকে বের হয়ে। হলরুমে সোফায় বসে নীলের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষন পর নীল আসলে কলিংবেলের শব্দ শুনে তনা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। নীল তনা কে দেখে
-- কি হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে। চোখ ফোলে গেছে কেন?
-- কিছু না। সন্ধ্যা থেকে মাথা ব্যথা করছিল। তাই এমন দেখাচ্ছে।
-- মাথা ব্যথা করছে। তুমি একটা পেইনকিলার নিয়ে শুয়ে যাবে এখানে বসে আছো কেন?
-- তোমার জন্য। আমি শুয়ে গেছে তোমাকে খাবার কে দিবে?
-- কেন। লিনা কোথায়?
-- লিনার অনেক জ্বর। আমি ওকে মেডিসিন দিয়ে শুইয়ে দিয়েছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি খাবার দিচ্ছি।
-- আচ্ছা।
নীল ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। তনা পাশে বসে আছে। তনা ভাবছে আজকের কথা নীলকে কিভাবে জিঙ্গেস করবে।
-- নীল?
-- হুম বলো।
-- আজ অফিস কেমন কাটলো? সারা দিন তো একবার ও ফোন দিলা না।খুব বিজি ছিলা?
-- আজ অফিসে একটা মিটিং ছিল।অনেক বড় একটা ডিল ফাইনাল হওয়ায় ওরা ট্রিট চাইছে। পরে সবাই কে নিয়ে রেস্টুরেন্টের গেছিলাম। তাই ফোন দিতে পারি নি।
-- ওহহ তা কে কে গেছিলে?
-- এই তো অফিসের কয়েক জন। তুমি খাবে না? বসে আছো যে।
তনা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে নীল কথা এড়ানোর চেষ্টা করছে। নীল আজও সত্যি টা বললো না। আনিকার কথা আজও তনার থেকে লুকিয়ে গেল। কিন্তু নীল এমন কেন করছে। তনা নীলকে আর কিছু জিঙ্গেস করলো না। তনা রুমে চলে আসছিল। নীল পিছন থেকে
-- তনা কই যাচ্ছ। খাবে না?
-- আমি খেয়েছি। তুমি খেয়ে নেও।আমি রুমে গেলাম।
নীল ইচ্ছে করেই আনিকার কথা তনার থেকে লুকিয়ে গেছে। কারণ তনা আনিকার কথা শুনলে আপসেট হয়ে যায়। কিন্তু তনার কি হলো।
হঠাৎ করে তনার এমন ব্যবহার নীলের কাছে কেমন যেন লাগছে।তনা এমন করছে কেন। কি হলো তনার। এগুলো ভেবে নীল আর খেল না। উঠে রুমে চলে আসলো।

