Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পরাণ দিয়ে ছুঁই - পর্ব ৩

ইয়ানূর স্তব্ধ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে অজ্ঞান হয়ে যেতে। মনে মনে খুব করে চাইছে যেনো সে এখনই জ্ঞান হারায়।আর এই বা'জে পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু যখন যেটা খুব করে চাওয়া হয় সেটা পাওয়া যায় না। ইয়ানূরের খুব করে চাওয়া ইচ্ছে টা ও পূরণ হলো না।
সৌন্দর্য সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নূরের দিকে একবার তাকায়।তারপর নিজের হাত দিয়ে ব্লেজার ঝাড়তে থাকে। হাত ঝাড়তে ঝাড়তে সৌন্দর্যের হাত টা ইয়ানূরের সামনে আসে।যার দরুন ইয়ানূরের হুঁশ আসে।তরিঘরি করে বোতল টা ইসরাতের হাতে ধরিয়ে দেয়। তারপর নিজে এগিয়ে এসে ঝেড়ে দিতে নিয়ে ও কি মনে করে হাত গুটিয়ে নেয়। তারপর সরি সরি বলতে থাকে।
চোখের পানি গুলো টলমল করছে। একটু ছোঁয়া লাগার অপেক্ষায় তারপর গাল গুলো ভাসিয়ে দিবে। করুন স্বরে শুধু একের পর এক স'রি বলে চলেছে।
সৌন্দর্য নূরের মুখের দিকে তাকায়। তারপর চোখে চোখ রাখে।নূর চোখ সরিয়ে নেয়। অস্বস্তি হচ্ছে খুব।কি বা'জে বা'জে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এই লোকটার কাছে যখনই আসে। সবসময় ছোট হতে হয়। লোকটা তো তাকে খারাপ মেয়ে ভাবে হয়েতো। গায়ে পরা মেয়ে ভাবে। কথাগুলো ভাবতেই টুপ করে এক ফোটা পানি চোখ থেকে গড়িয়ে পরে।


সৌন্দর্য এবার খুব কৌশলে ওর চোখ জোড়া ঘুরিয়ে নেয়। তারপর নূরকে উদ্দেশ্য করে,, তুমি,,,,, বলতে গিয়ে ও থেমে যায়। ফোস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে।পিছনে যেতে যেতে বলে,,, ইট’স ওকে!
নূর ঘাড় ঘুরিয়ে সৌন্দর্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ধপ করে নিজের সিটে বসে পরে। বসেই চোখ জোরা বন্ধ করে ফেলে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে।মনে হচ্ছে কয়েকশো মিটার দৌড়ে এসে হাঁপিয়ে গেছে।
ইসরাত এতো সময় সিটে বসে দুইজনের কান্ড দেখেছে সরু চোখে।
মনে মনে ভাবছে যতো প্রকার সমস্যা আছে সব এদের সাথেই ঘটছে সিনেমাটিক ভাবে। কি আশ্চর্য ব্যাপার। অন্য সময় হলে নূর কে খ্যা'পা'তো সে কিন্তু এখন কেন যেনো ইচ্ছে করলো না। হয়তো বিব্রত বোধ করবে।
সৌন্দর্য বসে বসে ফোনে ব্যস্ত হয়ে আছে। তালহা কিছু সময় পরপর এসে সৌন্দর্য কে বিরক্ত করে যাচ্ছে। ছাত্রীদের কি লাগবে,কেউ বমি-টমি করবে কিনা জিজ্ঞেস করছে।
নূরদের সিটে এসে জিজ্ঞেস করে,, নূর তুমি ঠিক আছো?
নূর এতোসময় সিটে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো।
তালহা স্যারের প্রশ্নে চোখ খুলে তাকায়। ঠিক হয়ে বসে জানায় সে একদম ঠিক আছে।
তাহলে চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন? অসুস্থ বোধ করলে বা খারাপ লাগলে কিন্তু বলবে আমাকে। আর বমি আসলেও বলবে।
নূর তালহা স্যারের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
তালহা চলে যেতে নিয়ে ও ইসরাতের কথায় থেমে ব্রু কোচকে ইসরাতের দিকে তাকায়।
আশে পাশে মানুষের চোখ যায় না। আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন ও মনে করলো না। আমি কি মানুষের পকেটে বমি করবো যদি আমার বমি পায়?
