Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পরাণ দিয়ে ছুঁই (Season_2) পর্ব_২

আই সেইড স্টপ। ডোন্ট ডেয়ার টু টেইক আ সিংগেল স্টেপ।
এবার নূর আর ইসরাত তাদের হাঁটা বাদ দিয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। তারপর দুইজন ই পিছনে ঘুরে তাকায়।
সৌন্দর্য গাড়ির দরজা খুলে এক হাত গাড়ির দরজাতে আরেক হাত পকেটের ভিতর ঢুকিয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ব্রু কোচকে।
ইসরাত সৌন্দর্য কে দেখে খুশি হয়ে যায়। নূর কে রেখেই সৌন্দর্যের কাছে এগিয়ে যায় কথা বলার জন্য। আরেকটা অবশ্য উদ্দেশ্য আছে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তালহা স্যারের খবর নেওয়া। অনেক দিন হয়ে গেলো লোকটা কে দেখে না।এক্সামের চক্করে ফোন ও দেওয়া হচ্ছে না।মন টা কেমন আনচান করছে।ইসরাত সৌন্দর্যের কাছে গিয়েই নাচের ভঙ্গিতে বলে উঠে,,,
হাই পরা স্যার!
সৌন্দর্য ইসরাতের দিকে তাকিয়ে জানতে চায় মানে?



