ঘটনাটা ঘটেছে এইরকম। মৃণাল তার ছোট বোন মৃধাকে ভয় দেখাতে বন্ধুদের নিয়ে একটা নাটক সাজায়। মিথ্যে অপহরণ। মৃণাল তখন মুম্বাইয়ের কলেজে থেকে পাস করে বেড়িয়েছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার তখন আরও কিছু সময় বাকি। নিজের বোনের মিথ্যে অপহরণে সে বেশ উৎসাহ নিয়ে সলাপরামর্শ করে এক বন্ধুর সাথে।
—মৃধার জন্মদিনে ওকে চমক দিতেই মূলত তার এই আয়োজন। মৃণাল তার কলেজের বন্ধুদের সাথে নিয়ে প্লান করে কীভাবে কখন তারা মৃধাকে অপহরণ করবে। কিন্তু সেই বন্ধুদের ভেতরেই যে বন্ধু তাকে প্রথম এই আইডিটা দিয়েছিল। তার পেশায় ছিল নারী পাচার।টাকার লোভে পাচারকারীদের সাথে সে কাজ করত। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সে মৃধাকে অপহরণ করে। মৃণাল অনেক চেষ্টা করার পরেও সেই ছেলেটিকে আর খুঁজে পায়নি।
—বাড়িত যখন মৃধার অপহরণ নিয়ে পুলিশ তখন মৃণাল ভয়ে সব কিছুই চেপে যায়। সে যদি সেই দিন সত্যি টা সবাইকে বলত হয়তো বেচারি মৃধাকে উদ্ধার করা যেত। এর পরে ডক্টর মৃণাল আরও একটি ভুল করে। ভুল বলা চলে না তারপরেও এখন যেহেতু অনুতপ্ত তাই ভুলই বলব।
—দুর্গাপূজার ছুটিতে কলকাতায় ফিরে আসে মৃণাল। এলাকার এক বন্ধুর সাথে নেশায় মত্ত হয়ে সে যায় সোনাগাছীতে। আর সেখানেই মৃণাল এর দেখা হয় অপরার সাথে। সোনাগাছীতে অনেকেই মৃধার দাদা মৃণাল এর ছবি দেখেছিল। অপরা মৃণালকে চিনতে পেরে মৃধার ব্যাপারে সব খুলে বলে।
—অপরা যখন মৃধাকে জানায় তার দাদা এসেছে। সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে যায় মৃণাল এর কাছে। কিন্তু মৃণাল ততক্ষণে ভয়ে সেখানে থেকে পালিয়ে যায়। তার কিছুদিন পরেই মৃধাকে বিদেশে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
—মৃণাল এখন তার মায়ের জন্য বোন'কে খুঁজে বেড় করতে চায়। নিজের পাপের শাস্তি সে প্রতিনিয়ত তিলেতিলে পাচ্ছে। অপরার ট্রিটমেন্ট এর সময় ওকে চিনতে পারে ডক্টর মৃণাল। আমাকে অপরার ক্লোজ দেখেই সে আমার কাছাকাছি আসে। আমার সব কাজে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যেই হলো আমার মাধ্যমে সে খুঁজে পেতে চায় মৃধাকে। রণকের দিকে তাকিয়ে অরুনিকা বলল,এবার সবটা বুঝেছ নাকি আরও কিছু বোঝার বাকি আছে?
—হুম সব বুঝলাম কিন্তু তোমরা মেয়েটাকে খুঁজতে যাচ্ছ কোথায়?
—কোরিয়াতে যাচ্ছি। খবর পেয়েছি সেখানেই নাকি মৃধা আছে।
—তাহলে আমিও তোমার সাথেই যাব। তোমাকে একা কোথাও যেতে দিতে পারিনা।
—রণকের কথায় হেসে ফেলে অরুনিকা। হাসি থামিয়ে সে বলল, আমাকে নিয়ে ভয় পাওয়ার মতো কিছুই নেই।
—রণক বলল। কে বলছে নেই? জীবনের ভয় আছে। মরতে মরতে বেঁচে গেছ তুমি। আমরা তো ধরেই নিয়ে ছিলাম তুমি আর বেঁচে নেই। আমি তোমাকে একা ছাড়বার দ্বিতীয় ভুল আর করবো না। যেখানেই যাব এক সাথেই যাব।
—রণকে জড়িয়ে ধরে অরুনিকা। হটাৎ করেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে।
—রণক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। তুমি কাঁদছ কেন অরু?
—আমাকে এতো ভালোবাসা দিও না গো। আমার কপালে যে ভালোবাসা সয় না। আমার কাছে যে আসে তার ক্ষতি আগে হয়। দেখলে না তপনের মৃত্যু কীভাবে হলো।
—তুমি কী তপনকে
—রণকের কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই অরুনিকা বলল। না আমি উনাকে কখনো ভালোবাসিনি। তবে উনার ভালোবাসার কাছে হার মেনেছি। একটা মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সম্মান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হলো কই!
****
বিকাল চারটে বাজে। রণকের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে অরুনিকা। হটাৎ ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে যায় অরুনিকার। ফোন হাতে নিতে নিতেই কেটে গেল কল। আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। কে ফোন দিতে পারে এই ভাবতে ভাবতেই ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসল।
—মেসেজ টা পড়তেই চিৎকার দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় অরুনিকা। ওর এমন চিৎকারে রণকের ঘুম ভেঙে যায়। ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল। কী হয়েছে অরু? কী হয়েছে?
—অরুনিকার চোখ বেয়ে জল পড়ছে টপটপ করে। সে বিড়বিড় করে বলে আমার আভার কিছু হতে পারে না।
—কি হয়েছে অরু আমাকে বলো। রণকের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন এগিয়ে দেয় অরুনিকা। ফোন হাতে দিতে দিতে আবারও বিড়বিড় করে বলল, আমার আভার কিছুই হতেই পারে না।
—ফোন হাতে নিয়ে দেখল আননোন মেসেজ। মেসেজ টা পড়তেই পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায় রণক।
মেসেজ টা ছিল আভার অপহরণের। মেসেজে যা লেখা ছিল-
মিস অরুনিকা গঙ্গোপাধ্যায় কেমন কাটছে দিনকাল আপনার? অন্যের বোনের খোঁজে মশগুল আছেন। নিজের টারও তো একটু খোঁজ খবর নিতে পারেন। সে যাইহোক, খবর যখন নেননি তখন বাধ্য হয়ে খবরটা দিচ্ছি। মৃধার খোঁজ বন্ধ করুন নইত খুব শিঘ্রই মৃধার জায়গায় আভার স্থান হবে।
—কলিং বেল বাজছে। রণক তাড়াতাড়ি কাপড় পড়ে টেনশনের মাথায় দরজা খুলতে গিয়ে আবার ফিরে এসে
অরুনিকার হাতে কাপড় দিয়ে বাথরুমে ঢুকে দেয়।
কলিং বেলের আওয়াজে বিরক্ত হয়ে দরজা খুলেই রণক চেঁচিয়ে উঠল। সমস্যা কি একবার কলিং বেল দিয়ে অপেক্ষা করা যায় না?
