তনা আবার কান্না শুরু করে দিল
-- কি হলো আবার কাঁদছ কেন?
তনা নীলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
-- আমাকে হ্মমা করে দেও নীল। আমি জানি তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না। পরেও আমি আমার ভয় টাক
দূর করতে পারি না। আমি বার বার তোমার অতীত কে তোমার সামনে নিয়ে এসে তোমাকে কষ্ট দেই।আমি তোমার পঁচা বউ।
তনা ছোট বাচ্চাদের মত কাঁদছে
--আমি কান্না করলে কিন্তু আমাকে একদম ভালো দেখায় না। তুমি কি চাও আমি ও তোমার সাথে কান্না করি?
তনা নীলের কথা শুনে হেসে দিল
--কান্না করলে সত্যি ই তোমাকে খুব বাজে লাগে। তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো আমি খাবার দিচ্ছি।তোমার অফিসের জন্য লেট হয়ে যাবে তো।
নীল ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। তনা ও নীলের পাশে বসে আছে
-- কি হলো তুমি খাচ্ছো না যে?
-- আমার খেতে ভালো লাগে না। সব কিছু কেমন বাজে লাগে। খেতে ইচ্ছে হয় না একদম।
-- খেতে ইচ্ছে হয় না?
কি হয়েছে। তোমার শরীর ঠিক আছে তো। আগে আমাকে কিছু বলনি কেন। চলো এখনই ডক্টরের কাছে যাব।
-- আরে মি.জামাই এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন। আমার কিছু ই হয়নি।
-- কিছু হয়নি?
-- বললাম তো না।
আচ্ছা নীল আজ একটু আমাদের বাসায় নিয়ে যাবে?
-- আমরা তো আমাদের বাসায় ই আছি।
-- আরে বুদ্ধু আমাদের বাসা মানে আমার বাবার বাসায়।
-- ওহ,,, হুম নিয়ে যাব ঠিক আছে কিন্তু তুই ওখানে থাকতে পারবে না। আমার সাথে আবার চলে আসতে হবে।
তনা নীলের দিকে চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে
--মি.নীল বিয়ের পর কয়দিন আমাকে বাবার বাসায় গিয়ে থাকতে দিছেন?
নীল মাথা নিচু করে মাথা চুলকাচ্ছে
-- তুমি তো জানোই তোমাকে না দেখে আমি এক মূহুর্ত ও থাকতে পারি না। কিছুক্ষণ তোমাকে না দেখলে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
-- হুম মি. তাই তো অফিসে গেলে আপনার কাজ গুলোকে পেলে আমার কথা আর মনে থাকে না। ফোন দিলেই শুধু কাজ কাজ করেন।
-- জি না মিসেস আপনাকে আমি কখনও ভুলি না।আপনি সব সময় আমার মনের মাঝেই থাকেন।
-- আমার তো মনে হয় তোমার কাজ আমার থেকে তোমার কাছে বেশি ইম্পর্টেন্ট।
-- এই পৃথিবীতে তোমার থেকে ইম্পর্টেন্ট আমার কাছে কিছু নেই। তোমার বাবা আমার উপর কতটা বিশ্বাস করে এসব কিছুর দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন। এখন যদি আমি কাজ কাজ না করে শুধু বউ বউ করি তাহলে এগুলো কে দেখবে?
-- হুম হয়েছে আর চাপা মারতে হবে না। আর কত খাবেন এখন উঠেন। আমি বাবার বাসায় যাব।
-- আমি তো কিছুই খেলাম না।
-- কি,,,,,?
-- কি,,, কি? এতক্ষণ আপনি খাইছেন।
-- আমি খাইছি?
-- হুম রাহ্মশনীর মত আমার হাত ও চেটেপুটে খেয়েছেন।
তনা যখন নীলের সাথে কথা বলছিল তখন নীল তনাকে খাইয়ে দিচ্ছিল।তনা নীলের সাথে কথা বলাতে এতই ব্যাস্ত ছিল যে কখন তনা খেল তা তনার খেয়াল ই নেই।
-- এটা চিটিং। তুমি আমাকে চিটিং করে খাইয়ে দিছ।
-- হুম ম্যাডাম চিটিং! আমি চিটিং করাতে কার উপকার হলো।খাবার গুলো কার পেটে গেল?
