Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পরাণ দিয়ে ছুঁই (Season_2) পর্ব_৯

 কিছুসময় ইসরাতের মা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর ভাবে সোফায় এমন করে শুয়ে থাকলে পরে গিয়ে শরীরে ব্যাথা পাবে। তাই ইসরাত কে ডাকতে থাকে উঠার জন্য কিন্তু কিছুতেই উঠে না।অনেকক্ষন ডাকার পর চোখ ডলতে ডলতে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে আবার মুখে বালিশ দিয়ে শুয়ে পরে।ইসরাতের মা এখনও মেয়ের মুখ দেখেনি দেখলে হয়তো তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলতো। ঐসময় এসেই মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে শুয়ে ছিলো আর এখন আসার সময় ও চোখ ডলতে ডলতে এসেছে যার দরুন খেয়াল করেনি।

এইদিকে নূর ইসরাত কে একের পর এক কল দিয়ে চলেছে কিন্তু মেয়েটা কল রিসিভ করছে না কিছুতেই। পৃথিবীতে মনে হয় এটা নিয়ম হয়ে গেছে দরকারের সময় কাউকে পাওয়া যায় না। নূর চাচ্চিলো ইসরাতের সাথে বিষয় টা শেয়ার করবে কিন্তু কিসের কি এই মেয়ে ফোন ই তুলছে না।আরো কয়েকবার চেষ্টা করে নূর আর কল দেয় না হয়তো এখনও পরে পরে ঘুমোচ্ছে। একটু সুযোগ পেলেই চলে ঘুম আর ঘুম। মেয়েটার ঘুম ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এসব কিছু ভাবনার মাঝে নূরের মাথায় আসে ফাতিহার কথা, ঐসময় রা'গের বশে ফাতিহার সামনেই কিসব বলেছে।পরোক্ষনে মাথায় আসে ফাতিহার বেদনাদায়ক অতীতের কথা। দৌড়ে গিয়ে আবার ফাতিহা কে খুঁজতে থাকে। এতোসময় যাদের সাথে খেলছিলো তাদের কারো সাথে নেই। এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে কোথায় গেলো মেয়ে টা। খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে যেইখানে দেখে গিয়েছিলো সেইখানে এসেই পায়।বসে বসে চোখ মুচ্ছে। নূর দৌড়ে ফাতিহার কাছে যায় গিয়ে পাশে বসে।



কি হয়েছে মাম্মা? তুমি কাঁদছো কেন? ব্যাথা পেয়েছো? দেখি দেখাও মাম্মা কে কোথায় ব্যাথা পেয়েছো বলেই অস্থির হয়ে নিজেই খুঁজতে থাকে।
ফাতিহা নিজের ছোট্ট হাত দিয়ে নূরের হাত দুটি আঁকড়ে ধরে করুন গলায় বলে উঠে,, "মাম্মা আমাকে কি তুমি ছেড়ে চলে যাবে আমার মায়ের মতো? "
ফাতিহার একটি মাত্র প্রশ্ন মুহূর্তের মধ্যে নূর কে শান্ত করে দিলো।কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে ফাতিহার দিকে তাকিয়ে রয় নূর। ফাতিহার কেন মনে হলো নূর তাকে ছেড়ে চলে যাবে তার জানা নেই। শুধু জানে এই মেয়েটার এখন নূর কে প্রয়োজন খুব করে প্রয়োজন।নূর ফাতিহাকে নিজের বুকের মাঝে আগলে নেয়। নূর পারলে কলিজার ভিতর ঢুকিয়ে ফেলতো এই ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েটা কে।
" এসব কি কথা মাম্মা? আমি তোমাকে কেন ছেড়ে চলে যাবো? মায়েরা কি তার বাচ্চা কে ছেড়ে চলে যায় কখনো?"
"তাহলে আমার সোহানা মাম্মা কেন চলে গলো মাম্মা?"
নূর এই প্রশ্নে থমকায় তার কাছে তো এর কোনো উত্তর নেই। হুট করে বাচ্চা মেয়েটা কিরকম বড়দের মতো কথা বলছে। তোমার সোহানা মাম্মা চলে গেছে দেখেতো আল্লাহ তোমার মাম্মার জায়গায় আমাকে পাঠিয়েছেন, যেনো আমার ফাতিহা মামনি তার মাম্মা কে পায়। তুমি তো আমার আদরের বাচ্চা। মাম্মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
ফাতিহা ও তার মাম্মা কে অনেক ভালোবাসে। ফাতিহা বলেই নূরের গালে চুমু খায়।
হ্যা সব ভালোতো তোমরা মা মেয়ে দুইজন দুইজনকে বাসো তাই না? আমিতো কেউ না বা'নের জলে ভেসে এসে পরেছি তোমাদের কাছে।আজ কেউ নাই বলে,, বলেই সৌন্দর্য মুখটা গোমরা করে বুকে হাত বেঁধে অন্য দিকে তাকায়।
উফফফ মি. ওয়াহিদ তুমি খুব হিংসুটে লোক বলেই কোমরে হাত রাখে ফাতিহা।তারপর আদেশের সুরে বলে,,,নিচু হও দেখি যেই লম্বা তুমি, তোমার কাছে তো আমি পৌঁছাতেই পারবো না। সৌন্দর্য ফাতিহার কথা শুনে নিচু হয়। ফাতিহা সৌন্দর্যের গালে চুমু খেয়ে বলে,,ফাতিহা লাভ'স ইউ এ লট মি.ওয়াহিদ। এন্ড মাম্মা অলসো লাভ'স ইউ। তাই না মাম্মা?