আপনি স্যার হয়েও মানে জানেন না? আরে আপনি এতো সুন্দর এতো সুন্দর এতো সুন্দর যে পরিদের মতো দেখতে। পরি তো বলা হয় মেয়েদের তাই আপনাকে তো পরি বলতে পারি না তাইনা? তাই অনেক ভেবে চিন্তে পরিদের মেইল ভার্সন পরা বের করেছি।আ'ম সো ইনটেলিজেন্ট ইউ নো? একটু ভাব নিয়ে বলে ইসরাত।
নূর ইসরাতের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। এক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।
ইসরাতের এসব উল্টো পাল্টা কথা শুনে সৌন্দর্য বোকা বনে যায়। গাড়ির দরজা থেকে হাত পরে যেতে নেয় কিন্তু তার আগেই নিজেকে সামলে নেয়। ইসরাতের কথায় সৌন্দর্যের দম ফাটা হাসি পাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করে সৌন্দর্য। বেচারা তালহার জন্য খুব মায়া হচ্ছে সৌন্দর্যের।এসব ভাবনার মধ্যেই সৌন্দর্যের নূরের দিকে চোখ যায়। নূর কেমন মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখের অবস্থা করুন। মনে হচ্ছে ভালো মতো খায় ও নি। চোখের নিচে হালকা কালি পরেছে। সৌন্দর্য বুঝতে পারলো এটা রাত জাগার ফল।
সৌন্দর্য নিজের মাঝে যথাযত গম্ভীরর্যতা এনে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,,, এসব কি রকম কথা? আর আমি একজন টিচার ভুলে যেও না। আর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলো।ব্যঙের মতো লাফাচ্ছো কেন?
ইসরাত ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,কি স্যার আমি কোথায় ব্যাঙের মতো লাফালাম? এটা আমাদের মেয়েদের সবারই একটু আধটু স্বভাবে আছে বুঝলেন? তারপর নূরের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,, অবশ্য ঐ যে আমার পিছনে একটা রোবট দাঁড়িয়ে আছে সে বাদে।
এরমধ্যে নূরের গলা শুনতে পায়,,, ইসরাত বাড়ি কি যাবি না? আমার ভালো লাগছে না।চল তারাতাড়ি বাড়ি যাই।আর নয়তো তোর দরকার হলে তুই থাক আমি একাই চলে যাই।
এই নূর তুই কি বলছিস? একা বাড়ি যাবি কেন? আমি এখনই আসছি দুইজন এক সাথে যাবো বাড়িতে। চল চল বলেই ইসরাত নূরের দিকে এগিয়ে যায়।
ইসরাত গেইটের বাইরে ব্লাক কালার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঐটায় গিয়ে উঠো আমার ড্রাইভার তোমাকে পৌঁছে দিবে।
কিন্তু স্যার,,,, কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায় ইসরাত। নূরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ভালোই হয়েছে স্যার কে মানা করে লাভ নাই।নূর কে নিয়ে এখন গাড়ি করে গেলেই বরং বেশি ভালো হবে।
ঠিক আছে স্যার অনেক ধন্যবাদ। এই নূর চল আমাদের আর কষ্ট করে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। নূরকে কিছু বলতে না দিয়ে নূরের হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে।
আই থিংক তুমি মনে হয় ভালো করে শুনতে পাও নি ইসরাত।আমি বলেছি তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো,,ড্রাইভার তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে। তোমাকে,,, তোমাদের না।
ইসরাত ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,,এসব আপনি কি বলছেন আমি একা যাবো মানে? নূরের কি হবে? তাহলে আমিও যাবো না। নূরকে একা রেখে আপনি ভাবলেন কি করে আমি যাবো?
সৌন্দর্য এবার ইসরাতের কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,, তোমার নূরের চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। আর ও কোনো বাচ্চা মেয়ে না যে ছেলেধরা এসে নিয়ে যাবে।অবশ্য লোক অন্য কিছু ভাবতে পারে।লাইক স্পেশাল চাইল্ড। ওপপপস এখন তো আবার চাইল্ড ও বলা যাবে না ভার্সিটি তে পরে এ''ডাল্ট হয়ে গেছে।
