সৌন্দর্য প্রথমে ভেবেছিলো ইচ্ছে মতো কথা শুনাবে মা মেয়ে কে। কিন্তু তার সব ভাবনা চিন্তায় জল ঢেলে দিয়েছে মা মেয়ে মিলে।এখন মনে হচ্ছে এখানে এই মুহুর্তে না আসলে অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখা মিস হয়ে যেতো। চোখ দুটো কেমন মুগ্ধতায় ছেয়ে গেছে।
ফাতিহা নূরের কাধে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। নূর খুব যত্ন সহকারে ফাতিহার মুখে লেগে থাকা আইসক্রিম মুছে দিচ্ছে তাও আবার নিজের গায়ে জড়ানো উড়না দিয়ে। ফাতিহার চোখে মুখে কি সুন্দর প্রশান্তির ছাপ মনে হচ্ছে এই প্রথম মেয়ে টা কে সৌন্দর্য এতো প্রফুল্লিত দেখছে। মায়ের ভালোবাসার আর আদর যত্নের কি কোনো তুলনা হয়? উহুু কিছু দিয়ে হয় না সে যতোই বাবা,দাদা,দাদি আদর ভালোবাসা দেখ না কেনো।সৌন্দর্যের এতো সুন্দর মুমেন্টটা কেন জানি স্মৃতি হিসেবে ক্যামেরা বন্দী করে রাখতে ইচ্ছে হলো।যেই ভাবা সেই কাজ পকেট থেকে ফোন বের করে ফটাফট কয়েকটা ছবি ক্লিক করে নেয় সৌন্দর্য। পকেটে আবার ফোনটা ঢুকিয়ে ঐখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
নূর কি যেনো বলছে ফাতিহা কে ফাতিহা হেঁসে হেঁসে জবাব দিচ্ছে। মাঝে মাঝে উচ্চ স্বরে ও হাসির শব্দ এসে প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে। ব্যাপারটা মোটেও মন্দ লাগছে না সৌন্দর্যের কাছে। কিন্তু বেশি সময় এই সুন্দর অনুভূতি উপভোগ করতে পারলো কই?
নূর যে বারবার ফাতিহার মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে উড়না দিয়ে এতে করে সামনের দিক থেকে নূরের উড়নাটা সরে যায়। জামার গলা টা একটু বড় হওয়ায় সামনের দিকে অনেকটাই দৃশ্যমান। নূরদের টেবিলের সামনেই কয়েকজন ছেলে বসে আছে। এরমধ্যে একজন নূরকে যেনো নিজের দৃষ্টি দিয়েই নিজের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। হাতে তার ফোন হয়তো ছবিও তুলছে।সৌন্দর্য এটা দেখে নিজের মাথায় যেনো রক্ত উঠে যায়। হাতের মুঠি শক্ত করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
দুইজন বসে খাবার খাচ্ছে আরেকজন খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে হা করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এরমধ্যে একজন ওয়াশরুমের কথা বলে উঠে চলে যায়। ছেলেটা চলে গিয়ে যেনো সৌন্দর্য কে জায়গা করে দিলো। সৌন্দর্য গিয়ে যেই ছেলেটা উঠে চলে গেছে ঐ ছেলেটার জায়গায় শব্দ করে বসে পরে। সৌন্দর্য শব্দ করে বসায় যেনো নূরের দিকে তাকিয়ে থাকা ছেলেটা কিছুটা বিরক্ত হলো।চোখ মুখ কোচকে নূরের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,, আহ্ বাশার ডিস্টার্ব করছিস কেন বলতো? শান্তি মতো বসতে পারিস না নাকি? আমার মনোযোগ হটাচ্ছিস কেন?
"দেখতে পাচ্ছিস না এক ফুল পরির সুন্দর রূপ দেখছি?" ছেলেটা বলে।
-' ঐ ফুল পরির সুন্দর রূপ দেখার জন্য সৌন্দর্য আছে। তুই কেন অন্যের জিনিসে নজর দিয়ে নিজের চোখ হারাতে চাচ্ছিস বলতো?
ছেলেটা অন্য কারো কন্ঠে এমন হু'মকি মূলক কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।
আপনি কে? আর আমাকে এসব কথা বলছেন কোন সাহসে? আর আমাদের বেঞ্চে কি করছেন আপনি?
সৌন্দর্য ছেলেটার কথায় নিজের হাত দিয়ে ঘাড় ডলতে ডলতে বলে,,প্রথমত আমার সাহস একটু বেশিই।আর দ্বিতীয়ত তুই ভাবতে পারছিস না তোর সাথে কি হতে চলেছে।
পাগল নাকি আপনি? কিসব আবোল তাবোল কথা বলছেন বলুন তো? ছেলেটা একটু রাগ নিয়েই বলে কথাগুলো সৌন্দর্য কে।
কেন আমি কে সেটা তোর জানতে হবে কেন? সৌন্দর্য জিজ্ঞেস করে।
কারণ আমি অচেনা লোকের সাথে এতো কথা বলি না বলেই ছেলেটা গ্লাস নিয়ে পানি খেতে থাকে।
সৌন্দর্য হাসতে হাসতে বলে, অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলিস না,কিন্তু অপরিচিত মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে পারিস।অন্যর জিনিসে নজর ও দিতে পারিস তাই না?
সৌন্দর্যের এহেম কথায় ছেলেটার নাকে মুখে পানি উঠে যায়।অনবরত কাশতে থাকে। কিন্তু সৌন্দর্য কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। পারলে যেনো চোখ দিয়েই ভ/স্ব করে দেয়।
ছেলেটা কাশি থামিয়ে আমতা আমতা করতে করতে বলে,,মা-মানে?
'- মানে জানিস না তাই না? এটা কানের নিচে পরলে জানতে পারবি বলেই ঠাস করে চড় লাগিয়ে দেয় সৌন্দর্য।
ছেলেটা চ'ড় খেয়ে আহাম্মক হয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পাশের ছেলেটা বলে আরে ভাই হচ্ছে কি? আপনি এভাবে একজন লোককে বিনা কারণে মারতে পারেন না।আমরা কিন্তু থানায় কমপ্লেইন করবো বলে দিলাম।আপনি এভাবে অচেনা লোকের গায়ে কোনো অন্যায় ছাড়া মেরে ভুল করছেন।
সৌন্দর্য গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে তোর থেকে আমি ন্যায় অন্যায় শিখবো না।আর প্লিজ এসব নীতি কথা শুনাতে আসিস না আমাকে।নিজে না খেতে চাইলে চুপ করে বসে থাক।এতক্ষন চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখে যখন কিছু বলিস নি এখনও কিছু বলার দরকার নেই। আমাদের দুইজনের বিষয় টা আমাদের দুইজনকেই সামলাতে দে ব্রো।
ছেলেটা এবার দ'মে যায় সৌন্দর্যের কথায়। এইদিকে ওরা নতুন। সৌন্দর্যের কথা শুনে মনে হলো এইদিকের কোনো প্রভাবশালী লোকই হবে। ছেলেটা মনে মনে চ'ড় খাওয়া ছেলেটা কে কয়েকটা গা/লি দিয়ে নেয়। কতো করে বলেছে নিজের চরিত্র ঠিক কর, এসব ভালো না একবার ধ/রা খেলে জীবন রফাদফা কে শুনে কার কথা। নে এবার বোঝ ভালো করে।
কিরে একটায় হয়েছে নাকি আরো কয়েকটা লাগবে? সৌন্দর্য কুটিল হেসে বলে।
ছেলেটা তার বন্ধুর দিকে তাকাতেই চোখের ইশারায় সৌন্দর্যের কাছে যেনো ক্ষমা চায় দেখিয়ে দেয়। ছেলেটা কি যেনো ভেবে বলে,,সরি বস ভুল হয়ে গেছে। চোখের সামনে সুন্দর কিছু পরলে চোখ তো যাবেই তাই না?