নূর এতোসময় বাবা মেয়ের কথায় হাসলেও এখন ফাতিহার কথায় শুকনো মুখেই বিষম খায়। মনে মনে বলে,, কি সাংঘাতিক প্রশ্নরে বাবা। নূর এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকে। কি করে দেবে নূর এই প্রশ্নের উত্তর? প্রশ্ন শুনেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা।
সৌন্দর্য হয়তো নূরের বিষয় টা বুঝতে পারছে তাই নিজেই পরিস্থিতি সামলে নেয় সব সময়ের মতো।
"মাম খিদে লাগে নাই তোমাদের? বেলা কতো হলো সেই দিকে খেয়াল আছে? "
"তুমিই ঘুম থেকে উঠতে লেট করছো আমরা না।আমি আর মাম্মা তো সেই সকালে উঠেছি।জানো সকালে উঠে কতো মজা হয়েছে? "
আচ্ছা তাই নাকি? চলো খেতে খেতে শুনবো। সৌন্দর্য নূরকে ও চোখের ইশারায় আসতে বলে এগিয়ে যায়। নূর বরাবরের মতো স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।
কিন্তু খেতে গিয়ে লাগে আরেক বিপত্তি। সব ঠিকঠাকই ছিলো খাওয়ার টেবিলে বসে নূর খাচ্ছে মাঝে মাঝে ফাতিহার মুখে ও তুলে দিচ্ছে। অপর দিকে সৌন্দর্য ও একই ভাবে নিজেও খাচ্ছে ফাতিহার মুখে ও তুলে দিচ্ছে। এরমধ্যে ফাতিহা নিজের আবদার নিয়ে বসে সৌন্দর্য কে নূরকে খাইয়ে দিতে হবে, নূরকেও সৌন্দর্য কে খাইয়ে দিতে হবে। এরকম আবদার শুনে নূরের বলতে ইচ্ছে করলো আর কতো লজ্জায় ফেলবি মা? এসব আবদার কেউ করে?কিন্তু কিছুই পারলো না। এবার সৌন্দর্য ও কোনো বাহানা দিয়ে বিষয় টা কাটাতে পারলো না। ফাতিহা বলেছে খাইয়ে দিতে হবে মানে দিতে হবে কোনো বাহানা চলবে না।ফাতিহা নিজেই ঠিক করে দেয় কে আগে খাইয়ে দিবে। সৌন্দর্য প্রথম নূর কে খাইয়ে দিবে তারপর নূর সৌন্দর্য কে।
সৌন্দর্য হাতে লোকমা বানিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরে।সৌন্দর্য কে দেখে মনে হচ্ছে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার সে আগেও করেছে। নূর মুখ হা করছে না দেখে ফাতিহা হাতে ধরে ধাক্কাতে থাকে। নূর ছোট্ট করে হা করে। সৌন্দর্য লোকমা নিয়েছে বড় নূরের ছোট্ট করে হা করাতে কিছুতেই পুরোটা মুখে ঢুকবে না।সৌন্দর্য পুরো লোকমা ঠেসে মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। এইদিকে এতো বড় লোকমা যে নূরের চিবুতেও কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্টে গিলে।এবার নূরের পালা নূর লোকমা ধরে সৌন্দর্যের মুখের কাছে নিতেই সাথে সাথে সৌন্দর্য মুখে নিয়ে নেয়। কিন্তু সাথে ব্যাথা ও পায় সৌন্দর্য আঙ্গুলে কামড় দিয়েছে। চোখ মুখ কোচকে সৌন্দর্যের দিকে তাকাতেই বলে এতো ছোট লোকমা তো মনে হয় ফাতিহার মুখে ও লাগবে না। ভবিষ্যতে বড় বড় লোকমা দিবে আর নিজেও খাওয়ার জন্য তৈরি থাকবে বলেই চোখ মা'রে সৌন্দর্য ।
নূর মনে মনে বলে,,সখ কতো ভবিষ্যতে তোকে আমি খাইয়ে দিবো নাকি অসব্য সুন্দর মানুষ।
**************
ইসরাত সেই যে ঘুমিয়েছে আর কোনো খবর নেই। এখনও পর্যন্ত ঘুমিয়েই যাচ্ছে। ইসরাতের মা আর বাবা একটা কাজে বের হয়েছে। বের হওয়ার আগে ইসরাতের মা কয়েকবার ডেকেছে কিন্তু উঠে নি।শেষ মেষ ধাক্কা দিতেই ঘুমু ঘুমু কন্ঠে হু বলেছে।ইসরাতের মা ভেবেছে উঠেছে তাই বলে যায় উনারা একটু বের হচ্ছে আসতে লেট হবে। দরজা লাগিয়ে যাচ্ছে সাবধানে যেনো থাকে।
ইসরাতের ঘুম ভাঙে কলিং বেলের শব্দে।প্রথমে ভেবেছিলো উঠবেনা পরোক্ষনে মাথায় আসলো মা বাবা ও হতে পারে। এখন গিয়ে না খুললে মা আজ আস্তো রাখবেনা। তারাতাড়ি দৌড়ে যায় দরজা খুলতে।
দরজা খুলে বাইরে কে আছে না দেখেই উল্টো ঘুরে যেতে যেতে বলে এতো তারাতাড়ি তোমাদের কাজ শেষ? কি এমন কাজ করতে গেলে শুনি?
" ইসরাত?"
ডাক শুনে ইসরাত থমকে দাঁড়ায়।
"কি হলো?"
ইসরাত ভুল শুনছে ভেবে কানে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা দেয়।
ইসরাত আমি ডাকছি তোমায়।
নাহ্ ভুল শুনছে না। কিন্তু ঐ লোকটা এখানে কি করে কি? ভাবতে ভাবতেই পিছনে ফিরে তাকায়।
তালহা ইসরাত কে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। এসব কি দেখছে চোখে মুখের কি অবস্থা। ইসরাত ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তালহার দিকে। বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কিছু সময়ের জন্য ঐ ঘটনাটা মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।এখন আবার কষ্ট শুরু হয়ে গেছে।
একি হয়েছে তোমার? চোখে মুখের এই অবস্থা কেন? তুমি কি অসুস্থ?
--আ-আপনি এখানে? আপনি এখানে কি করছেন?
-- তুমি আগে আমার কথার উত্তর দাও।তুমি কি অসুস্থ?
--- বলতে বাধ্য নই আমি।
তোমাকে আমি এক জায়গায় দেখা করতে বললাম তুমি কি করলে ঐখানে গিয়েও ফিরে এসেছো তাও আমার সাথে দেখা না করে। এসবের মানে কি?
ইসরাত তোতলাতে তোতলাতে বলে আ-আমাকে আপনি কো-কোথায় দেখেছেন?
-- তালহা দায়সারা ভাব নিয়ে বলে আমিও বলতে বাধ্য নই।
আজব লোক তো।এখানে কি করতে এসেছেন? কোনো দরকার কি? তারাতাড়ি বলে বিদায় হোন।
- তোমার কি হয়েছে বলোতো এরকম ভয়েসে কেন কথা বলছো?
কিরকম ভাবে কথা বলবো আপনার সাথে? এখন কি আপনার থেকে নতুন করে কথা বলাও শিখতে হবে?
তালহা চোখ ছোট ছোট করে বলে,,মনে হচ্ছে ঝগড়া করার মোডে আছো।
-- আমি যার-তার সাথে ঝগড়া করি না।
ফরগেট ইট! আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ঐখানে গিয়েও কেন আমার সাথে দেখা করলে না?
-- বললাম না আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই?
তালহার এবার রাগ উঠে যায়।ইসরাতের হাত শক্ত করে ধরে বলে,, তুমি বলতে বাধ্য আলবাত বাধ্য।আমি তোমাকে ডেকেছি তোমাকে বলতেই হবে।
ইসরাত এক ঝটকায় তালহার হাত থেকে নিজের হাত ছারিয়ে নেয়।
খালি বাড়িতে একজন মেয়ে মানুষের হাত ধরা এসব কি ধরনের অ'সভ্যতা স্যার?
ইসরাতের কথায় তালহা ভাষা হারিয়ে ফেলে। এ কোন ইসরাত কে দেখছে সে?
