চলন্ত বাস হঠাৎ করে ব্রেক করায় নিজেকে সামলাতে না পেরে স্যারের মুখেই ভুলবশত খা'বলে ধরে ইয়ানূর।
কিছু সময়ের জন্য যেনো সব স্তব্ধ হয়ে গেছে। বাসের সকলে অবাক দৃষ্টিতে সামনে হয়ে যাওয়া দৃশ্য দেখে চলেছে। ইয়ানূর এখনো একই ভাবে আছে। ইয়ানূরের একটা হাত বাসের সিটে বসে থাকা ব্যক্তির মুখে আরেকটা ঘাড়ে।শুধু ধরে নেই একপ্রকার খা'মচে ধরে আছে। ইয়ানূরের ধারলো নখ গুলো যেনো গেঁথে গেছে। কিছু সময় লোকটার দিকে তাকিয়ে এক ঝটকায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর কিছু না বলে একপ্রকার দৌড়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত আসনে এসে বসে পরে। খুব হাঁপাচ্ছে সে। জীবনে কোনোদিন এমন বিবৃতিকর পরিস্থিতি তে সে পরে নি। ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর ইয়ানূর ঢুকে পরে সেখানে লুকিয়ে পরুক।
এরমধ্যে একজন স্যার এসে জিজ্ঞেস করে গেছে ইয়ানূর ঠিক আছে কিনা।কি যে লজ্জা লাগছিল তার তবুও মুখে জোরপূর্বক হাসি এনে মাথা নাড়িয়ে জানিয়েছিল সে ঠিক আছে।
ইয়ানূরের কয়েকজন বান্ধবী ইয়ানূরের চোখের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে মিটমিটিয়ে হাসছে। আর কয়েকজন ইয়ানূর আর তাদের ন'জর কারা স্যার নামক অতিথির দিকে তাকিয়ে কি যেনো গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করে চলেছে। ইয়ানূরের হুট করেই খুব কান্না পেলো খুব নরম মনের সে তাকে নিয়ে কোনো বা'জে কথা হলে সহ্য করতে পারে না। তার উপর সে ইন্ট্রুভার্ট।
ইয়ানূরের পাশে বসে তার কাঁধে হাত রেখে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে তার বান্ধবী ইসরাত। যদিও বা তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। ইয়ানূরের চোখের পানি টলমল করছে, যেনো একটু ছোঁয়া লাগলেই অঝোর ধারায় ঝড়ে পরবে।
এইবারই ইয়ানূরদের কলেজ লাইফ শেষ। কিছুদিন পর এইচএসসি পরীক্ষা। তাই ছাত্র ছাত্রীদের মন ফ্রেশ করার জন্য ওদের অনুরোধেই শিক্ষা সফরের আয়োজন করেছে কলেজ কতৃপক্ষ। যদিও বা ইয়ানূর আসতে চায় নি তার অনেক পড়া বাকি।পড়া ছাড়া মেয়ে টা কিছু বোঝে না। ইসরাত জোর করে নিয়ে এসেছে। ইয়ানূরের বাবা মা কে ইসরাত ই বুঝিয়েছে যেনো তাকে আসতে দেয়।ইয়ানূর অবশ্য এ বিষয় নিয়ে বাবা মায়ের সাথে একটা কথা ও বলেনি। উনারা অনেক ভেবে চিন্তেই ইয়ানূর কে আসতে দিয়েছে। এভাবে ঘরে বসে সারাদিন বইয়ের ভিতর মুখ ডুবিয়ে রাখলে মেয়েটা না পাগল ই হয়ে যায়। কিছু দিন পর ভার্সিটিতে ভর্তি হবে বাইরের সম্পর্কে তার ধারণা খুব কম। এজন্য উনারাই বলে পাঠিয়েছে।
ইয়ানূরের স্যার তালহা ইয়ানূরের বাবার পরিচিত। তালহা কে দেখে রাখতে বলেছে।মূলত তালহা আর ইসরাতের ভরসাতেই ইয়ানূর কে পাঠিয়েছে তার বাবা।এজন্য তালহা এসে জিজ্ঞেস করে গেছে সে ঠিক আছে কিনা।
কিছুক্ষন আগে বাসে বক্সে গান ছেড়ে সকলেই নাচছিলো।এটাই ওদের কলেজ লাইফের শেষ ভ্রমন। পরে কে কোথায় চলে যায় দেখা হবে কিনা কোনোদিন কেউই জানে না। তাই সকলে মিলে আনন্দ করছে। গান শুনে ইসরাতের খুব নাচতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে ইয়ানূরের জন্য যাচ্ছে না।
