Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পরাণ দিয়ে ছুঁই (Season_2) পর্ব_১

দুই দিন আগে বিয়ে করা বর এক্সাম হলে নকল করার অপরাধে খাতা এক্সপেল করে দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম দৃশ্য মনে হয় খুব কমই ঘটেছে অথবা আদৌ ঘটেছে কিনা সন্দেহ আছে। কিছু সময়ের জন্য সবকিছু যেনো থমকে গেছে।
ইয়ানূর মাথা নিচু করে আছে। এমন ভাবে মাথা নিচু করে রেখেছে পিছন থেকে দেখলে মনে হবে মাথাটা বুঝি শরীরে নেই।মরমে মরছে ইয়ানূর। লজ্জা অপমানে নিজের দুই কপোল লাল হয়ে আছে। মাথার ভিতরের সবকিছু যেনো এই মুহুর্তে ফাঁকা হয়ে গেছে। সারাজীবনের অর্জিত সম্মান পরিশ্রম সব যেনো বৃথা।
স্যার একের পর এক ভয়ংকর সব বুলি ছুড়ে মারছে নূরের দিকে। নূর তা নিজের কান দিয়ে শ্রবণ করছে ঠিকই কিন্তু বুকের ভিতর কোনো তীরের মতো বিঁধছে যেটা শুধু নূরই অনুভব করতে পারছে।
নূরের চোখে মনে হচ্ছে শ্রাবনের প্লাবন নেমেছে। কয়েক বেঞ্চ দূরত্বে বসা ইসরাতের চোখ জোড়া ও ছলছল করছে।প্রিয় বান্ধবীর এতো অপমান সহ্য হচ্ছে না। নিজের বান্ধবীর হয়ে একটা কথা ও বলতে পারছে না। স্যার কে বলতে গিয়েছিল নূর এসব করবে না কখনো না।কিন্তু স্যারের এক ধমকেই চুপ হয়ে যায়।


আজ নূরের এক্সামের জন্য গতকাল রাতে নূরের ভালো মতো ঘুম হয়নি।হবে কি করে ঘুমানোর চেষ্টা ও করেনি পড়াশোনা নিয়েই বিজি ছিলো নূর। কয়েকবার রিভিশন দিয়েছে। যদিও বা সব পড়া আগে থেকেই কাভার করা ছিলো তবুও কয়েকবার রিভিশন দেওয়া বাদ রাখেনি নূর। পড়াশোনা তার জান প্রান। গত দুই দিন যেই পরিমাণ ঝড় গিয়েছে নূরের উপর দিয়ে নূরের ভাবতেই গায়ে কাটা দেয়। পুরো জীবন টা মুহূর্তের মাঝে বদলে দিয়েছে। নিজের সাথে অন্য একজন লোককে সারাজীবনের জন্য বেঁধে দিয়েছে । এই নিয়ে বাবার সাথে খুব অভিমান নূরের। যেই বাবার সাথে কথা না বললে সব অন্ধকার মনে হয়,নিজেকে অসহায় লাগে অথচ আজ দুই দিন হয়ে যাচ্ছে বাবার সাথে একটা কথা ও বলেনি নূর।নূরের বাবা অনেকবার চেষ্টা করেছে কথা বলার কিন্তু নূর নিজের ভিতর নিজেকে আরো গুটিয়ে নিয়েছে।
সবকিছু ভুলে এক সাথে নূর আর ইসরাত এক্সাম দিতে আসে। এক্সাম শুরু হওয়ার বিশ মিনিট আগেই দুই বান্ধবী হলে এসে উপস্থিত হয়।
ইসরাত নূরকে নানা ধরনের কথা বলে হাসানোর চেষ্টা করে চলেছে নয়তো বান্ধবীর পরীক্ষায় প্রভাব পরবে।লিখতে গেলে যদি বান্ধবীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ের কথা মাথায় আসে তাহলে সমস্যা। মেয়েটা ভালো করে লিখতে পারবে না পরে পরীক্ষা খারাপ হবে।ঐটার টেনশনে তার বান্ধবীকে হয়তো খুজে পাওয়া যাবে না। পরাণের বান্ধবীর জন্য কতো টেনশন ইসরাতের। কতো দূর পর্যন্ত ভেবে ফেলেছে।
এরমধ্যে ঘন্টা বারি দিয়ে দেয়।সকলেই যে যার আসনে বসে পরে। ইসরাত কয়েক বেঞ্চ পরে বসেছে।