ইসরাতের কথায় নূর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হাতে চি'মটি কাটে চুপ হওয়ার জন্য। কিন্তু মেয়েটা শোনে কই।
এই মেয়ে কি বললে তুমি? তোমার সাহস দেখছি দিন দিন বেড়েই চলেছে। তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো?
তালহা স্যারের সাথে।
আমার নামের শেষে কি উচ্চারণ করলে আবার করো। জোরে করবে।
স-স্যার।
বেয়াদপ মেয়ে স্যারদের সাথে এভাবে কেউ কথা বলে? আজকে তোমার বেয়াদবি ছোটাবো। মনে ভয় ডর নেই তোমার।
স-সরি স্যার।
চুপ করো তুমি। উঠে দাঁড়াও।
স্যার প্লিজ আমাকে বাস থেকে নামিয়ে দিবেন না। আমিতো এই দিকের কিছুই চিনি না। যদি হারিয়ে যাই?
তোমাকে আমি কি বলেছি? কথা শুনছো না কেন তুমি?
উঠে দাঁড়াও বলেই এক ধমক মারে তালহা ইসরাত কে।
ইসরাত তারাতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায়। করুন চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বোঝায় আজকের মতো এই ব্যাটার হাত থেকে বাঁচিয়ে দে বোন। আজ এতো খে'পে কেন গেলো বুঝলাম না।
নূর চুপচাপ বসে আছে।
তালহা ইসরাত কে বলে,,কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে বাসের মধ্যে।
--স্যার আর হবে না।
--- কি বলেছি আমি তুমি শুনোনি?
-- স্যার,,
-- বেশি কথা বললে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখবো।তখন ভালো লাগবে?
যদি বাস ব্রেক করে হুট করে। আর আমি পরে গিয়ে নাক মুখ ফেটে যায় তখন?
ঐসব কথা তোমার আগে মাথায় রাখা উচিত ছিলো।এখন শাস্তি ভোগ করো। বলেই তালহা সামনের দিকে চলে যায়। মুখে তার মিটমিটে হাসি।
ইসরাত অসহায়ের মতো কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিবীতে সেই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা পিকনিকে এসে ও শাস্তি পায়। তাও আবার বাসের মধ্যে হাহ্। দেখে নিবে সে এই স্যার কে কথাটা মনে মনে আওড়িয়ে মুখ বাঁকায়।
---------------------
বাস ঠিক সময়ে এসে থামে।সকলের গার্জিয়ানরা এসে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে নেওয়ার জন্য। ইসরাত আর নূর নেমে আসে বাস থেকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে নূর তার বাবা কে খোঁজার চেষ্টা করে। কিছু দূরেই দেখতে পায়।
কাঁধের ব্যাগ ইসরাতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় নিজের বাবার কাছে।
আব্বু বলেই জড়িয়ে ধরে। মনে হচ্ছে কতো জনম পর দেখা হলো তাদের। ইসরাত ও এগিয়ে আসে।
নূরের বাবা এতক্ষন নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। ইসরাত পাশে এসে দাঁড়াতেই ইসরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। জানতে চায় কেমন আছো আম্মারা?