সেই যাই বলেন না কেন স্যার আমি আমার বান্ধবী কে একা ফেলে যাবো না। মানে না।
তোমার বান্ধবী আমার সাথে যাবে।শুনতে পেয়েছো?
কিন্তু সে আপনার সাথে কেন যাব,,, বলতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে ইসরাত থেমে যায়।
কি হলো চুপ হয়ে গেলে কেন? তোমাকে ভেঙে নিশ্চই বলতে হবে না ওর আমার সাথে যাওয়ার কারণ।
না মানে ইয়ে,,,
নূর এতোসময় তাকে নিয়ে দুইজনের তর্কাতর্কি নিরব দর্শকের মতো দেখছিলো। তাকে নিয়ে এতকিছু অথচ তার কিছুতে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। না তার মতামত জানার চেষ্টা করছে।
এদের চক্করে নূরের আর আজ বাড়ি যাওয়া হবে না। তাই এখান থেকে মানে মানে কেটে পরলেই ভালো হবে বলে নূরের মনে হলো। আস্তে ধীরে ইসরাতের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে ফেলে।ইসরাত কথার তালে বুঝতে ও পারে না।
নূর পিছন দিক দিয়ে দৌড় দিতে নিবে এরমধ্যে নিজের হাত কারো হাতের শক্ত বাধনের অস্তিত্ব টের পায়।
বাহ ম্যাডামের মাথায় পালানোর বুদ্ধি ও আছে জানতাম না। গুড ভেরি গুড।কিন্তু এই টেকনিক আমার সাথে না অন্য কোথাও কাজে লাগাবেন। বলেই সৌন্দর্য ইসরাতের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,,,
গুড বায় ইসরাত।হেভ আ সেভ জার্নি।
থাংকু থাংকু পরা।
অল দা বেস্ট দোস্ত। বলেই ইসরাত এক নিমিষেই দৌড় দিয়ে গেইট পার হয়ে চলে যায়।
ইসু আমাকে রেখে যাস না। ইসরাত শোন আমার কথা। ইসরাত!
সৌন্দর্যের হাতের বাঁধন থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়া মুচড়ি করতে থাকে নূর।কিন্তু এতোই কি সোজা নাকি হাত ছাড়ানো কিছুতেই পারে না।
এসব মোচড়া মুচড়ি করে লাভ নেই। বুঝতেই তো পেরেছো ছুটতে পারবে না তাহলে অযথা কেন শক্তি ক্ষয় করছো? দেখেই তো মনে হচ্ছে এখনই বুঝি পরে যাবে। সো ঝামেলা না করে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসো।
আমি যাবো না আপনার সাথে। আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন? ছাড়ুন আমার হাত। আমার হাত ধরার আপনার কোনো অধিকার নেই। একজন টিচার হয়ে স্টুডেন্টের হাত এমন করে ধরে রেখেছেন কেন?
তোমার স্মৃতি শক্তি মনে হচ্ছে অনেক দূর্বল। হরলিক্স খাওয়াতে হবে। আগে একটা কিনা লাগতো এখন একটার পরিবর্তে দুইটা কিনতে হবে।হাহ্ সবই ভাগ্য।
সৌন্দর্যের কোনো কথায় পাত্তা না দিয়ে নূর শুধু ফোঁপাচ্ছে।
আচ্ছা কি যেনো বলছিলে? অধিকার রাইট? তুমি জানোনা আমার অধিকার? আমি কি করে ভুলে গেলাম এখন ডেমো ছাড়া কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারে না। দিবো নাকি ডেমো যে আমি তোমার কে হই? একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে সৌন্দর্য।
সৌন্দর্যের কথায় নূর ছিটকে দূরে সরে যায়। তারাতাড়ি ঘুরে গাড়ির দিকে যেতে থাকে।
ভুলেও সিনেমার মতো ড্রামা করে পিছনের সিটে বসতে যাবে না।
নূর গিয়ে সামনে বসে। এরমধ্যে কেউ পিছন থেকে নূরের চোখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে। নূর ভয় পেয়ে আআ বলে চিল্লিয়ে উঠে।
মাম্মা!!!
নূর হাত ছাড়িয়ে পিছনের দিকে তাকিয়ে বলে,,মাম্মা?
হ্যা বিয়ে করার সাথে সাথে রেডিমেট বাচ্চা ও পেয়েছো। হাও লাকি ইউ আর! বলে সৌন্দর্য গাড়ি চালানো শুরু করে।