কি হয়েছে কি তোমার ইসু? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
আমার কি হয়েছে সেটা জেনে আপনার কি কাজ স্যার? নিজের কাজ করুন। শুধু শুধু আমার জন্য ভেবে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। আমি ছাড়া ও আপনার অনেক কিছু আছে ভাবার বলেই ইসরাত অন্য দিকে তাকায়।
তালহা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে কিছু সময় ইসরাতের দিকে তাকিয়ে রয়। হয়তো ইসরাতের মাঝে সেই পাগলামো গুলো খোঁজার চেষ্টা করছে। এই জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছে তালহা বদলে যেতে কিন্তু ইসরাতের বদলে যাওয়া আশা করেনি।এটা খুবই পী'রা দায়ক।বুকের কোথাও সূ্ক্ষ ব্যাথা অনুভব করছে। কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর হাত বাড়িয়ে ইসরাতের মুখের সামনে পার্সটা ধরে।
ইসরাত তাকিয়ে নিজের পার্সটা ছো মেরে নিয়ে নেয়।
মাটিতে পরে ছিলো।আমি কয়েকবার কল দেওয়ার পর রিং হয়েছে কিন্তু কোথায় হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না।এরপর অন্য কেউ হয়তো কল দিয়েছে তারপর দেখতে পাই।এদিক ওদিকে তাকিয়ে কাউকে না পেয়ে পার্সটা আসলে কার সেটা জানার জন্য খুলতে হয়েছে। তারপর জানতে পারি সেটা অন্যকারো না তোমারই। এটা দিতে এসেছিলাম সাথে এটাও জানতে যে তুমি ঐখানে গিয়েও কেন দেখা না করে চলে এসেছো।কিন্তু তুমি তো ঠিক করে রেখেছো কিছু বলবে না আমাকে।
" আমি,,,,,, ইসরাত আর কিছু বলার আগেই মায়ের কন্ঠে নিজের নাম শুনে শুকনো ঢুক গিলে। এইরে কাজ সেরেছে তালহা স্যার কে খালি বাসায় ইসরাতের সাথে দেখে মা কেমন চোখে দেখে কে জানে। "
ইসরাত তুই কার সাথে কথা বলছিস রে দরজা খোলা রেখে? বলতে বলতেই ইসরাতের মা আর বাবা এগিয়ে আসে।
ইসরাত তারাতাড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বলে,,মা দেখো ইনি আমার কলেজের স্যার তালহা স্যার বলেই হাসার চেষ্টা করে । ইসরাতের মা তালহার দিকে তাকাতেই তালহা সালাম দেয়। ইসরাতের মা সালাম নিয়ে ইসরাতের দিকে তাকায় যার মানে কলেজের স্যার হঠাৎ বাড়িতে।কিছু বলার আগে নিজেই বলে,,,আসলে হয়েছে কি সকালে আমি বের হয়ে ছিলাম না? আমার পার্স আর মোবাইল ফোন টা হারিয়ে গেছে। স্যার পেয়েছে ঐটাই দিতে এসেছে।
ইসরাতের মা হাসার চেষ্টা করে বলে,, হারিয়ে যাওয়া জিনিস কেন ফিরিয়ে আনতে গেলে বাবা? ভালোইতো হয়েছিল মোবাইল টা হারিয়ে গিয়েছিল। আমার দোয়াটা কবুল হয়েছিল।
তালহা কিছু না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে,, মানে আন্টি?
ইসরাতের মা বলে,,ও কিছু না বাবা তা দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো বসো। ইসরাতের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,, উনাকে বসিয়ে কিছু খেতে না দিয়ে এখানে শংয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা কিছু খাবার টাবার নিয়ে আয়। ইসরাত মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। ইসরাতের মা তালহা কে নিয়ে সোফায় বসায়। তালহা বুঝলো ইসরাত এমন ছটফটে স্বভাব টা তার মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছে। মনে মনে খুব হাসি পেলো এটা ভেবে মোবাইল যেনো হারিয়ে যায় তার জন্য দোয়া করেছে বলে। ইসরাতের বাবা চুপচাপ বসে আছে এদের কান্ড দেখছে চশমার ফাঁক দিয়ে।
ইসরাত চা আর বিস্কুট এনে দেয়। তালহা নিতে না চাইলেও জোর করে দেয় ইসরাতের মা। তালহা মাত্র চা ফু দিয়ে মুখে নিবে কিন্তু ইসরাতের মায়ের কথা শুনে বিষম খায়।
বুঝলে বাবা তুমি তো স্যার মানুষ। ভালো মন্দ বুঝো বর্তমানে সবকিছু নিয়েই টেনশন থাকে। ভেবেছিলাম মেয়ে কে পড়াশোনা শেষ করে,,,, কিছু বলতে গিয়েও থেমে ইসরাতের দিকে তাকায় ইসরাত তখন মায়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। উনি এক ধমক দিয়ে বলে,, তুই এখানে বড়দের মাঝখানে কি করছিস? দেখছিস না আমরা বড়রা কথা বলছি? যা গিয়ে হাত মুখ ধোয়ে আয় ঘুমিয়ে চেহারার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস। ইসরাত মায়ের মতিগতি কিছুই বুঝলো না। আর তালহার কাছাকাছি থাকতেও কষ্ট হচ্ছে তাই সে ওখান থেকে চলে যায়। ইসরাতের মা এবার নড়েচড়ে বসে বলে,,ভেবেছিলাম পড়াশোনা শেষ করিয়ে বিয়ে দিবো কিন্তু একটা খুব ভালো সম্বন্ধ পেয়েছি বুঝলে? তাই আমি আর ইসরাতের বাবা দেখতে গিয়েছিলাম আজ ।
আহ্ হচ্ছে কি? উনি স্যার মানুষ একটা উপকার করেছে আর তুমি কিসব কথা শুরু করে দিলে বলোতো? ইসরাতের বাবা বলে।
তো কি হয়েছে? বাবা তুমি কিছু মনে করেছো?