ভালো আংকেল। ইসরাত উত্তর দেয়।
নূর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
এরমধ্যে সকল ছাত্রী কে তালহা আর অন্যান্য শিক্ষকরা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
নূরের বাবা দাঁড়িয়ে আছে তালহার সাথে কথা বলার জন্য। তালহা এগিয়ে আসতে আসতে বলে,,,
স'রি আংকেল আপনাকে অপেক্ষা করানোর জন্য।
ব্যাপার না বেটা। সব কিছুর আগে নিজের দায়িত্ব। আমি তোমার উপর খুব খুশি।
আরো কিছু কথা বলে নূর আর ইসরাত কে নিয়ে চলে আসে নূরের বাবা।ইসরাত নূরদের সাথেই যাবে।নূরদের বাড়ির কিছু পরেই ইসরাতের বাড়ি।তাই আর ইসরাতের বাবা আসেনি নেওয়ার জন্য।
সৌন্দর্য এতক্ষন বাসেই ছিলো নামেনি। তালহার সাথে যাবে।তালহা গাড়ি নিয়ে আসেনি। তাই সৌন্দর্যের সাথে যাবে। সৌন্দর্য আগেই ড্রাইভার কে গাড়ি নিয়ে আসতে ফোন দিয়েছে। তাই আর বের হয়নি।বাসেই বসে ছিলো।
এতক্ষন জানালার পাশে বসে সবই লক্ষ করেছে। এবার উঠে দাঁড়িয়ে নেমে আসে। তালহার ও সব কাজ শেষ।
ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসতেই সৌন্দর্য চাবি নিয়ে নেয়। তারপর নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। ড্রাইভার পিছনে গিয়ে বসে। তালহা হেলতে দুলতে দুলতে এসে সৌন্দর্যের পাশের সিটে বসে পরে। সিটে বসেই নিজেকে হেলিয়ে দেয়। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,
কেমনে পারিস ভাই? এতো এনার্জি কি করে পাস? অবশ্য তুই তো কোনো পরিশ্রম করিস নি।
সৌন্দর্য কথার উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে। তালহার বাড়ির সামনে এসে তালহা কে নামিয়ে দেয়। অবশ্য তালহা বলেছে ওদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য সৌন্দর্য না করে দেয়।
নিজের বাড়িতে এসে গাড়ি থেকে নেমে পরে। হাতে আঙুলে চাবিটা নাচাতে নাচাতে শিস বাজাতে বাজাতে মেইন দরজা দিয়ে বাড়ির কলিং বেল বাজায়। কিছুক্ষন পর এসে একজন দরজা খুলে দেয়।
সৌন্দর্য ভিতরে ঢুকে পরে। পিছন থেকে একজন হ্যান্ড'স আপ।
সৌন্দর্য থমকে যায়। তারপর নিজের হাত উপরে তুলে পিছনে তাকায়।

সৌন্দর্য হাত উঁচু করেই পিছনে ফিরে তাকায়। তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে। হাসি থামিয়ে মুখটাতে কিছু দুঃখী ভাব ফুটিয়ে তুলে। তারপর হাঁটু মুড়ে মেঝেতে বসে পরে।
সৌন্দর্যের দিকে ৭ বছরের এক বাচ্চা রা'গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কোমড়ে হাত দিয়ে রাগে ফুঁসছে।
" কি হয়েছে মাম?"
-- আপনি কি কিছু হতে বাকি রেখেছেন মিষ্টার ওয়াহিদ?
-- এভাবে কথা বললে আমার ভয় লাগে তো।
-- উফফ মি. ওয়াহিদ একদম ড্রামা করবেন না। আমি আপনাকে হাড়ে হাড়ে চিনি।
-- আমার মা আমাকে না চিনলে কে চিনবে?
-- দিন দিন সেই মায়ের অবাধ্য সন্তান হয়ে যাচ্ছেন।
-- মোটেও না।আমি৷ আমার মায়ের বাধ্য সন্তান।
ওদের কথার মাঝেই একজন বলে উঠে,, কি রে ফাতু? আমার জামাই টা আসতে না আসতেই তুই শাসন করা শুরু করে দিলি?
উফফফ বুড়ি ইট’স ফাতিহা।নট ফাতু। আর তোমার জামাই হওয়ার আগে আমি তার কে হই জিজ্ঞেস করো এই বা'উন্ডুলে ছেলে কে।
দেখ দাদু ভাই দেখ এই বয়সেই কি রকম করে কথা বলে। মনে হচ্ছে বয়স ৭ না ৭০ পেরিয়ে গেছে।
মি. ওয়াহিদ আমি আপনার কে হই?
-- অবশ্যই আমার মা।
-- তাহলে তোমাকে শাসন করার অধিকার কার বেশি আমার না তোমার এই বুড়ি বউয়ের?
সবার আগে মা।
ফাতিহা সৌন্দর্যের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। সৌন্দর্য ও চুমু খায় ফাতিহার কপালে।
আমি যে তোমাকে কি বলেছিলাম সেটা করেছো?
তুমি কিছু বলেছো আর আমি সেটা করিনি এমন কোনোদিন হয়েছে?