স্যার ম্যামরা খাতা নিয়ে হলে উপস্থিত হয়। সকলকে খাতা দেওয়া হয়। ঘন্টা বারি দেওয়ার সাথে সাথে প্রশ্ন দেওয়া হয়। নূর হাতে প্রশ্ন পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। সব প্রশ্ন নূরের জানা এখন শুধু উত্তর লিখার পালা। ঠান্ডা মাথায় একের পর এক প্রশ্নের উত্তর লিখতে থাকে নূর। একঘন্টা যাওয়ার পর নূর ওয়াশরুম যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে।ম্যাম কে বলে নূর নিজের খাতা আর প্রশ্ন ভাজ করে রেখে যায়।
ইতিমধ্যে পিওন এসে খবর দিয়ে যায় মিনিট দশেকের জন্য এই হলের স্যার ম্যাম যেনো দেখা করে আসে অফিস রুমে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে।খুবই জরুরি কথা আছে। হলে এখন একজন স্যার অবস্থান করছে।
নূর আবার হলে এসে লিখা শুরু করে। এরমধ্যে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারে না। হুট করে এসে স্যার এতো জোড়ে খাতা টান দেওয়ায় হাতের কলম ছিটকে গিয়ে দুই হাত দূরে মেঝেতে অবস্থান করছে।
স্যার খাতা নাড়া দেওয়ার সাথে সাথে ঝড়ঝড় করে কয়েক পৃষ্ঠা আলাদা লিখা কাগজ বেরিয়ে আসে। নূর বুঝতে পারছে না এসব তার খাতার ভিতরে কোথা থেকে আসলো, সেতো এখন অবদি এক্সট্রা কোনো পেপারই নেয় নি।
এএসব কি-কি স-স্যার? কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে ইয়ানূর।
বাহ্ বাহ্ বাহ্ চুরি তো চুরি তারউপর সি'নাজুড়ি। এতোগুলা টিচারের চোখে ফাঁকি দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে এসব পেপার থেকে ছাপাচ্ছেন।
মা-মানে?
মানে? এখন আপনি মানে জিগ্যেস করছেন? সহজ বাংলায় বলতে হবে? কপি করছেন।আরো যদি সহজ করে বলি নকল করছেন।
স্যারের কথায় নূরের মাথায় যেনো বা'জ পরছে।এসব স্যার কি বলছে, নকল আর নূর? এসব তো সে দুঃস্বপ্নেও কোনো দিন ভাবেনি। স্যারের কথায় ক্লাসের সকলেই যেনো ছোট খাটো একটা ঝটকা খায়।এতো ভালো স্টুডেন্ট,, ক্লাসের টপার কিনা নকল করছে? অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কিন্তু ইসরাত কে দেওয়া স্যারের ধমক আর স্যারের মুখের বুলি শুনে কেউই কিছু বলার সাহস পায় না।
এইসবই করে বেরান? মুখ দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছটা ও উল্টে খেতে জানেন না। বড় হলে তো দেখা যায় ঠান্ডা মাথার ক্রিমিনাল হবেন।
স-স্যার আ-আমার কথা টা এ-একবার শুনুন।
চুপপ একদম চুপপ!!
স্যারের এমন বাজখাঁই স্বরের ধমকে একদম চুপ হয়ে যায় নূর।মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ ও বের হচ্ছে না।চোখ দিয়ে শুধু অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝড়ছে।মন শুধু একটা কথাই বলছে তোর সব শেষ নূর।তোর সব শেষ। তোর ক্যারিয়ার,,স্বপ্ন সব শেষ।
এরমধ্যে ছাত্র ছাত্রীদের কানাঘোষা শুরু হয়ে গেছে। নিজের সাথে এতোসব অন্যায়, অপবাদ মেনে নিতে পারছে না।
কি হচ্ছে কি এখানে? এটা কি এক্সাম হল নাকি মাছের বাজার?