সবাই এতো মজা করছে অথচ মেয়ে টা কানে হেডফোন লাগিয়ে বই নিয়ে এখানেও পড়া লাগিয়ে রেখেছে। বইয়ের দিকে মুখ রেখেই ইয়ানূর বলল,তুই গিয়ে নাচতে পারিস ইশু।
"কিন্তু,,, "
"কোনো কিন্তু না।আমার কোনো সমস্যা হবে না। আর আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে না এখানেইতো।"
ইসরাত খুশি হয়ে ইয়ানূর কে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে গিয়ে ও ফিরে এলো কারণ ইয়ানূর ব্রু কোচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর সে যে এসব পছন্দ করে না তা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো ইসরাতের। ইসরাত নাচার জন্য উঠতে উঠতে বলল, ঠিক আছে দোস্ত তুই পড়াশোনা কর আমি একটু নেচে আসি।
ইয়ানূর মাথা নাড়িয়ে আবার বইয়ের ভিতর ডুব দেয়।যদিও খুব অসুবিধা হচ্ছে এতো হৈ হল্লোড়ে পরতে।তবুও কিছু করার নেই তার।
এরমধ্যে হুট করে কেউ এসে ইয়ানূর কে টেনে নাচের মধ্যে নিয়ে যায়। ইয়ানূর কিছু বুঝতেই পারলো না কি হচ্ছে তার সাথে। সকলেই তাকে নিয়ে প্রায় টানা হেচড়া শুরু করে দিয়েছে নাচার জন্য। ইয়ানূর বলে চলেছে তাকে ছাড়ার জন্য কেউ কানেই নিচ্ছে না। তার হাত ধরে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। ভাগ্যিস এই বাসে সব ছাত্রী নয়তো ইয়ানূর এখানেই জ্ঞান হারাতো।
মেয়েটা বলে চলেছে আমাকে ছারো তোমরা নাচো।আমাকে ছেড়ে দাও আমি নাচতে পারি না। আমার এসব ভালো লাগে না। প্লিজ তোমরা আমাকে ছাড়ো কিন্তু কেউ শুনছেই না। এমনিতেই মেয়েটা খুব আস্তে কথা বলে।তাদের কানে হয়তো ইয়ানূরের কথা পৌছাঁতেই পারছে না। তার উপর গানের সাউন্ড। কয়েকজন এর মধ্যে ইয়ানূরের কথা শুনেও পাত্তা দিচ্ছে না।
ওদের টানাটানি তে সামনের দিকে চলে যায় ইয়ানূর। এরমধ্যে হুট করে গাড়ির ব্রেক করায় নিজেকে সামলাতে পারেনি ইয়ানূর সামনে থাকা ব্যক্তির মুখ আর ঘারেই ধরে নিয়েছে আচমকা।না ধরলে হয়তো এতোক্ষনে রাস্তায় গিয়ে পরতো বাসের দরজা দিয়ে।
ইসরাত ইয়ানূরের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিয়ে চলেছে। সে পিছনের দিকে ছিলো তাই ইয়ানূর কে নিয়ে এতোকিছু হলো বুঝতে পারেনি। নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে তার। একটু নাচার জন্য বান্ধবী কে কেমন বিব্রতকর পরিস্থিতি তে পরতে হলো।
কিছু একটা ভেবে ইয়ানূর কে সে প্রশ্ন করে,,
"নূর তুই তো এখানে বসে পড়ছিলি তাহলে ঐখানে কি করে গেলি দোস্ত? "
"ইয়ানূর ধীর কন্ঠে বলে,জানিনা হুট করে কে যেনো আমাকে টেনে নিয়ে গেলো বুঝতে পারিনি।"
থাক মন খারাপ করিস না কেমন? সব ঠিক আছে বলেই পাশের সিটে চোখ যায় ইসরাতের ঐখানে বসে তাদের ক্লাসমেট রিতা দাঁত কেলিয়ে হেসে চলেছে। ইসরাতের আর বুঝতে বাকি নেই এইকাজ কে করেছে। কিছু বলতে নিয়েও চুপ করে গেলো ইয়ানূরের কথা ভেবে।তবে চোখ দিয়ে শাসাতে ভুলল না। যেনো ইসরাত চোখ দিয়েই বলে দিচ্ছে তোকে পরে দেখে নিচ্ছি।
