Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নিষিদ্ধ নারী - পার্ট ৭

 রিতিকার অতীত বিচরণ ৪

--------------------------------------
অরুনিকার জ্ঞান ফিরতেই দেখল আশেপাশে অনেক গ্রাম্য মহিলা দাঁড়িয়ে আছে তাকে ঘিরে । রত্নাবর্তী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন, কি হয়েছিল রে মা?
—অরুনিকা ভাষা খুঁজে পায়না। সে কি বলবে! লিপার হত্যার কথা মনে পড়তেই গা শিউরে ওঠে। যাকে হত্যা করা হলো সে একজন নারী ছিল। যে হত্যা করে নিল সে নারীর সার্থক রূপ মা। আর যে হত্যা করল, সে একজন নারী আবার একজন মা'ও বটে।
—নারীদের সব থেকে ভরসার জায়গাতেও যদি প্রাণ সংশয় এর ভয় থাকে। তাহলে তুমি নারী বলতে কি পারো! নারীরা আসলে কোথায় নিরাপদ! অরুনিকার প্রশ্ন করার খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু সে ভয় পায়। নিজের মা'কে দেখে মন ভরে না। জীবনে প্রথমবারের মত নিজের মা'কেও তার ভয় লাগে।



—একবার অরুনিকার মনে হয় ছুটে গিয়ে পুলিশকে সব কিছু বলে দিতে। পরক্ষণেই মনে হয়, গ্রামের প্রধান যেখানে সব কিছুই জেনে অপরাধীর সাপোর্ট আছে।সেখানে তার মুখের কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে? সে ভালো করেই জানে কেউ বিশ্বাস করবে না।
—অরুনিকার জ্ঞান ফিরেছে দেখে গ্রামের মহিলারা সবাই ধীরে ধীরে চলে যায়। মেয়ের হটাৎ জ্ঞান হারাতে দেখে রত্নাবর্তী ভয় পেয়ে গেছেন। মেয়েকে মরার বাড়ি নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি মনে মনে ভাবে।
—কেউ বুঝতেও পারে না। কতটা ভয় পেয়ে অরুনিকা জ্ঞান হারিয়ে ছিল।
*******
—সময় যায় পানির মতো। দেখতেই দেখতে বছর তিন কেঁটে গেলো । এ বছর অরুনিকা দশম ক্লাস ভালো রেজাল্ট করেছে। বাড়িতে সবাই অনেক আনন্দ করছে। অরুনিকা ঘরে গিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। মাথাটা তার ঝিমঝিম করছে। আজকাল অমল তার সাথে ঠিকঠাক করে কথাও বলে না। সে বুকের ভেতর কেমন একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে। নিজের অশান্ত মন কে নিজেই শান্তনা দিয়ে ভাবে। অমলের মনের অবস্থা তো ঠিক নেই এখন। বছরের শুরুতেই চাকরি টা হাতছাড়া হয়েছে। বাড়িতে বোনের খরচও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। । ওর মা'ও নাকি অসুস্থ । এই সব কিছুর জন্যই হয়তো মনের অবস্থা ঠিক নেই। তাই ঠিকঠাক কথা বলছে না। দূরে দূরে থাকলেই তো আর ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় না। সপ্তাহে দু-বার নিয়ম করেই তো কত কাছেই না একে ওপরের চলে আসে তারা। তাহলে ভালোবাসা কমলো কোথায়। নিজের মনেই প্রশ্ন জাগে আবার নিজের থেকেই যথাযথ উত্তর খুঁজে বের করে অরুনিকা।
—রত্নাবর্তী মেয়ের ঘরে রসগোল্লা হাতে ঢুকে। মেয়ের ভালো রেজাল্টে পুরো গ্রামের ঘরে ঘরে রসগোল্লা দিয়েছে উনি। কিরে মা নে তোকে মিষ্টি মুখ করাই আমি। রত্নবর্তীর কন্ঠ শুনে চমকে উঠে সে। শোয়া থেকে ধরফর করে উঠে দূরে সরে বসে অরুনিকা।
—কিরে মা দূরে গেলি কেন,এইদিকে আয়।
—আমি এখন রসগোল্লা খাব না মা। তুমি রেখে দাও পরে খাব। মা-মেয়ের কথার মাঝে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রসগোল্লা হাতে ঘরে ঢুকে।
—কি হচ্ছে মা-মেয়েতে! আমার মেয়ে কে তুমি আগে মিষ্টি মুখ করিয়ে ফেললে রত্নাবর্তী!