সৌন্দর্য রাগী লুক নিয়ে তাকায়।
ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বলে না ইয়ে মানে সরি সরি বলেই বিল টা টেবিলে রেখে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
সৌন্দর্য ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রিলেক্সে বসে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। নূরদের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে তারা তাদের মতো সময় কাটাচ্ছে।এইদিকে যে এতোকিছু হয়ে গেছে তারা জানতেও পারলো না।
সৌন্দর্য নূর আর ফাতিহার দিকে কিছু সময় নিয়ে তাকিয়ে রয় তারপর গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলে,,আরে এমন ভাবে কেবল সময় উপভোগ করে? আশে পাশে ও তো নজর রাখতে হয় নাকি? কে জানে কখন আশে পাশে ঝড়,তুফান, সাইক্লোন বয়ে যায়।
হুট করে এহেম কথায় নূর ইসরাত ফাতিহা আর আশেপাশের কয়েকজন সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। সৌন্দর্য আশেপাশের লোকদের দিকে তাকিয়ে সৌজন্যে মূলক হেসে বলে সরি গায়েজ ফর ডিস্টার্বিং ইউ ইনজয়। সকলে যে যার মতো আবার ব্যস্ত হয়ে যায়। ফাতিহা সৌন্দর্য কে দেখে খুশিতে হাত তালি দেয়। পরে আইসক্রিম খেয়েছে মাথায় আসতেই নূরের উড়নার নিচে মুখ লুকায়। সৌন্দর্য ফাতিহার কান্ড দেখে ও কিছু বলল না। ঐখান থেকে উঠে এসে নূরের অপর পাশের সিটটায় বসে পরে।
নূর কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। চোখ ঘুরিয়ে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মনের আনন্দে খেয়ে চলেছে। নূরের খুব অস্থির লাগছে।নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে বসে। উড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়। এটা দেখে সৌন্দর্য নূরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,আই ওয়ার্নিং ইউ নূর নেক্সট টাইম যেটা আমার দেখার কথা একমাত্র আমার হক আছে ঐটায় অন্য কেউ ভাগ বসালে বা নজর দিলে,,নূরের চোখে চোখ রেখে বলে আই উইল কি'ল ইউ! বলেই নূরের মুখে ফু দিয়ে দূরে সরে যায়। নূর এমন হুমকি শুনে ফ্রিজ হয়ে বসে রয়। কি করেছে লোকটা এমন কথাই বা কেন বলছে কিছুই মাথায় প্রবেশ করলো না নূরের।
সৌন্দর্য ওয়েটার কে ডেকে বিল পরিশোধ করে ফাতিহা কে কোলে তুলে নেয়। ওদের চোখের ইশারায় আসতে বলে বেরিয়ে যায়।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
সৌন্দর্যের সেই হুমকি মূলক কথা নূরের কানে বার বার এসে যেনো বারি খাচ্ছে। কি এমন করলো সে যে এমন ভাবে কথাগুলো বলল। নূর সারারাত এসব ভেবে ঘুমাতে পারে নি।ইচ্ছে করেছিলো ফোন করে জিজ্ঞেস করতে কেন বলেছে ঐ কথা গুলো। পরোক্ষনে নিজের জড়তার কারণে বলতে পারে নি।সারা রাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে সকালের দিকে নূর ঘুমায়।এরমধ্যে ফোনের বিদঘুটে রিংটোনে আরামের ঘুমের বারোটা বেজে যায়।উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ইসরাত কথার ঝুলি নিয়ে বসে। এখনো বাড়ি থেকে বের কেন হচ্ছে না। ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। কতক্ষন ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। নূর ইসরাতের কথা ঘুমু ঘুমু চোখে শুনে ঘড়ির দিকে তাকায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ চড়ক গাছ। দশ মিনিটের মধ্যে আসছি বলে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পরে নূর।
ইসরাত যখন অপেক্ষা করে হাঁপিয়ে গেছে তখন এসে নূর উপস্থিত হয়।
সরি দোস্ত আজ যে ক্লাস আছে একদম ভুলে গেছি। ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে। কি করবো বল কাল রাতে তো,,, আর কিছু না বলে চুপ হয়ে যায় নূর।
ইসরাত নূরের দিকে তাকিয়ে বলে ঠিক আছে চল যাওয়া যাক।
দুইজন তারাতাড়ি ভার্সিটিতে এসে উপস্থিত হয়। গেইট পেরিয়ে ভিতরে খেয়াল না করে ঢুকতে গিয়ে কিছু একটার সাথে বারি খেয়ে নিচে পরে যায়।
নিচে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে ইসরাত। মাথাটা কেমন ভনভন করছে তার পরে গিয়ে। কোমরের ও বারোটা বেজে গেছে।
ইসরাত? এই ইসু তুই ঠিক আছিস? কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস বল আমায়। ইসস দেখে হাঁটবি না? এতো তাড়াহুড়ো কেউ করে? দেখ এখন পরে গেলি খুব লেগেছে তাই না দোস্ত? কিরে তুই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না নাকি ইসুু বলেই নূর ইসরাত কে একটা ধাক্কা দেয়।
নূরের ধাক্কায় যেনো ইসরাতের হুুশ আসে। এতক্ষন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। হুঁশ আসার সাথে সাথে যেনো কোমড়ে ব্যাথা টা আক্রমন করে বসে ইসরাত কে। চোখ মুখ কোচকে নূরের দিকে তাকায়।
নূর ইসরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে যে কি করে কেমন করে পরে গেলো অথচ তার কোনো বোধ নেই।
-' আমাকে ধরে উঠাবি? নাকি এমনিতেই বসে থাকবো উঠা আমাকে।( ইসরাত)
নূর হাত ধরে ইসরাত কে উঠায়। ইসরাত ব্যাথায় ওমাগো বলে ঠোঁট কামড়ে ধরে। কান্না যেনো বেরিয়ে আসতে চাইছে।কিন্তু কিছুতেই কান্না করা যাবে না। কান্না করা একদম নিষিদ্ধ যতোই ব্যাথা পাক না কেন। একটা মান সম্মানের ব্যাপার আছে না। ভার্সিটিতে পরোয়া মেয়ে পরে গিয়ে কান্না করছে ছেহ কেমন দেখায়।মানুষ হিহিহি করে হাসবে। ইসরাত নিজেই নিজেকে শান্তনা দেয় কাঁদিস না ইসু বোন আমার। কিছু হয়নি সব ঠিক আছে ওকে? একদম কাঁদবি না।
ইসরাত ঠিক আছো?