কখনো না।
এবারও তোমার কথা মতোই সব হয়েছে। কথাটুকু বলে সৌন্দর্য উঠে দাঁড়ায়। সোফায় নিজের শরীর টা হেলিয়ে দিয়ে বলে,,, একটু পানি দাও তো মাম। তোমার হাতে পানি না খেলে কি আমার তৃষ্ণা মিটে?
ফাতিহা দৌড়ে চলে যায় সৌন্দর্যের জন্য পানি আনতে। কিছু সময়ের মাঝেই পানি নিয়ে ফিরে আসে। সৌন্দর্যের হাতে দেয়।
সৌন্দর্য মুচকি হেসে পানি টুকু নিয়ে এক নিমিষে সবটুকু শেষ করে। তারপর টেবিলে গ্লাস টা রাখে। ফাতিহা কে তুলে নিজের কোলে তুলে নেয়।
ফাতিহা কোলে বসে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়।
সৌন্দর্য নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ফাতিহার হাতে ধরিয়ে দেয়। এটাতে সব আছে মাম। তুমি যেভাবে বলেছো সেভাবেই করেছি।
ফাতিহা সৌন্দর্যের কথা শুনে লাফিয়ে উঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে একটু দেখেই ওয়াও বলে চিল্লিয়ে উঠে।
সৌন্দর্য ফাতিহার মাথার চুল গুলো হাত৷ দিয়ে এলোমেলো করে দেয়। অন্যসময় হলে ফাতিহা রে'গে যেতো।কিন্তু এখন একটুও৷ রা'গ করলো না। উল্টে মুচকি হেসে ফোনটা হাতে নিয়ে উপরে চলে যেতে থাকে।
সৌন্দর্য ফাতিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটু জোরে বলে,,মাম আর যা যা বলেছো সব এনেছি। গাড়িতে আছে। তোমার রুমে পৌঁছে যাবে।
ফাতিহা সৌন্দর্যের কথায় দৌড় থামিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। তারপর হাত দিয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারে। তারপর নিজের রুমে চলে যায়।
দেখেছিস দাদু ভাই এই বয়সেই কি সব কান্ড ঘটায়?
বাদ দাও দাদি।আজকালকের বাচ্চারা একটু বেশিই আপডেট। তবে খারাপ সঙ্গের সাথে যেনো না মিশে সেই দিকে খেয়াল রাখলেই হলো।
হুম যা দাদু ভাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
যাচ্ছি। কিন্তু বাড়ির সবাই কোথায়?
এই সময় কেউ বাড়িতে থাকে? যে যার কাজ নিয়ে আছে। আমিতো একাই থাকি। ফাতিহা আজ স্কুলে যায় নি তুই আসবি বলে।
আচ্ছা দাদি আমি রুমে যাচ্ছি।
যা গিয়ে রেস্ট নে।
এক কাপ কফি পাঠিয়ে দিও।
এখনই দিচ্ছি।
----------------------------------------
নূর বাড়িতে আসার সাথে সাথে তার ছোটো বোন তূর গল্প জুড়ে দিয়েছে। সেখানে কি কি করলো।কি কি দেখলো সব। তূরের ও খুব ইচ্ছে ছিলো বোনের সাথে যাওয়ার। কিন্তু তার একটা এক্সাম হওয়ায় যেতে পারেনি৷ অবশ্য এক্সাম কোনো ব্যাপার না সে এক্সাম ফেলে ঠিকই চলে যেতো।কিন্তু বাবার ভয়ে যেতে পারেনি।
নূরের উল্টো হচ্ছে তূর। নূর যেমন কম কথা বলে।তূর তেমন বেশি কথা বলে। নূর যেমন পড়াশোনায় ভালো তূর তেমন টেনেটুনে পাশ করা ছাত্রী। সেই কখন থেকে জানতে চাইছে কি দেখেছে।কি কি খেয়েছে। কেমন আনন্দ করেছে। অবশ্য ঠিক জানেই তার বোন কি বোরিং। ঘুরতে গিয়েও যে বইয়ে মুখ ঢুকিয়েছিলো।
কি হলো কিছু বলছিস না কেন আপু?