—রণকের এমন ব্যবহারে মৃণাল অবাক হয়ে যায়। অরুনিকা কপড় পড়ে বেড়িয়ে এসেছে। রণকের দিকে তাকিয়ে বলল। অযথা ওই বেচারার উপর চেঁচিয়ে লাভ কী?
—রণক আর মৃণাল বাড়ির ভেতর বসে আছে গত দু-ঘন্টা যাবত। পুলিশের কাছে যেতে চাইলে অরুনিকা আটকায়। কারণ সে খুব ভালো করেই জানে। কলকাতার পুলিশের কাছে গিয়ে কোন লাভ হবে না। অপহরণ হয়েছে চীনে ভারত থেকে তার ব্যবস্থা নিতে গেলে যে সময়ের প্রয়োজন। সেই সময় অরুনিকার কাছে নেই। অনেকক্ষণ ধরেই ফোন হাতে নিয়ে সে ঘরের এই মাথা থেকে ওমাথা পায়চারি করছে।
—হটাৎ পায়চারি থামিয়ে রণকের দিকে তাকিয়ে বলল। রণক সর্বনাশ হয়েছে। আমাদের হাতে সময় একদম নেই। আভাকে চীনের দক্ষিণাঞ্চলে রাখা হয়েছে।
—মৃণাল আৎকে উঠে বলল। চীনের দক্ষিনাঞ্চলে ডোংগুয়ানকে তো বলা হয় ‘চীনের পাপের শহর।
—হ্যা, একদম ঠিক বলেছেন আপনি। সেখানকার কেটিভ নামের কারাও বিনোদন কেন্দ্রটিই হলো পতিতালয়। আভার কোরিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল। যখন এই মেসেজ দেখলাম দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছে। তাই আমার সোর্সের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি এখন ডোংগুয়ানেট কারাও তে আভা আর মৃধা একই সাথেই আছে।
—আমি তাহলে এখনি যাওয়ার ব্যবস্থা করি। রণকের দিকে তাকিয়ে মৃণাল বলল। আপনিও তো যাবেন তাইনা?
—রণকের কিছু বলার আগেই অরুনিকা বলল। না রণক এখানেই থাকবে। দিপেশ আর ওর মায়ের সাথে বোঝাপড়াটা ওকেই করতে হবে।
—তোমার কি মাথা ঠিক আছে অরু? আভা আর তোমাকে এই বিপদে একা ছাড়বার প্রশ্নই ওঠে না। আমি যাবো তোমাদের সাথে। দিপেশ আর মায়ের ব্যাপারটা আমি পড়ে এসেও দেখতে পারবো। না রণক তুমি যতটা সহজ ভাবে দেখছ ততোটাও সহজ না। তোমার অতীত তোমার জানতেই হবে।
আভার কোন ক্ষতি আমি হতে দিব না। এই নিয়ে তুমি টেনশন করো না। আমার বোনকে আমি আমার মতো অন্ধকারে হারিয়ে যেতে দিব না। এই লাইনে আছি বহু বছর হয়ে গেছে। দেশ-বিদেশে আমার অনেক সোর্স আছে। ওদের খুঁজে বেড় করতে খুব একটা অসুবিধা হবে না।
—রাত দু'টা বাজে। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও মৃণাল এর সাথে অরুনিকাকে চীনের ফ্লাইটে তুলে দিয়ে রণক যাচ্ছে মৃণাল এর বাড়িতে দিপেশের কাছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিপেশকে থানায় দিয়ে মায়ের সাথে কথা বলে সব সত্য জানতে হবে। এরপর সে যাবে অরুনিকার কাছে। কোন ভাবেই ওদের এই বিপদে একা ছাড়া যাবে না। বলা যাইনা গতবারের মতো যদি কিছু হয়।
—ভাবতে ভাবতে ট্যাক্সি এসে থামল মৃণাল এর বাড়ির সামনে। ভাড়া চুকিয়ে দরজা কাছে গিয়ে চাবি বেড় করে দরজায় হাত দিতেই অবাক হয়ে গেলে রণক। দরজা আগে থেকেই খোলা ছিল। কিন্তু তার তো স্পষ্ট মনে আছে। মৃণাল চাবি দিয়ে তাকে বলেছিল দরজা তালা দেওয়া আছে।
ফ্লাইট থেকে নেমে চীনের দক্ষিনাঞ্চল পাপের শহরে পৌঁছাবার আগেই অরুনিকা'কে অপহরণ করা হয়। ডোংগুয়ানের কেটিভের পেছনে গাড়ির ভেতর অচেতন অবস্থায় অরুনিকা'কে দেখে চিৎকার করে একজন টুপি পড়া লোক ব'লে ওঠে। ছেলেটা কোথায়? ওরা দুজন এক সাথে চীনে এসেছে।
—গাড়ির ড্রাইভার জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নত করে বলল, স্যার আপনার লোকেরা শুধু উনাকে একাই ফ্লাইট থেকে নামতে দেখেছে। আমাকে যা বলা হয়েছিল।আমি তাই করেছি।কৌশলে অন্য কোন গাড়িতে উঠতে না দিয়ে আমার গাড়িতে চড়িয়ে অজ্ঞান করে এখানে নিয়ে এসেছি। আমি কোন ছেলেকেই দেখিনি। বিশ্বাস করুন।
—চিন্তিত মুখে মাথায় হাত দিয়ে টুপি ঠিক করতে করতে লোকটি পাশের একজনকে চোখের ঈশারায় ডাক দিল। কাছে আসতেই কানে ফিসফিস করে কি যেন বলেই চলে গেল টুপি পড়া লোকটি। অন্য আর একজন লোক ক্রুদ্ধ স্বরে চেঁচিয়ে বলল। এই মেয়েটিকে ভেতর নিয়ে যাও। ড্রাইভার ভয়ে ভয়ে ছিল এই বুঝি তার মিথ্যা ধরা পড়ে, তাকেও পাকড়াও করে।
পালোয়ানের মতো শরীরের এক লোক অরুনিকাকে কোলে তুলে কেটিভ এর ভেতরে ঢুকে। বাইর থেকে কিছুই দেখা যায় না। ড্রাইভার মাথা উঁচিয়ে কিছুটা দেখার চেষ্টা করে কিন্তু দেখতে পায় না। তার কাজের পারিশ্রমিক দিয়ে তাকে বিদায় করে দেওয়া হয়। এই প্রথম ড্রাইভার এক কাজের জন্য ডাবল পেমেন্ট পেয়েছে। এই ড্রাইভারের কাজই হলো মেয়েদের অচেতন করে তুলে এনে কেটিভ এর পেছনে দারোয়ানের পোষাক পড়া দুই লোকের হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু তাই বলে সব মেয়েকে তুলে নিয়ে আসে না। তাকে ঠিক যে মেয়ের ছবি দেওয়া হয়৷ ঠিক সেই মেয়েকেই তুলে আনা তার কাজ। এই কাজ করে তাকে ৫০ আরএমবি দেওয়া হয়৷ কিন্তু আজ সে দুইশো আরএমবি পেয়েছে অরুনিকাকে অপহরণ করে।
—ড্রাইভার ডোংগুয়ানের বাইর এরিয়া তে এসে গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নামতেই দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছেলে কাছে এগিয়ে আসে। কাছে এসেই জিজ্ঞেস করলো, ঠিকঠাক মতো নামিয়ে দিয়েছেন তো?