—আয় মা এখন বাবার হাতেও মুখ মিষ্টি কর। রত্নাবর্তী বলতেই নিয়েছে, তোমার মেয়ে এখন খাবে না। ঠিক তখনি অরুনিকা বিছানা থেকে নেমে বাবার কাছে দাঁড়িয়ে রসগোল্লা মুখে পুড়ে নেই।
—অরুনিকার এমন আচরণে রত্নাবর্তী কষ্ট পান। মেয়েটা তার এই কয়েক বছরে অনেক পাল্টে গেছে। সেই যে লিপার মৃত্যুর পর থেকে এমন আচরণ শুরু হয়েছে দিনকে দিন তা শুধুই বাড়ছেই। মন খারাপ করে রত্নাবর্তী ঘর থেকে বাইরে চলে আসে। খোলা আকাশের নিচে আসতেই চোখ দিয়ে দুফোঁটা গড়িয়ে পড়ে জল। আভা এসে তখন মা কে জড়িয়ে ধরে বলে।
—মা আমাকে রসগোল্লা খাওয়াবে না!
—রত্নাবর্তী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে এই নে মা।
—অমল একটা চিঠি দিয়েছে৷
চিঠি তে শুধু চার লাইন লেখা ছিল।
প্রিয় লক্ষ্মী,
তোমাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলবার মতো সময় নেই। মা আমার আর তোমার বিয়েতে রাজি হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমাদের পালিয়ে বিয়ে করতে হবে। আজ রাত ২ ঘটিকায় পশ্চিমের পুকুর পাড়ে তোমার অপেক্ষায় থাকব।
ইতি,
তোমার ভালোবাসা।
চিঠিটা পড়ার পর থেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েছে অরুনিকা। অমলের চিঠিতে লেখা কথা গুলোর কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। এটা কেমন কথা, ছেলে যাকে ভালোবাসে মা হয়ে এটা কেন মেনে নিবে না!
অরুনিকা একবার চিন্তা করে বাবা কে গিয়ে অমলের ব্যাপারে সব খুলে বলবে। বাবা যদি অমলের মায়ের সাথে কথা বলে নিশ্চয়ই উনি রাজি হবে। দশ-পাঁচ ভাবতে ভাবতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘরের কাছে যেতেই রত্নাবর্তী কে দেখেই তার লিপার কথা মনে পড়ে যায়।
—লিপার মা প্রেমের জন্যই তো মেয়েকে হত্যা করে। তার মা-ও যদি অমলের ব্যাপারে জানার পর তাকে মেরে ফেলে। অরুনিকার এই ভয় তাকে রাতের অন্ধকারে অমলের কাছে পুকুর পাড়ে যেতে বাধ্য করে।
সারাদিন কাটে আতঙ্কে। এই বুঝি ধরা পড়ে যাবে। সন্ধ্যার পর থেকে অরুনিকার হাত-পা ভয়ে জমতে শুরু করে।
—রত্নাবর্তী মেয়ের কাছে বেশ কয়েকবার গেছে। মেয়ের অস্থিরতা মায়ের চোখ এড়াতে পারেনি। অরুনিকা'কে বার বার বুঝিয়েছে। মনের ভেতর কোন কথা যেন না রাখে না। সব কিছুই যেন তার সাথে শেয়ার করে। অরুনিকার মা রূপে নারীর প্রতি যে ভয়। সেই ভয় নিজের মনের ভেতর চলা অস্থিরতা ভাগাভাগি করে নিতে দেয়নি নিজের মা'এর সাথে।
—গভীর রাতে যখন সবাই ঘুম। তখন অরুনিকা নিজের স্কুল ব্যাগে কিছু কাপড় গুছিয়ে নিয়ে ধীর পায়ে বেড়িয়ে পড়ে বাড়ি থেকে। বাড়ি থেকে বেড় হয়ে, পেছন ফিরে বাবার কথা মনে করে চোখ থেকে দু’ফোঁটা জল ফেলে। মনে মনে বলে, খুব শিঘ্রই ফিরে আসবো বাবা। অন্ধকার গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে অরুনিকা যাচ্ছে পশ্চিমের পুকুর পাড়ে। ঝিঁঝি পোকার ডাকেও মাঝে মাঝে ভয়ে কেঁপে উঠে অরুনিকা।
—অমল একটা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। অরুনিকা কে আসতে দেখেই জড়িয়ে ধরে।
—অমল আমাদের কি পালাতেই হবে। তোমাকে তো বাবা খুব পছন্দ করে। একবার তুমি উনার সাথে কথা ব'লে দেখতে পারো। উনি যদি তোমার মায়ের সাথে কথা বলে, নিশ্চয়ই তোমার মা না বলবে না। বাবার পেশার জন্য বাবা'কে গ্রামের সবাই সম্মান করে। তোমার মা নিশ্চয়ই গ্রামের দশের বাইরে না। উনিও বাকী সবার মতো আমার বাবা কে সম্মান করে।