রিতা ইসরাতের চোখ রাঙানিতে পাত্তা না দিয়ে মুখ ভেঙিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
গাড়ি ব্রেক করেছে সাময়িক সময়ের জন্য। সকলে যেনো একটু বের হয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ইসরাত বলার পর ও ইয়ানূর গাড়ি থেকে নামলো না। গাড়ি এখন পুরাই ফাঁকা। ইয়ানূর কে একা রেখে ইসরাত ও গেলো না।
তালহা স্যারই এসে পানি দিয়ে গেলো। ইয়ানূর যার মুখে খা'বলে ধরেছে লোকটা নাকি তালহা স্যারের বন্ধু। উনি ও নাকি একজন টিচার। তবে কোথাকার তা জানা নেই। তালহা স্যারই নিয়ে এসেছে উনাকে গেস্ট হিসেবে। লোকটা আসার পর থেকেই লোকটা কে নিয়ে সকলের কানাঘোষা। লোকটাই সকলের গল্পের একমাত্র টপিক যেনো। এমন ছেলে যেনো জীবনে দেখেনি কয়েকজন এমনই ভাব। চোখ দিয়েই যেনো লোকটা কে গি'লে খাচ্ছে।
অথচ লোকটার কোনোদিকে কোনো ভাবাবেগ নেই। একমনে কানে হেডফোন গুঁজে চুপটি করে সিটে বসে আছে। পিছনে ফিরে বা আশেপাশে তাকিয়ে দেখার ও প্রয়োজন মনে করছে না।
নির্দৃষ্ট সময়ে বাস এসে সিলেট থামে।গাড়ি থামার সাথে সাথে সকলের নামার যেনো প্রতিযোগিতা লেগে গেছে কার আগে কে নামবে। এতো ভিড় ইয়ানূরের কোনো কালেই পছন্দ না। তাই সকলে বের হলেই সে বের হবে এমন ভাবনা নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। আর ইয়ানূর কে ছাড়া ইসরাত ও যাবে না তাই অগত্যা সে ও বসে আছে।
সকলে নামার পর ইয়ানূর উঠে দাঁড়ায়। ইয়ানূরের আগে আগে ইসরাত যাচ্ছে। ইসরাত নেমে গেছে।ইয়ানূর সামনে পৌঁছাতে কারো কন্ঠ শুনতে পায়।
" কাউকে আ'ঘাত করলে সরি বলতে হয়।কেউ কি এটা শিখায় নি? আর এতো বড় বড় নখ কি জমিতে হালচাষ করার জন্য রাখা হয়েছে? "
ইয়ানূর পিছনে তাকিয়ে দেখে ঐ লোকটা সিটে এখনো বসে আছে। চোখ নিবদ্ধ ফোনের মাঝে।কিন্তু গালে আর গলায় ওয়ান টাইম বেন্ডেজ।
ইয়ানূর বুঝতে পারে ওর জন্যই এমন হয়েছে। কিন্তু সে চেয়েও স'রি বলতে পারলো না। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। তাই চলে যাওয়া ধরে।পিছন থেকে বিরবির করে লোকটার বলা "ম্যানার্সলেস গার্ল" শব্দটা তার কানে আসতে ভুল করলো না।
ইয়ানূর চোখের পানি মুছতে মুছতে বাস থেকে নামে।যতো মুছার চেষ্টা করছে চোখ দিয়ে ততোই পানি ঝড়ে চলেছে। চোখ দুটো যেনো আজ প্রতিযোগিতা করে চলেছে কতোটুকু পানি ঝড়াতে পারে। হাত দিয়ে না মুছে এবার ওড়নার এক কোণা দিয়ে মুছে চলেছে।
ইসরাত এতো সময় সামনে থেকে বকবক করে এগিয়ে চলেছে। ইয়ানূর যে তার কথার এক টা শব্দ ও কানে নেয় নি সেই দিকে মেয়েটার হুঁশ কোথায়।
এরমধ্যে নাক টানার শব্দে নিজের কথা থামিয়ে ব্রু কোচকে পিছনের দিকে তাকায়। তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। তার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী কেঁদে কেটে নাক,মুখ,চোখ লাল বানিয়ে ফেলেছে।
আল্লাহ নূর তোর কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছিস? পড়ে যাস নি তো আবার?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এই ছেমরি কথা বলছিস না কেন?