পরিচিত কন্ঠ শুনে ইসরাত চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে তালহা স্যার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
-' সরি আসলে আমার দেখে চলা উচিৎ ছিলো একটু তারায় ছিলাম তো তাই খেয়াল করিনি। বেশি ব্যাথা পেয়েছো? ডাক্তারের কাছে যাবে কি?( তালহা স্যার)
-' কিরে কিছু বলছিস না কেন আমাদের? (,নূর)
ইসরাত নিজের পিছনের জামা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে ঠিক আছি আমি এতোটা ও ব্যাথা পাইনি যে ডাক্তার দেখাতে হবে। আ'ম আ স্ট্রং গার্ল। মনে মনে আবার নিজেই বলে স্ট্রং না ছাই ব্যাথায় জান বেরিয়ে গেলো। এই তালা ব্যাটা এখানে কি করছে ধূর ভালো লাগে না কিছু। আজ ফকিন্নির মতো ভার্সিটিতে এসেছি আর একে আজই আসতে হলো? অন্য সময়ে পরি সেজে আসলে তো এই বেটার টিকিটা ও পাওয়া যায় না। ইসরাত রে তোর কপালই খারাপ বুঝলি? এতো ব্যাথা পেলি মন খুলে ওমাগোওওও বলে না কান্না করতে পারছিস আর না যার জন্য ব্যাথা পেয়েছিস তাকে কিছু বলতে পারছিস। আজ দিনটাই খারাপ কে জানে সকালে কার মুখ দেখে ঘুম ভেঙেছে। পরোক্ষনেই আবার মনে পরে সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই সবার আগে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। নিজের এসব আজগুবি ভাবনা ভেবে নিজেই আবার চুপ হয়ে যায় ইসরাত।
-' তোর চোখ মুখ দেখে ভালো লাগছে না আমার ইসু। আয় এক জায়গায় বসি প্রথম ক্লাস টা আজ আর করতে হবে না।
-' হ্যা তোমরা আসো আমার সাথে বলে তালহা অন্যদিকে যাওয়া ধরে। তালহার পিছন পিছন নূর আর ইসরাত ও যায়। ইসরাতের পা ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই অবশ্য নূর ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
ওরা একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে বসে। ইসরাত নূরের কাছে পানি চায়। নূর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দেখে তাড়াহুড়ায় পানি নিতে ভুলে গেছে। তালহা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেই যায় পানি আনতে।
নূর আর ইসরাত বসে আছে চুপচাপ। এরমধ্যে সৌন্দর্যের কন্ঠ স্বর শুনে যেনো জমে যায় নূর। আজ মন থেকে খুব করে চাইছিলো যেনো লোকটার মুখোমুখি না হতে হয়। কিন্তু ঐযে আমরা যেটা খুব বেশি করে চাই তার উল্টোটাই হয় আমাদের সাথে।
-' তোমরা এখানে কি করছো ক্লাস টাইমে ক্লাস না করে ?
নূর নীরব। ইসরাত বলে,,আপনার বন্ধুর ভুলের মাসুল দিচ্ছি।
মানে? সৌন্দর্য জানতে চায়।
মানে কি আর বলবো স্যার বলুন তো? কিসব কানা ফানা বন্ধু আপনার। চোখে দেখে না হাতি হয়ে মশার সাথে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দিয়েছে।
হোয়াট! আমি হাতি? আর মশা টা কে হ্যা? নিজেকে আয়নায় দেখেছো কখনো? (তালহা স্যার পানির বোতল হাতে নিয়ে আসতে আসতে রাগী গলায় কথাটা বলে)
হ্যা দেখবো না কেন আজও তো দেখলাম সুন্দর ই লাগছে।শুধু এই সৌন্দর্য কিছু মানুষের চোখে পরে না এই যা ( ইসরাত)
চোখে পরবে না আবার? আস্তো একটা ড্রাম ধাপুস ধুপুস পায়ে হেঁটে বেড়ায় সকলের চোখেই পরে।( তালহা)
--' এইইই আপনি ড্রাম কাকে বললেন হ্যা ড্রাম কাকে বললেন?
ইউ গায়েজ জাস্ট সাট আপ। এটা একটা ভার্সিটি আর এই তালহা তুই এখানে কি করছিস? সেই কখন তো বের হলি তোর নাকি জরুরি কাজ আছে তো?(সৌন্দর্য)
তালহা সব খুলে বলে সৌন্দর্য কে। সৌন্দর্য সব শুনে মনে মনে বলে এই দুইটা কখনো শুধরাবে না। আর ইসরাত এতো ঝগড়া পারে আল্লাহ না জানি কবে আমার টা কেও এমন ঝগড়ুটে বানিয়ে ছাড়ে। পরোক্ষনে ভাবে ইসরাতের মতো নূর ও যদি তার সাথে ঝগড়া করে তাহলে ব্যাপারটা মন্দ হয় না।সৌন্দর্যের এসব ভাবনা কাটে ইসরাতের কথায়,,,
কোথায় ভাবলাম হ্যান্ডু ছেলের সাথে হয়তো ধাক্কা খেয়েছি এইবার আমার না হওয়া প্রেম টা বুঝি হয়েই যাবে।কিন্তু কিসের কি এই নিরামিষ ই আছে আমার কপালে হাহ্।(ইসরাত)।
তালহা পানির বোতল টা ইসরাতের হাতে ধরিয়ে দেয়। হ্যা এতো স্বপ্ন দেখা ভালো না। আর এবার দেখে মাফ করে দিলাম আমি হওয়ায় পরের বার দেখে শুনে না চললে। অন্য কারো সাথে ধাক্কা খেলে তোমাকে আমি পৃথিবী থেকেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো বলে দিলাম। কথাটা বলে তালহা সৌন্দর্য কে চোখের ইশারায় বায় বলে চলে যায়।
সৌন্দর্যের ও ক্লাস আছে তাই ওদের ক্লাসে যেতে বলে চলে যায়। আর ছুটির পর যেনো নূর সৌন্দর্যের জন্য পার্কিং লটে অপেক্ষা করে সেটাও বলে যায়।
**************
ইসরাত আজ ছুটি পর্যন্ত থাকেনি।এক ক্লাস করেই চলে গেছে। নূর বুঝতে পারলো ভালোই ব্যাথা পেয়েছে মেয়েটা। সেও যেতে চেয়েছিলো সাথে কিন্তু ইসরাত নিয়ে যায় নি। অগত্যা কি আর করার নূর ছুটির পর পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক পায়চারি করছে।সৌন্দর্য তো বলল ছুটির পর যেনো এখানে এসে দাঁড়ায়। সেই কখন থেকে দাড়িয়ে আছে কিন্তু লোকটার কোনো খবর নেই। পা ব্যাথা হয়ে গেছে। এইদিকে প্রচুর খিদে লেগেছে। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না নূর। গত বিশ মিনিট যাবত দাঁড়িয়ে আছে। আর দশ মিনিট দেখে চলে যাবে বলে ঠিক করে নেয় নূর। গাড়িটা ও লক করা নয়তো একটু বসতে পারতো। এই গরমে কি ভালো লাগে না কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে।
আর পাঁচ মিনিট যাওয়ার পর বুঝতে পারলো সৌন্দর্য আসতেছে কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলতে বলতে। নূর ব্যাগের ফিতাটা শক্ত করে ধরে মনে মনে ঠিক করে আজ কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিবে সে লোকটা কে। পেয়েছে টা কি তাকে? কেউ কাউকে এতো সময় অপেক্ষা করায় নাকি?