—অরুনিকার কথায় অমল বেশ বিরক্তবোধ করল। মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। অন্ধকারের কারণে তা অরুনিকার চোখে পড়ে না।
—অমল ধীর স্বরে বলল, যদি মাস্টার মশাইয়ের কথা তে মা রাজি হতেন তাহলে আমি নিজেই সর্ব প্রথম তোমার বাবা কে আমার আর তোমার কথা বলতাম। পালিয়ে বিয়ে করে আমরা আবার ফিরেই আসব। তখন আর মা কিছুই বলতে বা করতে পারবে না।
—চলো এখন সময় নষ্ট করিও না। স্টেশন তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে। কলকাতা যাওয়ার শেষ ট্রেন এটা। অরুনিকা শক্ত করে অমলের হাত ধরে বলে, চল তুমি যা ঠিক মনে কর তাই হবে।
—অমলের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে।
—তারা রাত দুই বেজে ত্রিশ মিনিটে ট্রেনে উঠে । অরুনিকা জানালার পাশে বসে বাইরে অন্ধকারাচ্ছন্ন জেনাকিদের অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলে আজ আমার ভালোবাসা সত্য হতে চলছে । আমি ভালোবাসার জীবনে ব্যর্থ হইনি লিপা। তুই যেখানেই থাক না কেন। আমি জানি আমার প্রেম সার্থকে তুইও খুশি হয়েছিস।
—অরুনিকার সুপ্ত ভালোবাসা বাইরে অমলের অসৎ ইচ্ছে তার দৃষ্টির অগোচরে রয়ে যায়। ট্রেন চলছে দ্রুত গতিতে সেই সাথে যেন পাল্লা দিয়ে অমলের অসৎ ইচ্ছে পূরণের দিকেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

কি ব্যাপার রিতিকা! কি হয়েছে আপনার?
—অন্যমনস্ক হয়ে রিতিকা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অতীত নিয়ে ভাবছে। তপনের কথাই পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল। কই কিছুই তো হয়নি।
—তাহলে, জানালার পাশে একা কেন দাঁড়িয়ে? সবাই তো নিচে আপনার খোঁজ করছে।
—হুম, আমি যাচ্ছি একটু পর, আপনি যান।
—তপন যখন চলে যেতে নিয়েছে তখন পেছন থেকে রিতিকা বলল। গতকালের ব্যবহারের জন্য সরি। আমি আসলে ওই ভাবে কথাটা বলতে চাইনি। আভার খোঁজ পাওয়াটা জরুরি তাই টেনশনে এর মাথায় আপনাকে উলটাপালটা কথা শুনিয়ে দিয়েছি।
— পেছনে না তাকিয়ে বলল,সমস্যা নেই। আমি আপনার বোনের খোঁজ করার চেষ্টা করছি তারপর তারাতাড়ি নিচে আসুন বলেই মুচকি হেসে চলে গেল তপন।
—রিতিকা আরও কিছুক্ষণ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকল। অতীতের সেই রাতের ট্রেনের আওয়াজ আজও তার কানে বাজে।
রিতিকাকে নিচে নামতে দেখে তজশ্রী ব্যানার্জি বলল, আমার বৌমা'র জন্য সব থেকে ভালো শাড়ি দেখান। তজশ্রী নিজেই শাড়ি পছন্দ করে হাতে তুলে নিয়ে বলল, দেখ তো মা বিয়ের জন্য এই শাড়িটা কেমন।
—জি মা, ভালো। শেফালী দিদি'কে মানাবে এই শাড়িতে।
—এটা শেফালীর জন্য না। এটা তোমার জন্য বৌমা। আমি ভাবছি তোমার আর তপন এর বিয়েটা ধুমধামে করব। তোমাদের তো শুধু রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়েছে।
—বিয়ের কথা শুনেই না বলে চিৎকার দিয়ে পেছনে দু'পা সরে যায় রিতিকা।
—রিতিকার এমন আচরণে সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে।
—তপন এমন পরিস্থিতি কি ভাবে সামাল দিবে বুঝে উঠতে পারে না।সে নিজেও জানত না তার মা রিতিকা আর তার বিয়ের পরিকল্পনা করছে।
—তজশ্রী ব্যানার্জি বলল, কি হয়েছে মা? তুমি এই ভাবে না বললে কেন?