"আমি ম্যানার্সলেস গার্ল?"
"কোন হা/লায় তোরে এই কথা বলছে? তুই ম্যানার্সলেস হতে যাবি কোন সুখে? থু'রি দুঃখে? যে বলছে সে ম্যানার্স লেস।তার চৌদ্দ গুষ্ঠি ম্যানার্সলেস। হা/লার ঘরের হা,,,, ইয়ানূরের দিকে তাকিয়ে না মানে বলছিলাম কতো বড় সাহস।"
ইসরাতের কথায় ইয়ানূর কান্না থামিয়ে নাক মুখ কোচকে ফেলে। এই মেয়েটা কোনো দিন ও নিজের ভাষা সংযত করতে পারবে না। কতো করে বলেছে ইয়ানূর এমন ভাবে কথা না বলতে কিন্তু মেয়ে টা শুনে কই?
ইশু তুই আগে তোর ভাষা ঠিক কর।ছিঃ মুখের কি ভাষা।ইয়াক।
এমন ভাবে বলছিস কেন? তোর কান্না দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। তাই আমি না চাইতে ও মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে। এসব বাদ দে এখন বল কান্না করছিলি কেন? আর কে তোকে ম্যানার্সলেস বলেছে শুনি?
পরে বলবো এখন ভিতরে চল।রোদে আমার ভালো লাগছে না। ফ্রেশ হওয়া দরকার।
আচ্ছা চল বলেই দুজন রিসোর্টের ভিতর ঢুকে পড়ে। ইয়ানূর অবশ্য চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখে চলেছে। রিসোর্ট টা বেশ সুন্দর। ইয়ানূরের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই ভালো লাগে। মন চায় হারিয়ে যেতে।কৃত্রিম পরিবেশ তাকে ততোটা আকৃষ্ট করতে পারে না।
রিসোর্টে ঢুকে যে যার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে যায়। এক রুমে তিনজন করে থাকবে। ইয়ানূর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইসরাত বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে মরার মতো পরে আছে। ফ্রেশ হওয়ার কোনো নাম গন্ধ নেই।
ইয়ানূর গিয়ে ইসরাত কে ডাক দেয়।
"ইশু,,,,এই ইশু,,ফ্রেশ হয়ে নে। তোর শরীরে কতো জীবানু এখন জানিস? এসব নিয়ে তুই বিছানায় শুয়ে আছিস কেন? "
"উহু"
উঠ।
ইসরাত নড়েচড়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে, দোস্ত একটু ঘুমাতে দে।বাসে নেচে হাত পা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার।তার উপর সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে।
ফ্রেশ হয়ে নে আগে।
ইসরাত আর কোনো সাড়া ই দেয় নি।
ইয়ানূর অগত্যা আর ডাক দেয় না। জানে টেনে হিচড়ে ও কোনো লাভ নেই। তাই ফোন টা নিজের সাইড ব্যাগ থেকে বের করে বারান্দায় পা বাড়ায়।
বারান্দায় গিয়ে ইয়ানূরের চোখ জোড়া শীতল হয়ে যায়। একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করে। বাতাস এসে নিজের শরীর টা ছুঁয়ে দিয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে ইয়ানূর নিশ্বাস নেয়। বারান্দা থেকে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর দৃশ্য। ইয়ানূর কিছু সময় পরিবেশ টা উপভোগ করে। তারপর বাড়িতে ফোন করে। বাবা,মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। মনটা কেমন আনচান করছে। ওদের রেখে ইয়ানূর এতো দূরে কখনো আসেনি।
ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করতেই ইয়ানূর উৎসাহের সাথে বলে উঠে,, আসসালামু আলাইকুম আব্বু।
ওয়ালাইকুম আসসালাম আমার আম্মাজান।
আম্মাজান ডাকটা শুনে ইয়ানূর চোখ বন্ধ করে ফেলে।এই ডাকটা শুনলে তার প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
পৌঁছে গেছেন আম্মাজান?