—জি, ঠিকঠাক মতোই নামিয়ে দিয়েছি৷ কিন্তু বোকামি করলেন। একবার ডোংগুয়ান এলাকায় কেউ ঢুকলে সে বেড়িয়ে আসতে পারে না। আর ওই ম্যাডাম তো স্ব ইচ্ছেই কেটিভ এর ভেতরে যেতে আমাকে দেড়শ আরএমবি দিল। মানে ব্যাপারটা ঠিক এই রকম।নিজেই খাল কেটে কুমিরের আড্ডায় ঢোকা।
—আপনি অতিরিক্ত কথা বলছেন। কাজ হয়ে গেছে এখন পরের কাজটা করুন।
—ড্রাইভার দাঁত বেড় করে হাতের তালু চুলকাতে চুলকাতে বলল।পরের কাজের জন্য যদি আরও বিশ আরএমবি পাওয়া যেত তাহলে কাজটা আরও সহজ হতো।
—লোকটি বিরক্ত হয়ে পকেট থেকে বিশ আরএমমি বেড় করে দিল।
—টাকা হাতে পেতেই ড্রাইভার পকেট থেকে একটা সাদা ফিতা বেড় করে লোকটির হাতে দিল। আর বলল, এই ফিতা কেটিভে তখনই দেখাবেন যখন আপনাকে স্পেশাল ড্রিংকস দিতে আসবে। সাদা ফিতাটি ডান হাতে বাঁধবেন। স্পেশাল ড্রিংকস টেবিলে রাখার সাথে সাথে ডান হাত টেবিলে রেখে দুইবার টোকা দিবেন। আপনার কাজ হ'য়ে যাবে।
******
—মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কোন মতো উঠে দাঁড়াতে নিয়ে পড়ে যায় অরুনিকা। বিড়বিড় করে ড্রাইভারটাক গালি দেয়। হারামজাদাক বলছিলাম হালকা ডোজ দিয়ে অচেতন করবি। এতো স্ট্রং ডোজ দিছে যে মাথাই তুলতে পাচ্ছি না।
অনেকটা সময় লাগে অরুনিকার স্বাভাবিক হতে। ছোট্ট একটা কয়েদখানা মতো ঘর। ভেতরে সিঙ্গেল বেড পাশে জগ আর গ্লাস। বেড থেকে নেমে জগ মুখে ঢকঢক করে পানি পান করে অরুনিকা। এখন অব্দি তাদের প্লান ঠিকঠাক কাজ করছে। এই ভাবে যদি সামনের প্লান গুলো ঠিকঠাক কাজ করে তাহলে আভাকে নিয়ে এক দিনেই এই পাপের শহর থেকে বেড় হওয়া যাবে। অরুনিকার প্লান অনুযায়ী তার থেকে মৃণাল আলাদা হয়ে বাইরে আছে । যাতে একজন বিপদে পড়লে অন্য জন বাঁচাতে পারে।
—মৃণাল ডোংগুয়ানে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেল। এটা কি করে পাপের শহর হতে পারে! বাকি শহর আর ডোংগুয়ানের ভেতর কোন পার্থক্যই খুঁজে সে পেল না।জনবহুল এলাকা। লেকের সাইডে সারি করা সব আবাসিক হোটেল। হোটেল গুলো সব মনোমুগ্ধকর। তিনদিকে সারি সারি ঘর মাঝখানে উঠোন। হোটেল গুলো বেশির ভাগই কাঠের তৈরি। লেকের উপর রয়েছে ছোট্ট ছোট্ট ব্রিজ। মৃণাল হাঁটতে হাঁটতে কেটিভ খুঁজতে লাগলো। একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালো। সামনেই বড় ব্যানার টাঙানো। ব্যানারে লেখা ছিল কেটিভ শহরে স্বাগতম। কেটিভ ছিল একটি জনবহুল শহর। কেটিভের ঘরবাড়ি, দোকানপাট বেশ মনোমুগ্ধকর ছিলো। সব কিছুই সাজানো গোছানো। একটা হোটেলের নামও কেটিভ৷ এই হোটেলটির খোঁজই সে করছিল। দোতলা হোটেল চারিদিকে সারি সারি ঘর মাঝখানে উঠোন। উঠোনে চেরি ফুল আর টুপি ফুলের সারি করা গাছ। কি সুন্দরই না সেই দৃশ্য। এমন সুন্দর পরিবেশের পেছনে কি না গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা। যাবতীয় খারাপ কাজের সাথে জড়িত ডোংগুয়ানের এই কেটিভ।
*****
রণক পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও দিপেশের সন্ধান সে পায়নি। বাধ্য হয়ে সে দিলাত্রি সেন এর কাছে যায়। এত কিছুর পেছনের আসল কাহিনী কি তা যে করেই হোক আজ জানতেই হবে।
—দিলাত্রী সেন যেন জানতেন যে কিছুক্ষণের মধ্যেই রণক আসবে। তাই দোতলায় বারান্দায় সব আয়োজন করেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। বাড়িতে পা রাখতেই দোতলা বারান্দা থেকে উচ্চ স্বরে দিলাত্রি সেন বললেন। উপরে আয় বাবা। আমি এখানে।
—রণককে ডাক দিয়ে চোখ বুজে ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন দিলাত্রি সেন। ছেলের প্রতি যে উনি ক্রুদ্ধ তা মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। বিমলা এসে চা দিয়ে গেছে। মুখোমুখি মা আর ছেলে অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। চায়ের ভাপ উড়ে উড়ে হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ চায়ের কাপে হাতে তুলে নিল না। অবশেষে দিলাত্রি সেন বললেন। কি খবর রণক! শুনলাম আজকাল তুই বেশ্যা মেয়েটির সাথে সময় বেশি কাটাচ্ছিস।
—অবাক দৃষ্টিতে রণক তাকাল তার মায়ের দিকে। সে অরুনিকার সাথে সময় কাটাচ্ছে তা তার মা কীভাবে জানল! কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করল, মা তুমি কীভাবে জানলে ?
—প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঘুরিয়ে দিলাত্রি সেন বললেন।তোর বাবা মারা গেছে সেই শোকের ছাপ তোর উপর পড়েনি তা স্পষ্ট। স্বামী হারা এই বিধবা মা'কে নিয়েও যে খুব একটা চিন্তা করিস তা মনে হয় না। কিন্তু আমি মা।স্বামী হারিয়েছি সেই শোকে কাতর অবস্থাতেও সন্তানের কথা চিন্তা করাই মায়ের মমতা।
—মা আজ তুমি একটু বেশি কথা ঘুরিয়ে বলছ। বাবা মারা গেছে সেই শোক আমারাও আছে। কিন্তু তাই বলে তো সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখেও না দেখার ভান করে বসে থাকতে পারিনা।
—কি এমন ঘটেছে তোর সামনে? আমার জানা মতে বেশ্যা মেয়ে সাথে শুয়া ছাড়া তোর জীবনের অন্য কোন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না।
—মেয়েটার একটা নাম আছে মা। তুমি নাম ধরেও তো সম্বোধন করতে পারো। ভাষা খারাপ করে সম্বোধন করার প্রয়োজন দেখছি না।
—কিসে প্রয়োজন আছে, আর কিসে নেই। সেই জ্ঞান যদি তোর আর তোর বাপের থাকত। তাহলে আজ সংসার টা আলাদা হতো। দিনদিন বাপের চলা পথেই যে চলেছিস সে খেয়াল কখনো করেছিস?