-- আমি কিছু জানি না তুমি আমার সাথে চিটিং করছ।
নীল তনাকে কিছু বলতে যাবে তখনই নীলের ফোন বেঁজে উঠে।নীল ফোন হাতে নিয়ে দেখে অফিস থেকে পি.এ কল দিছে।
-- হ্যা জাহিদ বলো।
-- স্যার আজকে জবের জন্য ইন্টারভিউ নেওয়ার কথা ছিল। আপনি তো এখনও অফিসে আসলেন না। আজ কি ইন্টারভিউ নিবেন না?
-- জাহিদ আমি আজ অফিসে আসতে পারবো না। তুমি ওদিকে সব সামলে নিও।আজকের ইন্টারভিউ তুমি নিয়ে নেও।আর কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোনে জানিও।
-- আচ্ছা স্যার তাহলে রাখছি।
-- হুম।
-- আজ তুমি অফিসে যাবে না?
-- না।
-- কেন?
-- কেন কি? তুমি না একটু আগে বললে তোমার বাবার বাসায় যাবে।
-- হুম। তুমি আমাকে বাসায় দিয়ে অফিসে চলে যাও।
-- হুম ম্যাডাম।আমি তোমাকে ওখানে রেখে অফিসে চলে যাই। আর তুমি আজ বাবার বাসায় থেকে যাও?
এসব হবে না। আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো আবার আমার সাথে করে নিয়ে আসবো।
.
.
.
কলিং বেল বাজার শব্দ শুনে নাজমা চৌধুরী রুম থেকে বের হয়ে এসে মেইন ডোর খুলে দেখে তনা আর নীল দাড়িয়ে আছে।তনা তার আম্মু কে দেখার সাথে সাথে আম্মু বলে জড়িয়ে ধরলো।
-- তোরা এসে গেছিস।ভেতরে আয়।নীল বাবা ভেতরে এসো।
-- আসসালামু আলাইকুম আম্মু কেমন আছেন।
-- ওয়ালাইকুম আসসালামু বাবা এই তো ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?
তনা তুই যে নীলকে নিয়ে বাসায় আসবি তা জানাস নি কেন। আমি তোদের জন্য রান্না করে রাখতাম।
-- রাখো তো তোমার রান্না। কতদিন পর বাসায় আসলাম। আব্বু কোথায়?
-- এই টাইমে তোর আব্বু আর কোথায় থাকবে?
-- আমি আসবো জেনেও আব্বু এখনও বাসায় আসেনি?
পিছন থেকে আজহার চৌধুরী মানে তনার আব্বু
-- এই তো আমি এসে গেছি। আমার মামনি টা বাসায় আসবে আর আমি অফিস করবো তা কি কখনও হয়?
-- আব্বু তুমি অনেক পচা একটা দিন ও আমাকে দেখার জন্য আমাদের বাসায় যাও নি।
-- রাগ করে না মামনি।অফিসের কাজ সেরে আর সময় হয়ে উঠে না। আমি তো নীলকে বলে দিয়েছি তুমি যখন চাইবে তখনই যেন তোমাকে এখানে নিয়ে আসে।
-- তোমাদের জামাই তো তোমার মতই সারা দিন শুধু কাজ কাজ করে। আমার জন্য একটু ও টাইম হয় না।
-- দেখলেন তো বাবা আপনার মেয়ে কি মিথ্যা বলে।ঐদিন ই তো অফিস কামাই করে ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। কত জায়গায় ঘুরলো কত কিছু শপিং করলো।আর আজ বলছে আমি ওকে টাইম দেই না।
--তোমরা সবাই পঁচা। সবার শুধু কাজ আর কাজ।এতো কাজ করে কি হবে?
আমি আমার রুমে গেলাম।কতদিন ধরে আমার রুমে যাই না। বেলকনিতে রাখা আমার গোলাপ গাছ গুলো কেমন আছে তা ও দেখা হয়না। আম্মু তুমি আমার গাছ
গুলোর ঠিক মত যত্ন রাখছো তো?
