ছেলেটিকে আমার স্বপ্নে দেখা সেই সুদর্শন পুরুষ মনে হলো। স্বপ্ন ক্ষণস্থায়ী, কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর অধিকাংশই মনে থাকে না। ছেলেটির নাম এখনো জানা হয় নি। এতো গম্ভীর হয়ে থাকেন কিভাবে জানি না। তিনি যে বাড়িতে নিয়ে আসলেন সেটা একটা প্রাচীন ভাঙ্গা বাড়ি বলা চলে। প্রাচীন একতলা বাড়ি, তবে সেই বাড়ির অবস্থা এখন নাজেহাল। ইটগুলার সাথে লাগানো সিমেন্ট খুলে খুলে পড়ছে। হয়তো আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে যাবে এখানে লুকিয়ে থাকা সেই স্মৃতিগুলো। কিন্তু আমাকে যেভাবেই হোক আজ থেকে ষাট বছর আগের সব ঘটনা জানতেই হবে। সেটা কি আদৌও সম্ভব? মেইনরোড থেকে উত্তরপাশে ছোট একটা গলি রাস্তা দিয়ে ভীতরে ঢুকলে বাঁ পাশেই বাড়িটার অবস্থান। বাড়িটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রশস্ত। তাঁর আশেপাশে বড় বড় দুটো বট গাছ ভৌতিকরূপে বাড়িটিকে পাহারা দিচ্ছে। একটা কৃঞ্চচুড়ার প্রকান্ড গাছ আঙ্গিনার মাঝে দাপদে দাঁড়িয়ে আছে। পুরাতন বাড়িটার সামনে নতুন দোতলা বাড়ি। যার অর্থ মহসিন সরকার এই পুরাতন বাড়িটায় থাকেন না। সামনের নতুন বিল্ডিংয়ে থাকেন। আমি, শ্রেয়া আর স্বপ্ন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো বাড়িটা দেখছি। ছেলেটি এখনো আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের ভাবভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করছে। উনার সিল্কি চুলগুলো ঘেমে কপালের সাথে লেপ্টে রয়েছে। হঠাৎ তিনি নিম্নসুরে দাদু, দাদু বলে কয়েকবার চিৎকার করলেন। অতঃপর আমাদের ইশারা করে ভীতরে যেতে বললেন । যার অর্থ ছেলেটি এই বাড়ির সন্তান। আস্তে আস্তে পুরোটা বোঝা গেলো। তিনি যে এই বাড়ির ছেলে সেটা আগে বললেই তো হতো। কেমন গম্ভীর চাহনি নিয়ে চলাফেরা করে। নিচতলার ডান পাশের রুমটায় আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো। রুমের ভীতর প্রবেশ করে দেখলাম কতটা সৌখিনতার সাথে মানুষ থাকে এখানে। ছোট রুমটা বেশ গোছালো। আধুনিকতার ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট। বিছানার মাঝখানে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে শায়ে আছে এক বৃদ্ধ। বয়স সত্তর পার হয়ে আশির কাছাকাছি বোধহয়। ছেলেটা চুপচাপ শুধু একটা কথাই বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
গল্প: বিদেশিনী
0 Comments