তালহা এমন অস্বস্তিতে মনে হয় জীবনে পরে নি। পাখা ছাড়া সত্যেও ঘাম বের হচ্ছে শরীর দিয়ে। গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,কিন্তু আন্টি এখন বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে? ইসরাত তো পড়াশোনায় খুব ভালো সামনে ওর ব্রাইট ফিউচার।( তালহা)
ওরা বলেছে পড়াশোনা করাবে বিয়ের পর ও সমস্যা নেই বলেই ইসরাতের মা হাসি দেয়।
তালহা আমতা আমতা করে জানতে চায় ইসরাত? ইসরাত কি এই বিয়ে তে রাজি? মনে মনে তালহা কি উত্তর শুনতে চাচ্ছে সে নিজেও জানে না।
ওর তো কোনো আপত্তি নেই। আমরা যা করি তাই আগেই জানিয়ে দিয়েছে এই কথা বলে ইসরাতের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে উনি কেমন করে তাকিয়ে আছে। ইসরাতের মা চোখ রাঙায়।
তালহা চা রেখেই হুট করে উঠে দাঁড়ায়। আমার জরুরি কাজ আছে বলেই তারাতাড়ি করে বেরিয়ে যায়।
ইসরাতের বাবা তার মাকে বলে,,মিথ্যা কেন বললে? ইসরাত এই বিয়ে তে রাজি? বিয়ের কথা জানতে পারলে কি কান্ড ঘটায় দেখো একবার।
তুমি চুপ থাকো এতো ভালো সম্বন্ধ আমি কিছুতেই হাত ছাড়া করবো না। আর তাছাড়া ওর সমানের অনেকেরই বিয়ে হয়েছে। নূর নূরেরও হয়েছে ওর কেন হবে না? বলেই উনি চলে যায়। ইসরাতের বাবা বসে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
*************
সারাদিন সকলের সাথে অনেক মজা করেছে ফাতিহা। সৌন্দর্য আর নূরের সাথে ঘুরে বেরিয়েছে। রাতে তিনজন এক সাথে ডিনার করেছে। রুমে ঢুকতেই ফাতিহা বিছানার উপর নাচতে নাচতে বলে,,কি মজা কি মজা আজ আমরা তিনজন এক সাথে ঘুমাবো ইয়েএএএ।
ফাতিহার কথা শুনে নূরের যেনো মাথা ঘুরতে লাগলো।সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মনের ভিতর কি চলছে কে জানে।এই আশায় আছে লোকটা কিছু বলবে কিন্তু নূর কে অবাক করে দিয়ে সৌন্দর্য ও ফাতিহার কথায় সায় জানায়।
ফাতিহা কে মাঝখানে দিয়ে দুইজন দুই সাইডে শোয়।কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে ফাতিহা বলে সে এক সাইডে ঘুমাবে,মাঝখানে ঘুমালে তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। নূর তো অবাক বলে কি মেয়ে। নূর মানা করলে ফাতিহা কান্না জুড়ে দেয়। সৌন্দর্য তো ফাতিহার চোখের পানি দেখলে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। নূরকে একটু গম্ভীর গলায় বলে,,সমস্যা কি নূর? তুমি এই সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মেয়ে কে কাঁদাচ্ছো? আমার মেয়ে যা বলে তাই হবে।
বাবা মেয়ে বিছানা ঠিক করে বালিশ বিছিয়ে দিচ্ছে। নূর শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সব গুছিয়ে নূর কে ডাক দেয় ফাতিহা। প্রথমে সৌন্দর্য তারপর নূর আর তারপর ফাতিহা।নূর শোয়ার সাথে সাথে ফাতিহা ঝাপটে ধরে বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে পরে।খালামনির কথা ভেবে হাসে,,একটু আগে তার তূর খালামনি ফোন দিয়ে এসব বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছে। সে জানেনা কেন তূর তাকে দিয়ে এসব করিয়েছে শুধু খালামনি বলেছে আর সে করেছে।
সৌন্দর্য শোয়ার সাথে সাথে নূরের পিঠে একটু ছোঁয়া লাগে ব্যস শুরু হয়ে যায় নূরের কাঁপা কাঁপি। সৌন্দর্য কিছু সময় নূরের পিঠের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,,"কতো তাপমাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে আল্লাহ ই জানে। আল্লাহ এমন দূর্যোগ থেকে এই অসহায় বান্দা কে রক্ষা করো।"
সৌন্দর্যের কথা নূরের কানে যেতে ভুল হয় না। ইচ্ছে করছে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিতে। অ'সভ্য সুন্দর মানুষ।

সারাদিনের ক্লান্তিতে শোয়ার সাথে সাথে দুই চোখের পাতায় আপনা আপনি ঘুম নেমে আসে নূরের।এতোসময় সৌন্দর্যের পাশে শুয়ে অস্বস্তি হলেও চোখের পাতায় ঘুম ভর করার সাথে সাথে যেনো সকল জড়তা কর্পুরের মতো উড়ে গেছে। চোখে ঘুম ধরা দিলে আর কোনো কিছু মাথায় কাজ করে না। কিছু ভাবার ও সময় পায়নি নূর।ফাতিহাকে জড়িয়ে ধরে শোয়ার সাথে সাথে দুই চোখের পাতায় ঘুম নেমে আসে,মুহূর্তের মাঝে ঘুমিয়ে ও যায়।ফাতিহার ও একই অবস্থা ঘুমিয়ে গেছে।
দুই মা মেয়ে গলা জরিয়ে আরামছে ঘুম দিয়েছে। দিন দুনিয়ার কোনো খবর নাই। এইদিকে ওদের পাশেই যে একজন মনে মনে ছটফট করছে সেই দিকে কারো খেয়াল নেই। সৌন্দর্য কিছুতেই দুই চোখের পাতা এক করতে পারছে না। ঘুম ধরা দিচ্ছে না চোখে। এতক্ষন নূরের অস্বস্তি নিয়ে মজা করলেও এখন নিজেই সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পরে গেছে। কিছু সময় এপাশ ওপাশ করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। নূর আর ফাতিহার দিকে তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়। সৌন্দর্য ভেবেছিল গত রাতের মতো এইবার ও বারান্দায় ই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিবে কিন্তু এখানে ঘুমের মতো পরিস্থিতি পেলো না। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে হুট করে। বৃষ্টির পানি বারান্দায় ও এসে পরছে।বাতাসের সাথে বৃষ্টি বিষয় টা সৌন্দর্যের কাছে ভালোই লাগছে। শীতল পরিবেশ উপভোগ করতে করতে হুট করেই মনে হলো এক কাপ চা হলে মন্দ হতো না আর সাথে যদি প্রিয় একজন থাকে তাহলেতো কথাই নেই। প্রিয়জন, সাথে ধোয়া উঠা গরম চা আর বাইরের বৃষ্টির রাত।প্রিয়জন ভাবতেই সৌন্দর্যের মনে হলো নূর।নূরের দিকে জানালার ফাঁক দিয়ে তাকায় সৌন্দর্য। দুইজন কি সুন্দর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে।