—সে খেয়াল করার প্রয়োজন নেই। বাপের মতো ভোগ করতে আমি কোন মেয়ের সংস্পর্শে যাইনি। ভালোবাসি অরুনিকাকে। বিয়ে করব আমি ওকে। তার আগে আমি জানতে চাই তুমি এত কিছু জান কী করে? আর তারও আগে বলো দিপেশ কোথায়? আগেই বলছি সহজ প্রশ্নের উত্তর ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে না মা। আমি এখনো তোমাকেই বিশ্বাস করি তাই পুলিশে খবর না দিয়ে। মা ছেলেতে খোলামেলা কথা বলতে এসেছি।
—আমি ঘুরিয়ে উত্তর দিব না। যে ছেলে মায়ের থেকেও একটা বেশ্যা মেয়ের কথার প্রাধান্য দেয় বেশি। সেই ছেলের সাথে ঘুরিয়ে কথা বলবে না এই দিলাত্রি সেন। যার জন্য করি চুরি সেই যখন বলে চোর।তখন আর লুকোচুরি না৷ যা হবে ওপেনই হবে এই বলেই আঁচল এর নিচ থেকে রিভলবার বেড় করে টেবিলের উপর রাখে দিলাত্রি সেন।
নিষিদ্ধ নারী (প্রেম কাহিনী) প্রাপ্তমনস্কদের জন্য
----------------------------------------------------------------------
রণকের সামনে টেবিলে রাখা রিভলবার। টেবিলের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুদর্শনা নারী অতিক্ষা রায়। অতিক্ষা রায়ের মুখ শুকিয়ে গেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি নিজ ইচ্ছেই এখানে দাঁড়িয়ে নেই। তাকেও জোর করেই দাঁড়িয়ে রাখা হয়েছে।
টেবিলের অন্যপাশে হাঁটু গেড়ে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় বসে আছে দিপেশ।ওর পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে দিলাত্রী সেনের দুই দেহরক্ষী।
নিশ্চয়ই সারারাত দিপেশকে পেটানো হয়েছে। দিপেশের দিকে তাকাতেই রণকের চোখ ছলছল করে উঠে। এক সময় যে দিপেশ নিজ হাতে তার বোন ঊষাকে খুন করেছে আজ সেই দিপেশের জন্য রণকের কষ্ট হচ্ছে। ও যে রণকের বড় দাদা। নিজের দাদার এমন পরিণতিতে কষ্ট হবারই কথা।
—রণকের দিকে তাকিয়ে দিলাত্রী সেন বললেন। তোর সামনে দুটো চয়েস আছে। অতিক্ষার সাথে নিয়ম মেনে বিয়ের পিঁড়িতে বস আর না হয় দিপেশের মৃত্যু স্বচক্ষে দেখ।সেই সাথে খুনের দোষ নিজ ঘাড়ে নিয়ে জেলে গিয়ে বাকী জীবন অতিবাহিত কর।
— পকেট থেকে ফোন বেড় করতে করতে রণক বলল তোমার মতিভ্রম হয়েছে মা। নিজের ছেলের সাথেও চক্রান্ত করতে পিছপা হলে না। আমি তোমার কোন শর্তে রাজি হব না। আর না দিপেশের কোন ক্ষতি হতে দিব।
—মতিভ্রম আমার না রণক তোর হয়েছে। রিভলবার আমার হাতে। দিপেশ আমার সামনে বসে আছে আর তুই খালি হাতে আমাকে বলছিস।আমার শর্তে রাজি হবি না? তোকে আর একবারই শুধু বলব এরপরও তোর সিদ্ধান্তের উপর টিকে থাকবে দিপেশের জীবন-মৃত্যু।
—তুমি ভুল বলছ মা আমি খালি হাতে আছি ঠিকই কিন্তু পুলিশ তো আর খালি হাতে থাকবে না । তোমার পাপের ঘর পূর্ণ হয়েছে মা।
—রণকের কথা শুনে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে দিলাত্রী সেন। হাতের ঈশারা বিমলাকে দিতেই খানিকক্ষণ পরেই সেখানে উপস্থিত হয় পুলিশ। দিলাত্রী সেন যেন ছেলের বোকামি দেখে হাসি থামাতে পারে না। কোন মতে হাসি থামিয়ে বললেন। আমার ছেলে হয়ে তুই এতো বোকা কি করে হইলি রে বাবা! তুই কোন বংশের ছেলে! তোর মা কোন বংশের মেয়ে।তুই কি সব ভুলে গেছিস? আমাদের ক্ষমতা কতটুকু এই সম্পর্কে কি তোর কোনোই ধারণা নেই? তোর বুদ্ধির দৌড় যেখানে শেষ সেখানেই আমার শুরুরে বাপ। থানা পুলিশে কিছুই হবে না । উপর মহলে হাত আছে আমার। একটা দুটা খুন কোন ব্যাপার আমার কাছে না। তোর বাপও ছিল বোকা তাই তো কিছুদিন আমার ইচ্ছেতেই জেলের অন্ন পেটে পড়েছে তার। এখন তুই যদি তেড়িবেড়ি করিস তাহলে তোরও একই অবস্থা হবে।
—নিজের মায়ের কুশলী দেখে রণক সত্যি অবাক হয়।তুমি কি করে কারো জীবন নিতে পারো মা?