হঠাৎ করে কারো গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে এরকম বুলি শুনে সকলের গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর বন্ধ হয়ে যায়। সকলের দৃষ্টি এখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বাটে সুদর্শন যুবকের দিকে।
নাহিদ স্যার ও ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে দৃষ্টি ফেলে । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে নাহিদ স্যার চিনে উঠতে পারে না। মাসখানেক হয়েছে এই ভার্সিটিতে জয়েন হয়েছেন তিনি কিন্তু এইলোক কে তো একদিন ও দেখেনি। ইনিকি ভার্সিটির কেউ? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে নাহিদ স্যার তারপর আবার নিজেই ভাবে নাহ ভার্সিটির হলেতো চিনতো।তাহলে কি বাইরে থেকে লোক এসেছে পরিদর্শন করার জন্য? নাহিদ স্যারের ভাবনার মাঝেই আবার সেই ঝাঁঝালো কণ্ঠের বুলি কানে এসে প্রতিদ্ধনিত হয়।
আই আস্ক ইউ সামথিং। আপনি থাকতেও এক্সাম হলে এতো নয়েস কিসের?
এরমধ্যে এক্সাম হলের অন্য টিচাররা ও এসে দাঁড়ায়। সব টিচারদের মনেই একই প্রশ্ন।
নাহিদ স্যার বুঝতে পারলো হয়তো কোনো টিচার আর নয়তো ভার্সিটির অনেক পাওয়ারফুল কেউ হবে লোকটা। অন্যথা একজন টিচারের সাথে এতোটা দা'পটের সাথে কিছুতেই কথা বলতে পারতো না। মনে মনে নিজেকে বলে উঠে,, সাব্বাস বেটা এবার তুই সকলের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবি।
এই মেয়েটা নকল করেছে স্যার। আমি তাকে প্রমাণ সহ হাতে নাতে ধরেছি।
নাহিদ স্যারের কথায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি হুংকার ছেড়ে বলে উঠে হোয়াট!!! বলেই ধপাধপ কদমে ক্লাসের ভিতরে এসে দাঁড়ায়। অন্যানয় স্যার ম্যাম ও এসে দাঁড়ায়।
নকল করার এতোবড় দুঃসাহস কে দেখিয়েছে? আপনি অফিসে ইনফর্ম না করে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
আমি এখনই ইনফর্ম করতাম স্যার। ওয়েট স্যার আমি এখনই করছি।
থাক আপনাকে আর কিছু করতে হবে না। আমি
দেখছি বিষয় টা । তার আগে সেই সাহসী মানুষটাকে দেখে নেই। বলেই চোখ ঘুরিয়ে তাকায়। কিছু কি থমকালো? কিজানি। কিছু সময় ও যেনো অতিবাহিত হলো না।কয়েক সেকেন্ডের মাঝে চোখ ঘুরিয়ে নাহিদ স্যারের দিকে দৃষ্টি দেয়। বেঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা কে দেখে স্যার ম্যামদের চোখ ও যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না।
নাহিদ স্যার খুব গর্বের সাথে বলে চলেছে,, এই সেই নকলবাজ মেয়ে স্যার আমি হাতে নাতে ধরেছি। দেখেন স্যার এমনভাবে আছে মনে হচ্ছে তার চেয়ে সাধু আর কেউ নেই।উপরে উপরে ভালো সেজে ভিতরে ভিতরে কার্য হাসিল।
নূর এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ লাল হয়ে একাকার।চোখের পানিতে সব ভিজে যাচ্ছে।
নাহিদ স্যার আবার ও বলে উঠে,, স্যার এর কি শাস্তি দেওয়া যায়?
