Header Ads Widget

Responsive Advertisement

তোর মায়ায় আসক্ত - পর্ব ১৪

মেয়েটাকে অনেক বার জিজ্ঞেস করার পরও কোন রেসপন্স করল না। ক্রমাগত কান্না করেই যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ওর পায়ে হাত দিলাম। একটা কাচের টুকরো গেথে রয়েছে পায়ে। টান দিয়ে বের করে দিলাম। রক্ত পরার পরিমান বেড়ে গেল। মেয়েটা ব্যাথায় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম রুমালটা পকেটেই আছে। সেটা দিয়ে ওর পা টা বেধে দিলাম। মেয়েটা আস্তে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করল। হ্যা একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে পারছে। মেয়েটা সামনের দিকে হাটতে শুরু করল একটা কথাও বলল না। মেয়েটা হাটতে হাটতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আমি সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম। কেমন মেয়েরে বাবা একটা বার থ্যাংকস দেয়ার প্রয়োজন মনে করল না।


যাই হোক সেদিনের মতো সেখান থেকে চলে আসছিলাম। কিন্তু বিপত্তি ঘটল রাতে। যাই করি না কেন মেয়েটার মুখ শুধু সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মেয়েটার কান্নারত চেহারা, ব্যাথায় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রাখা চেহারা, তিরতির করে কাপা ঠোঁট সব কিছু বারবার মস্তিষ্কে ঘুরতে লাগল। রাতের মতো ঘুম হারাম হলো। কতক্ষণ মনকে বোঝালাম এমন একটা গেয়ো মেয়ের প্রেমে তুই কিভাবে পরিস আয়ান। মেয়েটা সামন্য মেনার্স জানেনা তার প্রেমে কীভাবে। এটা কি আধৌ প্রেম।
আমার সাথে কি হচ্ছিল আমি বুজতে পারছিলাম না। কোন মতে রাতটুকু পার করলাম। সকালে নাস্তা করে আবার হাটার নাম করে বের হলাম। মনটা কেমন যেন মানাতে পারছিলাম না। আমার মন বলছিল আমি ওই মেয়ের দেখা পাব আবারও।
যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। মেয়টা ওই রাস্তা দিয়েই কলেজে যাচ্ছিল দেখা হয়ে গেল। কিন্তু মেয়েটার ফেস দেখে মনে হলো বেশ ভয় পেয়েছে।
আমি তো ওকে কিছু বলিনি তাও ভয় কেন পাচ্ছে মেয়েটা বুজলাম না। কিছু বলতে পারিনি সেদিন। বাসায় ফিরে আসলাম। বাসায় এসে আমার ফ্রেন্ড নবীনকে সব খুলে বললাম। কিন্তু ও যা এন্সার দিল তাতে চমকে গেলাম আমি। ও বলেছিল যে
- দোস্ত তুই ভুল দিকে নজর দিয়ে ফেলছিস। এই মেয়ে যেই সেই মেয়ে না। এই মেয়ে কা'টাযুক্ত গোলাপের ন্যায়।
- মানে।
- এই মেয়ের উপর এলাকার এক বখাটের কুনজর পড়েছে। এই মেয়ের দিকে কেউ হাত বাড়ালে তার হাত পা আস্ত রাখেনা। গুন্ডা টাইপ একটা ছেলের কু নজর পড়েছে।
- তুই বলতে চাইছিস এই মেয়েকে পছন্দ করার অপরাধে আমাকেও শাস্তি দিবে।
- জানতে পারলে দিতেও পারে।
- তুই যখন বলছিস তো ট্রাই করে দেখি কি হয় আমার।
- এই ভুল করিস না বলে দিলাম।
এরপর আরো দুই তিনবার মেয়েটার সামনে পড়েছি। কিন্তু মেয়েটা সব সময় আমাকে দেখে পালিয়ে যেত।
তারপর একদিন মেয়েটার সামনে গিয়ে বললাম আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
- দেখুন অপরিচিত কারো সাথে আমি কথা বলতে চাই না।
- কথা বলে পরিচিত তো হতেই পারি।
- তার কোনো প্রয়োজন আমি দেখছি না। আপনি আমার সাথে কথা বইলেন না প্লিজ। এটাই ভালো হয়।
- কারনটা কি জানতে পারি।
- এতে আপনারই ক্ষতি হবে।
- কেউ আমার কিছু করতে পারবে না। তুমি ভয় পেও না। তুমি কি ওই ছেলেটাকে পছন্দ কর।
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে না বোঝাল। অর্থাৎ সে শুধু ছেলেটাকে ভয়ই পায়।
এরপর আস্তে আস্তে মেয়েটা আমার সাথে একটু একটু করে ফ্রি হতে শুরু করে। আমার সেখানে আর বেশিদিন থাকা হয়নি। ভ্যাকেশন শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি আবার ঢাকা ব্যাক করেছিলাম। কিন্তু আসার সময় তার ফোন নাম্বারটা সংগ্রহ করে এনেছিলাম।
তারপর থেকে তার সাথে টুকটাক কথা হতো। একসময় অনেক ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সেটা হাইড ছিল। সেই গুন্ডা ছেলেটা ততদিন টের পায় নাই কিছুই।