—কেন নিতে পারিনা বলতে পারবি? যার ঘরে স্বামীর রক্ষিতার দুই সন্তান লালিত পালিত হয়েছে। রক্ষিতার মেয়ের সমকামী তে বংশের মুখে চুনকালি পড়েছে। যার স্বামী বংশের মানসম্মান রক্ষা করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। যার নিজের সন্তান এক বেশ্যার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। তার পক্ষে খুন করা খুব কি কঠিন? আর যাইহোক নিজের স্বামীর মতো ছেলের জীবন নষ্ট হতে দেখতে পারিনা আমি। তোর জীবন থেকে ওই বেশ্যা মেয়ের ইতি টানতে আমি এই দিপেশ এর প্রাণ ভিক্ষে দিতে পারি।
—কথা বলতে বলতে দিলাত্রী সেনের কন্ঠ নরম হয়ে আসে। রণকের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন। জীবন অনেক দীর্ঘ একটা সময়রে বাপ। মানুষ চাইলে সব কিছু করতে পারে না। সমাজে থেকে তো আর সমাজের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব না। বেশ্যারা হয় পুরুষদের মনোরঞ্জনের বস্তু। মনোরঞ্জনের নারী দিয়ে সংসার ধর্ম পালন করা যায় না। হিন্দু সমাজে বেশ্যার সাথে রাত্রি যাপনে কোন বাধা নেই। কিন্তু বেশ্যা নিয়ে সংসারে বাধা আছে। বেশ্যার সম্মান মানুষের হাতে নেই। ওটা শুধু ভগবানই দিতে পারে। তুই যে বেশ্যাকে পছন্দ করিস।সে যদি ভালো প্রকৃতির হয় তাহলে ভগবান ওকে উচ্চতর জীবনে পুনর্জন্ম দিবে। তুই নিজে কেন পাপ ঘাড়ে নিয়ে জগৎ সংসারের বানানো নিয়মের বাইরে যেতে চাস!আমার কথা শোন বাপ।তুই অতিক্ষাকে বিয়ে কর।আমি দিপেশ কে ছেড়ে দিব। আমার স্বামী এখন বেঁচে নেই তার পাপের বোঝা যদি তোর জন্য আমার বয়ে বেড়াতে হয় আমি তাতেও রাজি।
—রণকের কাছে তার মায়ের কথা সব মূল্যহীন মনে হয়। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিপেশ এর দিকে।আর মন! মন পড়ে আছে অরুনিকার কাছে। সে অরুনিকার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে। কখনো ছেড়ে যাবে না। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তার সম্মুখে রয়েছে, সে পেছন পা হবে কি করে! এখানে ধর্ম বা সমাজের কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এখানে মনুষ্যত্বের উপর প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অরুনিকাকে সে ভালোবাসে আর দিপেশের থেকে ঊষার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু নিজ কর্মের ফলে যে বেঁচে থাকতেই অনুতপ্ত তার থেকে কি আর প্রতিশোধ নিবে রণক? আর এখন তো দিপেশ তার বড় দাদা এই সত্য জানবার পড়ে কি করে তাকে মৃত্যুর মুখে রেখে চলে যেতে সে পারে!
— নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখনই দিলাত্রী সেন বললেন। তুমি যদি মনে করো এখন হ্যা বলে দিপেশ কে বাঁচিয়ে নিয়ে পড়ে ভূমেন্দ্র মতো দুই নৌকায় পা দিয়ে পথ চলবে। তাহলে আগেই সাবধান। তোমার ওই দুই পয়সার বেশ্যাকে মারা আমার বা হাতের খেল। ঠিক যে ভাবে ভূমেন্দ্র জীবন থেকে রমা কে সরিয়ে ছিলাম। রমার নাম কানে আসতেই মুখ তুলে তাকায় দিপেশ। দিপেশ কিছু বলার আগেই রণক ছানাবড়া চোখ করে বলল, তার মানে রমা কাকিয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না!
—দিলাত্রী সেন মুচকি হেসে বলল। আমার শরীরে প্রধানের গরম রক্ত বয়ে চলছে। এই সব খেলা আমার কাছে পুরাতনরে বাপ। তুই এতো সময় নষ্ট না করে ডিসিশন নে। বিয়ের আয়োজনের অনেক কাজ বাকি। দিলাত্রী সেন এমন ভাবে বললেন, যেন উনি আগে থেকেই জানতেন রণকের উত্তর 'হ্যা' হবে।
—অবশ্য হ্যা না বলে রণকের কাছে অন্য কোন খোলা পথও নেই। রণক যখন মুখ ফুটে হ্যা বলল। দিলাত্রী সেনের মুখে তখন জয়ের হাসি ফুটে ওঠে। কিন্তু রণকের কষ্টে যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে নেয়। সে যে সত্যি ভালোবাসে অরুনিকাকে। দিপেশের রক্তাত্ত শেষ নিঃশ্বাসের উপর তাদের ভালোবাসার ঘর রণক সাজাবে কি করে! তাই তো রণক হ্যা বলল, সে অতিক্ষার সাথে এই বিয়েতে রাজি।
—চেয়ার থেকে উঠে দিলাত্রী সেন পুলিশ অফিসারকে দূরে সরে নিয়ে গিয়ে কি বলল,তা শোনা গেল না। ফিরে এসে দিলাত্রী বললেন। দিপেশ থাকবে জেলে। রণকের সিদ্ধান্ত যতদিন অটুট থাকবে ততদিন জেলে দিপেশ জীবিত থাকবে। জেলে কোন অসুবিধে দিপেশের হবে না। ভিআইপি অবস্থায় জীবন যাপন করবে সে। পুলিশ দিপেশকে নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় পেছন ফিরে রণকের দিকে তাকিয়ে জীবন রক্ষার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল দিপেশ।
—বিমলাকে নতুন করে চা বানানোর অর্ডার দিয়ে ভেতরে চলে গেল দিলাত্রী সেন। জয়ের পর গরম এক কাপ চা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রণক মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। তার চোখের জল যেন আজ আর কোন বাঁধা মানে না। রণক যখন দুঃখে কষ্টে বিভোর হয়ে কাঁদছে তখন নরম কোমল একটা হাত তার কাঁধ স্পর্শ করল। মাথা তুলে দেখল অতিক্ষার চোখ ছাপিয়ে গাল বেয়ে জল নেমেছে। অতিক্ষা রণকের দূর সম্পর্কের মাসতুতো বোন। রণক খুব ভালো করেই জানে অতিক্ষা একজনকে ভালোবাসে।কিন্তু এখন সেই ভালোবাসা মূল্যহীন। বিয়ে তাদের দুজনের হবেই। দুজন মানুষের ভালোবাসার পথ আলাদা কিন্তু তারা রইবে এক সাথেই এই তাদের ভবিতব্য।
সন্ধ্যা নামতেই কেটিভ শহর রঙিন হয়ে উঠলো। দিনের চাইতে রাতে এই শহরে মানুষের ভিড় বেশি। প্রতিটা হোটেল লাল-নীল ফেইরিবল লাইটে আলোকিত। সব গুলো হোটেলে উপচে পড়া ভিড়। সব চাইতে বেশি ভিড় কেটিভ হোটেলে। টেবিল ফাঁকা নেই বললেই চলে। ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে গিয়ে কোনায় এক টেবিলে বসে পড়ে মৃণাল।পোষাকে ভিন্নতা আর নকল দাড়ি-গোঁফের আড়ালে মৃণালকে চেনা দায়। টেবিল বসে মাথার টুপি ঠিক করতে করতে ওয়েটারকে হাতের ঈশারায় ডাকল। সারাদিন নানান ব্যস্ততায় তার খাওয়া-দাওয়া করা হয়নি। তাই ওয়েটারকে ডেকে সে অর্ডার করে চৌ আর সুসী। কথায় আছে পেট শান্তি তো সব শান্তি। খালি পেটে যুদ্ধে তো আর নামা যায় না। তাই মৃণাল ভর পেট খেয়ে স্পেশাল ড্রিংকের অপেক্ষা করতে শুরু করে।