নূর চুপ করে বসে আছে। মাথাটা খুব ধরেছে।শরীর ও কেমন জানি মে'জ মে'জ করছে। জ্বর আসবে আসবে বলে মনে হয়।
কি হলো আপু চুপ করে আছিস কেন?
তূর এতো জোরে কথা বলবিনা তুই আমার সামনে। আর কি বলবো তোকে? সিলেটে কি দেখতে যায় মানুষ? পাহাড়,ঝর্না,চা বাগান এসবই তো।
হইছে তোর বর্ণনা দিতে হবে না। ফোন দে পিক দেখবো আমি।
আমার ফোনে পিক নাই তুই কোথা থেকে দেখবি?
মানে টা কি আপু? তুই পিক ও তুলিস নি?
না। তুই জানিস আমার এসব ভালো লাগে না। তারপরও কেন জিজ্ঞেস করছিস বলতো?
ধ্যাত। তোকে আমার জিজ্ঞেস করাটাই ভুল হয়েছে। মাফ কর বইন আমার। আমি ইশু আপুর থেকে জেনে নিবো। বোরিং একটা মেয়ে তুই। তোর উপর যে মাঝে মাঝে কি রা'গ হয় আমার। আমি বুঝে পাই না ইশু আপুর মতো একটা মেয়ে কি করে থাকে তোর সাথে। যে তোকে বিয়ে করবে তার জন্য আমার আফসোস হচ্ছে। কথাগুলো বলে তূর বের হয়ে যায়।
তূর যেতেই নূর বিছানায় শরীরটা হেলিয়ে দেয়। চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
----------------------
ইসরাত আননোন নাম্বার থেকে তালহা কে দুটো মিসড কল দেয়। তারপর মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে। কানে ধরে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা তাই না। আজ মজা বোঝাবে।
তালহা ঘুরে এসে খুবই ক্লান্ত। মোবাইল সাইলেন্ট করেনি। তাই রিংটোনের আওয়াজে নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়।
অপর পাশ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ইসরাত আবার কল করে। এবার আর মিসড কল না ডাইরেক্ট কল করে। কয়েকবার রিং হয়ে কেটে যায়। কারণ তালহা কানের উপর বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমোচ্ছে। বেশ কয়েকবার বিরক্ত হয়ে এবার ঘুমো ঘুমো চোখে উঠে বসে। মুখ দিয়ে গা*লি বের হতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়।
ফোন তুলে কানে ধরে। হ্যালো হ্যালো করতে থাকে। ইসরাত মুখে ওড়না চাপা দিয়ে বসে বসে হাসছে। বার কয়েক হ্যালো হ্যালো বলে চলেছে তালহা।
ইসরাত ফোন কেটে দেয়।
তালহা শুতে যাবে আবার কল আসে। এবার ও কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি।রাগে তালহা কল কেটে দেয়। তারপর ফোন বন্ধ করে আরামে ঘুম দেয়।
ইসরাত আরো একবার কল দিয়ে দেখে ফোন বন্ধ। এবার শব্দ করে হেসে উঠে। তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দেয়।তার মা শুনতে পারলে পা'গল হয়ে গেছে ভেবে পাবনা দিয়ে আসবে।
নিজের মনে হাসতে হাসতে শুয়ে পরে ইসরাত।
----------------------
নূরের রাতে সত্যিই অনেক জ্বর আসে কাঁপুনি দিয়ে। কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। ঔষধ খাইয়ে মাথায় পানি দিয়ে। জ্বর কমার নাম নেই।
নূরের বাবা ডাক্তার কে কল করে।সব শুনে উনি জানায় নূরকে যেনো ইমিডিয়েটলি হসপিটালে নিয়ে যায়।
নূরকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তাররা তাকে দেখছে। নূরের বাবা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে বেশ চিন্তিত। মেয়েটা এতোটা অসুস্থ হয়ে গেলো। ভাবতেই বুকে কষ্ট হচ্ছে।


চলবে,,,,,,,,,

গল্প: পরাণ দিয়ে ছুঁই
#পর্ব_
লেখনীতে: ঝর্ণা ইসলাম

আসসালামু আলাইকুম। সকলে রেসপন্স করবেন।

Post a Comment

0 Comments