-' গাড়ির ভিতরে বসতে পারলে না গা;ধা মেয়ে?
-' কি করে বসবো আপনি তো,,,,,
নূর আর মুখের কথা শেষ করতে পারলো না। সৌন্দর্য গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেছে।
আশ্চর্য আপনি খুললেন কি করে? গাড়ির তো লক করা না ইয়ে মানে লক তো খুলতে দেখলাম না।
--' গাড়ি আমি আনলক করে গিয়েছি তোমার জন্য, যেনো তুমি বসতে পারো।
--' কিন্তু আমি তো টানলাম খুলতে পারলাম না।
-- তুমি বারবার এটা প্রমান করে দাও সবার দ্বারা সব কিছু হয় না। স্টুপিড কাম অন দা কার। কমপ্লেই কিনে দিতে হবে এবার বোঝা যাচ্ছে। গাড়ির দরজা খুলতে পারে না আমাকে কি করে সামলাবে কে জানে বিরবির করে বলে সৌন্দর্য।
নূর রাগী চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়।
এভাবে তাকালে ভেবেছো আমি ভয় পাবো?(সৌন্দর্য)
উহুু একদম না। জানো তোমাকে কেমন দেখতে লাগছে? ফাতিহা হলে এতক্ষনে হেঁসে কুটিকুটি হতো।
নূর নিজের মুখের এক্সপ্রেশন বদলে গাড়িতে উঠে বসে।
সৌন্দর্য মনে মনে হাসে ইসসস এতো কিউট লাগছিলো ইচ্ছে করছিল গাল দুটো টেনে দিতে।
গাড়ির ভিতর পিন পতন নীরবতা। নূর বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ির হালকা ঝাকুনিতে ঘুম ধরে যাচ্ছে। নূরের ঝিমানোর মাঝেই গাড়ির মধ্যে গান বেজে উঠে,,,
❝ আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে,,,,,
আমি তোর মনটা ছুঁয়ে স্বপ্ন দিয়ে আঁকবো যে তোকে,,,!
তুই থাকলে রাজি ধরবো বাজি, কোনো কিছু না ভেবে,,,,,❞
গান শুনে নূরের ঘুম ভাব কেটে যায়। নূর আড় চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নূরের বুঝি ঐ দৃষ্টিতে কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেছে। সেও ঐ চোখ থেকে চোখ সরাতে পারছে না। গান বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে মনে হয় দুইজনের ঘোর কাটে।
সৌন্দর্য একটা রেস্টুরেন্টে এসে গাড়ি থামায়। নূরের জন্য খাবার অর্ডার করে।নূর না করেনি খুব খিদে লেগেছে তাই চুপচাপ খেয়ে নেয়।
সৌন্দর্য গলা খেকাড়ি দিয়ে বলে,,নূর আমি এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য তোমাকে ডেকেছি। আশা করি মাথা ঠান্ডা রেখে আমার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করবে।
আ-আসলে আংকেল না মানে তোমার বাবা,,,
নূর আস্তে ধীরেই তার খাওয়া শেষ করে। অবশ্য সৌন্দর্য শুধু তার জন্য কফি অর্ডার করেছে। এতে নূর কিছু বলেনি যা ইচ্ছে খাক তাতে তার কি? তার খিদে পেয়েছে সে খাচ্ছে।
সৌন্দর্য কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর আড়চোখে নূরকে পরখ করে চলেছে। আশ্চর্য হচ্ছে এটা ভেবে কোনো কিছু না বলে চুপচাপ খাচ্ছে। এটাই তো সৌন্দর্য চায় তার সব বিষয়গুলো এভাবে বুঝুক আর মেনে নিক। কিন্তু এখন এটা ভেবে টেনশন হচ্ছে যা বলার জন্য ডেকেছে বিষয় টা মেয়েটা কিভাবে নিবে। মাথা ঠান্ডা রেখে শুনলে হয়।
নূর খাওয়া শেষ করে এবার আরাম করে বসে।উফফ এখন সব শান্তি শান্তি লাগছে তার। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য নেই।একি এখানে বসেই তো কফি খাচ্ছিলো লোকটা। জাদু জানে নাকি? এমন করে উধাও হয়ে গেছে অথচ নূর কিছু টে'র ও পেলো না। লোকটা গেলো কোথায় ভেবে নূর এদিকে ওদিকে চোখ ঘুরায়।
**********
নূরের মা সোফার উপর বসে বসে একটা কাঁথা সেলাই করছে। বাড়ি এখন পুরাই ফাঁকা। নূর,তূর পড়াশোনা নিয়ে আর নূরের বাবা কাজ নিয়ে সেই সকালে বের হয়েছে। তিনি এখন অবসর সময় পাড় করছে। অবশ্য বারবার বাইরের দিকে দেখছে জানালা দিয়ে ওদের আসার সময় হয়ে গেছে কিন্তু একটারও আসার নাম গন্ধ নেই। ফোনের দিকে ও তাকাচ্ছে সবকটা কে ফোন দিবে কিনা ভাবছে।হয়তো আজ নূর আর তূর পুরো ক্লাস করে আসবে তাই তাদের আর ফোন দেয়নি। ফোন টা হাতে নিয়ে নূরের বাবাকে কল লাগায় উনার আরো আগে এসে যাওয়ার কথা কিন্তু এখনও খবর নাই। কোনো কাজ পরে থাকলে ফোন করে জানিয়েতো দিবে।লোকটা কবে বুঝবে কে জানে যে বাড়িতে একজন থাকে তার টেনশন হয়।
বার কয়েক বার রিং হয়েও নূরের বাবা ফোন তুলেন না।বাজতে বাজতে কেটে যায়। নূরের মা ও কম কিসে? একের পর এক কল দিতে থাকে দেখবে লোকটা না ধরে যায় কোথায়। ৭ ম বার দেওয়ার পর থেমে যায় নাহ আর দিয়ে ও লাভ নেই। ফোনের দিকে তাকিয়ে কপালে সূক্ষ্ব ভাজ পরে।লোকটা কি ফোনের ধারে কাছে নেই নাকি?