খানিকটা সময় পার হওয়ার পর এক ওয়েটার এসে স্পেশাল ড্রিংকের গ্লাস তার দিকে এগিয়ে দিল। মৃণাল ড্রাইভার এর কথা মতো সাদা ফিতা বাঁধা ডান হাত টেবিলে রেখে দুইবার টোকা দিল। চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ওয়েটার মৃণালকে ঈশারায় তাকে ফলো করতে বলে। মৃণাল উঠে দাঁড়িয়ে ওয়েটারকে ফলো করে।
—কেটিভ হোটেলের কিচেন দিয়ে সোজা নিচে সিঁড়ি নেমে গেছে। নিচে নামতেই মৃণালের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। উপরের চেয়েও নিচে বেশি জাঁকজমকপূর্ণ। কেটিভ হোটেলের নিচে পতিতালয়। ওয়েটার মৃণালকে রিসিপশন ডেস্কে দাঁড় করিয়ে দিয়ে চলে গেল। রিসিপশনের মেয়েটি মৃণালের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি সমকামী, বাইসেক্সুয়াল নাকি স্ট্রেট? আমরা সেই অনুযায়ী আপনাকে মেনু বুক দিব।
—আমতা আমতা করে মৃণাল বলল, স্ট্রেট।
—স্যার তাহলে আপনার কাকে লাগবে গার্ল মেনু বুক দেখে বাছাই করুন। এই বলে মৃণাল এর হাতে একটা মেনু বুক দেওয়া হয়। মৃণাল অবাক হয়ে যায়। এতো দিন রেস্টুরেন্টে খাবারের মেনু সে দেখেছে। কিন্তু এখানে মেয়েদের মেনু বুক রয়েছে। মৃণাল চিন্তা করল, সে যদি সমকামী বলত। তাহলে নিশ্চয়ই তাকে বয় মেনু বুক দেওয়া হতো। রিসিপশনের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মৃণাল হাসি মুখে মেনু বুকটির পাতা ওলটায়। মেনু বুকটিতে ইংলিশে সব লেখা। ইংলিশ লেখা দেখে বোঝা যাচ্ছে এই জায়গায় দেশ-বিদেশের পুরুষ মহিলারা আসে।
নারীর নগ্ন ছবি। ছবির পাশে নারীর নামের বদলে নাম্বার আর যৌনবিষয়ক তথ্য যেমন, চামড়ার রঙ এবং শারীরিক আকার,সাইজ ও যৌনমিলনে সময়-ব্যপ্তি এখানে তুলে ধারা হয়েছে। প্রথম নারীর পাশে লেখা। নাম্বার:এক
দেশ:মালেশিয়া
চামড়ার রঙ-সাদা
বডি:৩৪
সেক্স টাইম:৭-১৩ মিনিট
প্রাইজ:এক ঘন্টা-দুই হাজার আরএমবি। রিসিপশনের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মৃণাল জিজ্ঞেস করলো। এক রাতের ব্যবস্থা করা যায় না?
জি অবশ্যই ব্যবস্থা করা যাবে। আপনি যদি ভিআইপি রুম বুক করেন। তাহলে সারারাতের জন্য সেবা চালু করা হবে। আপনি আগে মেয়ে বাছাই করুন।
—মৃণাল মেনু বুকের একের পর এক পাতা ওলটায় নিজের দেশের মেয়ে পাওয়ার জন্য। কলকাতার মেয়ে হলে হতেও পারে মেয়েটি তাকে সাহায্য করবে। এই চিন্তা করে একের পর এক পাতা ওলটাতে ওলটাতে হটাৎ একটা নারীর ছবি দেখে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে চোখের কোন দিয়ে গড়িয়ে জল পড়ে।
রিসিপশনের মেয়েটি বলল, কি হয়েছে স্যার? এনিপ্রবলেম?
—মৃণাল চোখ মুছতে মুছতে বলল, চোখে কিছু পড়েছে। ওয়াশরুম কোন দিকে? মেয়েটি হাতের ঈশারায় অন্য আরও একটি মেয়েকে ডেকে ওয়াশরুম দেখাতে বলে।
মৃণাল ওয়াশরুমে এসেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। মেয়েটি যে আর কেউ নয় মৃণালের একমাত্র ছোট বোন মৃধা।নগ্ন মৃধার ছবি দেখে নিজকে সামলাতে পারে না মৃণাল। আজ তার জন্য মৃধার এই পরিণতি। মজার ছলে সে তার বোনের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। বাইরে থেকে মেয়েটি ডাক দিচ্ছে,স্যার হয়েছে?
কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে মৃণাল। রিসিপশনে এসে মৃণাল বলল, নাম্বার সাতান্ন।
—রিসিপশনের মেয়েটি বলল, আমি দুঃখিত স্যার। নাম্বার সাতান্ন অলরেডি বুক হয়ে গেছে।
—মৃণাল অস্থির হয়ে বলল, কিন্তু আমার ওই মেয়েকেই প্রয়োজন। রিসেপশনিস্ট আর মৃণালের কথার মাঝে পেছন থেকে এক লোক এসে বলল,কী সমস্যা রোজ? ভদ্রলোকের কি কাউকে পছন্দ হয়নি?
—পছন্দ হয়েছে স্যার কিন্তু নাম্বার সাতান্ন অলরেডি বুক হয়ে গেছে। ভিআইপি রুমে যে পাঁচটি মেয়ে পাঠানো হয়েছিল তাদের মধ্যে নাম্বার সাতান্ন আছে।
—লোকটি এবার মৃণালকে উদ্দেশ্য করে বলল। আমি আন্তরিক দুঃখিত স্যার। ভিআইপি বুকিং করা মেয়েদের অন্য কাউকে দেওয়ার নিয়ম নেই। আপনি নাম্বার সাতান্ন মেয়েটিকে আগামীকালের জন্য বুকিং করতে পারেন। আর আজকের জন্য অন্য কোন মেয়েকে নিতে পারেন। নতুন কয়েকটি মেয়ে এসেছে। তাদেরকে ট্রাই করতে পারেন। আপনার মেয়ে পছন্দ করতে হবে না। নতুনের মাঝে সবচেয়ে সেরা মেয়েটিকে আপনাকে দিব। আপনি শুধু ভিআইপি রুম বুক করেন।
—মৃণাল ভিআইপি রুম বুক করে। রুমে ঢুকার কিছুক্ষণ পরেই একটা মেয়েকে জবরদস্তি করে নিয়ে আসা হয় রুমে। রুমে মেয়েটিকে দিয়ে যাওয়ার সময় লোকটি মৃণালের কানে কানে বলল। একবারে নতুন মাল।এখনো কেউ টাচ করেনি। আপনার কপাল ভালো। এই বলে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে যায় লোকটি।
—মেয়েটির বয়স অল্প ভয়ে হাত-পা গুটিশুটি মেরে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে বাঙালি। মেয়েটির চোখ ফোলা, নিশ্চয়ই কাঁদতে কাঁদতে এই অবস্থা হয়েছে। এই অন্ধকারে যারা নতুন আসে তাদের প্রত্যেকেরই প্রথম রাত চোখের জলেই শুরু হয়। মেয়েটির চোখের জল নাকের জল এক হয়ে ঠোঁটে এসে জমছে। অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ার কারণে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির মুখ লাল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর হাতের কনুই দিয়ে মেয়েটি যখন মুখ মুছছে তখন মৃণালের কাছে মেয়েটিকে মায়াবী লাগলো।
—মেয়েটির সাথে কথা বলা উচিত। এই চিন্তা করে মৃণাল বিছানায় বসে বলল, আপনি কি বাঙালি?