তনা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। বেডে শুয়ে তনা এখনও কান্না করছে। তনার চোখের জলে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। নিরবে কেঁদে যাচ্ছে তনা। এই কান্নার শব্দ নীল শুনতে পারছে না।
একটু পরেই নীল রুমে আসলো। নীল রুমে এসে দেখে তনা শুয়ে আছে। নীল তনাকে কয়েক বার ডাকলো। কিন্তু তনা কোন সারা দিল না। তনার কি হয়েছে নীল এটা বুঝতে পারছে না। এমন কি হলো যার জন্য তনা নীলের সাথে কথা বলছে না। নীল রুমের লাইট অফ করে তনার পাশে শুয়ে পড়লো।
তনা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেল। তনার হঠাৎ কি হয়েছে এই ভেবে ভেবে নীল ও ঘুমিয়ে গেল।
প্রায় অনেক দিন কেটে গেল। এর মাঝে তনা আর নীলের মাঝের দূরত্ব টা ও বেড়ে গেল। তনা এখন নীলের সাথে খুব প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা কথা বলে না। এর মাঝেই একদিন তনা নীলের অফিসে ফোন করে জানতে পারছে আনিকা যে নীলের অফিসে জব করে। আনিকা নীলের অফিসে জব করে এটা নীল পুরোপুরি তনার থেকে লুকিয়ে গেছে। আর এটা জেনেই তনা আর নীলের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে। কেউ ই কারো সাথে সরাসরি কিছু বলছে না।
বিকেলে তনা আর লিনা বসে টিভি দেখছি। তনা সোফায় বসে আছে। আর লিনা ফ্লোরে বসে সবজি কাটছে রাতে রান্নার জন্য।
-- আপু একটা কথা বলবো?
-- একটা কথা বলবি। তাও আবার পারমিশন নেওয়া লাগে নাকি? কি বলবি সোজা বলে ফেল।
-- আপু তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের কয় বছর হয়েছে?
-- এই তো দুই বছর ছয় মাস। কেন?
-- না মানে। আপু।
তনা বিরক্তি নিয়ে
-- কি না মানে আপু? কি বলবি বল।
-- আপু মেঘা আপুর বেবী আছে। তোমার একটা বেবী থাকলে কত ভালো হতো। তুমি একটা বেবী নেও নাই কেন আপু? তোমার বেবী থাকলে আমি ওর সাথে কত মজা করতাম।
লিনার মুখে বেবীর কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যে তনার মুখে ঘন কালো মেঘের ছাপ পড়ে গেল। মনের মধ্যে চেপে রাখা কষ্ট টা আবার উঁকি দিলে উঠলো। না চাইতে ও তনার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। তনা লিনা কে কিছু না বলে রুমে চলে গেল। লিনা একটু অবাক হলো।লিনা কি এমন বলেছে যার জন্য তনা এভাবে কিছু না বলে চলে গেল। লিনা ভাবছে ও কি ভুল কিছু বলে ফেলেছে?
তনা বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে অঝোরে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে।
রাত হয়ে গেল। নীল বাসায় আসছে। রুমে এসে দেখে তনা বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। নীল ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে র্শাটের বোতাম খুলতে খুলতে
-- তনা এভাবে শুয়ে আছো কেন। কি হয়েছে?
তনা কিছু বলছে না। নীল আরো কয়েক বার তনা কে ডাকলো। তার পর ও তনা কোন কথা বলছে না। নীল এবার তনার পাশে বসে। তনার কাঁধে হাত রেখে তনাকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে
-- এই তনা কি হলো। কখন থেকে ডাকছি কিছু বলছো না কেন?
নীল তনা কে এপাশ ফিরিয়ে বুঝতে পারলো। তনার জ্ঞান নেই। নীল ব্যস্ত হয়ে লিনা কে ডাকতে লাগলো। নীল তনার মাথা নীলের কোলে তুলে নিয়ে বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে তনার মুখে পানির ছিটে ফোঁটা দিতে লাগলো। নীলের ডাক শুনে এতক্ষণে লিনা ও এসে গেল।
-- ভাইয়া আপুর কি হয়েছে?
-- জানি না কি হয়েছে। রুমে এসে দেখি ও উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আমি ডাকলাম সাড়া দিল না। এখন দেখি ওর জ্ঞান নেই।
তনা অনেকক্ষণ কান্না করায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। শব্দ করে কান্না না করে ভেতরে ভেতরে কান্না করলে জ্ঞান তো হারাবার ই কথা। এমনিতেই তনা বেশি কান্না করলে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। নীল ভয়ে বার বার তনা কে ডাকছে। আর মুখ পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে।
-- তনা এই তনা।কি হলো প্লিজ তনা উঠো। তনা কথা বলছো না কেন? আমার সাথে কথা বলোনা প্লিজ।
তনার মুখে কয়েক বার পানির ছিটা দিলে। একটু একটু করে তনা চোখ খুলার চেষ্টা করছে। তনার জ্ঞান ফিরেছে। তনা চোখ খুলে নীল কে দেখতে পেল। এই কয়েক মুহূর্তে নীলের চোখ, মুখের কি অবস্থা হয়েছে। নীল পাগলের মতো তনার মুখে চুমু দিতে লাগলো। নীলের চোখে তনা কে হারানোর ভয় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তনা উঠতে চাইলে নীল তনার হাত ধরে তনাকে উঠিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়।
-- লিনা তোমার আপুর জন্য খাবার নিয়ে এসো।
-- আচ্ছা ভাইয়া।
লিনা খাবার আনতে যাচ্ছিল। তনা লিনা কে খাবার আনতে না করে দিয়ে। লিনা কে নিচে যেতে বললো।লিনা চলে গেলে তনা বেড থেকে উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
-- কি হয়েছে তোমার?
-- নীল তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
নীল খুব স্বাভাবিক গলায় তনাকে জিঙ্গেস করলো
-- কি বললে তুমি আবার বলো তো।
-- তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আনিকা কে বিয়ে করে নতুন করে আবার তোমার জীবন শুরু করো।
তনার মুখে ডিভোর্সের কথা শুনে নীলের মাথায় রক্ত উঠে গেল। নীল নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। তনা কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নীল শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে তনার গালে একটা থাপ্পড় মারলো। তনা তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেল। নীল তনার হাত ধরে তনাকে টেনে তুলে আবার দাঁড় করালো। তনা কাঁদছে।
-- তোর সাহস কি করে হয়। তোকে ডিভোর্স দেওয়া কথা বলার। তুই আমাকে কি পেয়েছিস। মুক্তি চাস তুই আমার থেকে? তুই আমার থেকে মুক্তি চাইলে কি হবে আমি তো এতো সহজে তোকে আমার থেকে মুক্তি দিব না। আরে, এই তুই যখন যা করতে বলবি আমি তখন তাই করবো নাকি? আমি কি তোর হাতের পুতুল। তুই কি আমাকে পুতুল মনে করিস নাকি জীবন টা কে পুতুল খেলা মনে করিস। তুই বললেই আমি তোকে ভুলে গিয়ে অন্য কারো সাথে সুখে সংসার করবো?
আমি তো তোকে আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করিনি। তুই আমাকে বাধ্য করছিস তোকে ভালোবাসতে। যখন আমি আনিকা কে ভালোবাসতাম তখন আমার পিছনে হাত ধুয়ে পড়ে ছিলি তোকে ভালোবাসার জন্য। আর এখন যখন আমি তোকে ভালোবাসি তুই এখন বলছিস আমি তোকে ভুলে যেতে, আনিকা কে বিয়ে করতে?
তুই নিজেকে কি ভাবিস? আমি তোকে খুন করে নিজে মরে যাবো পরেও তোকে অন্য কারো হতে দিব না। পৃথিবীর কোন শক্তি তোকে আমার থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। মৃত্যু ও তোকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। তুই আমার আছিস আর আমার ই থাকবি।
নীল তনার হাত ধরে তনা কে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে কথা গুলো বলছে। নীলের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। নীলের চোখ থেকেও সমানে পানি পড়তেছে। তনা কান্না করতে করতে নীল কে জড়িয়ে ধরলো।নীল এক ঝটকায় তনা কে দূরে সরিয়ে দিল। নীলকে এখন এতো সহজে শান্ত করা যাবে না এটা তনা খুব ভালো করেই জানে।

চলবে.....


গল্প: শুধু তুমি 

পর্ব - ৬

লেখনীতে: Samira Afrin Samia & জেরিন_আক্তার_নিপা

Post a Comment

0 Comments