অনেকটা সময় সৌন্দর্য রাতের বৃষ্টি ভেজা প্রকৃতি বিলাস করে। খুব উপভোগ করছিল বিষয় টা কিন্তু ধীরে ধীরে যেনো বৃষ্টির গতি কমার বদলে বাড়তে থাকে। বৃষ্টির পানিতে সৌন্দর্য ও ভিজে যাচ্ছে তারউপর ঠান্ডা বাতাস এসে শরীরে যেমন কাপন ধরিয়ে দিচ্ছে। সৌন্দর্যের শরীরে এখন শুধু নরমাল একটা টি-শার্ট। এরকম ভাবে ভিজতে থাকলে জ্বর আসবে নিশ্চিত। তাই তারাতাড়ি বারান্দা থেকে রুমে এসে পরে। এবার সৌন্দর্যের ও ঘুম পেয়েছে। ভেবেছিলো ফাতিহার এই পাশে ঘুমাবে কিন্তু উপায় নেই একটুও জায়গা নেই এই পাশে। ওদের এতো সুন্দর ঘুমে ব্যাঘাত ও ঘটাতে চায়নি সৌন্দর্য তাই গিয়ে নূরের পাশেই শুয়ে পরে।
সৌন্দর্য শোয়ার মিনিট দুয়েক পরই নূর ঘুরে সৌন্দর্য কে ঝাপটে ধরে বুকে মুখ লুকায় আর ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে,,,এতোক্ষন কোথায় ছিলে? আমার শীত করছিল তো। আরো কি কি যেনো বলে ঘুমিয়ে যায় নূর।
সৌন্দর্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,, "তুমি তো শীত নিবারনের জন্য আমার বুকে মুখ লুকালে পরাণ, কিন্তু আমার ভিতরে যে তৃষ্ণা জেগেছে। মনে হচ্ছে ভিতর টা মরুভূমি হয়ে গেছে পরাণ।"
পিকনিক থেকে আসার তিনদিন হয়ে গেলো।এইদিকে ভার্সিটিতে যাওয়া অনেক দিন মিস দিয়েছে। এবার ঠিক মতো না গেলে পিছিয়ে যাবে। তাই নূর ঠিক করে নেয় আজ ভার্সিটিতে যাবে। ইসরাতের সাথেও কয়েকদিন ধরে যোগাযোগ হচ্ছে না। কি এমন কাজ নিয়ে বিজি কে জানে যে ফোন তুলে কথা বলারও সময় পাচ্ছে না মেয়ে টা। আজ শুধু দেখা হোক সামনা-সামনি ঠাটিয়ে একটা চড় লাগাবে বেয়াদবটা কে। আজ ভার্সিটিতে যাবে বলার জন্য কল দিয়েও পায় না ফোন সুইচ অফ বলছে বারবার। নূর তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বেরিয়ে পরে। ইসরাত কে তার বাড়ি থেকে একেবারে নিয়ে তারপর ভার্সিটিতে যাবে। ইসরাতদের বাসায় আসতেই ইসরাতের মা দরজা খুলে দেয়।নূর কে খুব পছন্দ করেন তিনি। নূর সালাম দিতেই হাসি মুখে বলে,,তুমি ইসরাতের রুমে যাও মা আমি তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
-- না না আন্টি কিছু আনতে হবে না। আমি এখন কিছু খাবো না। আমার পেট ফুল আছে মা জোর করে খাইয়ে দিয়েছে। তুমি বরং ইসরাতের খাবার দাও তারাতাড়ি ভার্সিটিতে যেতে নয়তো লেট হয়ে যাবে।
--- কিন্তু কিছু একটা তো খাও মা।
-- এখন কিছু খাবো না আন্টি প্লিজ প্লিজ।
-- হাহ্ আচ্ছা ঠিক আছে। পরের বার আসার আগে কখনো খেয়ে আসবে না ঠিক আছে?
-- নূর মুচকি হেসে বলে,, আচ্ছা ঠিক আছে। তারপর ইসরাতের রুমে ঢুকে। মেয়েটা নাকে মুখে কাঁথা দিয়ে শুয়ে আছে। ইশশশ কি আরামের ঘুম, দাড়া তোর ঘুমের আমি বারোটা বাজাচ্ছি বলেই নূর এক টানে ইসরাতের উপর থেকে পুরো কাঁথা সরিয়ে ফেলে। হুট করে এরকম হওয়ায় ইসরাত ধরফর করে উঠে বসে। কাল ও সারারাত ঘুমাতে পারে নি ইসরাত।শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে সারারাত চোখের পানি ঝড়িয়ে। বিরক্ত মুখে কিছু বলতে নিবে কিন্তু নূরকে দেখে কিছু সময় থম মেরে বসে থাকে।তারপর চোখ ডলতে ডলতে বলে,,, দোস্ত তুই এখানে? তারপর বল কেমন আছিস? আর তোদের ট্যুরই বা কেমন কাটলোরে?
এসব কথা আগে রাখ বল তোর কি হয়েছে? ফোন ধরিস না কোনো খবর নাই। এই কয়েকদিনে চোখ মুখের কি অবস্থা করেছিস তুই ইসু? আর এরকম করে শুকাচ্ছিস যে ডায়েট করছিস নাকি? সন্দিহান গলায় বলে নূর।
ইসরাত জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে,,আমার কথা রাখ তোদের কথা বল।বাড়ির সবাই ভালো আছে?
-- হ্যা সবাই ভালোই আছে।
-- ওহ ভালো আর তূর, তূর কেমন আছেরে?
-- ইসু সবার মধ্যে তূর ও পরে। আর তূর ও ভালো আছে।
-- হুম ভালো থাকারই কথা। তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি বলেই ইসরাত তারাতাড়ি ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে।
নূর বলে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নে ভার্সিটিতে লেট হয়ে যাবে নয়তো। নূর বুঝলো কিছু একটা হয়েছে ইসরাতের। মুখ দেখেই বোঝা যায়। এখানে কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না তাই বাইরে গিয়ে সব জেনে নিবে ঠিক করে নেয়।
*************
সৌন্দর্যের আজ ভার্সিটিতে আসার একটুও ইচ্ছে ছিলো না একটা ইম্পরটেমেন্ট ক্লাস থাকায় আসতে হলো।সেই সকাল থেকে মাথা ব্যাথা করছে।মনে হচ্ছে মাথার ভিতরের সব আউলিয়ে যাচ্ছে। মাথা ব্যাথার সাথে ঘাড়ের র'গ গুলো ও যেনো দাপাদাপি শুরু করে দিয়েছে। চোখ যেনো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। এখন মনে হচ্ছে আজ আসাটা উচিৎ হয়নি। যদিও বা ক্লাস টা গুরুত্বপূর্ণ তবুও কাল নিলেই পারতো। এটলিস্ট এতোটা যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না। কিছু সময় টেবিলে মাথা হেলিয়ে বসে থাকে সৌন্দর্য। এরমধ্যে ক্লাসের টাইম ও হয়ে যায়। ক্লাসে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়।
এইদিকে ইসরাত আর নূর ভার্সিটিতে এসে পৌঁছায়। নূর অবশ্য জেনে নিয়েছে আজ তাদের প্রথম ক্লাস টা হবে না। এই সময়টুকু তে ইসরাতের কি হয়েছে তা জেনে নেওয়া যাবে আর ঐ কথাগুলো ও বলা হয়ে যাবে।
একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে দুইজনই বসে। নূর কিছু বলার আগে ইসরাতই বলে তারপর বল সিলেট গিয়ে কি কি হলো?
নূর ভেবেছিলো প্রথমে ইসরাতের বিষয় টা জিজ্ঞেস করবে কিন্তু ইসরাত এটা জানতে চাওয়ায় আগে ঐ বিষয় টা ই বলে। ফাতিহার সম্পর্কে সবকিছু বলে জানতে চায় বলতো এটা আমার থেকে লোকানোর মানে কি? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
ইসরাত একটু ভাবুক হয়ে বলে,তোর কেন মনে হচ্ছে তোর থেকে লুকানো হয়েছে? এমনও হতে পারে সৌন্দর্য স্যারদের দিক থেকে হয়তো ভাবা হয়েছে তুই বিষয় টা জানিস। আর তোর বাবা ও হয়তো ভাবেনি যে তুই ভেবে নিবি একটা বিবাহিত ছেলের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছেন তিনি।
নূর ইসরাতের কথায় যুক্তি খুঁজে পেলো।মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে বলে,,হতেই পারে। এসব কথা বাদ দিয়ে এবার বল তোর এই অবস্থা কেন?