-- দিনে দু'বার করে তোর গাছে পানি দেই।গিয়ে দেখ কত গুলো কলি আসছে গাছে। কয়েকটা আজ কালকের ভিতরেই ফুটবে।
-- সত্যি? আমি দেখে আসি।
তনা দৌড়ে সিরি বেয়ে উপরে ওর রুমে চলে গেল। তনার মা পিছন থেকে তনাকে ডেকে
-- আস্তে যা পড়ে যাবি তো। আর নীলকে সাথে করে তোর রুমে নিয়ে যা। দেখছ মেয়েটা কি পাগল। জামাই কে একা রেখেই উপরে চলে গেল।
-- সমস্যা নেই আম্মু। আমি এখন রুমে যাব না। আমার একটু কাজ আছে।
-- সে কি তুমি কি চলে যাবে? না না এখন কোথাও যাওয়া চলবে না।
-- কাজটা সেরেই আবার চলে আসবো।
-- আমি কিন্তু তোমার পছন্দের খাবার রান্না করবো।
-- আমি জানি তো আম্মু। আপনি প্রতি বার ই আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করেন। আমি কি মায়ের হাতের রান্না মিস করতে পারি। কাজ সেরে এসে এক সাথে সবাই লাঞ্চ করবো।
-- আচ্ছা তাহলে তারাতারি আসবে।
নীল চলে গেলে তনার আম্মু তনার আব্বু কে বলছে
-- দেখলে ছেলেটা কত ভালো।
-- হুম সত্যি ই নীলের মত ছেলে হয়না। প্রথমে আমি ওকে বুঝতে ভুল করলেও এখন ঠিকই বুঝতে পারছি। আমাদের মেয়ের পছন্দ খারাপ হতে পারে না এটা এখন আমি প্রমান পাচ্ছি।
-- মা হারা ছেলেটা জীবনে কত কষ্ট ই না করেছে। এত কিছুর পর ও সব সময় মুখে হাসি লেগেই থাকে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের মেয়েকে অনেক ভালোবাসে।তোমার পাজি মেয়েটার সব আবদার হাসি মুখে মেনে নেয়।
-- আমাদের তনা ভাগ্য করে নীলের মত ছেলেকে স্বামী হিসেবে পেয়েছে।
দুপুরে সবাই এক সাথে ডাইনিং টেবিলে বসে লাঞ্চ করছে। তনার বাবা আর নীল বিজনেস নিয়ে নানা কথা বলে যাচ্ছে। তনা ওসবে কান না দিয়ে চুপ চাপ নিজের মত খেয়ে যাচ্ছে। নীল তনার দিকে লক্ষ্য করে
-- তনা তুমি তো সকালে খেতে চাইছিলে না। সব কিছু নাকি তোমার কাছে বাজে লাগে। খেতে ইচ্ছে হয় না। এখন তো দেখছি রাহ্মসনীদের মত সব কিছু একাই খেয়ে যাচ্ছ।
-- তুমি আর একবার আমাকে রাহ্মসনী বললে তোমার সামনের দু'টা দাঁত ভেঙ্গে দিব তখন আর কারো সামনে কথা বলতে পারবে না।
--দেখলেন তো আম্মু আপনার মেয়ে কতটা গুন্ডি। সারাক্ষণ শুধু আমাকে মারার কথা বলে।
-- তনা এসব কি কথা নিজের স্বামী কে কেউ মারে নাকি? (তনার আম্মু)
-- আম্মু তুমি দেখনা নীল আমাকে কেমন রাহ্মসনী বলে।বাসায় নিজে রান্না করি। নিজের রান্না খেতে ভালো লাগে??
আর আমি তো ভালো করে রান্না করতে পারি না। তাই সব কিছু কেমন বাজে লাগে।
-- তাহলে স্বীকার করলে তো তোমার রান্না যে বাজে??
--
-- রাগ দেখালে কি সত্য পাল্টে যাবে। আম্মু আপনার মেয়ের হাতে ওসব বাজে রান্না খেতে খেতে আমার রুচি ই নষ্ট হয়ে গেল। কত বার বলছি একটা কাজের লোক রাখি।কিন্তু কে শুনে কার কথা। পাকনামি করে সব কাজ একা করতে চায়।
-- আমার যে মেয়েটা এক গ্লাস পানি নিজে নিয়ে খেত না সে কিনা একা বাসার সব কাজ করে। আর কাজের লোক ও রাখতে দেয় না।(তনার আব্বু)
-- কাজ করে না আব্বু। সব কাজ উলট পালট করে। কোন কাজ ঠিক ভাবে হয় না।
--- নীল একটু বেশি ই বলছ না? আচ্ছা এবার থেকে বাসার সব কাজ তোমাকে দিয়ে করাবো।দেখবো তুমি কতটা কাজ পারো।
-- এই তোরা থামবি। তনা নীলকে চিংড়ি মাছ টা দে।নীল তোমার পছন্দের চিংড়ির মালাইকারি করেছি। খেয়ে দেখ তো কেমন হয়েছে।
-- আম্মুর হাতের রান্না কি আর খারাপ হতে পারে?