(অতীত)
ঐদিন যখন নূরের মা নূরকে একটা শাড়ি দিয়ে কোনো কিছু না বলে তৈরি হতে বলে চলে যায়। আর নূরের ফুপাতো বোন নূরকে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দেয় তখনও বুঝতে পারছিলো না তার সাথো হচ্ছে কি।এক্সামের টেনশনে এসব বিষয় গুলো মাথার ভিতর যাচ্ছিলো না। নূরের বাবা রুমে এসে যখন তার মাথায় হাত রেখে বলেছিলো আম্মা বাবার প্রতি বিশ্বাস আছে না? বাবারা যা করে ভেবেচিন্তে করে।আমি তোমাকে জলে ভাসিয়ে দিবো না। বাবার উপর একটু ভরসা রেখো।
বাবার কথায় নূর বেশ অবাক হয়।সচরাচর বাবা এমন করে কথা বলে না। মনে নানান ধরনের কু চিন্তা আসতে থাকে। এরমধ্যে নূরের মা আর দুইজন মহিলা যখন নূরকে ড্রইংরুমে নিয়ে বসিয়ে দেয় নূর তখন সাত পাঁচ ভাবতে থাকে। এরমধ্যে নূরকে কাজী যখন কবুল বলতে বলে,,নূরের মাথায় যেনো আসমান ভেঙে পরে। বাবার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থাকে। বাবার করুন চোখের চাহনি দেখে না জেনে না দেখে মুখ দিয়ে সেই সবচেয়ে পবিত্র সবচেয়ে কঠিন জীবন বদলে দেওয়া কবুল শব্দটি উচ্চারণ করে।
বিয়ের পর যখন কিছু সময়ের জন্য বরের পাশে নিয়ে বসায় নূর তখনও মাথা নিচু করে বসে আছে। শুধু বসে নেই হাত এমন ভাবে কচলাচ্ছে মনে হচ্ছে চামড়া উঠিয়ে ফেলবে।সকল রাগ ক্ষোভ হাতের সাথে মিটাচ্ছে। কোনোদিকে তাকানোর বা কথা বলার প্রয়োজন মনে করছে না। নীরব থাকা মানুষ গুলোর প্রতি তাদের কাছের মানুষরাই সবচেয়ে কঠিন ও কষ্টকর বোঝা গুলো চাপিয়ে দেয়।
নিজের বাবার উপর সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস ও ভরসা ছিলো আর সে কিনা এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত একা নিয়ে জীবনের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিলো। একবার বলার বা জানানোর ও প্রয়োজন মনে করলো না।এতোই বোঝা হয়ে গেছে নূর।না খাওয়াতে পড়াতে পারলে বলে দিলেই হতো এমন করে শাস্তি দেওয়ার কি আছে। মনে মনে আরো নানা ধরনের কথা ভাবছিল আর হাতের উপর সব রাগ ঢালছিলো নূর।
এটা হাত কাপড় ইস্ত্রী করা মেশিন না।নাকি চামড়া থুবড়ে গেছে দেখে এভাবে ডলে ডলে ঠিক করার চেষ্টা চলছে।শেষ মেষ কিনা ভুলভাল বুঝিয়ে একটা বুড়ির সাথে আমাকে বেঁধে দিলো।
কারো গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে এসব উল্টা পাল্টা বাক্য শুনে চোখ তুলে তাকায়। সেই তাকানোতে কয়শো ভোল্টের ঝটকা খেয়েছে নূর নিজেও জানে না। হাত পা অটোমেটিক কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ।মনে হচ্ছে এখন এক সমুদ্র পানি এনে নূরের গলায় ঢেলে দিলেও তার তৃষ্ণা বুঝি মিটবে না।
নূর লোকটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এটাই ভাবার চেষ্টা করছে ইনি এখানে কি করছে? আর ইনি আমাদের বাড়ি চিনলো কি করে। পরে মনে পরলো লোকটা ঐদিন তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে। লোকটা কি নূরের বাবার কাছে বিচার দিতে আসছে বাসের ঐ ঘটনার জন্য? এসব নানা ধরনের আজগুবি সব চিন্তা ভাবনা করে চলেছে নূর।তার যে একটু আগে বিয়ে হয়ে গেছে এক মুহূর্তের জন্য সেটা মাথা থেকে বের হয়ে গেছে।
কিরে সৌন্দর্য নতুন বউকে দেখি একদিনেই পাগল করে দিলি।দেখ দেখ তোর থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। আমরা মুরুব্বিরা যে আছি সেই কথা মেয়ে টা ভুলেই গেছে। আহা সৌন্দর্যের সৌন্দর্যে দিওয়ানা হয়ে গেছে আমাদের নূর।
তালহার এরূপ বাক্যে কটমট করে তাকায় সৌন্দর্য। চোখ পাকিয়ে গলা নিচু করে বলে চুপ যা শা*লা।এটা তোর মশকরা করার জায়গা না।বের হয়ে নেই তারপর দেখে নিচ্ছি তোকে।
এমন করে ভয় দেখাস কেন ভাই? বিয়ের দিন ও তোর এরকম রূপ দেখাচ্ছিস? তোর বউ তো ভয় পেয়ে আর শ্বশুর বাড়ি ই যেতে চাইবে না।মেয়েটা এমনিতেই যেই ভী'তু।
সৌন্দর্য তালহার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,, আমার বউ কেমন সেটা তোকে বলতে হবে না। আমি নিজে বুঝে নিবো সাহসী নাকি ভীতু।
বাহ্ ভাই বাহ্ এখনই এতো? ভুলে যাস না সে তোর বউ হওয়ার আগে আমার ছাত্রী।
তোর ছাত্রী আমার বিয়ের পাত্রী। বলেই সৌন্দর্য কলার ঠিক করে পাঞ্জাবির।
ওদের দুই বন্ধুর কথা কানেই যায় নি নূরের সে টা'সকি খেয়ে বসে আছে এসব কি করে হলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এসব কিছু তো নূর কল্পনাতে ও ভাবে নি। তাও কিনা সৌন্দর্য স্যারের সাথে? যার সাথে একটার পর একটা দূর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কতো লজ্জায় পরতে হয়েছে নূর কে। তারচেয়ে বড় কথা এই লোকটার তো মেয়ে আছে বিবাহিত। নিজের বউ বাচ্চা থাকা সত্তেও কিনা নূর কে বিয়ে করেছে।বাবা কি করে পারলো একটা বিবাহিত লোকের সাথে তার বিয়ে দিতে? মনে মনে নূর ঠিক করে নেয় বাবার সাথে আর কোনোদিন কথাই বলবে না।