—মেয়েটি কোন জবাব দিল না।
—আপনি ভয় পাবেন না। আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না।
—এবার মেয়েটি চোখ তুলে তাকাল। মেয়েটি চোখের ঈশারায় কিছু একটা বলল। কিন্তু মৃণাল সেই ঈশারা বুঝতে পারে না। তাই আবারও বলল, আপনি অযথা ভয় পাচ্ছেন।বললাম তো আমি আপনাকে কিছুই করবো না। আমি এখানে এসেছি আমার বোনের জন্য। আমার বোন মৃ-
কথা শেষ না হতেই। রুমের ভিতর কয়েক জন লোক ঢুকেই রিভলবার তাক করে মৃণালের উপর। মৃণাল ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়ায়। কি হচ্ছে এই সব। আপনারা কাস্টমার এর সাথে এই রকম আচরণ করেন বুঝি!
—পেছন থেকে টুপি পড়া একটা লোক এগিয়ে আসতে আসতে বলল। সব কাস্টমারের সাথে এমন বিহেভিয়ার করি না। কারণ সব কাস্টমার তো আর মৃধাকে খুঁজতে আসে না।
—মৃণাল ঘাবড়ে পেছন দিকে সরে গেল। এই কন্ঠ তার চেনা। আমতা আমতা করে মৃণাল বলল, অমল।
—মাথা থেকে টুপি সরিয়ে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে অমল। হাসতে হাসতেই অমল বলল, এত দিন পরেও আমার কথা মনে রেখেছেন দেখছি ডক্টর মৃণাল।
—মৃণাল ছলছল চোখে অমলের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার বোন কোথায়? তোর যত টাকা প্রয়োজন আমি তোকে দিব। আমার বোন কে ছেড়ে দে।
—এই স্বপ্ন দেখা অনর্থক মৃণাল। তোর বোন কে ছাড়া যাবে না। তোর বোনকে বিক্রি করে আবার কিনেছি আমি।তোর বোনের যে চাহিদা। এক বছরে তোর বোনকে দিয়ে যে টাকা আয় হয়। সেই তুলনায় তোর কিছুই নেই।
—অমলের কথা শুনে মৃণাল দিকবিদিকশুন্য হয়ে চিৎকার দিয়ে ছুটে যায় অমলদিকে। তখনি অমলের বডিগার্ড গুলি করে মৃণালের পায়ে। আর্তনাদ করে মাটিতে লুটে পড়ে মৃণাল।
—মৃণালের পাশে অমল হাঁটু গেড়ে বসে বলল, আমার আস্তানায় এসে আমাকে মারার স্বপ্ন দেখা অনর্থক বন্ধু। তুই তো বোকা। বোকা না হলে এত পাকাপোক্ত প্লান করে তীরে এসে কেউ তরী ডুবায়? অমল তার বডিগার্ডকে বলল, মেয়েটাকে এই দিকে নিয়ে আয়।
—একজন বডিগার্ড পেছন থেকে মেয়েটিকে টেনে হিঁচড়ে অমলের কাছে এনে মেঝেতে ফেলে দেয়৷মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে অমল বলল, তুই কি জানিস এই মেয়েটি কে?
—মৃণাল মেয়েটির দিকে তাকাল। সে এত বড় ভুল কি করে করল! কেন একটি বারের জন্য তার মাথায় আসল না! এই নতুন মেয়েটি আভাও হতে পারে।
—মৃণালের চুপ করে থাকা দেখে অমল বলল। কি হলো চিনতে পারছিস না। আরে কলকাতা থেকে এত দূর যার জন্য এসেছিস তাকেই চিনতে পারছিস না। ছিঃ ছিঃ ছিঃ
অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে রণক। এক সপ্তাহ দেখতে দেখতে কেটে গেল। সেন বাড়ির বাইরে রণকের যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ। ঘরের দরজায় সব সময়ের জন্য দু'জন পাহারাদার দাঁড়িয়ে থাকে। দিলাত্রী সেন তাদের এই এক কাজ দিয়েছে। তাই পালাক্রমে দু'জন রাত আর দু'জন দিনে বিরতিহীন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে । রণক একবার চিন্তা করে কারো পরওয়া না করেই সে পালিয়ে যাবে কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা করে, দিপেশের তো কোন দোষ ছিল না। বছরের পর বছর কত কষ্টই না দিপেশ করেছে। রণক কি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে তার বড়দাদাকে? কিন্তু অরুনিকা! যখন অরুনিকার চিন্তা মাথায় আসে তখন মনে হয় সব কিছুই তুচ্ছ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্ক দিপেশের পক্ষ নেয় তাই আর পালানো হয়ে ওঠে না।
—হটাৎ করেই রণকের মনে পড়লো। অরুনিকাকে আপন করতে না পারুক কিন্তু খোঁজ তো নিতেই পারে। আজ এক সপ্তাহ হলো অরুনিকার খোঁজ নেওয়া হয়নি। নিশ্চয়ই আভাকে নিয়ে ফিরে এসেছে অরু। ফোন হাতে নিয়ে অরুনিকার কাছে কল করে রণক। কিন্তু সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। অরুনিকার ফোন বন্ধ পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠে রণক। তবে কি এখনো অরু কলকাতায় ফিরেনি! কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী দুইদিনের বেশি সময় লাগার কথা না।
—নিজের অস্থিরতা দূর করতে না পেরে। বাধ্য হয়ে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়।
— বেরোতেই পাহারাদার বলল। ছোট কর্তা যাবেন কোই?
—রণক বিরক্ত হয়ে বলল, যেখানেই যাই ফলো করলেই পার। এই বলেই হনহনিয়ে মায়ের ঘরের দিকে গেল রণক। সাত দিনে একবারও ঘরের বাইরে বের হওয়া হয়নি রণকের। তাই বাড়িটা যে বিয়ে সাজে সেজে তোলা হয়েছে এটা জানা ছিল না তার। বিয়ের আয়োজন দেখেই রণকের চোখ ছলছল করে উঠে। অরুর নিশ্চয়ই ধুমধামে বিয়ের স্বপ্ন ছিল একটা সময়। সেই স্বপ্ন কোন দিন পূরণ হবে না।
—দিলাত্রী ঠাকুর ঘরে বসে হরি নাম জপতে ছিল। রণক ঘরে মা'কে না পেয়ে ঠাকুর ঘরে চলে এসেছে। ঠাকুর ঘরে দিলাত্রী সেনকে দেখে পেছন থেকে রণক বলল, তোমার পাপ কি এতে কিছুটা কমবে মা?
—দিলাত্রী সেন মুচকি হেসে বলল, তা না হয় মৃত্যুর পড়েই দেখা যাবে। এখন ভেবে লাভ কি! আমার পাপপুণ্য নিয়ে চিন্তা না করে তুই কী কাজে এসেছিস তাই না হয় এখন বল।
—আমার হয়ে একটা খোঁজ তোমার নিতে হবে।
—খোঁজ নেওয়ার পর কি করবি?