—রিতিকা কি বলবে ভেবে পায়না। আমতা আমতা করে বলতেই নিয়েছে আমি এই বিয়ে করতে পারবো না তখনই তপন এসে রিতিকার পাশে দাঁড়িয়ে বলল। কি মা তুমি অযথা এই সব কেন করতে চাচ্ছো। বিয়েতো আমাদের হয়েই গেছে।তাহলে এখানে এই সব ঘটা করে রিচুয়ালের এর কি প্রয়োজন!
— প্রয়োজন আছে তুই বুঝবি না। আত্মীয় স্বজনর- পাড়া পড়শী কি ভাববে! ব্যানার্জি পরিবারের একমাত্র ছেলের বিয়ে করালো অথচ কাউকে বলার প্রয়োজন মনে করল না। এই বাড়ির নাম ডাক ধরে রাখতে হবে নাকি!আর তা বাদেও এখন কার ওই সব রেজিষ্ট্রি করে বিয়ে আমার পছন্দ না। বিয়ে তো হবে লগ্ন দেখে। হিন্দু রিচুয়াল ফলো করেই তোর বিয়ে হবে।
— তপন ফিসফিসিয়ে মায়ের কানে কানে বলল। কিন্তু মা, তুমি তো জানোই লতিকা খ্রিষ্ট।
—এই জন্যই রিচুয়াল আবশ্যক তপন। দেখি সরে যা এখন। কথা বলে আমার সময় নষ্ট করিস না তো। লতিকা বৌমা এই দিকে আসো। তুমি তোমার পছন্দের সহিত শাড়ি বেছে নাও।
—রিতিকা সোফায় বসে তপন এর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। তার ভাগ্যে এ আবার নতুন কোন খেলা বুঝে উঠতে পারে না রিতিকা।
*****
খুনের দায় স্বীকার করায় দিপেশ এর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড রায় হয়েছে। ফিরোজা অনেক্ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে দিপেশ এর সাথে দেখা করার জন্য। দিপেশ স্যারেন্ডার করার পর থেকে ফিরোজার পক্ষে একা বাইরে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূমেন্দ্র সেন এর লোকেরা সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। রণক তো পাগলা কুকুরের মতো খুঁজছে ফিরোজা'কে। সে জেল সুপারের কাছ থেকে পারমিশন নিয়েছে খুবই গোপনে। ভূমেন্দ্র সেন এর লোকদের চোখ এড়িয়ে এতদূর আসা সত্যি কষ্টকর ছিল ফিরোজার জন্য।
—দিপেশ উষার কথা ভুলতে পারে না। কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার দিয়ে উঠে বলে, না না এটা হতে পারে না। উষা আমার বোন হতেই পারে না।
—মাথা নিচু করে বিড়বিড় করতে করে দিপেশ।দুই কারারক্ষী তাকে নিয়ে আসে।
—দিপেশ কে দেখে বেঞ্চ থেকে উঠে ওর কাছে এসে দাঁড়ায় ফিরোজা। এই তুমি কেমন মানুষ হ্যা? আমার কথা একবারও ভাবলে না। স্যারেন্ডার করার আগে আমার সাথে একবার কথা বলতে তো পারতে? হটাৎ এমন কি হলো যে তুমি এসে স্যারেন্ডার করলে? তুমি জানো রণক আমাকে পাগলা কুকুরের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর ভূমেন্দ্র সেন এর লোকেরাও খুঁজছে আমাকে।
—দিপেশ ছলছল চোখে ফিরোজার দিকে তাকিয়ে বলল, উষা আমার বোন ছিল।
—ফিরোজা বিড়বিড় করে বলল, এ আবার কেমন পাগলামি। নিজের শত্রুর মেয়ে কে মারার সময় পৈশাচিক আনন্দ উপলব্ধি করে এখন কি না সাধু সেজে বলে বোন ছিল।