"হ্যা আব্বু মাত্র এসে পৌঁছেছি।"
"সেকি কথা আম্মাজান? আগে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিবেন তা না করে। "
ফ্রেশ হয়েছি আব্বু। ফ্রেশ হয়েই তোমাকে কল করেছি। আর তোমাদের না জানিয়ে আমি কি শান্তিতে রেস্ট নিতে পারতাম? তোমাদের ও তো টেনশন হচ্ছিল।
এবার গিয়ে রেস্ট নিন।এখন পড়াশোনা করার দরকার নেই। ঠিক সময়ে খেয়ে নিবেন।আর সাবধানে থাকবেন।
হুম আব্বু। আম্মু কোথায়?
আপনার আম্মু বাড়িতে আছে।আমি একটু চা খেতে বাইরে এসেছি। পরে কথা বলে নিয়েন।
আচ্ছা আব্বু। আম্মু কে বলে দিও আমি ঠিক আছি।
আচ্ছা।
আর চায়ে কিন্তু একদম চিনি দিতে বলবে না। তোমার কিন্তু চিনি খাওয়া বারণ।
হুম আম্মাজান।
আল্লাহ হাফেজ আব্বু।
আল্লাহ হাফেজ।
ইয়ানূর তার বাবার সাথে কথা বলে রুমে ঢুকে। তারপর এক সাইডে গিয়ে শুয়ে পরে। ইসরাত পাশেই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
-----------------------------------
সেই কখন থেকে তালহা হেঁসে চলেছে। তালহার দিকে কটমট দৃষ্টিতে কিছু সময় পরপর তাকাচ্ছে সৌন্দর্য । কিন্তু তালহা তাতে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। সে কিছুতেই তার হাসি থামাতে পারছে না।
তোর এই ভয়ংকর হাসি থামাবি তুই? সৌন্দর্য তালহার দিকে রা'গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
"একদম আমার হাসি কে ভয়ংকর বলবি না বেটা। তবে বলতে পারিস যদি ভয়ংকরের সাথে সুন্দর শব্দ টা এড করে নিস তো।"
সুন্দর আর তোর হাসি? ভাগ্যিস রিসোর্টের রুম গুলো সাউন্ড প্রোফ নয়তো রাতের বেলা কোনো ভূত প্রেতের হাসি ভেবে পালিয়ে যেতো লোকজন।
অপমান করা বাদ দে বেটা। তোর গাল আর ঘাড় দেখলে কিছুতেই আমার হাসি থামছে না। আমি কি করবো বলতো? এতো সুন্দর চেহারায় মনে হচ্ছে কেউ সি'ল মেরে দিয়েছে।
শুধু তোর জন্য আমার গালে আর গলায় স্পট হয়ে গেছে। তোর জোরাজোরি তে আমি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি। তাও চেয়েছিলাম আমার গাড়ি নিয়ে আসতে কিন্তু তুই,,,
আমার কি দোষ? আর এটা তো একটা এক্সিডেন্ট। তারপর দুষ্টু হেসে বলে,,
যদিও লোকে অন্য কিছু ভাববে।
সৌন্দর্য তালহা কে তাড়া করে বলে, বের হো তুই আমার রুম থেকে।
ভাই ভাবা যায় দা গ্রেট সৌন্দর্য ওয়াহিদের গালে আর গলায় মেয়ে মানুষের খা'মচি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ব্রেকিং নিউজ টা বন্ধুমহলে জানিয়ে দিবো নাকি? বলেই চোখ মারে তালহা।