এরপর হঠাৎ একদিন তার ফোন থেকে কোনো মেসেজ আসল না। এমন তো হয়না। প্রতিদিন সকালে অন্তত গুড মর্নিং তো বলে। আমি ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। অনেক বার ট্রাই করলাম কিন্তু কাজ হলো না। আমি পরের দিন অবধি অপেক্ষা করলাম কিন্তু কোনো ফোন আসল না।
অবশেষে আমি রবিনকে বললাম। ওকে সাথে নিয়েই আবার ওদের গ্রামে গেলাম। সেখানে গিয়ে খুজলাম। কিন্তু সিরাত আর ওর মা বাসায় নেই। একদিন যাবত নাকি তাদের ঘর এমন তালাবদ্ধ। তারা কোথায় গেছে কি করেছে তাদের সাথে কি হয়েছে এগুলা নাকি কেউই জানেনা। অনেক খুজলাম আমি সিরাতকে কিন্তু কোথাও পেলাম না। এই কয়েক মাসে ওর উপর অনেক মায়া জন্মে গিয়েছিল। বলতে পার আমি ওর মায়ায় আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। অনেক খুজেছি কিন্তু সিরাতকে আমি কোথাও পেলাম না। হাল ছেড়ে দেইনি আমি। এখনো মনে মনে সিরাতকেই খুজি বলতে পার। আম্মু এর মধ্যে অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে বিয়ে করানোর জন্য। কিন্তু সেসব কথা শুনলেই আমার সিরাত এর মুখটা সামনে ভেসে উঠত। তাই আজও বিয়ের পিরিতে বসা হয়ে ওঠেনি।
এতটুক বলে থামে আয়ান। এরপর আবার বলে
সেদিন যখন তোমাকে দেখলাম আমি যে খুশি হয়েছি তোমাকে আমি বোঝাতে পারব না। তুমি জানো আমি কতগুলো বছর যাবত তোমাকে আমি খুজতেছি আর এত বছর পর তোমাকে পেলাম। এখন তুমি বলতেছ তোমার কিছুই মনে নেই। আমি এতক্ষণ যাবত যা কিছু বললাম তোমার কিছুই মনে নেই।
- স্যার আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি সিরাত না আর না কখনো আমি গ্রামে থাকতাম কিভাবে কি।
- কি বলছ তুমি। তাহলে এত মিল কীভাবে সম্ভব।
- আমার মনে হচ্ছে আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি একটু আমার আম্মুর সাথে কথা বলে দেখতে চাই।
- আমি তোমার আম্মুর সাথে দেখা করতে চাই।
- কি বলছেন আপনি এসব। আপনি যাবেন আমার সাথে।
- হ্যা। আর এখনি যাব।
আয়ান আদিয়ার সাথে অফিস থেকে বের হয়। যাওয়ার আগে আয়ান ওর পিএ নাজিয়াকে বলে যায় এদিকটা সামলাতে। আয়ান আদিয়ার সাথে যাচ্ছে ব্যাপারটা ওর পিএ এর মোটেও সহ্য হচ্ছে না। বেশ হিংসা হচ্ছে আদিয়ার উপর। মেয়েটা নতুন এসেই বসকে হাত করে নিল যাদু জানে নাকি মেয়েটা এসব ভাবতে লাগল।
ওরা বেড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আকাশ ফোন দিয়ে সায়নকে জানায়।
আদিয়া সায়নের সাথে বেরিয়েছে শুনে মাথায় রক্ত উঠে যায় সায়নের। এই মেয়ে পাইছেটা কি। আর কত। এবার একটা হেস্তনেস্ত করবেই। তাই সায়নও গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
আদিয়া আর আয়ান আসে আদিয়াদের বাসায়। দরজা খুলে বেশ অবাক হয় জায়েদা বেগম। এই ছেলে কে। একে তো তিনি কখনো আদিয়ার সাথে দেখেননি। তবে কি আদিয়া আবারও ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। মায়ের মন আগেই কু ডাকতে শুরু করেছে।
- কি হলো আম্মু ভিতরে ঢুকতে দাও।
- আদিয়া
- আম্মু এটা আমার নতুন অফিসের বস। কিছু জটিলতার মধ্যে পড়ে তোমার কাছে এসেছে সমাধানের জন্য।
এরপর আয়ান সালাম দেয় তাকে। জায়েদা বেগম সালামের জবাব দিয়ে ভিতরে নিয়ে আসেন তাদের। তিনি কিচেনে যেতে চাইলে আটকে দেয় আয়ান। বলে আন্টি আমি এখানে বসতে আসিনি। অফিস আওয়ার এখন। আমাদের আবার ব্যাক করতে হবে।।
তারপর জায়েদা বেগম বসেন ওদের সাথে। তারপর আদিয়াই প্রশ্ন তোলে।
- আম্মু সিরাত কে? কি তার পরিচয়? আমার সাথেই বা সম্পর্ক কি?
মেয়ের কথায় চুপ করে থাকেন জায়েদা বেগম।
- আম্মু এভাবে মৌন হয়ে থেকনা। আমি জানি তুমি জানো। সিরাত নামটা শুনলেই তুমি কেমন চুপসে যেতা। আমার ধারণা তুমি জানো। প্লিজ বলো আম্মু।
- হ্যা আন্টি বলেন প্লিজ।
জায়েদা বেগম এখন আর ভনিতা না করে বলেই দেন সত্যিটা।
- সিরাত হচ্ছে আদিয়ার জমজ বোন। আমার আরেকটা পুতুল ছিল সিরাত। আমার ছোট্ট পুতুলটা আমার কাছে নেই। চলে গেছে আমার সাথে রাগ করে। কোথায় গিয়েছে আমি জানিনা। অনেক খুজেছি ওকে কিন্তু কোথাও পেলাম না।

গল্প: তোর মায়ায় আসক্ত

লেখনীতে: নীহারিকা নুর
#পর্ব_১৪

Post a Comment

0 Comments