—দিপেশ তখনও বিড়বিড় করে বলেই চলছে। না এটা হতে পারে না। উষা আমার বোন হতেই পারে না।
—ফিরোজা কিচ্ছুক্ষণ দিপেশ এর দিকে তাকিয়ে থেকে ওর হাতে হাত রেখে বলল। হ্যা তাতো জানি লক্ষীটি, এক সাথে বড় হয়েছ বোনের মতোই ছিল। কিন্তু এটা তো ভুললে চলবে না, উষা ছিল তোমার শত্রুর মেয়ে।
—ফিরোজার কথা শুনেই হটাৎ করেই দিপেশের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে উঠে। দেখতেই দেখতে ফিরোজা গলা চেপে ধরে। চিৎকার করে বলে উষা আমার নিজের বোন ছিল।
—দুই কারারক্ষী এসে ফিরোজা কে দিপেশ এর হাত থেকে ছাড়িয়ে দিপেশকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা শুরু করে। দিপেশ পাগলের মতো এক কথাই বার বার বলে উষা আমার নিজের বোন ছিল।
—কারারক্ষীরা যখন দিপেশকে নিয়ে যাচ্ছে। তখন ছলছল চোখে ফিরোজার দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে বলে। উষা আমার বোন ছিল ফিরোজা। ওরা আমার হাতেই আমার বোনের খুন করিয়েছে। ওরা আমার মা'কে খুন করেছিল। ওরা অক্ষরা কেউ খুন করেছিল আর এখন আমার হাতেই আমার বোন উষা'কে খুন করিয়েছে। উষা আমার বোন ছিল ফিরোজা কথা গুলো বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে দিপেশ। কারারক্ষীরা টেনে হিঁচড়ে দিপেশ'কে নিয়ে ভেতরে চলে যায়।
—ফিরোজা গলা ধরে মাটিতে বসে থেকে দিপেশকে নিয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে কিছুই বুঝতে পারে না। দিপেশ এর আগে কখনো এমন আচারণ তার সাথে করেনি। নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলে ওঠে ফিরোজা। দিপেশ এর কথার মানে কি! দিপেশ কি তবে পাগল হয়ে গেল।
********
—আভা চীনে পৌঁছার পর বেশ কয়েকবার রণক এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রণক ফোন রিসিভ করে না।
—মা-বাবার ছবির সামনে বসে প্রদিপ জ্বালিয়ে আভার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। বহু বছর আগে মা-বাবা'কে হারানোর পর দিদিই ছিল তার একমাত্র আপনজন। কিন্তু আজ তার দিদিও এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই। চোখের পানি মুছে ফোন হাতে নিয়ে সে আবারও রণক এর কাছে ফোন দেয় । কিন্তু এবারও রণক ফোন রিসিভ করে না।
-হটাৎ করেই তার মন বলে উঠে। রণক দাদার কথা শুনে এই-ভাবে আগের নাম্বার বন্ধ করে রাখা উচিত হয়নি তার। হতেই তো পারে দিদির খুনিরা ওই নাম্বারে ফোন দিয়েছে তাকে খোঁজার জন্য। আভা সময় নষ্ট না করে পুরোনো সিম বের করে ফোনে তুলে।
—ফোনে সিম তোলার কিছুক্ষণ পরেই বেশ কিছু এসেমেস আসে।
—মেসেজ গুলো পড়তেই আনন্দে চোখের কোণে জল চল আসে। ঠোঁটের কোণে চলে আসে হাসির রেখা। দিদি বেঁচে আছে ব'লেই চিৎকার করে উঠে আভা। তার রুমমেট জু'জিয়াও আভার চিৎকারে ভয় পেয়ে দৌড়ে এসে বলে।
—ই ওয়া চেনমেলিয়াও? নি ওয়েইশেইম চেইমি হান?