সৌন্দর্য এবার নিজের পায়ের জোতা খুলে ছুরে মারে তালহার দিকে। কিন্তু তালহা ততক্ষণে রুম থেকে বের হয়ে গেছে।
সৌন্দর্য গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজের গাল আর ঘারে চোখ বুলিয়ে নেয় একবার।
---------------------------
ভোরের আলো ফোটতেই সকলকে এসে ডেকে দিয়ে যায় ম্যামরা। অবশ্য ইয়ানূর কে ডাকতে হয়নি। সে ভোর রাত থেকে উঠেই বই নিয়ে বসেছে। কিছু সময় সিলেটের সকালের সৌন্দর্য বারান্দা থেকে দেখে এসেছে। ফুরফুরে মনে আছে সে।মায়ের সাথে ও কথা বলে নিয়েছে।
সকলে গিয়ে একসাথে খাবার খেয়েছে। তালহার উপর আর আরেকটা ম্যামের উপর ইয়ানূরদের দেখাশোনা ও গাইড করার দায়িত্ব পরেছে।
সকলেই জাফলং যাবে।সেই অনুযায়ী ওখানে গিয়ে পৌঁছায়।
এইবার বাসে তালহার সাথে লোকটা ছিলো না। ইয়ানূর মনে মনে খুজেছে একটা স'রি বলার জন্য। কিন্তু কোথাও দেখতে পায়নি। এটা নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি সে।
সেখানে পৌঁছে সকলেই যে যার মতো ঘুরছে।অবশ্য বলে দেওয়া হয়েছে বেশি দূর যাওয়া যাবে না একা একা।
এর মধ্যে ইসরাত এসে বলে,,দোস্ত দেখ পরা,,, হায় হায় কি সুন্দর পরা।
ইয়ানূর বোঝার চেষ্টা করে। পরা মানে? কিসের পরা?
আরে সামনে তাকিয়ে দেখ তালহা স্যারের সাথে ঐ স্যার টা। আহা কি সুন্দর দেখতেরে।
উনি স্যার হলো কিভাবে? আর পরা কি?
তালহা আমাদের কি হয়? স্যার।আর স্যারের বন্ধু তো স্যার ই।
হুম বুঝলাম। তাহলে পরা কি?
আরে পরির মেইল ভার্সন কি জানি না। লোকটা কতো সুন্দর তাই পরা বললাম।
ইয়ানূর ইসরাতের কথায় মাথা ঘামায় না।ইসরাত কে তার সাথে আসতে বলে, লোকটার দিকে এগিয়ে যায়। সরি বলবে বলে।
কিন্তু তালহা আর সৌন্দর্যের কাছে পৌঁছেই আরেক বিপত্তি ঘটে। পাথরের সাথে হোঁচট খেয়ে সৌন্দর্যের উপর গিয়ে পরে ইয়ানূর।নিজেকে বাঁচাতে সৌন্দর্যের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে। যার দরুন ইয়ানূরের নখ গুলো সৌন্দর্যের বু'কে গিয়ে বিধে।
সৌন্দর্য মিনিটের মাঝে ইয়ানূর কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে শার্ট ঠিক করতে করতে তালহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
"স্পেশাল চাইল্ডদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে পারিস না? "
চলবে,,,,,,,,,
গল্প: পরাণ দিয়ে ছুঁই
#পর্ব_১
লেখনীতে: ঝর্ণা ইসলাম
আসসালামু আলাইকুম। সকলে রেসপন্স করবেন।
.jpg)
0 Comments