নূরের নানান ভাবনার মাঝেই নূরের বোন এসে নূর কে ড্রয়িং রুম থেকে নিয়ে যায়।
সৌন্দর্যরা ও খাওয়া দাওয়া করে চলে যায় নূরের সাথে আর আলাদা করে কথা হয় না।এমনকি বিয়ে নিয়ে কোনো আলাপ আলোচনা ও হয়নি। এমনিতে নূরের বাবা কথা বলতে আসলে চুপ হয়ে যেতো। ভালো মতো খাওয়া দাওয়া ও করে নি। এমন করেই দুই দিন চলে যায় এরমধ্যে আর সৌন্দর্য ফোন ও দেয় নি। নূর অনেক চেষ্টা চালাচ্ছে বিষয় টা ভুলে যেতে। কিন্তু কে জানতো যেটা থেকে নূর পালানোর চেষ্টা করবে সেটাই তার সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাবে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
(বর্তমান)
ফাতিহা পিছন সিট থেকে এসে নূরের কোলে বসেছে।
সৌন্দর্য গাড়ি চালাতে চালাতে নূরের দিকে একবার ফাতিহার দিকে একবার দেখছে।নূর বাইরের দিকে দৃষ্টি দিলেও ফাতিহা এক দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। কে জানে কি দেখছে মেয়েটা নাকি কিছু খোঁজার চেষ্টা করছে।
নূর মনে মনে ভাবছে এই বাচ্চা মেয়েটা কি করে নিজের মা কে ভুলে আরেকজন কে এতো সহজে মাম্মা মেনে নিলো।অবশ্য ওর কোনো দোষ নেই ওর মাথায় যা ঢুকানো হয়েছে তাই তো বলবে।
মাম তুমি আমার কোলে এসে পড়ো।বেচারির দেখো মুখটা শুকিয়ে একটু খানি হয়ে গেছে। কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে এখনই বুঝি কেঁদে দেবে।সৌন্দর্য নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।
ফাতিহা সৌন্দর্যের কথায় নূরের দিকে তাকিয়ে বলে,, মাম্মা আমি তোমার কোলে উঠায় তুমি কষ্ট পাচ্ছো? আমি কি বেশি মোটা? এই কথা টা বলতে বলতে ফাতিহার চোখ দুটো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে উঠে।
নূরের কেন জানি ফাতিহার এমন চাহনী দেখে খুব মায়া হলো । ফাতিহা কে নিজের সাথে জড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে একদম না। আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না। আমার আরো ভালো লাগছে।
সৌন্দর্য মনে মনে বলে,,এখানে তাকে এনেছি একজনের মন ভালো করার জন্য। সে এসে নিজেই গঙ্গা, যমুনা ভাসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সবগুলো ইমোশনাল ফুল।
ফাতিহা আর নূর সৌন্দর্য কে পাত্তা না দিয়ে নানান ধরনের গল্প করা শুরু করে দেয়। অবশ্য বেশি বকবক ফাতিহা ই করছে নূর শুধু তার উত্তর দিচ্ছে। এরমধ্যে নূর কিছু একটা বলতে গিয়ে ফাতিহা কে ডাক দেয়,,,,তিহা শুনো।
নূরের তিহা ডাকে সৌন্দর্য আর ফাতিহার মাথায় যেনো বা/জ পরে। সৌন্দর্য হুট করে গাড়ি ব্রেক করে। হুট করে হওয়ায় নূর সামলাতে না পেরে ফাতিহা কে নিয়ে হেলে পরে। কপালে আঘাত পাওয়ার কথা থাকলেও সৌন্দর্য হাত বাড়িয়ে নূরের কপালের সামনে রাখায় ব্যাথা পাওয়া থেকে বেঁচে যায়।
নূর সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। সৌন্দর্য নূরের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে থাকে আর বলে,,,নেক্সট টাইম ফাতিহা মাম কে তিহা বলবে না। আই নো ভালোবেসে বলেছো বাট কিছু কিছু জিনিস একজনের কাছে ভালোবাসার হলেও আরেকজনের কাছে কষ্টের কারণ। আই থিংক বুঝতে পেরেছো।
নূর চুপ করে শুধু তাকিয়ে ছিলো বুঝলো না তিহা ডাকের সাথে কষ্টের কি সম্পর্ক। নূর আর বেশি ঘাটায় ও নি আর না প্রশ্ন করার প্রয়োজন মনে করে।
এরমধ্যে একটা দোকানের সামনে সৌন্দর্য গাড়ি থামিয়ে রাখে। গাড়ি থেকে নামার সময় ফাতিহা জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছো?
এখনই আসছি মাম বলে সৌন্দর্য বড় বড় হাঁটা দিয়ে চলে যায়। কিছু সময়ের মাঝে ফিরেও আসে। হাতে অনেকগুলো প্যাকেট। গাড়ির ভিতরে ঢুকে সবগুলো প্যাকেট নূরের হাতে ধরিয়ে দেয়। নূর কিছু গাড়ির পিছনে রাখে আর কিছু ফাতিহার জন্য নেয়। যেই প্যাকেট টা নেয় এরমধ্যে হরলিক্স ও দেখতে পায়। ফাতিহা দেখে খুশি হয়ে যায় কারণ তার অনেক পছন্দ। নূরের হাত থেকে নিজেই নিয়ে নেয়। প্যাকেটে দুটো হরলিক্স ছিলো একটা ফাতিহা নিলো তাই নূর আরেকটা গাড়ির পিছনে রাখে পরে খাবে ফাতিহা এটা ভেবে। কিন্তু নূরের আর হরলিক্স রাখা হয়না সৌন্দর্যের কথায় আহাম্মক হয়ে যায়।
ওটা রাখছো কেনো? ওটা তোমার জন্য। স্মৃতি শক্তি যা দূর্বল ফাতিহার সাথে সাথে তুমিও খাও। ওটা তোমার।
নূর হরলিক্সের কৌটা নিয়ে চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে আছে কারণ ওটা বাচ্চাদের হরলিক্স। লোকটা কিনা সত্যি সত্যি তারজন্য হরলিক্স কিনেছে? তাও আবার বাচ্চাদের গুলো।


 চলবে,,,,,,,,,


গল্প: পরাণ দিয়ে ছুঁই (Season_2)

#পর্ব_২
লেখনীতে: ঝর্ণা ইসলাম


আসসালামু আলাইকুম। সকলে রেসপন্স করবেন।

Post a Comment

0 Comments