লোকটা নূরের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয়। তারপর নাহিদ স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,, এর একটাই শাস্তি খাতা এক্সপেল করে দেওয়া আর বাকিটা কতৃপক্ষ দেখবে।
পৃথিবী কি থমকে গেছে? নাকি নূরের জীবন বুঝতে পারছে না নূর কিছু। ঘার ঘুরিয়ে সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে নিজে না চাইতে ও ধপাস করে বেঞ্চের উপর বসে পরে।

কিছু কিছু সিচুয়েশন নিজেকে একেবারে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে যায়। চোখ মুখে নিরাশ,হতাশা,,সব যেমন অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। আলোর রোশনাই পাওয়া বড় দায়।নূর কোনো আশার আলো দেখতে পারছে না। সামনের থাকার ব্যক্তিটির মুখে এক্সপেল নামক বিষ বাক্য অথৈ সমুদ্রে তলিয়ে দিয়েছে।
নূর না বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে আর না পাচ্ছে সামনের দিকে তাকানোর শক্তি। মুখের বুলি তো স্যার নামক লোকটির বিষাক্ত কটুক্তিতে সেই কখনই বন্ধ হয়ে গেছে।
কি হলো নাহিদ স্যার দাঁড়িয়ে আছেন কেন? খাতাটা আমাকে দিন আর কপির পেপারগুলো ও।
আবার আবার সেই ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর। নূর নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। মনে মনে ঠিক করে নেয় আর সে বাড়ি যাবে না। কোন মুখে সে বাড়ি যাবে।
এরমধ্যে একজন ম্যাম প্রিন্সিপালের কাছে ফোন করে দেয়। তারপর সৌন্দর্য কে বলে,,
মি. ওয়াহিদ খাতা এক্সপেল করার আগে আমাদের বিষয় টা আরেকটু খতিয়ে দেখা উচিৎ। আই থিংক কোনো ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।
সৌন্দর্য একবার ম্যামের দিকে তাকিয়ে আবার খাতা দেখায় মন দেয়।এরমধ্যে ফোন নিয়ে কি কি যেনো করে।অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের তাদের এক্সামে মন দিতে বলে।কিছু সময় নিয়ে ফোন দেখে একটু পর ফোনটা পকেটে রেখে দেয়।
ম্যামের দিকে তাকিয়ে বলে,,ম্যাম আই থিংক খাতাটা এক্সপেল করে দেওয়া উচিৎ। সাথে আমাদের নকল ধরা স্যার কে তার বুদ্ধিমত্তার জন্য পুরস্কৃত করা উচিৎ।
আর এইযে নকল বাজ মেয়েটাকেও শাস্তি দেওয়া উচিৎ। পড়াশোনা করো কিসের জন্য? নূরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে সৌন্দর্য। অথচ নূরের এখনও কোনো কথার প্রতি কোনো হুশ নেই।
নাহিদ স্যার কিভাবে টিচার হলেন বলুন তো?
সৌন্দর্যের কথায় নাহিদ স্যার ব্রু কোচকে তাকায়।
মা-মানে স্যার?
আপনি মানে বুঝতে পারছেন না?
নাহিদ স্যার মাথা নেড়ে না জানায়। সৌন্দর্যের কথায় উনি কিছুই বুঝতে পারছে না। এখানে উনার টিচার হওয়া নিয়ে কেনো প্রশ্ন উঠছে কেন।
কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করেই আপনি একজনের বিরুদ্ধে এলিগেশন দিয়ে দিলেন?
সব তো প্রমান সহ স্যার। আমি তাকে নকল সহ হাতে নাতে ধরেছি। তার খাতার ভিতর থেকে আমি নিজে পেপারটা বের করেছি।
নাহিদ সাহেব লোকটার হাতে রক্ত মাখা ছুরি।সামনে একজন ছুরির আঘাতপ্রাপ্ত লোক তারমানে এই না যে ছুরি ধরে রাখা লোকটাই আঘাতপ্রাপ্ত লোকটাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। হতে পারে লোকটাকে বাঁচানোর জন্য পেট থেকে ছুরিটা বের করেছে। এখন আপনি ভিতরের সত্যতা না জেনে উপরের টুকু দিয়ে বিচার করলে তো হবে না। আপনার জন্য একজন ব্রাইট স্টুডেন্টের লাইফ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল।আপনি আমাদের ভার্সিটির সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীর উপর নকল করার অভিযোগ তুলেছেন তাও সত্যতা যাচাই না করে।
মানে স্যার নকল তো ওই কর,,,
সাট আপ। জাস্ট সাট ইউর মাউথ। সি দিস বলেই সৌন্দর্য পকেট থেকে ফোন বের করে নাহিদ স্যারের দিকে ছুরে মারে।নাহিদ স্যার ফোনটা ক্যাচ করে নেয়। সৌন্দর্যের দিকে তাকাতেই চোখের ইশারায় ফোন দেখতে বলে। নাহিদ স্যার ফোনে দৃষ্টি দেয়।
কিছুক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে নাহিদ স্যার স্তব্ধ হয়ে রয়। না চাইতে হাতটা কেমন যেনো কেঁপে ওঠে। ভাবনায় পরে যায়। এরমধ্যে সৌন্দর্য ফোন টান দেওয়ায় যেনো হুঁশ আসে।
আপনি এতো ভুলোমনা কেন নাহিদ স্যার? অথিওরিটি কি করে আপনাকে রেখেছে বোঝলাম না।সামান্যতম বেসিক নলেজ ও দেখি কাজ করে না আপনার উপর।
ক্লাসরুমে যে টিচাররা ছাড়া ও সিসিটিভি আছে সেটা আপনি ভুলে গেছেন। সাথে যে এই মহৎ কাজটা করেছে সে ও। এতোটা চতুরতার সাথে কাজ করলো অথচ এটা মাথায় থাকলো না যে ক্লাসে ক্যামেরা লাগানো আছে।
সৌন্দর্যের কথায় আরো একজনের বুকে ছে'ত করে উঠে।
নাহিদ স্যার আপনি নিশ্চয়ই কম কথা শোনান নি?