ইসরাত চোখ ঘুরিয়ে আমতা আমতা করে বলে,, আমার এই অবস্থা কি অবস্থা? আমাকে নিয়ে পরলি কেন বলতো?
কি লুকাচ্ছিস ইসু তুই আমার থেকে?
-- ক-কই কি লুকাচ্ছি ইসু? তোর মাথা টা গেছে আমি কি লুকাবো?
-- তুই কি আমার হাতে মা'র খেতে চাস ইসু?
হ্যা নূর কয়টা লাগিয়ে দাও।মা'রের দরকার আছে, লাগাও কয়টা।
নূর আর ইসরাত দুইজনই পিছনে তাকিয়ে দেখে তালহা পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তালহা স্যার কে দেখে নূর তারাতাড়ি বসা থেকে উঠে পরে।ইসরাত এখনও বসে আছে। নূর চোখের ইশারায় ইসরাত কে উঠতে বলে,,স্যার এসেছে এখনও বসে থাকাটা কেমন দেখায়। কিন্তু ইসরাত উঠে না একি ভাবে বসে থাকে। নূর তালহা স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে,, স্যার ইয়ে মানে আসলে।
কি অবস্থা নূর কেমন আছো? সব ঠিক ঠাক?(তালহা)
-- এইতো স্যার ভালো আছি আপনি কেমন আছেন? আপনি কি অসুস্থ? না মানে দেখে মনে হচ্ছে।
--ঐ আর কি একটু জ্বর এসেছিলো। (তালহা) জ্বরের কথা শুনে তালহার দিকে ইসরাত তাকায়। তালহা তখন ইসরাতের দিকেই তাকিয়ে ছিলো দুইজনেরই চোখাচোখি হয়ে যায়। তালহা ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,,নূর ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি কি ওর সাথে একটু কথা বলতে পারি?
-- এমা ছিঃ ছিঃ স্যার আপনারা কথা বলুন আমি কিছু মনে করবো না। আমি বরং ক্লাসে যাই।ইসু কথা শেষ হলে চলে আসিস বলেই এখান থেকে কেটে পরে নূর।বুঝতে পারে দুইজনের মাঝে কিছু একটা হয়েছে। ওদের ব্যাপারটা না হয় ওরাই মিটিয়ে নিক। এসব ভাবতে ভাবতে নূরের সৌন্দর্যের কথা মাথায় আসে।দুই দিন ধরে লোকটার কোনো খবর নেই না কল না অন্য কিছু। এখন যেহেতু দ্বিতীয় ক্লাস শুরু হতে অনেক সময় আছে তাই ভেবে নেয় সৌন্দর্য কে এক ঝলক দেখে আসা যাক। লোকটার মুখ দেখার জন্য চোখ দুটি বড্ড তৃষ্ণার্ত।
সৌন্দর্যের ক্যাবিনের সামনে গিয়ে উঁকি জুঁকি দিতে থাকে নূর। দরজাটা সামান্য ভিরানো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে কি করা যায়। ভাবতে ভাবতে উল্টো দিক থেকে ফিরতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নেয়। মুখ দিয়ে আপনা আপনি চিল্লানি বের হয়ে যায় ওমা বলে।
সৌন্দর্য ফুল ক্লাস না করেই এসে পরেছে। বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হবে চিল্লানি শুনে বাইরে বের হয়ে দেখে নাহিদ স্যার নূরকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
পায়ের শব্দে নূরের হুঁশ আসে। তারাতাড়ি নাহিদ স্যারের থেকে নিজেকে ছারিয়ে নিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়।
সৌন্দর্য নূরের দিকেই তাকিয়ে আছে। নূর সৌন্দর্যের মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায়। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে, চুলগুলো সব সময়ের মতো নেই অগোছালো। নূর কিছু বলতে নিবে তার আগেই সৌন্দর্য হাঁটা ধরে। পিছন থেকে নূর ডাকে কোনো সারা দেয় না। সৌন্দর্যের পিছন পিছন আসতে আসতে গাড়ির কাছে চলে আসে। তাও কিছু বলে না সৌন্দর্য। নূর কে অবাক করে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। নূর সৌন্দর্যের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বুকে কেন যেনো সূক্ষ ব্যথা অনুভব করছে। লোকটা কি তাকে ভুল বুঝলো?

বাইরে ঝড় হলে টের পাওয়া যায়, কিন্তু মনের ভিতর যে ঝড় উঠে সেই ঝড়ের না আবাস পাওয়া যায় আর না অন্য কেউ তা একটুকু আচ করতে পারে।নীরবে নিভৃতে মনে তোলপাড় তুলে সবকিছু লন্ড ভ'ন্ড করে দিয়ে যায়।
ইসরাত একইভাবে বসে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।এমন ভাব করছে দেখে মনে হচ্ছে তালহা নামের কোনো ব্যক্তি এখানে উপস্থিত নেই। তালহা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে মেয়েটার কান্ড দেখছে।কতো বড় সাহস তাকে ইগনোর করছে।
এইদিক ওইদিকে কি দেখছো তুমি? আমার দিকে তাকাও।(তালহা)
এক্সকিউজ মি? আপনি কি আমাকে বলছেন কিছু স্যার?(ইসরাত)
নাহ তো তুমি ছাড়া এখানে পাশের বাসার কাকিমা ও আছে, উনাকেই বলছি।(তালহা)
ছিঃ ছিঃ শেষে গিয়ে কাকিমাদের উপর নজর দিয়েছে।আর হ্যা ঐ পাড়ার কু'টনি কাকিমা গুলোই আছে আপনার কপালে। আমি দোয়া করি ঐগুলার মতো একটাই পরুক। (ইসরাত)
তালহা রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,, ভুলে যেওনা আমি তোমার স্যার হই। আর আসো আমার সাথে কথা আছে।
হ্যা স্যার হোন কিন্তু এক্স স্যার। আর আমি কোথাও যাবো না আপনার সাথে।
কিসের এক্স স্যার হ্যা কিসের এক্স স্যার? বলে জোরে চিল্লিয়ে উঠে তালহা স্যার।আশেপাশের কয়েকটা স্টুডেন্ট ওদের দিকে কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকায়। তালহা নিজেকে সামলে লো ভয়েসে বলে,,চলো তুমি আমার সাথে। এখানে আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না।
তো কে বলছে আপনাকে করতে সিনক্রিয়েট? যানতো এখান থেকে যান আপনি আমার না কথা বলতে ইচ্ছে করছে আর না অন্য কিছু প্লিজ যান বলেই কেঁদে দেয় ইসরাত।তার কিছু ভালো লাগছে না এখন। তালহা কে দেখলেই ঐ ঘটনা টা চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে। সব কিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে।
ইসরাত কে কান্না করতে দেখে তালহা থতমত খেয়ে যায়।এখানে কান্না করার কি হলো বুঝলো না। সব সময় রণমুর্তি ধারন করে থাকা মেয়ে কিনা ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে কান্না করছে।
কান্না করছো কেন তুমি? এখানে কান্না করার কি আছে?
-- আপনি বুঝবেন না।কখনোই বুঝবেন না। আমাকেই বুঝলেন না সেখানে আমি কেন কান্না করছি তা কি করে বুঝবেন?