এরমধ্যে সিএনজির শব্দ শুনতে পায় নিচ থেকে। হয়তো এসে গেছে এজন্য ফোন ধরে নি। নূরের মা গিয়ে দরজা খুলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।আজ ইচ্ছে মতো দরজার পাশে দাঁড়িয়েই ঝেড়ে নিবে।এতোদিন কিছু না বলতে বলতে লোকটার সাহস বেড়ে গেছে। সবকিছুতেই এখন খাপছাড়া ভাব আর অনিয়ম।
সবকিছু মাথা থেকে বের হয়ে যায় নূরের মায়ের যখন দেখতে পায় একটা লোক নূরের বাবা কে হাত ধরে পরে নিয়ে আসছে।নূরের বাবার চেহারা কেমন মলিন হয়ে আছে। নূরের মা সব ফেলে দৌড়ে যায়।
এই- এই কি হয়েছে তোমার?
নূরের বাবা চোখ তুলে তাকায়। কিছু বলতে চাইছে কিন্তু শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
-' কিগো কিছু বলছো না কেন তুমি?
-' আন্টি শান্ত হোন একটু। আমি আংকেল কে একটু বসাই? ( অচেনা লোকে)
-' হ-হ্যা বাবা বলে নূরের মা ও ধরে নিয়ে সোফায় বসায় নূরের বাবা কে। নূরের বাবা সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে মাথা হেলিয়ে দেয়।
-' একটু পানি হবে আন্টি? না মানে আংকেল কে খাওয়ালে হয়তো উনার ভালো লাগতো।( অচেনা লোকে)
-' নূরের মা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি করে গিয়ে পানি আনে। নূরের বাবার অবস্থা দেখে মাথা পুরো ফাঁকা হয়ে গেছে । হাত পা কেমন কাঁপছে। পানি এনে নূরের বাবার মুখেও হাত কাঁপুনির জন্য তুলে দিতে পারছে না। ছেলেটা বিষয় টা বুঝতে পেরে আমাকে দিন বলে নিজেই একটু একটু করে মুখে দিয়ে দেয়।
-' নূরের বাবা পানি খেয়ে আরাম করে বসে চোখ বন্ধ করে নেয় এবার।
নূরের মা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের বাবার দিকে ।
আ- আসলে হয়েছে কি আন্টি,, আমি আর আংকেল এক সিএনজিতে করেই আসছিলাম।হুট করে মাঝ রাস্তায় আংকেল হাস ফাঁস করছিলো বুকে ধরে কেমন যেনো করছিল। আমার মনে হলো আংকেল ঠিক নেই তাই বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম কি হয়েছে? কিন্তু উনি উত্তর ই দিতে পারছিলো না। উনার হাবভাব দেখে আমি ধারণা করি হয়তো বুক ব্যাথা। তাই ড্রাইভার কে বলে পাশের একটা হসপিটালে নিয়ে যাই। ওখানে গিয়ে একটা ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নেই এইযে ঔষধগুলো বলে ছেলেটা একটা ঔষধের প্যাকেট নূরের মায়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়। আসলে ডাক্তার বলেছিল আংকেল কে আজ বিকেল পর্যন্ত থাকার জন্য। কিন্তু উনি থাকতে নারাজ। আমিও বুঝিয়েছি উনি বাড়ি আসলে নাকি সুস্থ হয়ে যাবে তাই আর কি করার বলুন? উনার কথা মতো বাড়ি নিয়ে আসলাম ।
-' তোমার এতো শরীর খারাপ তুমি বের হয়েছো কেন বাড়ি থেকে? একদিন কাজে না গেলে কেউ উপুস থেকে ম'রে যেতাম না। আর একটা ফোন করে জানাতে পারতে।
-' ছেলেটা গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলে,,আন্টি থাক ইয়ে মানে আর রাগারাগি করে কি হবে বলেন? বিপদ তো আর বলে কয়ে আসে না।
নূরের মা ছেলেটার কথায় থতমত খেয়ে যায়।মাথায় আসে কি করছে এসব। একটা অজানা লোকের সামনে এসব বললে কি ভাববে ছেলেটা। নিজেকে সামলে ছেলেটা কে অনেক করে ধন্যবাদ জানান তিনি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নিজের স্বামীকে সাহায্য করার জন্য।
-' এসব বলে আমাকে ছোট করবেন না আন্টি। এটা আমার কর্তব্য। আমার জায়গায় যে কেউ থাকলেই হয়তো এতটুকু করতো।
-' করতো না বাবা আজকাল ভালো মানুষের সংখ্যা হাতে গোণা। কারো বিপদে কাউকে পাওয়া যায় না। তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিই।
-' এসব বলে আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেন আন্টি?
-' নূরের মা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়। আজকাল এমন ছেলে দেখা কষ্ট সাধ্য।অচেনা লোকের জন্য নিজের সময় নষ্ট করেছে।
-' আজ তাহলে আমি আসি আন্টি।
-' সে কি? একদম না তুমি পাঁচ মিনিট বসো আমি এখনই আসছি।
-' ভুলেও কিছু করতে যাবেন না আন্টি। আমার একটু তাড়া আছে। এখন না গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
-' কিন্তু?,,,
-' আমি আসছি ভালো থাকবেন আর আংকেলের যত্ন নিয়েন।
-' আচ্ছা বাবা তোমার তাড়া থাকলে তোমাকে আর আটকাবো না। কিন্তু আন্টি যখন ডেকেছো একদিন সময় করে আসতে হবে। তোমাকে কিছু খাওয়াতে ও পারলাম না।
-' এসব ভেবে মন খারাপ করার দরকার নেই। দেখবেন একদিন হুট করে এসে হাজির হয়েছি বলেই ছেলেটা মিষ্টি করে হাসি দেয়। যাওয়ার আগে অবশ্য ছেলেটা দেওয়ালে টানানো ছবির দিকে তাকাতে ভুলল না।
-' নূরের মা মুচকি হেসে বলে,, ঠিক আছে বাবা।
ছেলেটা বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলে নূরের মা নূরের বাবার পাশে বসে থাকে।
***********
সৌন্দর্য ওয়াশরুম থেকে এসে সেই যে বসে একভাবে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই। আশ্চর্য কিছু বলার থাকলে বলে ফেলুক। এমন করে বসিয়ে রেখে তাকিয়ে থাকার মানে কি?