এরমধ্যে ইসরাত মাঝখান থেকে বলে উঠে,, অনেক কথা শুনিয়েছে স্যার।সাথে ক্রিমিনাল ও বলেছে।নূর কয়েকবার বলতে চেয়েছে ও এমন করে নি।কিন্তু স্যার তো শুনলোই না।
ইউ সাট আপ নিজের এক্সাম দেওয়ায় মন দাও।তোমাকে কেউ কিছু বলতে বলেনি। সৌন্দর্যের ধমকে ইসরাত আর কিছু বলেনি চুপ হয়ে যায়।
ও যখন বলতে চেয়েছিলো ও নকল করে নি।ওর খাতার থেকে নকল টা পাওয়ার পর ও যখন বলতে চেয়েছিলো ও নকল করে নি। তখন আপনার উচিৎ ছিল সিসিটিভি দেখানোর।ফরগেট ইট।আপনার বিষয় টা কতৃপক্ষ পরে দেখবে।
আর আপনি নিশ্চই আসল কালপ্রিট কে তা দেখতে পেলেন নাহিদ স্যার??
সরি স্যার।
নাহিদ স্যারের সরি তে সৌন্দর্য পাত্তাই দেয় নি।
নূর বুঝতে পারলো এই যাত্রায় সে মনে হয় রক্ষা পেয়ে গেলো।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছে। এইবার মনে হয় তার ক্যারিয়ার টা বেঁচে যাবে। হাত পা এখনও মৃদু কাঁপছে।
এই মেয়ে তুমি পড়াশোনা করো কিসের জন্য? এই পড়াশোনার কোনো দাম আছে? মুখে কি তালা মেরে রেখেছো? তোমার খাতার ভিতর নকল পাওয়া গেছে সেটা তোমার না। তুমি জানো ও না এটা তোমার খাতার ভিতর কি করে গেলো।এটা জোর গলায় বলতে পারলে না? ক্লাসের টপার স্টুডেন্ট যার প্রতি বিষয়ে হাইয়েস্ট রেজাল্ট তার মুখের ভাষা নেই? অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানো না? এভাবে চোখের পানি দিয়ে সাগর বানালে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে কি?
নূর একটা কথা ও বলছে না চুপ করে মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে। সৌন্দর্যের কথাগুলো একশো ভাগ সত্যি। কিন্তু কি করার সে এরকমই খুবই ইমোশনাল একটু কিছুতেই নিজের মনোবল হারিয়ে ফেলে। প্রতিবাদ করাতো দূরের কথা।
এক কাজ করো তোমার এক্সাম দিতে হবে না। বাড়ি চলে যাও।যাও বাড়ি গিয়ে গঙ্গা, যমুনার পানিতো রোদের জন্য শুকিয়ে যাচ্ছে।তুমি কেদে ড্রাম ভর্তি করে নদীতে পানি গুলো সাপ্লাই করে দিও।এতে খুব উপকার হবে।
সৌন্দর্যের কথায় ইসরাত নিঃশব্দে হেঁসে দেয়।অন্যান্য স্টুডেন্টরা ও হাসে। তবে এক্সাম দিতে দিতে যতটুকু বুঝতে পারলো স্যার টা অনেক কড়া।
হে ইউ স্ট্যান্ড আপ!!