—আভা জু'জি কে জড়িয়ে ধরে বলে। এ লোট হ্যাজ হ্যাপেন্ড জু'জি। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। আমার দিদি বেঁচে আছে।
— জু'জিয়াও আভার বাংলা কথা বুঝতে পারে না। হোয়াট আর ইউ ছে আভা? আই ডোন্ট আন্ডারস্টান্ড এনিথিং।
—ওহ জু'জি কেন বুঝতে পারছো না। আমার দিদি বেঁচে আছে। বুঝলে তুমি? আমার দিদি বেঁচে আছেয়েয়েয়ে.... আভা দৌড়ে গিয়ে দূর্গার পায়ে মাথা ঠেকে বলল, কোটি কোটি প্রণাম মা। তোমার কৃপায় আমি আমার দিদি কে ফেরত পেয়েছি।
—ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ আসা নাম্বারে কল করে আভা।

তপন অরুনিকার কথোপকথন
-------------------------------------------
বিয়ের আয়োজনে বাড়িতে সব ছোটাছুটি করে কাজ করছে। হাতে মেহেদী দিয়ে রিতিকা বসে আছে জানালার পাশে। সকাল থেকেই তপনের খোঁজ সে করেছে বেশ কয়েকবার কিন্তু মানুষটার কোন খোঁজ সে এখনো পাইনি। যে ভাবে বিয়ের তোরজোর শুরু হয়েছে মনে হচ্ছে বিয়ে না করে উপায় নেই। কীভাবে সবাইকে সে বোঝাবে,কোন বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্যতা তার নেই। তপনের হাবভাবে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে এই বিয়ে তে রাজি। কিন্তু কি অদ্ভুত এই পুরুষ সমাজ নারীর মনের কথা কি কেউ'ই কেন জানতে চায় না!
—সেই দিন তো রিতিকা স্পষ্ট ভাষায় তাকে জানিয়ে দিয়েছিল এই বাড়ি থেকে সে চলে যেতে চায়। তারপর এই ভাবে বিয়ে অব্দি গড়ানো ব্যাপারটা রিতিকার ভালো লাগে না।
—এক মনে জানালার দিকে তাকিয়ে কি এতো ভাবছেন মিস রিতিকা? আমাকে বিয়ে না কারার হাজারো যুক্তি সাজাচ্ছেন নিশ্চয়ই মাথার ভেতর।
—তপনের কথায় রিতিকা নড়েচড়ে বসল। আপনি সবই যখন জানেন, তাহলে এই ভাবে সবটাই কঠিন করে কেন তুলছেন?
—কারণটা খুব সহজ। সেই দিন আপনার কথায় একটু, না না অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি। সেই দিন ভাবলাম আপনাকে মুক্ত করে দিব। কিন্তু পড়ে হটাৎ মনে পড়লো না, মুক্ত করার জন্য তো আপনাকে নিজের কাছে নিয়ে আসিনি।
—রিতিকা অবাক হয়। কারণ এই প্রথম সে তপনকে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে দেখছে। এতোদিন মাটির দিকে তাকিয়ে অথবা অন্যকোন দিকে তাকিয়ে কথা বলত তপন।
—তপন দরজা লাগিয়ে রিতিকার পাশে এসে বসে।
—রিতিকা একটু সরে গিয়ে বলল,আপনার কথা কিছুই বুঝতে পাচ্ছি না।
— বুঝতে চাইলে বোঝা যায়, কঠিন কিছুই না। তপন রিতিকার মেহেদী দেওয়া হাত আলতো করে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল, ভালোবাসি মিস রিতিকা।
—রিতিকা কথাটা শোনার পর তপনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না। চোখ সরিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে বলল, এটা মোহ।
—তপন হেসে বলল, আপনি নিশ্চয়ই মিস ওয়ার্ল্ড নইত সৌন্দর্যে দেবী। তা যদি না হন তাহলে মোহ কথাটা বলতেন না।
—তপনের ইয়ার্কি দেখে রিতিকার বেশ রাগ হয়। গম্ভীর কণ্ঠে বলে আমি মিস ওয়ার্ল্ড ও না আর না সৌন্দর্যের দেবী আমি দেহ পসারিণী।
—কথাটা বলেই চুপ হয়ে যায় রিতিকা। রিতিকার এমন কথায় তপন নিজেও সহসা কিছু বলে উঠতে পারে না। কিছুক্ষণ আগ অব্দি যেখানে বেশ মজা করে কথা চলছিল ভালোবাসার। সেখানেই এখন নিস্তব্ধতা।
—নিরবতা কাটিয়ে তপন বলল, আমি জানি আপনি দেহ পসারিণী। তার মানে তো আর এটা না যো আপনি সুন্দর না। আপনি মিস ওয়ার্ল্ড বা সৌন্দর্যের দেবী না হতে পারেন কিন্তু আমার মন আলোই ভরে তোলা এক অপরূপ নারী আপনি।
—তপনের কথায় বিস্মিত হয়ে রিতিকা তাকায় তার দিকে। অস্ফুটস্বরে বলে উঠে আপনি জানেন আমি দেহ পসারিণী?