--' কিছু কি বলবেন স্যার? নয়তো আমি যাই বাড়ি যেতে হবে। অনেক বেলা হয়ে গেছে আর তাছাড়া মা টেনশন করবে।
--' নূরের কথায় সৌন্দর্য নড়েচড়ে বসে। সে ভেবে পাচ্ছে না কোথা থেকে কথা বলা শুরু করবে।
আমি তোমাকে এখানে বিশেষ কারণে ডেকেছি নূর।
-' কি বিশেষ কারণ স্যার? নূর জিজ্ঞেস করে।
আমাদের বিয়ে নিয়ে। আসলে তোমার বাবা আর আমার বড় আব্বু খুবই ভালো বন্ধু। একে অপরের জান বলতে গেলে। আমি অবশ্য এসব বিষয় আমাদের বিয়ের দিনই জানতে পেরেছি। আমিও তোমার মতো জানতাম না ঐদিন ই আমার বিয়ে। এসব নিয়ে আমার কোনো ভাবনাও ছিলো না। হুট করে আমাকে তোমাদের বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয়। আমি সরল মনে যাই গিয়ে বুঝতে পেরেছি কি জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে। আমি তখনও জানতাম না আমার সাথে যাকে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে সেই মেয়েটা আর কেউ নয় তুমি। বলেই সৌন্দর্য নূরের দিকে তাকায়।
নূর নড়েচড়ে বসে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে পুরো বিষয়টা সে জানতে খুব আগ্রহী।
সৌন্দর্য পানির বোতল টা নূরের দিকে এগিয়ে দেয়। নূর নিয়ে এক ঢুক পানি পান করে।
আমার লাইফে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের মধ্যে আমার বড় আব্বু একজন। ঐদিন সে অসহায় চোখে আমার দিকে শুধু একবার তাকিয়ে ছিলো অবশ্য নিজের মুখে বিয়ের কথা ও বলেনি।বিয়ের কথা বলেছে আমাকে তালহা।
ধরে নাও বিয়েটা নিয়ে যা ঘটলো তোমার সাথে আমার সাথে ও সেইম।আমরা দুইজনই একই পথের পথিক। অবশ্য আমার থেকে বেশি এফেক্ট পরেছে তোমার উপর তোমার জীবনে। কিন্তু তুমি যা করছো একবার ভেবে দেখোতো এটা ঠিক?
আংকেল কে এভাবে কষ্ট দিও না। হি লাভস ইউ ভেরি মাচ নূর। আমি পুরো বিষয় টা তোমাকে বলতে চাচ্ছি না।আমি চাই তুমি তোমার নিজের বাবা কে প্রশ্ন করো। খুলাখুলি কথা বলো।এসব মান অভিমানের পালার সমাপ্তি ঘটাও। জীবন বড্ড কঠিন নূর। তুমি কি জানো তোমার বাবার অবস্থা খুব বেশি ভালো না। নিজের শরীর নিয়ে বড্ড অবহেলা করছেন। খাওয়া দাওয়া করছেন না ঠিক মতো। এতো বছরের ভালোবাসা এভাবে একটা ঘটনার জন্য বদলে দিলে তুমি? বাবা মা কখনো সন্তানের জন্য খারাপ চায় না। হয়তো তোমার আমাকে নিয়ে সমস্যা আছে। তুমি চাইলে আমি সমাধান দিয়ে দিবো কিন্তু তুমি তোমার বাবার সাথে সম্পর্ক ঠিক করো।আমি চাই না আমার জন্য একটা মিষ্টি মধুর সম্পর্ক এভাবে শেষ হোক।
নূর নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে মাঝে মাঝে হিচকি উঠছে।আসলেই তো বাবার পাশে বসে হাত দুটি ধরে একবার জিজ্ঞেস করতে পারতো।বাবা তো কখনো কারণ ছাড়া কিছু করে নি।না এই জীবনে ভুলেও তার জন্য ভুল কিছু করেছে।
সৌন্দর্য মুখে হাত দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে চুপচাপ। আরো অনেক কিছু বলার আছে তার।সব ক্লিয়ার করা দরকার। এরপর যদি নূরের মনে হয় তার সাথে থাকবে তাহলে নূর কে স্বাদরে সে গ্রহন করে নিবে।আর যদি মুক্তি চায় তাহলে মুক্ত করে দিবে।
বেশ কিছু সময় দুইজন চুপচাপ বসে থাকে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।না কোনো শব্দ আছে। সৌন্দর্য নিজের মুখ থেকে হাত সরিয়ে সামনে তাকায়। তাকিয়ে একটা ঝটকা খায় সৌন্দর্য। নূর আশে পাশে কোথাও নেই। সৌন্দর্য উঠে দৌড়ে ওয়াশরুম চেক করে। না সেখানে ও নেই। আবার দৌড়ে বাইরে বের হয়ে দেখে নূর একটা রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছে। নূরের চলে যাওয়া নীরব দর্শকের মতো দেখে সৌন্দর্য। ইচ্ছে করলে আটকাতে পারতো কিন্তু সে চায় না। মেয়ে টা কে একটু সময় দেওয়া দরকার। পরে না হয় সব বিষয় ক্লিয়ার করা যাবে। সৌন্দর্য আবার ফিরে এসে বিল মিটিয়ে নিজে ও অজানা উদ্দেশ্যে গাড়ি ছাড়ে।আজ আর বাড়ি যাবে না। অনেকদিন হয়ে গেলো নিজেকে সময় দেওয়া হয় না। আজ না হয় কিছু টা সময় নিজের জন্য বরাদ্দ করে রাখলো।
***********
খোলা আকাশের নিচে মাথার পিছনে দুই হাত গুঁজে আকাশ পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌন্দর্য। রাত আনুমানিক ১:৫০ টা কি দুইটা এটাও সৌন্দর্যের আন্দাজ। ঘড়ি দেখা হয় নি।নিকশ কালো চারদিকে ঝি ঝি পোকার ডাক আসছে।
এরমধ্যে হুট করে সৌন্দর্যের ফোন বেজে উঠে। বার কয়েক বার বাজার পর পকেট হাতড়ে ফোন টা বের করে। ফোনের স্ক্রিনে ❝পরাণ❞ নামটা জ্বল জ্বল করছে।
সৌন্দর্য এক সেকেন্ড ও দেরি করে নি ফোন রিসিভ করতে। ওপাশ থেকে দীর্ঘ শ্বাস আর হিচকির শব্দ আসছে।সৌন্দর্যের বুকের ভিতর কেমন তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। অধৈর্য গলায় বলে,,,,,
"কি হয়েছে পরাণ? তুমি ঠিক আছো? পরাণ বলো আমাকে? " পরাণ এই পরাণ।
রাতের আকাশে তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে। চারপাশ থেকে নানা ধরনের পোকা মাকড়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। রাতের নিস্তব্ধতা বুঝিয়ে দিচ্ছে যেনো তারা। মাঝে মাঝে পেঁচার ডাক ও কানে আসছে। কেন যেনো পেঁচার ডাক টা সৌন্দর্যের ভালো লাগছে না। খুব অস্বস্তি লাগছে। শরীর টা আজ ভীষণ ক্লান্ত। এখান থেকে উঠে বাড়ি যেতে ও ইচ্ছে করছে না। এইদিকে মশা যে তাকে রাতের ডিনার বানিয়ে খেয়ে চলেছে সেইদিকে তার খেয়াল নেই।
সৌন্দর্য কে দেখে মনে হবে,,সে এখন দুনিয়ায় সব মায়া মমতা ত্যাগ করে দিয়েছে। এরমধ্যে ফোন টা খুব বিরক্ত করছে তাকে।কে বলেছে এতো সুন্দর একটা মুহূর্তে এমন ভাবে নিজের জানান দিতে? না চাইতেও ফোন টা পকেট থেকে বের করে সৌন্দর্য।
এতো রাতে ❝পরাণ❞ নামটা ফোনের স্ক্রিনে এমন ভাবে জ্বল জ্বল করবে সেটা সৌন্দর্য কল্পনা ও করেনি। ফোন রিসিভ করে সৌন্দর্য চুপ হয়ে থাকে। অপর পাশ থেকে কি বলে মূলত সেটা শোনার জন্য কিন্তু মিনিট দুয়েক শুধুই নিস্তব্ধতা তারপর হিচকি,দীর্ঘ শ্বাসের শব্দ।
কি হয়েছে পরাণ?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চুপ করে আছো কেনো? প্লিজ কি হয়েছে বলো।তুমি ঠিক আছো তো?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
নূর? প্লিজ বলবে কি হয়েছে? আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে এবার।
স-স্যার!