শুধু আম্মুর মেয়ের হাতের রান্না ই ভালো না।
-- নীল,,,,,,,,?
--আচ্ছা নীল রাফসান সাহেবের সাথে তোমার ওই ডিল টার কি হয়েছে?
-- আব্বু ওই ডিল টা গত মাসেই ফাইনাল করে ফেলেছি।
-- ওহহ।।।আমার এখন বয়স হয়েছে সব কিছু ঠিক সামলাতে পারি না। তুমি না থাকলে যে আমার বিজনেস কোথায় যেত তা আল্লাহ ই জানে।
তুমি নিজের কোম্পানি গুলো সাথে সাথে যে ভাবে আমার কোম্পানি গুলো ও সামলাও তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তা পারত না।
-- আপনি যদি আমার উপর আস্থা না রেখে আমাকে আপনার কোম্পানির দায়িত্ব না দিতেন তাহলে আমার পহ্মে এসব কিছু করাই সম্ভব হত না।
আমার বলতে তো আমার কাছে কিছু ই ছিল না। এখন সব কিছুই হয়েছে সব তো আপনার জন্য ই।
-- সব আমার জন্য হয়নি। আমি তোমাকে যা যা দিছি তুমি তোমার বুদ্ধি আর পরিশ্রম দিয়ে তার দ্বিগুণ গড়ে তুলেছ।তোমার কোম্পানির সাথে সাথে আমার কোম্পানি গুলো কে ও সাফল্যতার চূড়ান্ত সীমানায় পৌঁছে নিয়েছ। শহরের সকল কোম্পানি গুলোর মাঝে আমাদের কোম্পানি এক নাম্বার পজিশনে আছে। এসব তো তোমার জন্য ই সম্ভব হয়েছে।
-- খেতে বসে কি শুরু করলে তোমরা? তোমাদের যত কাজের কথা আছে তা কি খাওয়ায় বসলেই মনে পড়ে।
নীল কতদিন পর আমাদের বাসায় আসছে।এখন খেতে বসে ও ছেলেটা কে শান্তি দিচ্ছ না। এখানে ও বিজনেসের কথা টেনে নিয়ে আসছো।( তনার আম্মু)
তনা কিছু বলছে না। কারণ তনা জানে ওর বাবা আর নীল এক সাথে হলে ওখানে বিজনেসের কথা হবেই।
-- আম্মু কিছু বলো না। শহরে বিশিষ্ট দু'জন বিজনেসম্যান কথা বলছে। ওদের ডিস্টার্ব করো না তো।
-- ঠিকই বলেছিস ওদের দুজনের সামনে থেকে ই খাবার প্লেট গুলো নিয়ে কিছু ফাইল রেখে দেই।তাহলে তো ওদের পেট ভরে যাবে। (তনার আম্মু)
-- একদম ঠিক। তবে দেরি কিসের তাই করা হোক।
-- আর কিছু বলবো না আমি তাহলে তোমার শাশুড়ি আমাকে না খাইয়েই রাখবে। (তনার আম্মু)
-- শুধু আপনাকে না আব্বু। আপনার মেয়ে আমাকে ও না খাইয়ে রাখবে। শুধু না খাইয়ে রাখলে ও তো ভালো হবে। আপনার যে মেয়ে দেখা গেল জোর করে আমাকে ভাত এর বদলে কিছু ফাইল খাইয়ে দিছে।
-- আইডিয়া টা তুমি খারাপ দেও নাই নীল। এর পর থেকে খাবার টেবিলে বসে কাজের কথা বললে ভাত এর বদল ফাইল খাইয়েই রাখবো।
-- দেখছেন আম্মু, দেখছেন আব্বু কি ডেঞ্জারাস মেয়ে আপনাদের। শশুড় শাশুড়ির সামনে আমাকে কি ভাবে
থ্রেট দিচ্ছে।
-- নীল অনেক কথা বলছো আজ। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
-- তোরা আবার শুরু করছিস।বাচ্চা নাকি তোরা? সারাক্ষণ ঝগড়া করতেই থাকিস।(তনার আম্মু)
-- আমি কিছু করি নাই আম্মু। (তনা)
-- আমিও কিছু করি নাই আম্মু।(নীল)
-- হুম তোরা কেউ কিছু করিস নি।তনা আজ থাকবি নাকি প্রতি বারের মত এবার ও চলে যাবি?(তনার আম্মু)
-- থাকবো আম্মু।