উফফ ইসরাত ট্রাস্ট মি,,আমার সবকিছু আওলিয়ে যাচ্ছে। এতো কনফিউজড কেন করছো আমাকে? আমি এখানে এসেছি কিছু বিষয় নিয়ে সরাসরি কথা বলতে তোমার সাথে।
ইসরাত কোনো উত্তর দেয় না।
তালহা এবার একটু কাতর স্বরে বলে,, প্লিজ ইসু বেশি সময় লাগবে না।
ভয়েসটায় কি ছিলো ইসরাত জানে না। কিন্তু তালহার এমন করে প্লিজ বলায় মন কে আর ধরে রাখতে পারে না। চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায়। ঠিক আছে চলেন। কোথায় যেতে হবে?
ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্টায় চলো।(তালহা)
আচ্ছা চলুন বলে ইসরাত আগে আগে হাঁটতে থাকে।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুইজন মুখোমুখি বসে। তালহা জিজ্ঞেস করে কি খাবে?
আমি এখানে খেতে আসিনি।আমার মনে এতো আনন্দ নেই। আপনার মনে আনন্দ আপনি খান,বেশি করে খান।
ফরমালিটির জন্য হলেও কিছু নিতে হবে তাই না? আমরা তো আর রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার না দিয়ে বসতে পারি না। ব্যাপারটা কেমন দেখায় বলো।
স্যার আপনি এখন বেশি কথা বলা শুরু করেছেন।আজাইরা পেঁচাল বাদ দিয়ে কফি অর্ডার দেন।আর কি বলবেন বলেন আমার ক্লাস আছে।
"যার কথা বলা প্রিয় গানের মতো কানে বাজতো।যার চেহারা চোখে শান্তি দিতো তা যদি হুট করে বদলে যায়, তাহলে কেমন ফিল হয় তুমি কি করে বুঝবে ভাঙা রেডিও?"
মানে? কিসব কথা বলছেন আপনি? আর ভাঙা রেডিও টা কে? এই এক মিনিট এক মিনিট আপনি আমায় বলছেন ভাঙা রেডিও? আর এসব কাব্যিক বাক্য আমার সামনে কেন বলছেন? আপনার কতো লোকই আছে বলার জন্য।
তালহা বিরবির করে বলে,,এইতো আসল ফর্মে ফিরছে।
ইসরাত তালহার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট করে বলে,, কিছু বলছেন আপনি?
বলার জন্যই ডেকেছি।তালহা এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলে,,যে জন্য ডেকেছি তোমাকে,, এটা কি ঠিক করছো তুমি?
কোনটা?
ঐযে ঐ ব্যাপারটা।(তালহা)
কোন ব্যাপারটা স্যার? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কি বলছেন আপনি।
তোমার বিয়ের ব্যাপারটা। এখন কি বিয়ে করাটা খুব জরুরি ইসরাত? সামনে তোমার ব্রাইট ফিউচার পরে আছে। পড়াশোনায় ফোকাস করো,,বিয়ে তো পরেও করতে পারবে। তোমার মা বাবা কে একটু বোঝাও।দেখো ছেলে পক্ষ যতোই বলুক পড়াশোনা করাবে বিয়ের পর সবার মেন্টালিটি তো এক থাকে না। যদি তোমার বিয়ের পর তোমার পড়াশোনায় ক্ষতি হয়ে যায় তখন? আর,,,আর তুমি কেন অন্য কাউকে বিয়ে করতে যাবে? তোমার মা বলেছে তোমার নাকি আপত্তি নেই কোনো।
তালহা কি বলছে সব ইসরাতের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিছু বুঝতে পারছে না।
আপনি কি বলছেন স্যার আমি কিছু বুঝতে পারছি না কিসের বিয়ে, কিসের কি?
তোমার বিয়ে। তোমার মা যে বলল।
মা বলেছে মানে কি বলেছে মা?
তালহা সব খুলে বলে,, ইসরাত শুনে বেশ অবাক হয়। তালহা কেমন চিন্তিত মুখে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো ইসরাত বিয়ে করলে সে কত কষ্ট পাবে।
ইসরাত কিছু বলতে নিবে তার আগেই টেবিলে রাখা তালহার ফোনটা বেজে উঠে। ইসরাত তাকিয়ে দেখে তূর নামটা জ্বল জ্বল করছে। ইসরাতের বুকের ভিতর ও জ্বলুনি উঠে যায়। ইচ্ছে করছে এক আছাড় দিয়ে মোবাইল টা ভেঙে ফেলতে। তালহার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে ফোনের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে।এতো সময়ের চিন্তিত ভাবটা সরে গেছে। মনে হচ্ছে অমাবস্যার আঁধার কেটে পূর্ণিমার আলো ধরা দিয়েছে।
ইসরাত কিছু ভাবতে পারছে না, বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,আমার বিয়ে নিয়ে আপনার এতো মাথা ঘামাতে হবে না। নিজের জীবন নিয়ে খুশি থাকুন আপনি। আর আমি বিয়ে করবো অবশ্যই।আপনাকেই দাওয়াত দিবো সবার আগে। আসবেন কিন্তু সাথে আপনার স্পেশাল গেস্ট নিয়ে।কথাগুলো বলে ইসরাত বের হয়ে যায় রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর চোখের পানি মুচ্ছে। জীবন টা এমন কেন? কিছু মানুষ বুঝি কষ্ট আর যন্ত্রনা দিতেই আমাদের জীবনে আসে। আসেনা তো আমরা ইনভাইট করে নিয়ে আসি কষ্ট পাওয়ার জন্য।
ইসরাত রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় কারো সাথে ধাক্কা খায়। ইসরাত লোকটার দিকে না তাকিয়েই সরি বলে চলে যেতে নেয়।
" এক্সকিউজ মি মিস! "
ইসরাত পিছনে না তাকিয়েই থামে।লোকটা হাত বাড়িয়ে ইসরাতের দিকে একটা টিস্যু ধরে বলে,,
"সুন্দর চোখে কাজল শোভা পায়, চোখের পানি না।যে এই চোখে পানি এনেছে সে বড্ড বোকা,।" বলে হাতে টিস্যু ধরিয়ে দেয়।
ইসরাত ঘুরে লোকটা কে দেখার জন্য কিন্তু মুখ দেখার আগেই লোকটা অনেক দূর চলে যায়। শুধু পিছনটা দেখতে পায় ইসরাত।
************
নূর জীবনের প্রথম মনে হয় আজ একটা সাহসীকতার কাজ করতে যাচ্ছে। একা একা আজ শ্বশুর বাড়িতে পা দিতে চলেছে। এতো বড় একটা কাজ করতে যাচ্ছে অথচ নূরের মনের ভিতর একটুও ভয় বা দ্বিধা কাজ করছে না। এসব কিছু মন থেকে বের হয়ে গেছে। এখন একটা কথাই মনে বাজতেছে সৌন্দর্য তাকে ভুল বুঝেছে,রাগ করে কথা না বলে চলে এসেছে। নূর এসব সহ্য করতে পারছে না।
গেইটের দারোয়ান কে গেইট খুলতে বলায় দারোয়ান আপত্তি জানায়।অপরিচিত কাউকে বিনা অনুমতিতে ঢুকতে দেওয়া নিষেধ। আর নূর কে তিনি চিনেন ও না যে ঢুকতে দিবে। নূর নিজের পরিচয় দিলেও কোনো কাজ হয় না। লোকটা কিছুতেই বিশ্বাস করে না। আজ কাল এসব বলে মানুষ ধা'ন্ধাবাজি করে। নূর যে বাড়ির বউ তার প্রমান কি?