—কিছুই করব না। নিজের অস্থিরতা দূর করতে খোঁজ নেওয়াটা জুরুরি।
—খোঁজ পেলে অস্থিরতা দূর হওয়ার বদলে বাড়বে।
—মায়ের কথা শুনে রণক ঠাকুর ঘরের ভেতর মায়ের পাশে এসে ধপ করে বসে পড়ে। তুমি কি কিছু জানো মা?
—হ্যা, জানি। আমি যে কাজ করতে চেয়েছিলাম সেই কাজ এখন অমল চ্যাটার্জী করবে।
—অমলের নাম শুনতেই আৎকে উঠে রণক। মা যা বলবে পরিষ্কার করে বল। অমল করবে এর মানে কি? তুমি অমল কে কি করে চেনো?
—অমলকে আমি কেন চিন্তে যাব! ঠাকুর ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে দিলাত্রী সেন বলল। আমার পাপ তো তুই মনে হয় বাড়াতে চাস। ঠাকুর ঘরে বেশ্যার খোঁজ জানতে চাওয়াও পাপ।
—তুমি পাপ নিয়ে বেশি চিন্তা করিও না মা। তুমি পাপে পরিপূর্ণ।
—তাহলে তো পাপিষ্ঠের কাছে সাহায্য চাইতে আসা তোর ঠিক হয়নি রণক। তুই নিজেও পাপে ডুবতে পারিস।
—মা হেয়ালি রাখ। তুমি অমল কে নিয়ে কি বলছিলে তাই বল।
—বেশ্যার সাথে যে ডক্টর গিয়েছিল। সেই ডক্টরের বোকামির জন্য বেশ্যার পরিকল্পনায় জল পড়ছে। এখন সবাই কেটিভে বন্দী হয়ে আছে। মনে হয় না কেউ আর ফিরতে পারবে। আমার তো ভালোই হলো। কলকাতায় ফিরে আমার ছেলেটার মাথা খেতো বেশ্যাটা।এখন আর ফিরবেই না যখন তখন মাথা খওয়ার টেনশন টা আমার আর নেই।
*******
অরুনিকাকে চার-পাঁচজন মিলে তৈরি করছে। তাকে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্ট্রাপলেস শট গাউন। পিঠের পেছনের দিকটা ফাঁকা এবং সামনে থেকে থাই পযন্ত ঢাকা। ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। কোন এক ছোট স্যার এর কাছে নিয়ে যাবে অরুনিকাকে। তার জন্যই এতো আয়োজন করে সাজানো হচ্ছে তাকে। ছোট স্যারের নাম কেউ এখানে জানে না। নামটা জানলে ভালো হতো। সেই ছোট স্যারও নাকি ভারতীয়। নিজের দেশের নারীদের এই নরকে নিয়ে এসে দেহের ব্যবসা করায়। এই সব পুরুষদের জীবন্ত আগুনে পুড়ে মারা উচিত।
—আভার কথা চিন্তা করে অরুনিকা আরও বেশি চিন্তিত হলো। মৃণাল যে বোকার মতো কাজ করে ধরা পড়েছে এটা শুনার পর থেকেই বেশ বিরক্ত সে। কি প্রয়োজন ছিল আগ বাড়িয়ে এত কথা বলার! ওই ছোট স্যার লোকটির বুদ্ধির জোরেই মৃণাল ধরা পড়েছে। আভার শরীরে নাকি মাইক্রোফোন রেখেছিল। বিদেশের পাচার করা মেয়েদের সম্পর্কে কি ডক্টর মৃণালের কোন ধারণা ছিল না! এত বড় ভুল সে করল কি করে! বিদেশে কখনো সুস্থ অবস্থায় কোন মেয়েকে কাস্টমার এর কাছে পাঠানো হয় না। আগে মেয়েদের তৈরি করা হয়। সাতদিনের বেশি সময় ধরে এদের দেওয়া হয় ড্রাগস। নেশাই আসক্ত করে লজ্জা কাটানোর জন্য তাদের নগ্ন করে ফটোশুট করানো হয়৷ তারপর ফটোশুটের ছবির উপর ভিত্তি করে এদের প্রাইজ ট্যাগ দেওয়া হয়। তার পরেই কাস্টমারের কাছে পাঠানো হয়। ওই বেকুবটার জন্য ভগবান জানে আমার বোনটার এখন কি অবস্থা! আভার কথা চিন্তা করতে করতে চোখ ছাপিয়ে জল নামে। একটা মেয়ে ধমক দিয়ে বলল, ছোট স্যারের কাছে যাওয়ার আগেই মেকাপ নষ্ট করার ধান্দা! এই বলেই কষে চড় মারল অরুনিকাকে।
— অরুনিকার চোখে কাপড় বেঁধে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেটিভের ছোট স্যার এর কাছে। কেটিভের ম্যানেজার পদে চাকরি করেও নিজেকে ছোট স্যার হিসেবে পরিচয় দিতে ভালো লাগে লোকটির ।তাই সবাই ছোট স্যার বলেই ডাকে লোকটাকে।
এখান থেকে অরুনিকা বেরিয়ে যেতে পারবে। এইটা অরুনিকার আত্মবিশ্বাস। অরুনিকার কিছু লোক এই কেটিভে আছে। সোনাগাঁছীতে থাকা কালীন সময়ে বিদেশে দেহ ব্যবসার কাজে জড়িত লোকেদের সাথে পরিচয় হয়েছিল। তারাই সাহায্যে করার কথা বলেছিল অরুনিকাকে। কিন্তু ডক্টর মৃণালের বোকামির জন্য এখন তারাও ভয়ে আছে। তাই পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন করে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরো পরিকল্পনায় জল পড়েনি এখনো আশা আছে। এই ভেবেই অরুনিকার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
—অরুনিকাকে একটা ঘরে পৌঁছে দিয়ে চলে গেল বাকি মেয়েরা। ধীর পায়ে অরুনিকার পেছনে এসে দাঁড়াল এক পুরুষ। অরুনিকার কাঁধে সেই পুরুষের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। পুরুষটির শরীর থেকে খুব পরিচিত একটা গন্ধ ভেসে আসছে অরুনিকার নাকে। এই গন্ধ তার পূর্ব পরিচিত। হটাৎ করেই অরুনিকার চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। দাঁতে দাঁত চেপে অরুনিকা বলল, তাহলে তুমিই সেই ছোট স্যার অমল চ্যাটার্জী।
—অরুনিকা মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হলো অমল। অমল বলল, চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে কীভাবে চিনলে লক্ষীটি?
—অমলের কন্ঠ শুনতেই অরুনিকা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। বন্ধ চোখের সামনেই যেন অতীতের সেই দিনের ঘটনা গুলি ভেসে উঠলো।
—অমল অরুনিকার চোখের কাপড় খুলে দিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় । অমলের সাথে অরুনিকা চোখ চোখ পড়তেই অরুনিকার চোখ দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। চোখের আগুন যেন চায় সেই আগুনে অমলকে পুড়িয়ে মারতে।
To be continued.....
গল্প: নিষিদ্ধ নারী (প্রেম কাহিনী)
পার্ট:-১২
লেখনীতে: সামিনা সামি
0 Comments