তনার কথা শুনে নীল তনার দিকে তাকালো কিন্তু তনা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। নীলের দিকে একবার ও তাকাচ্ছে না। নীল ডাইনিং টেবিলের নিচ দিয়ে ওর বাম হাত দিয়ে তনার হাত চেপে ধরলো। নীল তনার হাত ধরায় তনা নীলের দিকে প্রশ্নসুচক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো।
নীল তনার কানের কাছে গিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো
-- ম্যাম কি কথা ছিল? আমি কিন্তু এটা বলে এখানে নিয়ে আসছিলাম যে তুমি আমার সাথে চলে যাবে।
-- হুম কথা তো তা ই ছিল। কিন্তু এখন আর আমি যাবো না। খুব বেশি কথা বলছো আজ। আরো কি কি বলেছ। আমার রান্না বাজে। আমার রান্না খেয়ে তোমার রুচি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাই না। তাহলে কিছু দিন এখানে থেকে আম্মুর হাতের রান্না খাও।কিছু দিন কেন আমি তো ভাবছি এখন থেকে আমি এখানেই থাকবো।
-- তনা
-- কি হয়েছে। কি বিরবির করছিস তোরা?( তনার আম্মু)
-- আসলে আম্মু তনা বলছে ও নাকি বাসায় চলে যাবে।
নীলের কথা শুনে তমা রাগী ভাবে নীলের দিকে তাকালো।নীল তনাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না।নীল আবার বলতে শুরু করলো।
-- আম্মু কাল আমার অফিসে খুব ইমপোরটেন্ট একটা মিটিং আছে তো তাই আর কি।
তনা নীলের হাতে জোরে চিমটি দিয়ে নীলের কানের কাছে গিয়ে
-- কাল তোমার কোন ইমপোরটেন্ট মিটিং আছে বলো তো একটু শুনি।আম্মু আব্বুর সামনে মিথ্যা বলছো কেন।
-- আরে জান বাসায় তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আজ তুমি বাসায় না গেলে সারপ্রাইজ টা কি করে দিব বলো তো।
-- কিসের সারপ্রাইজ? তুমি সত্যি বলছো তো?
-- হুম বউ একদম তিন সত্যি। এখন প্লিজ আম্মু আব্বু কে বুঝাও আর বাসায় চলো।
-- আচ্ছা।
তনা ওর আম্মু আব্বুর উদেশ্যে বললো
-- আম্মু আব্বু আজ থাকতে পারবো না। কাল নীলের একটা মিটিং আছে। আর এখান থেকে ওর অফিস অনেক টা দূরে। কাল যদি ও অফিসে যেতে না পারে তাহলে অনেক বড় লস হয়ে যাবে। তাই আজ বাসায় চলে যাই। অন্য কোন দিন এসে থাকবো।
নীল তনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে
-- ইস আমার বউ টা কত বুদ্ধিমতী। কত সুন্দর করে বানিয়ে বানিয়ে আম্মু আব্বুর কাছে মিথ্যা বললো।
------------------
সন্ধ্যায় নীল আর তনা ওর বাবা মা'র থেকে বিদায় নিয়ে নিজেদের বাসার উদেশ্যে রওনা দিল।নীল কার ড্রাইভ করছে তনা পাশের সিটে বসে আছে। নীল ড্রাইভ করতে করতে সামনের দিকে তাকিয়ে
-- কি হলো চুপ আছো যে? বাবা মা'কে ছেড়ে আসতে খারাপ লাগছে?
-- তা তো একটু লাগছে ই। কিন্তু আমি এটা ভাবছি তুমি আমাকে কি সারপ্রাইজ দিবে?
-- ওহ আচ্ছা।
-- হুম। আচ্ছা তোমার সারপ্রাইজ টা কি গো?
-- বুদ্ধু বউ আমার। সারপ্রাইজ টা কি তা বলে দিলে কি সারপ্রাইজ আর সারপ্রাইজ থাকবে?