বাক্যটা এতো জোড়েই ছিলো যে সৌন্দর্যের কন্ঠের প্রতিধ্বনি ক্লাস রুমের দেয়ালে বারি খেয়ে কয়েকবার একই কথা রিপিট হয়েছে। সকল ছাত্র ছাত্রীই ভয় পেয়ে গেছে। ইয়ানূর ভীত চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। এতোবড় ধমকে বুকটা ধুকধুক করছে। চোখের পানি সেই কখনই শুকিয়ে গেছে। চোখ মুখ এখন জ্বালা করছে নূরের।
সৌন্দর্যের সেই ধমকে ক্লাস রুমের আরো একজন দাঁড়িয়ে যায়। সৌন্দর্য ঐদিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে হাসে। তারপর আঙুলের ইশারায় নূর কে সামনে যেতে বলে।
সৌন্দর্যের ইশারায় নূর রোবটের মতো একপা দুপা করে করে সামনে যায়।
খাতাটা নূরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,,চুপচাপ ঠান্ডা মাথায় লিখো।ভাববে কিছু হয়নি।এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।ভালো করে এক্সাম দেওয়ায় মন দাও। এই সাবজেক্টের এক্সাম নিয়ে ঝামেলা হয়েছে না? আমি এই সাবজেক্টই সর্বোচ্চ মার্ক দেখতে চাই তোমার। আর টাইম যতটুকু বরবাদ হওয়ার তা তো হলোই বিশেষ বিবেচনা করে তোমাকে আলাদা সময় দেওয়া হবে।নাও গো।
নূর চুপচাপ এসে লিখা শুরু করে।
এইযে মিস আপনি দয়া করে আপনার খাতা সহ এখানে আসলে আমি কৃতজ্ঞ হবো। আপনি আপনার পায়ের ধূলি এখানে ফেলবেন কি?
স-স-স্যার।
জ্বি ম্যাম?
আ-আসলে স্যার আমি ও-ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য দাড়িয়েছি।
ওহ আচ্ছা। কিন্তু আপনি অন্য কিছুর জন্য দাঁড়িয়েছেন আমি কি একবার ও বলেছি?
ন-না।
এখন বলবো। এতো সাহস নিয়ে কি করে এমন সাধারণ ভাবে বেঁচে আছেন? এতো এতো গার্ড,,সিসিটিভি থাকা সত্যেও এমন জঘন্যতম কাজ করেছেন। আরেকজনের খাতায় কপিকরা পেপার ঢুকিয়ে চুপচাপ নিশ্চিন্তে বসে এক্সাম দিচ্ছেন।
স-স্যার,,,,,,
একদম নেকা কান্না করবেন না।আপনার নাম যেনো কি?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি।
রি-রিতা স্যার।
তা রি-রিতা চলে আসুন।
রিতা নামটা শুনে একটা ঝটকা খায় নূর।একঝলক পিছনে বসা রিতার দিকে তাকায়।
রিতা ও নূরের দিকে অসহায় চোখে তাকায়।যার অর্থ আমাকে বাঁচিয়ে নে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নূর চোখ ঘুরিয়ে এক্সাম দেওয়ায় মন দেয়। ইসরাত ও মুখ ভেংচি কেটে এক্সাম দিতে থাকে।
রিতা সামনে আসলে রিতার খাতাটা হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে নেয় সৌন্দর্য। কাম উইথ মি।
বলেই রিতাকে নিয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে আসে। ক্লাসরুম থেকে বের হতেই প্রিন্সিপালের সাথে দেখা হয়ে যায়।
নিন এর ব্যবস্থা আপনি নিন।সৌন্দর্য প্রিন্সিপাল কে উদ্দেশ্য করে বলে।
আচ্ছা বিষয় টা আমি দেখছি। আর মেয়েটার সাথে এমন রু'ড বিহেভ না করলেও পারতে।
হোয়াটএভার,,,সি ডিজার্ভ ইট বলেই সৌন্দর্য বেরিয়ে যায়।
এতো ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে পরীক্ষা শেষ করে হল থেকে বের হয় নূর।পিছনে পিছনে ইসরাত। আজ একটা কথা বলার শক্তি ও নেই। পার্কিং সাইড পেরিয়ে গেইটের দিকে যেতে নিতেই শুনতে পায়,,,
হেই স্টপ।
নূর আর ইসরাত কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামলেও আবার চলতে থাকে ভেবেছে হয়তো অন্য কাউকে বলছে।
আই সেইড স্টপ। ডোন্ট ডেয়ার টু টেইক আ সিংগেল স্টেপ।


চলবে,,,,,,,,,


গল্প: পরাণ দিয়ে ছুঁই (Season_2)

#পর্ব_১
লেখনীতে: ঝর্ণা ইসলাম


আসসালামু আলাইকুম। সকলে রেসপন্স করবেন।

Post a Comment

0 Comments