আমি শুনছি নূর বলো তুমি, কি হয়েছে তোমার?
-' আ-আমার আব্বু ভালো নেই স্যার।আমি এতোদিন কেনো তার খোঁজ নেই নি। আজ বাড়িতে এসে শুনি রাস্তায় অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। আ-আমি তার সামনে যেতে পারছি না। কোন মুখে যাবো? তার উপর আমি অন্যায় করেছি চরম অন্যায়।সবকিছু আমার খোলাখুলি আলোচনা করা দরকার ছিলো।
এখন আমি কোন মুখে গিয়ে বাবার সামনে দাঁড়াবো? আমি সাহস আর শক্তি পাচ্ছি না। স্যার আপনি একটু সাহায্য করবেন আমাকে? বলে দেন প্লিজ কি করবো আমি। আমার নিজের উপর আমার খুব ঘৃণা হচ্ছে বলেই নূর শব্দ করে কেঁদে উঠে।
সৌন্দর্য চুপচাপ নূরের কথা শুনে। কিছু সময় দুই পাশই নীরব হয়ে যায়।
তুমি আগে শান্ত হও।চোখের পানি মুছে এক গ্লাস পানি পান করো।(সৌন্দর্য)
আ-আমি ঠিক আছি।(নূর)
আমি যা বলছি তা শুনো।(সৌন্দর্য)
নূর সৌন্দর্যের কথা মতো গিয়ে পানি পান করে।নিজেকে শান্ত করে ফোন কানে ধরে বসে।
লিসেন নূর উনি তোমার বাবা।বাবা মেয়ের সম্পর্কের মতো মধুর আর কিছুতে নেই। তুমি সব ভুলে কাছে গিয়ে বসে বাবা বলে ডাক দাও।তোমাকে আর কিছু করতে হবে না শুধু তুমি গিয়ে উনার হাত টা ধরে বাবা বলে ডাকো।তুমি জানো সন্তান যতোই অন্যায় করুক না কেন বাবা মায়ের সাথে বাবা মা সন্তানের মলিন মুখ দেখলে সব ভুলে যায়। তুমি তো কোনো অন্যায় করোনি সব পরিস্থিতির স্বীকার। মান অভিমান মিটিয়ে নাও নূর।এসব মান অভিমান বেশি দিন জমিয়ে রাখতে নেই। যত তারাতাড়ি এসব মিটাবে ততোই ভালো। এসব জমিয়ে রেখে পরে আফসোস করো না।
আ-আমি এখনই বাবার সাথে কথা বলবো।
-' এখনতো অনেক রাত নূর। আংকেল হয়তো ঘুমোচ্ছে। তুমি না বললে উনার শরীর খারাপ? তাহলে এখন ডিসটার্ব না করলেই মনে হয় ভালো।
-' আমি এখনই যাবো স্যার।আমি জানি আমার বাবা ঘুমায় নি।এখনও জেগে আছে।
-' কিন্তু?
নূরের কথা বলার মাঝখানেই রুমের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা পরে।নূর ঘাবড়ে গিয়ে দরজার দিকে তাকায়। এরমধ্যে নূরের মায়ের কন্ঠ কানে আসে নূরকে ডাকছে।
নূর এই নূর দেখ তোর বাবা কেমন করছে। নূর তূর কোথায় তোরা? তারাতাড়ি আয় দেখ কেমন করছে তোর বাবা।
নূরের মায়ের কথা শুনে নূরের কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে। হাত থেকে ফোন মেঝেতে পরে কয়েক খন্ড হয়ে গেছে। নূর দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
অপর পাশ থেকে সৌন্দর্য সবই শুনতে পায়। সে ও দেরি করে না এক মুহূর্ত তারাতাড়ি গাড়ি নিয়ে নূরদের বাড়ির দিকে ছোটে।
নূরের বাবা মাথা ধরে ছটফট করে চলেছে।কিছু বলতে পারছে না শুধু গুঙিয়ে যাচ্ছে। হাত পা কেমন ঠান্ডা। নূর তারাতাড়ি গিয়ে বাবার পাশে বসে জানতে চায় কি হয়েছে কোথায় কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। নূরের মা কাঁদছে আর হাত পা মালিশ করছে কিছুই হচ্ছে না। তূর কি করবে বুঝতে পারছে না সে যেনো হ্যাং হয়ে গেছে। নূর তারাতাড়ি পানি দিতে বলে।তূর দৌড়ে পানি এনে দেয়। নূর বাবা কে খাওয়াতে চায় কিন্তু হাত কাঁপুনিতে মুখে পানি ও তুলে দিতে পারছে না।
নূরের মায়ের আহাজারি বেড়েই চলেছে।
-' নূর তোর বাবা এমন করছে কেন মা? কিছু কর না নূর।
বিপদের সময় কারো মাথাই ঠিক থাকে না। এতো রাতে তিনজন মেয়ে মানুষ একা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে বেশি দেরি করা ঠিক হবে না নূর বুঝতে পেরে ফোন খুঁজতে থাকে। কিন্তু হায় ফোন কোথায় ফোন খুঁজে পাচ্ছে না। তূর এনে ফোন দেয় তূরের টা। নূর কাউকে ফোন দিতে থাকে কিন্তু ফোন তুলে না। এরমধ্যে কলিং বেল বেজে উঠে। নূর তূরকে বলে যেনো গিয়ে দেখে কে এসেছে। তূর দরজা খুলে দেখে সৌন্দর্য। তূর কিছু বলবে তার আগেই সৌন্দর্য দৌড়ে ভিতরে ঢুকে। নূরের বাবা কে একবার দেখে নিয়ে কাঁধে তুলে নেয়। নূর তোমরা দরজায় তালা মেরে তারাতাড়ি আসো ফাস্ট লেট করবা না একদম। নূর মাথা নেড়ে তূর আর মা কে নিয়ে তারাতাড়ি সৌন্দর্যের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। সৌন্দর্য যতো তারাতাড়ি সম্ভব ড্রাইভ করতে থাকে। মিনিট পনেরোর মাঝে এসে হাসপাতালে উপস্থিত হয়। সৌন্দর্যের চেনা জানা আছে এখানে তাই আগেই ফোন করে বলে রেখেছিলো। ওরা আসার সাথে সাথে নূরের বাবা কে নিয়ে পরীক্ষা করানো শুরু করে।