-- কিন্তু আমার তো জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। বলো না প্লিজ।
-- জি না ম্যাম। বাসায় গিয়েই দেখতে পাবে।
----------------------------------
নীল আর তনা বাসায় এসে গেছে দু'জনই অনেক ট্রায়াড। তনা রুমে এসে সোজা গিয়ে বেড়ে শুয়ে পড়লো। নীল একটু পরে রুমে এসে দেখে তনা শুয়ে আছে। নীল গিয়ে তনার পাশে শুয়ে
-- তনা, এই তনা খারাপ লাগছে।
-- না। শুধু একটু মাথা ব্যথা করছে।
-- ফ্রেশ হয়েছ?
-- না।
-- এমনিতে মাথা ব্যাথা তার উপর ফ্রেশ হওনি।আরো খারাপ লাগবে তো। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো দেখবে ভালো লাগছে।
তনা চুপ করে নীলের কথা শুনছে কিছু বলছে না। তনা একটু ও জার্নি করতে পারে না। কোথাও বের হলেই তনার মাথা ব্যাথা হয়ে যায়। নীল বুঝে গেছে এখন তনাকে হাজার কথা বললে ও কোন লাভ হবে না তাই নীল আর কিছু না বলে তনা কোলে তুলে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্না ছেড়ে দিল।নীল তনা কে কোলে নিয়ে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে আছে। দুজনেই পুরো ভিজে গেছে।তনা নীলের কোল থেকে নামার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। তনা অবশেষে হাত পা ছুড়তে শুরু করে দিল।
-- নীল করছো টা কি। ভিজে গেলাম তো। এই রাতের বেলা এভাবে কেউ ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে থাকে। তোমার তো ঠান্ডা লাগবে সাথে আমার ও।
-- কি করবো তুমি ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে গেলে যে।
-- তাই বলে আর কিছু না। ভেজা অবস্থায় তোমাকে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে এখুনি একটু আদর করে দেই।আর কিছুক্ষন এভাবে থাকলে আমি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। এখানেই কিন্তু রোমান্স শুরু করে দিব।
-- নীল দিন দিন তুমি বড্ড দুষ্টু হয়ে যাচ্ছ। যেখানে সেখানেই তোমার রোমান্স করতে ইচ্ছে করে।অসভ্য হচ্ছ কেন?
রাতের বেলা ঝর্নার নিচে ও নাকি উনার রোমান্স করতে ইচ্ছে হচ্ছে কি রোমান্টিক বর আমার!
-- কি করবো।।। এতো কিউট একটা বউ থাকলে হাজবেন্ড রোমান্টিক না হয়ে কি পারে?
-- হয়ছে এবার নামাও আমাকে। ভিজা শরীরে থেকে জ্বর আসলে ডাক্তারের এতো বড় বড় ইনজেকশন আমি নিতে পারবো না। তোমার ইচ্ছে থাকলে তুমি সারা রাত এভাবে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে থাক।আমি গেলাম।
তনা নীলের কোলে থেকে নেমে ভিজা কাপড়ে দৌড়ে রুমে চলে আসলো। তনার শাড়ি থেকে পানি পড়ে ফ্লোরের অনেক টা অংশ ভিজে গেছে।নীল তনার পিছনে দৌড়ে এসে ফ্লোরে থাকা পানিতে পা পিছলে নিচে পড়ে গেল। তনার নীল কে নিচে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখে জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
-- এ মা মি.নীল আপনি তো দেখছি হাঁটতে ও শিখেন নাই।ছোট বাচ্চাদের মত যেখানে সেখানে পা পিছলে পড়ে যান।বড্ড লাগলো বুঝি। ইস মনে হয় কোমর টা ভেঙ্গেই গেছে ।
-- অনেক হাসি পাচ্ছে তাই না। আচ্ছা ঠিক আছে দাঁড়াও তুমি।
নীল উঠতে নিলে তনা এক দৌড়ে বেডের উপর উঠে গেল। নীল ও উঠে তনার পিছনে দৌড় দিল।দুজন ভিজে কাপড় নিয়েই পুরো রুমে দৌড়াচ্ছে।
চলবে.....
গল্প: শুধু তুমি
পর্ব - ২
লেখনীতে: Samira Afrin Samia & জেরিন_আক্তার_নিপা
.jpg)
0 Comments