নূরের এবার কান্না করে দিতে ইচ্ছে করছে। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।কাউকে কল দিবে সেটাও করতে পারছে না কে জানে কি ভাববে ওরা।আর সৌন্দর্য কে কয়েকবার কল দিয়ে ও পায় নি। পরোক্ষনে একটা বুদ্ধি মাথায় আসে।ঘুরতে গিয়ে সৌন্দর্য আর ফাতিহার সাথে অনেক ছবি তোলা হয়েছে। সেই ছবি বের করে দেখায়।দারোয়ান ছবিগুলো দেখে একঝলক নূরের দিকে তাকায় তারপর সরি ম্যাম বলে গেইট খুলে দেয়। নূর স্বস্তির নিশ্বাস নেয় ফাতিহা কে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। ঘুরতে গিয়ে সেই বায়না করেছিলো এক সাথে ছবি তোলার। ফাতিহার বায়নার জন্য কাজে লেগে গেছে আজ।
এই বাড়িতে নূরের প্রথম আসা সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকে। কিন্তু কাউকেই চোখে পরছে না তার। সৌন্দর্যের রুম কোনটা সেটাও জানা নেই। কিছু না ভেবে তো এসে গেলো এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। কাউকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবে তাও পারছে না খুব লজ্জা লাগছে। নূর এদিক ওদিক তাকানোর মাঝেই একটা মহিলা এসে সামনে দাঁড়ায়। নূর বুঝতে পারলো না কে এই মহিলা। সৌন্দর্যের বাড়ির সকলকে এখনও সে চিনে না। মহিলা টা নূরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে তাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করতে থাকে। তারপর সামনে এসে জানতে চায় কাকে চাই? কে আপনি?
নূর নিঃসংকোচে বলে,,জ্বি আমি ফাতিহার মাম্মা।
মহিলা টা মুহূর্তের মধ্যে নিজের খোলশ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ওও ম্যাডাম আপনি? দুঃখিত আপনাকে চিনতে পারি নি আমি। আসলে আমি ছুটিতে ছিলাম তাই আর আপনাকে দেখা হয় নি। এই দেখুন আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি, আমি ফাতিহার দেখাশোনা করি।আমার নাম রুবি।
মহিলাটার কথায় নূর কি বলবে খুঁজে পায় না শুধু একটু হাসে।
আসুন আসুন ম্যাডাম বসুন।কিন্তু বাড়িতে তো বড় ম্যাডাম মানে সৌন্দর্য স্যারের দাদি আর সৌন্দর্য স্যার ছাড়া কেউ নেই। আর বড় ম্যাডাম ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমোচ্ছে।
আমার অন্য কাউকে লাগবে না এখন। তোমার সৌন্দর্য স্যারের রুমটা আপাতত দেখিয়ে দাও তাহলেই চলবে।
রুবি নূরের কথা শুনে নূরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসে। তারপর বলে,,উপরতলার ডান সাইডে একটা বিরাট বড় রুম আছে ঐটাই স্যারের।
আমি রুমে না ঢুকে কি করে বুঝবো ঐটা বিরাট রুম? নূর জিজ্ঞেস করে।
আরে ম্যাডাম ঐ সাইডে একটাই রুম তাও স্যারের আর কতো কিছু যে স্যার করেছে ডান সাইডে শুনবেন?
নূর যেতে যেতে বলল পরে শুনবো বলেই এখান থেকে কেটে পরে।
ডান সাইডে আসতে প্রথমেই রুম টা পেয়ে যায়। কোনো কিছু না ভেবে রুমে ঢুকে ও পরে। সৌন্দর্য মাত্র বাথরুম থেকে গোসল করে বের হয়েছে। মাথা ব্যথার জন্য লম্বা একটা শাওয়ার নিয়েছে। মাথা মুছতে মুছতে সামনের দিকে তাকিয়ে নূর কে দেখে অবাক হয়ে যায়।
নূর কোনো কিছু না বলে দৌড়ে এসে সৌন্দর্য কে ঝাপটে ধরে কেঁদে দেয়।
আপনি আমায় এভাবে ইগনোর কেন করছেন স্যার? আমার সাথে কথা কেন বলছেন না? বিশ্বাস করুন ঐটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো, আমি পরে যাচ্ছিলাম দেখে নাহিদ স্যার ধরেছে আর কিছু না।
নূর তুমি এখানে? সৌন্দর্য নিজের বুক থেকে নূরের মুখ তুলে জিজ্ঞেস করে।
আপনি আমায় ভুল বুঝছেন। (নূর)
কিসের ভুল আর কি বলছো তুমি?
আপনি জানেন না কিছু? ঐ সময় নাহিদ স্যার আমাকে ধরেছে বলে আপনি আমায় ভুল বুঝেন নি?
নাহ তো।(সৌন্দর্য)
-- তাহলে আমার সাথে কথা কেন বলেন নি? আমাকে ইগনোর কেন করছেন?
কোথায় ইগনোর করলাম? শরীরটা ভালো না আমার। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।ঐসময় কথা ও বলতে পারছিলাম না এতোটাই কষ্ট হচ্ছিল।তাই চলে এসেছি।
বলেন কি এইজন্য আপনাকে এমন দেখাচ্ছে?
হয়তো।বলেই সৌন্দর্য বিছানায় বসে। বায় দা ওয়ে,, আমার ইগনোরে তোমার কিছু যায় আসে? আমি ভুল বুঝলেও তোমার কিছু যায় আসে নূর?
নূর মাথা নিচের দিকে দিয়ে রাখে।
অবশ্য তোমাকে আর বলতে হবে না। যেই মেয়ে বরযাত্রী ছাড়া শ্বশুর বাড়ি চলে আসে স্বামীর ভুল ভাঙানোর জন্য তার অবশ্যই অল্প হলেও কিছু যায় আসে।
নূর মনে মনে বলে,,অল্প কিছু না সুন্দর মানুষ অনেকটাই যায় আসে।
"পরাণ তোমার হাতের ছোঁয়ায় আমার ব্যাথা ভ্যানিশ করে দাও না।" কি নিঃসংকোচ আবদার। নূর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না প্রায় দৌড়ে এসে খাটে বসে।নূর বসার সাথে সাথে সৌন্দর্য নূরের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে।



 চলবে,,,,,,,,,


গল্প: পরাণ দিয়ে ছুঁই (Season_2)

#পর্ব_৯
লেখনীতে: ঝর্ণা ইসলাম


আসসালামু আলাইকুম। সকলে রেসপন্স করবেন।

Post a Comment

0 Comments