সৌন্দর্য সব ফরমালিটি পূরণ করছে নূর তার মাকে আর তূর কে নিয়ে বসে আছে। নূর যেনো পুরো রোবট হয়ে গেছে। একটা শব্দ ও বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে।
রাত পেরিয়ে সকাল হচ্ছে। অন্ধকার কেটে আলোকিত হচ্ছে ভূবণ। কিন্তু নূরের ভূবণ যেনো আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। একগা'দা টেস্ট করাচ্ছে তার বাবার। এখন ঘুমোচ্ছে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে ডাক্তার। সৌন্দর্য হাসপাতালেই আছে নূরের সাথে। নূরের মা কে আর বোন কে জোর করে বাড়ি পাঠিয়েছে সৌন্দর্য।
সৌন্দর্য দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে সে নূর কে দেখে চলেছে। সেই যে বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে আছে একবার একটু নড়াচড়া ও করে নি।এরমধ্যে সৌন্দর্যের কাঁধে কেউ হাত রাখে।সৌন্দর্য ব্রু কোচকে তাকিয়ে দেখে তার বড় আব্বু। দুইজন চোখের ইশারায় কিছু বলে। তারপর সৌন্দর্য ঐখান থেকে সরে পরে।
'- নূর মা।
-' নূর মাথা তুলে তাকায়। মি. রূপম ওয়াহিদ কে দেখে ও কোনো পতিক্রিয়া দেখায় না।
তুমি কি জানো তোমার বাবা আর আমি খুব ভালো বন্ধু। এতোটা ভালো যে দুইজন এক প্লেটে খাবার খেতাম। একই রকম ড্রেস পরে ঘুরে বেড়াতাম। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিলো।তোমরা আমাদের সম্পর্কে জানতে ও পারো নি।এর পিছনে ও বিভিন্ন কারণ আছে। কিন্তু সবচেয়ে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তোমাদের বিয়ে নিয়ে।
তোমার বাবা কিন্তু আজ অসুস্থ না।
এরকম কথা শুনে নূর মি.রুপম ওয়াহিদের দিকে তাকায়।
-' হ্যা আমি যা বলছি তা সত্যি। তোমার বাবা বেশ কিছু মাস যাবত অসুস্থ। এতোদিন তোমাদের কাউকে বুঝতে দেয় নি। নিজের মধ্যে চেপে রেখেছে। আমাকেও বলতে দেয় নি। আমি যখন জোর করতাম বলতে নয়তো আমি বলি কিন্তু দিতো না। ওয়াদা করিয়ে রেখেছিলো।এখন প্রশ্ন এতোদিন ওয়াদার জন্য বলিনি তাহলে এখন কেনো বলছি। আমি তোমার বাবা কে বলতাম এসব জিনিস তো লুকিয়ে রাখা যায় না একদিন না একদিন ঠিক জানতে পারবে।তখন তোমার বাবা বলতো যখন জানতে পারবে তখন বলিস কিন্তু এখন বলিস না। ওর সব কথা মেনে নিয়েছি শুধু এজন্য যে সে নিয়মিত ঔষধ খাবে নিজের যত্ন নিবে।কিন্তু দেখো কি করলো।
বিয়ে নিয়ে অনেক প্রশ্ন না তোমার? এই অসুস্থতার কথা জানতে পেরেই তোমার বাবা পাগলের মতো হয়ে গেছে। সারাদিন শুধু বলতো আমার মেয়ে দুইটার কি হবে? কে দেখবে ওদের? আমার নূর তো বাস্তব জীবন থেকে অনেক পিছিয়ে কি হবে মেয়েটার? একা কি করে সব সামলাবে? সবচেয়ে বেশি টেনশন করতো তোমাকে নিয়ে। তোমার পাশে একজন পার্ফেক্ট জীবন সঙ্গী চাইতো। তখন আমি আমার একমাত্র ভাতিজা সৌন্দর্যের কথা বলি তোমার বাবার কাছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানো? আমার এতো ভালো বন্ধু হওয়া সত্তেও তোমার বাবা কে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি সৌন্দর্যের পিছনে গোয়েন্দা গিরি করতে। ঠিক এক সপ্তাহ পর তোমার বাবা এসে বলে,,,এই ছেলেই তার মেয়ের জামাই হবে। একজন শান্ত হলে আরেক জনকে উত্তাল ঢেউয়ের মতো হতে হয়। হ্যা মানছি আমরা ডিজিটাল যুগে এসেও বিয়ে নামক বন্ধন কে এমন ভাবে কারো উপর অনুমতি ছাড়া চাপিয়ে দিতে পারি না। কিন্তু এটাতো জানো সব বাবা মা ই চায় তার সন্তান বেস্টটা পাক।ভালো থাকুক। তোমার বাবার চাওয়ায় ও কোনো ভুল নেই। যখন নিজের সন্তান হবে তখন বুঝতে পারবে।
সৌন্দর্য জীবন সঙ্গী হিসেবে খারাপ না মা। জীবন কে একবার সুযোগ দিয়ে দেখো।আর তোমার মনে হতে পারে একটা বিবাহিত ছেলে,,,, মি. ওয়াহিদ আর কিছু বলার আগেই সৌন্দর্য এসে ওখানে উপস্থিত হয়। কিসব কাগজপত্র নিয়ে কথা আছে। মি. রুপম ওয়াহিদ নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়। নূর একই ভাবে বসে থাকে।
চলবে,,,,,,,,,
গল্প: পরাণ দিয়ে ছুঁই (Season_2)
#পর্ব_৬
লেখনীতে: ঝর্ণা ইসলাম
আসসালামু আলাইকুম। সকলে রেসপন্স করবেন।

0 Comments