—রিতিকার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে এই কথা আর কখনো বলবে না। আমি চাইনা এই কথা এক কান, দু কান হোক।
—কিন্তু কি করে আপনি জানেন?
—রিতিকা আপনার কি মনে হয়! কারো সম্পর্কে জানাটা কি খুব কঠিন কিছু?
যদি আপনার সম্পর্কে কিছু নাই জানতাম তাহলে চিকিৎসা কীভাবে করতাম? যেদিন আপনাকে জঙ্গলে নদীর ধারে খুঁজে পাই আমি। সেই দিন পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে এমন একটি জায়গা খুঁজতে ছিলাম যেখানে মৃত্যুর পর কেউ খুঁজেও পাবে না আমার দেহ।
জঙ্গলের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ আপনাকে পাই। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন আপনি। আপনার শরীরের আঘাত বলে দিচ্ছিল আপনি ধর্ষনের শিকার। আপনাকে নিয়ে হসপিটালে আসার পর আপনার সেকেন্ডে জ্ঞান আসা যাওয়া দেখে ভিষণ ভয় পেয়ে যাই। এই বুঝি জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আপনি চিরবিদায় নিবেন পৃথিবী থেকে। আপনার জ্ঞান আসার সেই কয়েক মূহুর্তে আপনি যখন বিড়বিড় করে বললেন। আমাকে মেরো না। আমি ছাড়া আভার কেউ নেই। আপনার সেই অস্ফুট স্বর আমাকে তাড়া করেছে রাতের পর রাত দিনের পর দিন। যে মানুষ কি না আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে ছিলাম। সেই মানুষ আপনার বাঁচার আকাঙ্ক্ষা দেখে নতুন করে বাঁচতে শিখেছি।
—আপনাকে সেই দিন সময়ে ইনজেকশন দিতে না পারার কারনেই আপনি কোমায় চলে যান। মস্তিষ্কের চূড়ান্ত পর্যায়ের ব্যর্থতা বা ফেইলিওরের উদাহরণই হলো কোমা। আমি কেন জানি আপনার এই ফেইলিওর মেনে নিতে পাচ্ছিলাম না। তাই প্রাণপণ চেষ্টা করেছি আপনার জ্ঞান ফেরানোর। কিন্তু পারিনি, আপনি কোমায় চলে যান।
সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোমার শেষ হয়। হয় রোগী আবার জেগে ওঠে বা সচেতন হয়, নয়তো মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। কিন্তু বিরল ক্ষেত্রে কেউ কেউ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কোমায় থাকতে পারে। আমি অপেক্ষা করলাম আপনার জ্ঞান ফিরে আসার। কয়েক দিনে যখন আপনার জ্ঞান ফিরলো না। তখন আমার মনে হলো আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলছি। জানি না অপরিচিত এক ধর্ষিতা নারীর জন্য এ কেমন অনুভূতি। আমি সারাদিন আপনার পাশেই বসে থাকতাম। আপনার ব্রেইন ডেথ’ হয়েছিল।
—তপনের কথার মাঝে রিতিকা বলে উঠলো ব্রেইন ডেথ এর মানে কি? আমি কি মরে যাওয়া থেকে ফিরে এসেছি?
—রিতিকার এমন কথায় তপনের হাসি পায়। সে একটু হেসে বলে আরেহ না। মরে গেলে এখানে বসে কীভাবে থাকতেন!
ব্রেইন ডেথ অর্থ, মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি বা মস্তিষ্কের সব কার্যক্রম থেমে যাওয়া। কেউ কোমায় চলে গেলে প্রথম কাজ হলো রিসাসিসেটশন বা জরুরি চিকিৎসা। সংক্ষেপে ‘এবিসি’ রক্ষা করা। ‘এ’ মানে এয়ারওয়ে বা শ্বাসনালি, ‘বি’ মানে ব্রিদিং বা শ্বাসপ্রশ্বাস আর ‘সি’ হলো সার্কুলেশন বা রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করা। যেকোনো মানুষ জ্ঞান বা চেতনা হারালে এবিসির মাধ্যমে তার শারীরিক মূল প্রক্রিয়াগুলো চালু করার চেষ্টা করতে হয়। বেসিক লাইফ সাপোর্ট বা সিপিআরে কাজ যখন হলো না। আপনার জ্ঞান কয়েক সপ্তাহ তেও ফিরল না। তখন আমি আর সময় নষ্ট না করে আপনাকে অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট দেওয়া শুরু করি। যার জন্য প্রয়োজন ছিল আপনার অতীত সম্পর্কে জানা। কোমায় থাকা মানুষের অতীত বা কোমায় যাওয়ার যথাযথ কারণ জানতে পারলে অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্টে কোমায় থাকা মানুষকে সুস্থ করে তোলা যায়।
—কিন্তু আমি যেহেতু হসপিটালের প্রোটোকল সাইটে রেখে আপনার চিকিৎসা করছিলাম তাই আপনার অতীত জানতে সরাসরি পুলিশ এর সাহায্য নিতে পারিনি। গোপনে এক গোয়েন্দা বন্ধুর সাহায্যে আমি আপনার হিস্ট্রি খুঁজে বের করি। এরপর বাসায় নিয়ে এসে আপনার প্রোপার চিকিৎসা করি। আর দেখুন আমি আপনাকে সুস্থ করে তুলেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও আপনি সুস্থ হওয়ার পর আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য বেশ ভালোই লাফালাফি করছেন।
—রিতিকার চোখে জল টলমল করছে। সে কথা ঘোরাতে বলল, ডাক্তারা সত্যি বেরসিক মানুষ হয়। এই ছোট্ট কাহিনী বলতে নিয়ে অর্ধেক তো কোমার এবিসি
চিকিৎসা নিয়ে বললেন।
—রিতিকার কথায় তপন উচ্চ শব্দে হো হো করে হেসে উঠে।
—রিতিকা নিজের চোখের জল আটকে রাখতে পারেনা। পৃথিবী সত্যি অদ্ভুত। কিছু পুরুষ আছে যারা নারীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আবার কিছু পুরুষ যারা নারীকে সযত্নে আগলে রাখে। এমন পুরুষের ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া রিতিকার পক্ষে কি আদৌও সম্ভব।
—কি হলো এই ভাবে চোখের জল নষ্ট করার কোন মানে দেখছি না।
—আপনার মানে দেখতে হবে না। রিতিকা উঠে দাঁড়িয়ে বলে, সব কিছুই যখন জানেন তখন সময় নষ্ট না করে সবাইকে সব সত্য বলে আমার যাওয়ার পথ সহজ করে দিন।
—এটা সম্ভব না মিস অরুনিকা গঙ্গোপাধ্যায়।
—রিতিকা চোখ ছানাবড়া করে তাকায় তপন এর দিকে, আপনি আমার নাম কি করে জানলেন!
—ওহ অরুনিকা আপনি এতো বোকার মতো প্রশ্ন কেন করেন? আপনার সম্পর্কে সব কিছুই জানি একটু আগেই তো বললাম। পরিচয় খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন বিষয় না। আমি আপনার অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনা জানতে চাই। আপনার গ্রাম থেকে যতটুকু শুনেছি তা সত্য বলে মনে হয়নি। আমি আপনার কাছে সবটা জানতে চাই। এই পথে আসার হিস্ট্রি আমাকে বলুন। মনের সব গোপন কথা আমার সাথে আজ এখানে ভাগাভাগি করেনিন। আর এই ঘর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে একদম অতীত ভুলে যাবেন কারণ আমারা এক সাথে শুরু করবো নতুন জীবন।
—রিতিকা কিছু বলতেই নিয়েছে তখন ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে আভার নাম ভাসতে দেখে রিতিকার খুশিতে নেচে উঠে। ঝটপট কল রিসিভ করে সে। বহুদিন পর দুই বোন কথা বলছে। পাশে দাঁড়িয়ে তপন রিতিকার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এমন খুশি হতে এর আগে কখনো দেখেনি রিতিকা'কে তপন। তপন মনে মনে বলে তোমার মুখের এই হাসি কখনো দূরে যেতে দিব না। তুমি হাসিতে সুন্দর আমার অরুনিকা।


To be continued.....


গল্প: নিষিদ্ধ নারী (প্রেম কাহিনী)

পার্ট:-০৭
লেখনীতে: সামিনা সামি

Post a Comment

0 Comments